ফের আলোচনায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন

আশিক আহমেদ, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০২ এপ্রিল ২০২৩, ১১:২৮ | প্রকাশিত : ০২ এপ্রিল ২০২৩, ০৯:০৫

প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামান শামস গ্রেপ্তার এবং র‌্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর পর ফের আলোচনা শুরু হয়েছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে। গত বৃহস্পতিবার থেকে জাতিসংঘ ও মার্কিন দূতাবাসসহ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংগঠন এসব ইস্যুতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি তুলে বিবৃতি দেওয়ার পর এ আলোচনা বেশ জোরেশোরে শুরু হয়েছে।

এর আগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার লেখক মুশতাক আহমেদ ২০২১ সালে কারাগারে মারা যাওয়ার পর এ আইন বাতিলের দাবি উঠেছিল দেশজুড়ে। এ নিয়ে তোলপাড় চলছিল সে সময়।

এদিকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে ফের আলোচনা ওঠার পর এর পক্ষে-বিপক্ষে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, বুদ্ধিজীবীসহ সুশীলরা। তাদের কেউ কেউ এ আইন বাতিল চান, আবার কেউ সাফাই গাইছেন এ আইনের পক্ষে।

দেশের সাংবাদিক, আইনজীবী, বুদ্ধিজীবীদের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর আপত্তি ও উদ্বেগের মধ্যে ২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে পাস হয় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ব্যাপক সমালোচিত ৫৭সহ কয়েকটি ধারা বাতিল করে নতুন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করা হলেও পুরনো আইনের বাতিল হওয়া ধারাগুলো নতুন আইনে রেখে দেওয়ায় এর অপপ্রয়োগের শঙ্কা ছিল উদ্বেগের কেন্দ্রে।

তবে এ আইনের অপপ্রয়োগের বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ‘দু-একটি ক্ষেত্রে অপপ্রয়োগ ঘটলেও, সেসব ক্ষেত্রে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।’

এদিকে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে কর্মরত যুগ্ম সচিব এনামুল হকের অভিযোগে গত ২২ মার্চ নওগাঁ থেকে র‌্যাব আটক করে ভূমি অফিসের কর্মী জেসমিনকে। আটকের চার ঘণ্টা পর তাকে অসুস্থ অবস্থায় নওগাঁ সদর হাসপাতালে নিয়ে যায় র‌্যাব। সেখান থেকে তাকে পাঠানো হয় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ২৪ মার্চ সেখানে তার মৃত্যু হয়।

জেসমিনকে আটকের পর তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন যুগ্মসচিব এনামুল। সেই ঘটনা নিয়ে আলোচনার মধ্যেই প্রথম আলোয় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনকে কেন্দ্র করে ওই পত্রিকার নিজস্ব প্রতিবেদক শামসকে ২৯ মার্চ ভোররাতে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায় সিআইডি।

এর মধ্যে তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করেন সরকার সমর্থক যুব সংগঠন যুবলীগের এক নেতা। পরে একই আইনে আরেকটি মামলা হয়, সেখানে শামসের পাশাপাশি প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানকেও আসামি করা হয়।

জেসমিনের মৃত্যুর পর আইন ও সালিশ কেন্দ্রসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন যেসব বিবৃতি দিয়েছিল, সেখানে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কথাও ছিল। শামস গ্রেপ্তার হওয়ার পর তাদের বিবৃতির ভাষা আরও কড়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ঢাকাটাইমসকে বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের যে বিষয়গুলো নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে তা দূর করে এটিকে আরও ভালো করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এটি তাদের দিক থেকে যা বলা হয়েছে, আইনটিতে যেসব সমস্যার কথা বলা হয়েছে, তা অনেকটা দূর করা হয়েছে। তারপরও যেসব জায়গায় পরিবর্তন দরকার, আর কোন কোন জায়গায় সঠিক আছে।

আইনমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আলোচনা হচ্ছে। আমি একটি জিনিস বলতে পারি, আমরা চেষ্টা করছি সব পক্ষকে শোনার। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সাইবার ক্রাইমের বিরুদ্ধে লড়াই করতে প্রণয়ন করা হয়েছিল। সেখানেই আমরা থাকতে চাই। এ আইনের প্রয়োজনীয়তার কথা সবাই বলেছেন। এটিকে যদি ভালো করা যায়, যে সমালোচনা হচ্ছে, তা যদি দূর করা যায়, সেটা চেষ্টা করছি।’

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার ঢাকাটাইমসকে বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে সরকার বাকস্বাধীনতা রুদ্ধ করছে। সাংবাদিকদের হয়রানি করছে, গ্রেপ্তার করছে। এটা আসলে আইন নয়, অস্ত্র। সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে চিন্তার স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করছে এই অস্ত্র ব্যবহার করে। এই আইনের কারণে সবাই ঝুঁকিতে আছেন। সবাই এর সম্ভাব্য ভুক্তভোগী। এই আইন বাতিল করা উচিত।

এ ব্যাপারে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক নুর খান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে সরকার গণমাধ্যমের বাকস্বাধীনতা রুদ্ধ করছে। সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার করা হয়। যারাই সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলছেন তাদেরকে সরকার নির্যাতন করছেন, গ্রেপ্তার করছেন। ফলে এই আইন বাতিল হওয়া দরকার।

(ঢাকাটাইমস/০২ এপ্রিল/এএ /আরআর/আরকেএইচ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :