২৬ বছর অন্যের ঘরের বারান্দায় জীবন পার, প্রধানমন্ত্রীর কল্যাণে পেলেন পাকা ঘর

জাফর আহমেদ, বরিশাল থেকে
| আপডেট : ২২ মার্চ ২০২৩, ০৯:৪১ | প্রকাশিত : ২১ মার্চ ২০২৩, ২০:১০

আমার জীবনে ভাবিনি পায়ের তলায় মাটি হবে, আমাদের পাকা ঘর হবে। আমি ছিলাম মানুষের বারান্দায়। এখন আমাকে পাকা ঘর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৩০ বছর আগে স্বামীকে হারিয়ে আমার জীবন অন্ধকার হয়ে গিয়েছিল। আজ শেখ মুজিবের মেয়ে শেখ হাসিনা আমাকে সন্ধ্যা নদীর পাড়ে পাকা ঘর ও জমি দিয়ে আমার জীবনে আলো দিয়েছেন। এটি আমার ছেলে ও নাতি-নাতনীর জীবনও বাঁচিয়ে দিয়েছে। আমাকে আর মানুষের ঘরের বারান্দায় থাকতে হবে না।

ঢাকা টাইমসের সঙ্গে আলাপকালে কান্নাজড়িত কন্ঠে এসব বলেন ৭০ বছর বয়সী ফিরোজা বেগম। প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন প্রকল্প-২ এর আওতাধীন ঘর ও জমি পেয়েছেন ভূমিহীন ও গৃহহীন বরিশালের বানারীপাড়ার ফিরোজা বেগম।

ঘর ও জমি পেয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য দুই হাত তুলে মোনাজাত ধরে ফিরোজা বেগম ঢাকা টাইমসকে বলেন, আমার স্বামী কবে মারা গেছে ঠিকমত আমি বলতে পারবে না। কারণ বহু আগে মারা গেছে। এতোদিন ধরে প্রায় ৩০ বছর ধরে কষ্ট করে জীবন কাটাইছি। নিজের ঘর ছিল না, জমি ছিল না।

ফিরোজা বলেন, আমার এক ছেলের বয়স তখন এক বছর। এরপর থেকে অনেক কষ্ট করে আমার ছেলেকে বড় করেছি। টাকার অভাবে তাকে স্কুলে দিতে পারিনি। দিন এনে দিন খেয়েছি। এই সন্ধ্যা নদীতে ভেঙে গেছে আমার সুখের ঘর। সেও অনেক আগের কথা। আমার পায়ের তলায় কোনো মাটি ছিল না। শুধু রাতে দুচোখের পানিতে বালিশ ভিজেছে। কবে হবে আমার পায়ের তলায় মাটি। কখনো স্বপ্নেও ভাবিনি পায়ের তলায় মাটি হবে। সেই আশা পূরণ করেছেন শেখের বেটি। আল্লাহর পরে শেখের বেটি। তিনি আমাকে ঘর দিয়েছেন, সঙ্গে দিয়েছেন জমি।

স্বামী মারা যাওয়ার পর অসহায় জীবনযাপন করেছেন জানিয়ে ফিরোজা বলেন, কেউ সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেনি। নিজে অন্যের জমিতে ও বাড়িতে কাজ করেছি। তিন বেলা এক ছেলেকে নিয়ে খেতেও পারিনি। কিন্তু আজকে আমার ছেলে বড় হয়েছে। ছেলে এখন অটো গাড়ি চালায়। কোনরকম খেয়ে পড়ে বেঁচে আছি। ঘর ও জমি কিছু নেই। এক বাড়িতে দীর্ঘ ২৬ বছর বারান্দায় কাটিয়েছি। কখনো কখনো ভাড়া বাসায় থেকেছি। কেউ কোনো সাহায্য সহযোগিতা করেনি। কিন্তু আজ প্রধানমন্ত্রী আমাকে ঘর ও জমি দিয়েছেন। আমি তার জন্য দুহাত তুলে মোনাজাত ধরে দোয়া করি। তিনি যেন দীর্ঘজীবী হন। আগামী নির্বাচনে দেশের মানুষ নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আবার তাকে প্রধানমন্ত্রী বানান। আমার মতো যারা অসহায়, তারা যেন এমন করে ঘর ও জমি পান।

ঘর ও জমি পেয়েছেন রেখা বেগম। বাবা আব্দুল খালেক হাওলাদার। কথা হয় রেখা বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমার স্বামী নেই। স্বামী মারা গেছেন। আমার দুই মেয়ে, কিন্তু মাথা গোঁজার ঠাই নেই। নানা বাড়িতে তারা থাকে আর আমি ঢাকা বুয়ার কাজ করি এতেই কেনো রকম আমার জীবন চলে। বড় মেয়ে এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী আর ছোট মেয়ে সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী। যে টাকা পাই তা দিয়ে দুই মেয়ের খরচ চালাই। চোখে মুখে অন্ধকার দেখছিলাম। সবশেষ অন্ধকার কেটে আলোর মুখ দেখিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমাকে তিনি ঘর ও জমি দিয়েছেন। তার প্রতি কৃতজ্ঞতার কোনো শেষ নেই। আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য দুহাত তুলে দোয়া করি। তাকে যেন আল্লাহ সুস্থ রাখেন। তিনি যেন আগামী নির্বাচনে আবার বিজয়ী হন। প্রধানমন্ত্রী এভাবেই যেন আমার মত অসহায় মানুষকে ঘর ও জমি দিয়ে যেতে পারেন। তিনি যেন আবার ক্ষমতায় আসেন।

এদিকে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার সকাল সাড়ে ১০ টায় তৃতীয় পর্যায়ের অবশিষ্ট এবং চতুর্থ পর্যায়ের নির্ধারিত উপকারভোগী পরিবারের কাছে জমিসহ গৃহ হস্তান্তর কার্যক্রম ভিডিও কনফারেন্স এর মাধ্যমে উদ্বোধন করবেন। সিলেটের গোয়াইনঘাট, গাজীপুরের শ্রীপুর ও বরিশালের বানারীপাড়ায় তিনি যুক্ত হবেন। এরই মধ্য দিয়ে ৭টি জেলায় ১৫৯টি উপজেলা ভূমিহীন মুক্ত হবে। মোট উপকারভোগীর সংখ্যা ৩৯, ৩৬৫টি পরিবার। এরমধ্যে বানারীপাড়ায় মোট ১৪২টি ঘর ৪র্থ পর্যায়ে হস্তান্তর করা হবে।

এ প্রসঙ্গে উজিরপুর-বানারীপাড়া আসনের সংসদ সদস্য শাহে আলম বলেন, বানারীপাড়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া উপহারের ঘর ও জমি দেওয়ার মধ্য দিয়ে এই উপজেলাকে গৃহীন মুক্ত এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে। এরই মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী জনগণের কাছে যে ওয়াদা করেছিলেন, দেশে কোনো ভূমিহীন ও গৃহীন থাকবে না, তার বাস্তবায়ন হলো। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বিশ্বের এই প্রথম বাংলাদেশে ভূমিহীন ও গৃহীনদের জমি ও ঘর দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ঘর ও জমি দেবেন তাই গত সোমবার বানারীপাড়ায় আনন্দ মিছিল হয়েছে। কারণ যারা ছিন্নমূল মানুষ তারা প্রধানমন্ত্রীর এই উপহার পেয়ে খুশি। বানারীপাড়ায় সন্ধ্যা নদীর পাড়ে এই ঘর ও জমি দেওয়া হয়েছে। এতে এখানে যারা থাকবেন তাদের বেঁচে থাকার জন্য, উপার্জনের জন্য অনেক ক্ষেত্র রয়েছে। পাশেই সন্ধ্যা নদী। এখান থেকে তারা মাছ ধরতে পারবে। তারা বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত হতে পারবে। পাশাপাশি সঙ্গেই সড়ক রয়েছে। তারা অটো, ভ্যান চালানোসহ বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত হতে পারবে।

বানারীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাতেমা আজরিন তন্বী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের ঘর ও জমি ছিন্নমূল মানুষকে দেওয়া হয়েছে। তাদের ঘর ও বাড়ি ছিল না। এদের বেশিরভাগই নদীতে বাড়িঘর বিলীন হয়ে গেছে। তারা উদ্বাস্তু ছিলেন। এখানে যাদের ঘর ও জমি দেওয়া হয়েছে তা একটি কমিটির মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করে দেওয়া হয়েছে। এখানে কোনো ধরনের অনিয়ম হয়নি। এই জমিগুলো খাস ছিল। এখানে আগে নদী ছিল। এখানে চর ছিল। ফলে এখানে কোন ধরনের ভুল বোঝাবুঝি সুযোগ নেই। আমরা সবদিক বিচার বিবেচনা করে উপকারভোগীদের জন্য জমি ও ঘর দিয়েছি।

স্থানীয় সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দা রুবিনা মিরা বলেন, বানারীপাড়া নদী ভাঙ্গন কবলিত এলাকা। এখানে যারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারে ঘর ও জমি পেয়েছেন সবাই নদী ভাঙ্গন কবলিত মানুষ। তারা মূলত ছিন্নমূল ছিল। তাদের কোনো থাকার জায়গা ও ঘর ছিল না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের ঘর ও জমি দিয়ে ঠিকানা দিয়েছেন। এখানে যারা ঘর ও জমি পেয়েছেন তারা বিভিন্ন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হতে পারবেন। তাই তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। এই সন্ধ্যা নদী ইলিশ প্রজননের অভয়াআশ্রম। ফলে তারা ইলিশ ধরেও জীবন যাপন করতে পারবেন।

(ঢাকাটাইমস/২১মার্চ/জেএ/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :