বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডে সিটি কপোরেশনের তদন্ত প্রতিবেদনে যে কারণ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১১ এপ্রিল ২০২৩, ১৯:৪৭ | প্রকাশিত : ১১ এপ্রিল ২০২৩, ১৯:৪০

রাজধানীর বঙ্গবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কপোরেশনের (ডিএসসিসি) গঠিত তদন্ত কমিটি মঙ্গলবার মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের কাছে প্রতিবেদন দিয়েছে। এতে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত দোকান, ব্যবসায়ীর তালিকা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া অগ্নিকাণ্ডের কারণ বেশ কিছু কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে।

অগ্নিকাণ্ডের কারণ:

অগ্নিকাণ্ডের পরদিন গত ৫ এপ্রিল দুপুর আড়াইটার দিকে কমিটির সদস্যরা অগ্নিকাণ্ডের স্থান সরেজমিন পরিদর্শন করেন। ঘটনাস্থলে ক্ষতিগ্রস্ত মার্কেট সমিতির নেতৃবৃন্দ, সাধারণ ব্যবসায়ী, দারোয়ান, নাইটগার্ড, ইলেকট্রিশিয়ান, সমিতির পিয়নসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত মার্কেটের ভৌত অবকাঠামো ও অগ্নিকাণ্ডের কারণ উদ্ঘাটনের বিষয়ে কথা বলেন।

এক.

প্রতিবেদনে তদন্ত কমিটি জানায়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মালিকানাধীন বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের চারটি মার্কেট (গুলিস্তান ইউনিট, বঙ্গ ইউনিট, মহানগরী ইউনিট, আদর্শ ইউনিট) এবং মহানগর শপিং কমপ্লেক্সের ভৌত অবকাঠামো টিন, লোহার অ্যাঙ্গেল ও কাঠ দিয়ে নির্মিত।

আদর্শ ইউনিট ও মহানগরী ইউনিটের মাঝখানে উত্তর দক্ষিণ বরাবর দশফুট প্রশস্ত একটি গলি বা রাস্তা আছে। এছাড়া অন্যান্য ইউনিট বা মার্কেটের দোকানগুলোর মাঝে সরু রাস্তা রয়েছে। সবগুলো মার্কেটই তিনতলা বিশিষ্ট। তবে আদর্শ ইউনিটের তিনতলার ওপরে নিরাপত্তা প্রহরী ও বৈদ্যুতিক মিস্ত্রীদের থাকার জন্য চারতলা পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়।

অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত মার্কেটগুলোতে প্যান্ট, গেঞ্জি, লুঙ্গি, শাড়ি, জ্যাকেট, শীতের পোশাকসহ নানা রকমের তৈরি পোশাক বিক্রয় করা হত এবং ওই সমস্ত মালামাল রাখার জন্য অনেকগুলো গোডাউন ছিল। মার্কেটের সব আইটেমই ছিল সহজদাহ্য। মার্কেটগুলো অগ্নিকাণ্ডের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হলেও সেখানে অগ্নি নির্বাপনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ছিল না।

দুই.

মার্কেটগুলো অগ্নিকাণ্ডে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় বিদ্যমান কাঠামো ভেঙে পাকা ভবন নির্মাণের জন্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি ২০১৭ সালের ২৩ জুলাই ক্ষতিগ্রস্ত মার্কেটের নেতৃবৃন্দ বরাবর একাধিকবার চিঠি দেয়। কিন্তু মার্কেটের দোকান মালিক কিংবা সমিতির নেতারা তা কর্ণপাত না করে উল্টো সিটি কর্পোরেশনের বিরুদ্ধে আদালতে তিনটি রিট পিটিশন দায়ের করেন। যা এখনও চলমান।

তিন.

বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে ঘটনার সূত্রপাত কি-না তারও অনুসন্ধান করেছে তদন্ত কমিটি। এতে-বঙ্গবাজার আদর্শ ইউনিটের তৃতীয় তলার যে এমব্রয়ডারি টেইলার্স থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটে বলে বলা হয়, সেখান থেকে মার্কেটের বৈদ্যুতিক ডিস্ট্রিবিউসন বক্স আনুমানিক ৫০ গজ দূরে অবস্থিত। তাই ডিস্ট্রিবিউসন বক্স থেকে শর্ট সার্কিট হলে সেটি তার আশেপাশের সংলগ্ন এলাকায় আগুনের সূত্রপাত ঘটাতো। যা ৫০ গজ দূরে তৃতীয় তলায় অবস্থিত টেইলার্সের বন্ধ দোকানে পৌঁছানোর সম্ভাবনা কম বা নেই বলা চলে।

চার.

এছাড়া মার্কেটের প্রতি তলায় সিকিউরিটি লাইনে কাটআউট সিস্টেমের মাধ্যমে আলাদা আলাদা বৈদ্যুতিক সংযোগ ছিল। নিরাপত্তা প্রহরীরা যখন তৃতীয় তলায় আগুন নেভাতে যায় তখন সিকিউরিটি লাইটগুলো সঠিকভাবে জ্বলতে দেখে।

প্রত্যক্ষদর্শী বিদ্যুৎ মিস্ত্রিও জানান, দুর্ঘটনার সময় ওই তলার সিকিউরিটি লাইনে বৈদ্যুতিক বাতিগুলো সঠিকভাবে জ্বলছিল। তাই শর্ট সার্কিটের মাধ্যমে তৃতীয় তলায় অবস্থিত বন্ধ দোকানের ভেতরে আগুন লাগার সম্ভাবনা কম বা নেই বললেই চলে।

পাঁচ.

তাছাড়া নিরাপত্তা প্রহরীরা গোপনে তাদের রুমের ভেতর বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি বা রান্নার চুলা ব্যবহার করতে পারে। সেক্ষেত্রে শর্ট সার্কিট বা অন্য কোনও কারণে আগুন লাগলে, সেটার সূত্রপাত চতুর্থ তলাতেই হওয়ার কথা। কিন্তু তাদের বক্তব্যমতে তৃতীয় তলার এমব্রয়ডারি টেইলার্স থেকেই আগুনের সূত্রপাত হয়েছে।

বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীর সংখ্যা ৩৮৪৫

রাজধানীর বঙ্গবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীর সংখ্যা তিন হাজার ৮৪৫ জন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কপোরেশনের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। মঙ্গলবার বিকাল পাঁচটায় কমিটির সভাপতি ও অঞ্চল-১ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মেরীনা নাজনীন মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বঙ্গবাজারে সংগঠিত অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীর সংখ্যা তিন হাজার ৮৪৫ জন। যার মধ্যে- বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সর বঙ্গ ইউনিটে ৮৬৩, গুলিস্তান ইউনিটে ৮২৮, মহানগরী ইউনিটে ৫৯৯ এবং আদর্শ ইউনিটে ৬৭১ দোকান মালিকের তালিকা পাওয়া গেছে।

এছাড়া মহানগর শপিং কমপ্লেক্সে বেসরকারি মালিকাধীন দোকান ছিল ৭৯১টি। আর এনেক্সকো টাওয়ারের দোকানের সংখ্যা জানা যায়নি। মার্কেটটির প্রায় সব দোকানের বীমা রয়েছে বলে জানা গেছে। তাছাড়া বঙ্গ ইসলামিয়া মার্কেটে ৫৯ এবং বঙ্গ হোমিও কমপ্লেক্সে ৩৪ টি অনানুষ্ঠানিক ও স্বাক্ষরবিহীন তালিকা পেয়েছে তদন্ত কমিটি।

গত ৪ এপ্রিল বঙ্গবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে ফায়ার সার্ভিসের প্রায় অর্ধশতাধিক ইউনিট ঘটনাস্থলে কাজ করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। দুদিনের বেশি সময় পর আগুন পুরোপুরি নির্বাপণ করা সম্ভব হয়।

(ঢাকাটাইমস/১১এপ্রিল/এসএস/এসএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজধানী বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজধানী এর সর্বশেষ

দক্ষিণখানে মাদক ব্যবসায়ীর ছুরিকাঘাতে যুবক খুন

অবসরে যাওয়া সদস্যদের জন্য ‘পেনশন অ্যান্ড রিটায়ার্ড সার্ভিস’ চালু হবে: ডিএমপি কমিশনার

ময়লার গাড়ির ধাক্কায় স্কুলছাত্র নিহত: ডিএসসিসির গাড়িচালকসহ ৩ জন চাকরিচ্যুত

ফায়ার সার্ভিসের অভিযান শেষ, মহাখালী লেকে নেই শিশু রিয়া

রাজধানীতে তাপপ্রবাহ: পানি পানি বলেই মাথা ঘুরে পড়ে গেলেন নারী

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় তীব্র পানির সংকট, চরম দুর্ভোগে মানুষ

গুলিস্তানে ‘হিট স্ট্রোকে’ কমিউনিটি পুলিশ সদস্যের মৃত্যু

তাপপ্রবাহ: সড়কে সড়কে মানবিকতার ছোঁয়া

গুলশানে হাত-পা বেঁধে নয়তলা থেকে ফেলে যুবককে হত্যা, চোখে অন্ধকার দেখছেন অন্তঃস্বত্ত্বা স্ত্রী

ডেমরায় কুকুরের কামড়ে গুরুতর আহত শিশু মাহিনুর

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :