হৃদরোগ নিরাময়ে বেদানার দানার ম্যাজিক

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০১ মার্চ ২০২৩, ১০:১২ | প্রকাশিত : ০১ মার্চ ২০২৩, ১০:০৯

হৃদরোগ আমাদের জীবনযাত্রায় অন্যতম আতঙ্কের। খাওয়াদাওয়া থেকে দৈনন্দিন জীবনযাপন, সর্বত্র কড়া নজর রাখা প্রয়োজন। নয়তো কখন কোন রোগ এসে হৃদ্‌যন্ত্রে বাসা বাঁধে, তা বলা কঠিন। কিন্তু নানা নিয়ম সত্ত্বেও হৃদ্‌রোগ ঠেকানো যাচ্ছে না। চিকিৎসকের মতে, অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস, বাইরের তেলমশলা জাতীয় খাবার খাওয়া, যথেষ্ট ঘুম না হওয়া, লবণ জাতীয় খাবার বেশি খাওয়া এই কারণগুলো হৃদ্‌রোগের নেপথ্যে রয়েছে। শরীরের যত্ন নেওয়া, সুষম খাবার খাওয়া এবং মানসিক চাপ কম নেওয়া এই তিনটি নিয়ম মেনে চললে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব। তবে এই তালিকায় রয়েছে একটি ফল। হৃদ্‌রোগ দূরে রাখতে সেটি দারুণ কার্যকরী। পুষ্টিবিদদের মতে, প্রতি দিন যদি একটিও বেদানা খাওয়া যায়, তা হলে হৃদ্‌রোগ দূরে রাখা সম্ভব।

বেদানায় রয়েছে বহু উপকারী পুষ্টিগুণ, শরীরের খেয়াল রাখতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে হার্টের যত্ন নিতে চোখ বন্ধ করে ভরসা করতে পারেন বেদানার উপর। অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টে সমৃদ্ধ বেদানা ধমনিতে রক্ত চলাচল সচল রাখতে সাহায্য করে। উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমায়। সেই রক্ত যাতে জমাট বেঁধে না যায়, সেই দিকেও সমান নজর বেদানার। উচ্চ রক্তচাপ থাকলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে। তাই চিকিৎসকরা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে বলেন। বেদানা সেই কাজটি করে। রোজ অন্তত এক গ্লাস করে বেদানার রস খেলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমবে বলেই মনে করছেন চিকিৎসকরা।

প্রাচীনকাল থেকেই চিকিৎসা ও আর্য়ুবেদ শাস্ত্রে ওষুধ হিসেবেই ব্যবহার করা হচ্ছে বেদানার দানাকে। রোগ নিরাময়ে গবেষণায় পরীক্ষিত বেদানা অতুলনীয়। বেদানার বৈজ্ঞানিক নাম পুনিকা গ্রান্যাটাম। বেদানা ফল আয়ুর্বেদিক ও ইউনানী চিকিৎসায় পথ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়। নিয়মিত বেদানা খেলে শরীরে রক্তের অভাব পূরণ হয়। শুধু তাই নয়, বেদানার ফলে স্মৃতিশক্তি, শারীরিক ক্ষমতা বাড়ে। স্বাস্থ্যের সার্বিক উন্নতি তো বটেই, ত্বকের জন্য উপকারী বেদানা।

বেদানায় বিউটেলিক এসিড, আরসোলিক এসিড এবং কিছু আ্যলকালীয় দ্রব্য যেমন- সিডোপেরেটাইরিন, পেপরেটাইরিন, আইসোপেরেটাইরিন, মিথাইলপেরেটাইরিন প্রভৃতি মূল উপাদান থাকায় বিভিন্ন রোগ উপশমে ব্যবহার করা হয়।

রূপকথার গল্পেও ডালিম বা বেদানাকে ‘যৌন উদ্দীপক’ হিসেবেই ব্যবহার করা হয়েছে। বেদানার মধ্যে এমন কিছু গুণ রয়েছে যা পুরুষদের টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বাড়ানো থেকে শুরু করে লিবিডো বৃদ্ধি এবং ইরেক্টাইল ডিসফাংশনের হাত থেকে মুক্তি দিতে পারে। এছাড়াও লাল রঙের বেদানায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা পুরুষ ও মহিলার যৌন জীবনকেও প্রভাবিত করে। শরীরের সেক্স হরমোনগুলো ঠিকমতো কাজ করতে পারে এই বেদানার গুণেই।

বলা হয় রেড ওয়াইন এবং গ্রিন টি-এর থেকে প্রায় তিন গুণ বেশি অ্যান্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে বেদানাতে। যে কারণে তা শুক্রাণুর গুণগত মান বাড়ায়, যৌন উচ্ছে চাগিয়ে তোলে এবং মন-মেজাজও ফুরফুরে রাখে।

বেদানার মধ্যে থাকা এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়, যে কোনও প্রদাহ জনিত সমস্যা থেকেও আরাম দেয়। সেই সঙ্গে হৃদরোগ, ক্যানসারের ঝুঁকি এড়াতেও বেদানার জুড়ি মেলা ভার। শরীরে ক্ষতিকর ফ্রি র‌্যাডিক্যালের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা রাখে বেদানা। আর তাই যৌন ক্ষমতা বাড়াতে ছেলেরা যে কোনও উপায়ে খেতে পারেন এই ফল।

স্কটল্যান্ডের এডিনবার্গের কুইন মার্গারেট ইউনিভার্সিটির একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, যে সব পুরুষদের টানা দু সপ্তাহ ধরে রোজ একগ্লাস করে বেদানার রস খাওয়ানো হয়েছে তাদের টেস্টোস্টেরন গড়ে২৪% বৃদ্ধি পেয়েছে। পুরুষদের শরীরে প্রধান সেক্স হরমোন এই টেস্টোস্টেরন। এই হরমোনের ক্ষরণ কম হলে ছেলেদের একাধিক সমস্যা দেখা দেয়।

একই গবেষণায় বলা হয়েছে যে বেদানা ইরেক্টাইল ডিসফাংশন অর্থাৎ পুরুষত্বহীনতারও চিকিৎসা করতে পারে। মানসিক চাপ, উদ্বেগ, আত্মবিশ্বাসের অভাব এবং ভয় ইরেক্টাইল ডিসফাংশনের প্রধান কারণ। এই গবেষণায় দেখানো হয়েছে বেদানা মানসিক উদ্বেগগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করে পৌরুষত্ব রক্ষা করে।

শরীরের প্রতিটি অঙ্গের মতো নিম্নাঙ্গেও রক্ত ​​চলাচল ভাল হওয়া জরুরি। যদি উচ্চ রক্তচাপের কারণে রক্ত ​​প্রবাহ ব্যাহত হয় এবং ধমনীর মধ্যে তা আটকে থাকে তাহলে তা কিন্তু হতে পারে ইরেক্টাইল ডিসফাংশনের কারণ। কিছু গবেষণায় এরকমও দেখা গিয়েছে যে বেদানা সিস্টোলিক রক্তচাপ কমাতে পারে। ২০০৭ সালের একটি গবেষণাও বলছে নিয়ম করে খাঁটি বেদানার রস খেলে শুক্রাণুর পরিমাণ বাড়ে এবং মানেও তা ভাল হয়।

বেদানা ভিটামিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং খনিজ সমৃদ্ধ। আর তাই রক্তনালীগুলি পরিষ্কার করে হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে পারে বেদানা। হৃদরোগ ইরেক্টাইল ডিসফাংশন এবং যৌন ইচ্ছা কমে যাওয়ার একটি প্রধান কারণ। গবেষণায় আরও দেখা গিয়েছে যে বেদানার রস টাইপ ২ ডায়াবেটিস এবং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

অ্যানিমিয়া রোগীদের জন্য খুবই উপকারী বেদানার রস। কারণ এই ফলটির শরীরে রয়েছে প্রচুর মাত্রায় আয়রন, যা লোহিত রক্ত কণিকার উৎপাদন বাড়িয়ে দিয়ে রক্তাল্পতার মতো সমস্যা দূর করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এই কারণেই তো ছোট থেকেই মেয়েদের নিয়মিত বেদানা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকেরা।

নিয়মিত বেদানার রস খেলে আপনার জীবনকালে কখনও ডায়াবেটিস আপনার শরীরে বাসা বাঁধতে পারবে না। কারণ এই ফলটি খাওয়া মাত্র শরীরে এমন কিছু পরিবর্তন হতে শুরু করে যে রক্তে সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। ফলে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের মতো রোগ ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারে না।

বেদানা ফলে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন, খনিজ ও ফাইবার পুরুষের জন্য ভালো। এমনকী ফার্টিলিটি বাড়াতে পারে। তাই পাতে রাখুন প্রতিদিন। লাল রঙের বেদানা খেয়েই পুরুষের স্বাস্থ্য হয়ে যেতে পারে রঙিন।

রাতেরবেলা বেদানা খেলে পুরুষ শরীরে লাভ মেলে অনেকটাই। ঘুমাতে যাওয়ার আগে খেতে হবে এই ফল। এই সময়ে আপনি যদি বেদানা খান তবে কিন্তু শারীরিক ক্ষমতা বাড়বে।

বেদানা খেলে বাড়ে পুরুষের ফার্টিলিটি, যা শরীরের জন্য দারুণ কার্যকরী হতে পারে। এরমধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিশেষ কার্যকরী। দেখা গিয়েছে যে সেক্সুয়াল ক্ষমতা বাড়ানো থেকে শুরু করে ফার্টিলিটি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে দারুণ কার্যকরী হয়ে যেতে পারে এই খাবার। তাই এই বিষয়টি মাথায় রাখুন।

এছাড়াও বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন যে বেদানা কিন্তু ইমিউনিটি বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই এই খাবার নিয়মিত খান। এই খাবারে থাকা ভিটামিন ও মিনারেলে প্রাচুর্য রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ফলে চিন্তা নেই। আজ থেকেই আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় বেদানাকে অন্তর্ভুক্ত করুন এবং শরীরের যত্ন নিন।

সহজ উপায়ে বেদানার দানা ছাড়াবেন যেভাবে

বেদানা খাওয়ার এত গুন থাকলেও ফল থেকে দানা বের করার কাজটা এতটাই ঝকমারি যে অনেক এই কারণ বেদানাকে এড়িয়ে যান। আবার অনেকেই বেদানাকে দুভাগে ভাগ করে কেটে নেন এর ফলে যেটা হয় দানার রস ছিটকে জামাকাপড়ে লাগার ভয় থাকে আবার অনেক দানাও নষ্ট হয়। দানা ছাড়াতেও অনেকটা সময় লাগে। তবে বেদানা কাটার ঠিক নিয়মটা যদি আপনার জানা থাকে তা হলে দেখবেন খুব তাড়াতাড়ি দানাগুলো ছাড়িয়ে ফেলতে পারেন।

এই বেদানার দানা ছাড়ানোর একটা ধরন আছে। সেটা মেনে কাটলে ফলের দানা বা রস অযথা নষ্ট হয় না। দেখে নিন-

বেদানার দানার বার করতে প্রথমে বেদানার গোড়ার দিকটা পাতলা করে কেটে নিন। দেখবেন বেদানার ভিতরে যে সাদা অংশটা রয়েছে সেটা ফলটাকে চার থেকে পাঁচটা ভাগে ভাগ করেছে। এবার এই সাদা অংশ বরাবর আলতো করে ছুড়ি দিয়ে অল্প একটু কেটে নিন। এভাবে পুরো ৪ থেকে ৫টি ভাগ যে সাদা অংশ আছে উপর থেকে নীচে ওই অংশ বরাবর ছুরি চালান। এবার ওই চারটি ভাগ কলার ছোসা ছাড়ানোর মতো টেনে টেনে বাইরে বার করে নিন। এবার ফলের মাঝখানের বড় সাদা অংশটা টেনে বার করে দিন। এবার এক একটা অংশ ধরে খোসার দিকে থেকে ভিতর দিকে চাপ দিন। এর ফলে এবার খোসার দিকটা চাপ দিয়ে ঠেলে দানাগুলো একটি পাত্রে ছাড়িয়ে নিন। প্রয়োজনে খোসার সঙ্গে অল্প কিছু দানা লেগে থাকলে আঙুল দিয়ে দানা ছাড়িয়ে নিন।

(ঢাকাটাইমস/০১ মার্চ/আরজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :