পরিচ্ছন্ন কর্মীকে হয়রানি, এসপিকে তিরস্কার করল সরকার
এক লাখ টাকা চুরিতে জড়িত সন্দেহে এক পরিচ্ছন্ন কর্মীকে নির্যাতন এবং জোর পূর্বক টাকা আদায়ের ঘটনায় পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আব্দুর রহিম শাহ চৌধুরী ‘তিরস্কার’ দণ্ড দিয়েছে সরকার। এই পুলিশ কর্মকর্তা টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার মহেড়া পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারের (পিটিসির) দায়িত্বে আছেন। এর আগে তিনি চুয়াডাঙ্গার পুলিশ সুপার ছিলেন। তিনি বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের ২০তম ব্যাচের কর্মকর্তা।
জানা গেছে, ২০২০ সালের ১৩ মার্চ চুরির দায় দিয়ে ফরিদ মিয়া নামে এক পরিচ্ছন্ন কর্মীকে পাশবিক ও অমানবিক নির্যাতনের গুরুতর অভিযোগ ওঠে পিটিসির এসপি আব্দুর রহিম শাহ চৌধুরীর বিরুদ্ধে। পুলিশ সুপারের নির্দেশে ওই পরিচ্ছন্ন কর্মীকে তিন দিন থানায় আটকে রেখে শারীরিক নির্যাতন চালান মির্জাপুর থানার এসআই আবুল বাশার মোল্লা এবং এএসআই মেহেদী হাসান। এই ঘটনার ন্যায় বিচার চেয়ে নির্যাতিত পরিচ্ছন্ন কর্মী ফরিদ মিয়া পুলিশ সুপার ও দুই পুলিশ অফিসারকে আসামি করে টাঙ্গাইলের বিজ্ঞ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতে (মির্জাপুর অঞ্চল) মামলা করেন। বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে র্যাব-১২ কমান্ডিং অফিসারকে তদন্তের নির্দেশ দেন। এর আগে ফরিদ মিয়া পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি), স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্র সচিব বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন।
এদিকে ৪ এপ্রিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, পিটিসির এসপির বাসা থেকে একলাখ টাকা চুরির ঘটনায় সন্দেহভাজন ছিলেন পরিচ্ছন্নতা কর্মী ফরিদ মিয়া। পরে ২০২০ সালের ১৫ মার্চ ফরিদ ও তার স্বজনদের বাসায় ডেকে এনে অবৈধভাবে চাপ প্রয়োগ করে ৭০ হাজার টাকা আদায় করা হয়। পুলিশের ঊধ্বর্তন কর্মকর্তা হিসেবে চুরির ঘটনার মতো আমলযোগ্য ঘটনায় বিদ্যমান আইনের মাধ্যমে বিষয়টি নিস্পত্তি না করে সন্দেহভাজন ব্যক্তির কাছ থেকে জোরপূর্বক টাকা আদায়ের ঘটনায় ২০২১ সালের জানুয়ারিতে এসপি আব্দুর রহিম শাহ চৌধুরীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার আগে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। পুলিশ সুপার আব্দুর রহিম এ ঘটনায় কারণ দর্শালে উভয় পক্ষের শুনানি শেষে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়। পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে গুরুদণ্ড আরোপের প্রয়োজনীয়তা থাকায় সরকারি কর্মচারী বিধিমালা অনুযায়ী একজন অতিরিক্ত ডিআইজিকে তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। তদন্ত কর্মকর্তা গতবছরের ২২ ডিসেম্বর প্রতিবেদনে জানান, এসপির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। এরই পরিপেক্ষিতে অপরাধের প্রকৃতি ও মাত্রা বিবেচনায় সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর ৩(খ) বিধি অনুযায়ী ‘অসদাচরণ’ এর প্রমাণিত অভিযোগে একই বিধিমালার ৪(২) এর উপ বিধি (১)(ক) অনুযায়ী তাকে ‘তিরস্কার’ দণ্ড প্রদান করা হলো।
ঢাকাটাইমস/০৯এপ্রিল/এসএস/