মুক্তিযোদ্ধার পুকুরের বরাদ্দের ঘাটলা গেল চেয়ারম্যানের বাড়িতে! ভুল না ইচ্ছাকৃত?

শওকত আলী, চাঁদপুর
 | প্রকাশিত : ০৯ এপ্রিল ২০২৩, ১৬:৪৭

চাঁদপুরে বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবু তাহেরের নামের ঘাটলা গেল নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান আবু তাহের প্রধানীয়ার বাড়িতে। এ নিয়ে এলাকাবাসী ও মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে চলছে চরম উত্তেজনা ও জল্পনা-কল্পনার ঝড় বইছে। একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, সংশ্লিষ্ট প্রকৌশল বিভাগের সঙ্গে ও ঠিকাদারের যোগসাজশে এ অনৈতিক কাজটি করা হয়েছে।

ঘাটলাটি চাঁদপুর জেলা পরিষদের ২০২২-২৩ অর্থ বছরের অর্থায়নে গণঘাটলাটি নির্মিত করা হচ্ছিল।

সংশ্লিষ্ট অফিস সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় এঘাটলাটি। ঘাটলার কাজটি শুরু করার পূর্বে ও চলমান অবস্থায় থাকাকালীন জেলা পরিষদের নিবার্হী প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান ও সহকারী প্রকৌশলী ইকবাল হোসেন হোসেন সাইড দেখা ও কাজের তদারকি না করায় এ ঘটনাটি ঘটেছে বলে এলাকারবাসী দাবি করে জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করে উপযুক্ত প্রদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য জোরদাবি জানিয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবু তাহের।

খবর নিয়ে জানা গেছে, চাঁদপুর জেলা পরিষদ থেকে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবু তাহেরের বাড়ির সামনের পুকুরে একটি গণঘাটলা’ নির্মান করার বরাদ্ধ দেওয়া হয়। সে পুকুরের ঘাটলাটি নির্মান করতে গিয়ে প্রতারনা করে ঠিকাদার একই এলাকার নর্ব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান আবু তাহের প্রধানিয়ার বাড়ির সামনের পুকুরে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধার গণঘাটলাটি নির্মান করে দিয়েছে।

এ নির্মান কাজ শুরু থেকে শেষ হওয়া পর্যন্ত প্রায় ২মাস সময় অতিবাহিত হলেও এ কাজের কোন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ একবারও তা’তদারকি করে দেখেনি কোথায় ঘাটলা নির্মান হয়েছে। বিষয়টি অন্ধকারে রেখে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবু তাহেরের সাথে প্রতারনা করে তার বাড়ির সামনের গনঘাটলাটি আরেক জায়গায় স্থাপন করা হয়ে বলে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবু তাহের দাবী করেছেন। ইদানিং কালে চেয়ারম্যানের বাড়ির সামনে নতুন নির্মিত ঘটলাটির ন্যামপ্লেট বসানো হয়। সেখানে ন্যামপ্লেটে লেখা ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবু তাহের এর বাড়ীর সামনে গণঘাটলা নির্মাণ’। এতে করে ঘাটলার ঘটনাটির প্রতারনার বিষয়টি ফাঁস হয়ে যায়।

যেই বাড়ীতে ঘাটলাটি নির্মিত হয়েছে, সেই বাড়ী এটি নয়। এটি চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলার দ্বাদশগ্রাম ইউনিয়নের নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান আবু তাহের প্রধানীয়ার বাড়ী। আর বরাদ্দটি ছিল ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবু তাহের এর বাড়ীর সামনে গণঘাটলা’। কার ইশিরায় নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান শপথ গ্রহণ না করতেই তিনি নিয়ে গেলেন বীর মুক্তিযোদ্ধার বাড়ীর ঘটলা নিজবাড়িতে। জনমনে এ নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে বিরূপ ও চরম প্রতিক্রিয়া।

বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) সরজমিনে গিয়ে দেখা মিলল, নির্মিত ঘটলার এখনো সাটারিং খোলা হয়নি। আবু তাহের নামে দুই ব্যাক্তিই ইছাপুরা গ্রামের বাসিন্দা। একজন নতুন চেয়ারম্যান আরেকজন বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার। নির্মিত ঘাটলাটির কাজ এখনো শেষ করেনি ঠিকাদার। ন্যামপ্লেট বসানোর পর শুরু হয় এলাকায় জল্পনা-কল্পনার ব্যাপক ঝড়। এলাকাবাসীর মধ্যে কথা উঠে কার বাড়ীতে গেল কার ঘটলা? এক জন বীর মুক্তিযোদ্ধার বাড়ির ঘাটলাটি স্থাপন করা হলো নর্বনির্বাচিত চেয়ারম্যানের বাড়িতে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যানের পিতা নূরুল ইসলাম প্রধানীয়া জানান, ঠিকাদার এসে আবু তাহের প্রধানীয়ার বাড়ি কোনটা জানতে চেয়েছে। তখন তিনি ঘাটলা নির্মাণের জায়গা দেখিয়ে দিতে বললে আমি দেখিয়ে দিয়েছি। সবাই নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত ছিল। ন্যাম প্লেট বসানোর পর সেখানে লেখা বীরমুক্তিযোদ্ধা আবুতাহের। আমার ছেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিল না। তিনি চেয়ারম্যান হয়েছেন এ বছর।

বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবু তাহের বলেন, গেল বছরের ২ এপ্রিল চাঁদপুর জেলা পরিষদের কাছে তিনি একটি পাকা ঘাটলার জন্য আবেদন করেন। গত ৩ থেকে ৪ দিন ধরে জানতে পারেন নতুন চেয়ারম্যানের বাড়িতে একটি পাকা গণঘাটলা নির্মিত হয়েছে। সেটিতে তার নাম লেখা। তিনি ইতোমধ্যে জেলা পরিষদের কাছে এটি মৌখিক অভিযোগ করেছেন বলে জানান এবং বিষয়টি কেন হলো তা তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি করেছেন বলে জানান।

এ বিষয়ে নব-নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান আবু তাহের প্রধানীয়া মুঠোফোনে জানান, ‘ঘটলাটি নির্মাণের সময় আমার জানা ছিল না। আমি বাড়িতে থাকি না। মা-বাবা ও ভাইয়েরা বাড়িতে থাকেন। ঘাটলাটি কার ইশারায় সঠিক স্থানে নির্মিত হয়নি জানতে চাইলে এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না বলে দাবি করেন। এটি হয়েছে জেলা পরিষদের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কারণে তারা একবারও তা তদারকি করে দেখেনি কোথায় তাদের বরাদ্দের কাজটি হচ্ছে।

এ বিষয়টি নিয়ে জেলা পরিষদের প্রকৌশলী মো. ইকবাল হোসেন বলেন, এই কাজটি আমাদের ভুল হয়েছে। আমরা সময় মতো তদারকি না করায় এটি হয়েছে বলে তিনি স্বীকার করে বলেন এ বিষয়টি নিয়ে আমরা পদক্ষেপ নেবো। ঠিকাদারের এখানে দোষ নাই। দোষ হলো যারা তথ্য দিয়েছে তাদের। মূলত অপরাধটা করেছে ওই চেয়ারম্যানের পিতা ও চেয়ারম্যান। তারা ঠিকাদারকে ভুল তথ্য দিয়েছিলেন।

তিনি আরো বলেন, এখন ওই ঘাটলাটি তো আর ভাঙা যাবে না। আমরা ওই বীর মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে একটি নতুন ঘাটলা বরাদ্দ দিব। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, কার ভুলের কারণে সরকারের লাখ-লাখ টাকা রাজস্ব ক্ষতি হলো। সেই ব্যক্তিকে চিহ্নিত করে সরকারের এ ক্ষতির বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা একান্ত প্রয়োজন বলে এলাকাবাসীর জোর দাবি তোলেন।

(ঢাকাটাইমস/৯এপ্রিল/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :