বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা প্রশংসনীয়

মো. খসরু চৌধুরী সিআইপি
 | প্রকাশিত : ১১ এপ্রিল ২০২৩, ০৯:৪৭

দারিদ্র্য দূরীকরণ, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন, মাতৃমৃত্যু-শিশুমৃত্যুর হার হ্রাস, গড় আয়ু বৃদ্ধি, নারীর ক্ষমতায়ন, শিক্ষার হার বৃদ্ধিসহ নানা আর্থ-সামাজিক সূচকে বাংলাদেশ বেশ উন্নতি করেছে। নানামুখী কর্মসংস্থানমূলক ও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি গ্রহণের ফলে দেশে ক্রমেই কমছে দারিদ্র্যের হার।

নগদ অর্থ ও খাদ্য সহায়তার মধ্যে ভিজিএফ, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি, ওএমএস, জিআর (খাদ্য), কাবিটা, কাবিখা এবং ভিডব্লিউবি কার্যক্রমের মাধ্যমে বর্তমানে মানুষ খাদ্যসুবিধা পাচ্ছে। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা, শহীদ পরিবার ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা ও সম্মানী ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, বয়স্ক ভাতা, স্বামী নিগৃহীত ও বিধবা ভাতা, মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচি, হিজড়া, বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন ভাতা হিসাবে দেওয়া হচ্ছে নগদ অর্থ।

সামাজিক সূচকে বাংলাদেশ ভারত বা পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে আছে। কয়েক বছর ধরেই দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবেশ উন্নয়নে বাংলাদেশের অগ্রগতি দেশের সীমা ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও আলোচিত। গত ১৪ বছরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বা সামাজিক উন্নয়ন যা-ই বলি না কেন সব সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতি অভূতপূর্ব। সামাজিক নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, অবকাঠামো উন্নয়ন, দারিদ্র্য হ্রাস, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি- সব ক্ষেত্রই বিশ্বে বাংলাদেশ এখন এক বিস্ময়ের নাম।

স্বাধীনতার পর ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে দেশের জিডিপির আকার ছিল ৬৪ দশমিক শূন্য ৯ বিলিয়ন টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে সেটি বেড়ে হয়েছে ৩৯ হাজার ৭৬৪ দশমিক ৬২ বিলিয়ন টাকা। তুলনামূলক হিসাব করলে এটি ৬২০ গুণ বেশি হয়।

২০২০ সালের শুরু থেকে বিশ্বজুড়ে লেগে আছে করোনা মহামারি। বছরখানেক ধরে চলছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। নতুন বছরে মন্দার আশঙ্কা করছে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফসহ অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা। বিশ্ব অর্থনীতির এতসব কঠিন চ্যালেঞ্জের মধ্যেও বাংলাদেশের জিডিপির আকার অনেক বেড়েছে। ৪৬৫ বিলিয়ন ডলার জিডিপি নিয়ে ২০২২ সালে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৩৫তম। এর আগের বছরে এই অবস্থান ছিল ৪১, সে সময় বাংলাদেশের জিডিপির আকার ছিল ৩৯৭ বিলিয়ন ডলার। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে তৈরি এই তালিকায় বিশ্বের ৫০টি বৃহত্তম অর্থনীতির দেশের তালিকায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে শুধু ভারত ও বাংলাদেশ।

একটি দেশের অভ্যন্তরে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের একটি বড় নির্ণায়ক জিডিপি। একটি দেশে, একটি নির্দিষ্ট সময়ে সরকারি ও বেসরকারি খাতের পুরো অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের (পণ্য ও পরিষেবা- সবই) মোট মূল্য ওঠে আসে জিডিপিতে। বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে একটি হওয়া সত্যিই প্রশংসনীয়।

বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকা যেভাবে ঘুুরছে, সেভাবে ঘুরতে থাকলে আমাদের আর পেছন ফিরে তাকাতে হবে না। বাংলাদেশ আরো অনেক দূর এগিয়ে যাবে এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়। সব রকমের কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করে বাংলাদেশে তার উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখবে- এটা প্রত্যাশা।

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি শপথ নিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে এবং দলটির সভানেত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণ করেন। এরপর থেকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে সর্বোচ্চ আন্তরিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রতিটি সেক্টরেই লেগেছে উন্নয়নের ছোঁয়া ও খুলে গেছে অযুত সম্ভাবনার দ্বার। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারীর অবস্থা, দারিদ্র্য দূরীকরণ ইত্যাদি সামাজিক খাতে গত কয়েক দশকে বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে। এ অগ্রগতিকে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকেরা ‘ঈর্ষণীয়’ বলে বর্ণনা করেন। এভাবেই প্রতিটি ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ মাথা উচুঁ করে সম্মানের সাথে এগিয়ে যাচ্ছে।

সরকার ক্ষমতা গ্রহণের আগে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তা অনেক আগেই পূরণ করেছে। ইতোমধ্যেই জনগণের প্রত্যাশার চেয়েও বেশিকিছু করতে পেরেছে। গুণগত ও সংখ্যাগত দুই দিক থেকেই উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়েছে। কৃষিক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকা প্রশংসার দাবি রাখে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা এসেছে, আমরা বাইরে রপ্তানিও করতে পারি। দেশে অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান হয়েছে। আইটি সেক্টর আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। এসব ইতিবাচক পরিবর্তনগুলোকে অব্যাহত রাখতে পারলে অচিরেই দেশ সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হবে।

শিক্ষায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। বছরের প্রথম দিনেই বিনামূল্যে সকল পাঠ্যবই পাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। আগে মেয়েরা পড়াশুনায় অনগ্রসর ছিল, এখন উপবৃত্তিসহ বিভিন্ন প্রণোদনার কারণে মেয়েদের শিক্ষিত করার ব্যাপারে অভিভাবকদের সচেতনতা বেড়েছে এবং মেয়েরাও শিক্ষা গ্রহণে আগ্রহী হয়েছে।

দেশপ্রেমী প্রবাসী বাংলাদেশিরা তাদের কষ্ঠার্জিত উপার্জন দেশে পাঠাচ্ছে। বাড়ছে রেমিটেন্স, বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ হচ্ছে সুনিশ্চিত। মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন হয়েছে, মাথাপিছু আয় বেড়েছে।

একসময় বাংলাদেশ এলডিসিভুক্ত ছিল। বলা হতো অনুন্নত দেশ, তারপর বলা হতো উন্নয়নকামী দেশ। নিম্ন বা গরিব দেশ থেকে এখন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের বড় অবদান রয়েছে। আমরা যদি দক্ষ শ্রমিক বিদেশে পাঠাতে পারি তাহলে রেমিটেন্স আরো বাড়বে। গ্যাস-বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করতে পারলে শিল্প-কারখানা আরো গড়ে উঠবে, বিদেশি বিনিয়োগও বাড়বে।

বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা আজ দৃশ্যমান। এক সময় বাংলাদেশকে যারা তলাবিহীন ঝুড়ি বলতো, আজ তারাই দেশের উন্নয়ন নিয়ে প্রশংসা করেন। এটাই আওয়ামী লীগের অর্জন। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নারী নেত্রীদের মধ্যে আইকন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, চীনসহ সকলের সাথে সুসম্পর্ক রেখে দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছেন। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৮ সালে জাতীয় নির্বাচনে যে স্বপ্ন দেশের মানুষকে দেখিয়ে ছিলেন, আজকে সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ লাভ করেছে।

লেখক: পরিচালক, বিজিএমইএ; শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ; চেয়ারম্যান, নিপা গ্রুপ ও কেসি ফাউন্ডেশন

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :