মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী আব্দুল মতিন গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৪ এপ্রিল ২০২৩, ১৭:৫৭ | প্রকাশিত : ২৪ এপ্রিল ২০২৩, ১৫:৫৪

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী মো. আব্দুল মতিনকে (৭০) গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। রবিবার সিলেটের গোলাপগঞ্জ এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন সোমবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।

সংবাদ সম্মেলনে আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের তদন্ত সংস্থা ২০১৪ সালের ১৬ অক্টোবর গ্রেপ্তারকৃত আব্দুল মতিন, আব্দুল মান্নান ওরফে মনাই এবং আব্দুল আজিজ ওরফে হাবুলের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে। ২০১৬ সালের ১৪ নভেম্বরে তদন্ত শেষ হয়। তদন্ত চলাকালীন ট্রাইব্যুনাল তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। তখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আব্দুল আজিজ ওরফে হাবুল ও আব্দুল মান্নান ওরফে মনাইকে গ্রেপ্তার করে। তারা বর্তমানে কাশিমপুর কারাগারে আটক রয়েছেন।

অন্যদিকে আব্দুল মতিন তখন গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে চলে যান। পরবর্তীতে গভীর তদন্তে আসামিদের বিরুদ্ধে আনা পাঁচটি অভিযোগ প্রসিকিউশনের মাধ্যমে প্রমাণিত হলে ২০২২ সালের ১৯ মে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল আব্দুল মতিন, আব্দুল আজিজ এবং আব্দুল মান্নানকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন।

সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক বলেন, গ্রেপ্তার আব্দুল মতিনের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ ও ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়। আব্দুল মতিন এবং এই মামলার অপর আসামি তারই আপন ভাই আব্দুল আজিজ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের বারপুঞ্জিতে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণ শেষে তারা পালিয়ে বড়লেখায় এসে রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেন।

আব্দুল মতিন বড়লেখা থানা জামায়াত ইসলামী এবং ১৯৭১ সালে গঠিত ইসলামী ছাত্র সংঘের সক্রিয় সদস্য ছিল। আব্দুল মতিনসহ রাজাকার বাহিনীর অন্যান্য সদস্যরা মিলে মৌলভীবাজার এলাকায় হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ড চালাতো।

সংবাদ সম্মেলনে আরিফ মহিউদ্দিন বলেন, ১৯৭১ সালের ১৯মে আব্দুল মতিনসহ এই মামলার অপর দুই আসামি আব্দুল আজিজ, আব্দুল মান্নান এবং তাদের সহযোগীরা মিলে মৌলভীবাজারের বড়লেখা থানার ঘোলসা গ্রাম থেকে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির নেতা হরেন্দ্রলাল দাস ওরফে হরিদাস, মতিলাল দাস, নগেন্দ্র কুমার দাস এবং শ্রীনিবাস দাসকে অপহরণ করে।

তাদেরকে তিনদিন ধরে বড়লেখা সিও অফিস রাজাকার ক্যাম্পে আটক রেখে অমানবিক নির্যাতন করার পরে জুড়ি বাজার বধ্যভূমিতে নিয়ে যায়। সেই বধ্যভূমিতে হরেন্দ্রলাল দাস ওরফে হরিদাস, মতিলাল দাস এবং নগেন্দ্র কুমার দাস এই তিনজনকে হত্যা করা হয়। অপহরণকৃত শ্রীনিবাস দাস নির্যাতিত অবস্থায় কোনক্রমে পালিয়ে কয়েকদিন পর বাড়ি ফিরে যান।

সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক বলেন, ১৯৭১ সালের অক্টোবর মাসের শেষের দিকে আব্দুল মতিন, মামলার অপর আসামি আব্দুল আজিজ ও আব্দুল মান্নানের নেতৃত্বে রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা বড়লেখা থানার কেছরিগুল গ্রামের বাসিন্দা সাফিয়া খাতুন এবং আব্দুল খালেককে অপহরণ করে কেরামত নগর টি-গার্ডেন রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে যায়। ওই রাজাকার ক্যাম্পে আসামিরা সাফিয়া খাতুনকে পালাক্রমে গণধর্ষণ করে। পরবর্তীতে তারা টি-গার্ডেন রাজাকার ক্যাম্প থেকে সাফিয়া খাতুনকে প্রথমে শাহবাজপুর রাজাকার ক্যাম্প এবং কিছুদিন পর বড়লেখা সিও অফিস রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে যায়।

সেখানেও সাফিয়া খাতুনকে গণধর্ষণ করা হয়। ওই বছরের ৬ ডিসেম্বর বড়লেখা হানাদারমুক্ত হলে মুক্তিযোদ্ধারা সাফিয়া খাতুনকে সিও অফিসের বাংকার থেকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে। ওই বছরের ১৩ নভেম্বর আব্দুল মতিনসহ রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা মিলে বড়লেখা থানার পাখিয়ালা গ্রামে মুক্তিযোদ্ধা মঈন কমান্ডারের বসতবাড়িতে সশস্ত্র হামলা করে ব্যাপক লুটপাট চালায়।

মুক্তিযোদ্ধা মঈনের বাবা বছির উদ্দিন, চাচা নেছার আলী, ভাই আইয়ুব আলী ও ভাতিজা হারিছ আলীকে অপহরণ করে বড়লেখা সিও অফিস রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে যায়। সেখানে তাদেরকে কিছুদিন আটক রেখে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয়। পরবর্তীতে ৬ ডিসেম্বর বড়লেখা হানাদারমুক্ত হলে মুক্তিযোদ্ধারা তাদেরকে রাজাকার ক্যাম্প থেকে উদ্ধার করেন।

আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ১৯৭১ সালের ১৪ নভেম্বর আব্দুল মতিন, মামলার অপর আসামি আব্দুল আজিজ ও আব্দুল মান্নানের নেতৃত্বে রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা বড়লেখা থানার হিনাই নগর গ্রামে মুক্তিযোদ্ধা মুস্তাকিন কমান্ডারের বাড়িতে সশস্ত্র হামলা করে। মুক্তিযোদ্ধা মুস্তাকিনকে তারা বাড়িতে না পেয়ে মুস্তাকিনের ভাই মতছিন আলীকে অপহরণ করে বড়লেখা সিও অফিস রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন করে। তাদের অমানবিক নির্যাতনের ফলে মতছিন আলীর পা ভেঙে যাওয়াসহ গুরুতর আহত হয়। পরবর্তীতে রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা মুস্তাকিন ও মতছিন আলীর বসতবাড়িতে লুটতরাজ চালায় এবং অগ্নিসংযোগ করে কয়েকটি টিনের ঘর পুড়িয়ে দেয়।

ওই বছরের ১৭ নভেম্বর আব্দুল মতিন এবং অন্যান্যরা মিলে বড়লেখা থানার ডিমাই বাজার থেকে মুক্তিযোদ্ধা মনির আলীকে আটক করে। তাকে সঙ্গে করে নিয়ে তার ভাই মুক্তিযোদ্ধা হাবিব কমান্ডারকে আটক করার জন্য তাদের বাড়িতে হামলা চালায়। সেখান থেকে তারা মনির আলী ও তার স্ত্রী আফিয়া বেগমকে অপহরণ করে কেরামত নগর টি-গার্ডেন রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে যায়।

ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়ার পরে তারা মনির আলীর স্ত্রী আফিয়া বেগমকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। বসতবাড়িতে হামলা চালানোর সময় হাবিব কমান্ডার ও মনির আলীর ঘরের যাবতীয় মালামাল লুটপাট করে নিয়ে যায় রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা।

সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব অধিনায়ক আরও বলেন, গ্রেপ্তার আব্দুল মতিনের বিরুদ্ধে ২০১৬ সালে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়ার পরপরই গ্রেপ্তার এড়াতে তিনি পলাতক জীবন যাপন শুরু করেন। তিনি মৌলভীবাজারের বড়লেখা থানার পাখিয়ালা গ্রামের নিজ বাড়ি ছেড়ে সিলেটের গোলাপগঞ্জ থানা এলাকায় তার ভাগ্নের বাড়িতে আত্মগোপন করেন।

সেখানে তিনি নিজেকে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিচয় দিতেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে শুরু করে পলাতক জীবন শুরু করার আগ পর্যন্ত আব্দুল মতিন জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তার ভাগ্নের বাড়িতে দীর্ঘ সাত বছর ধরে পলাতক থাকার সময় রবিবার রাতে র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন।

গ্রেপ্তার মো. আব্দুল মতিন মৌলীভীবাজার জেলার বড়লেখা থানার পাখিয়ালা গ্রামের প্রয়াত মিরজান আলীর ছেলে।

(ঢাকাটাইমস/২৪এপ্রিল/এএ/এসএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

অপরাধ ও দুর্নীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

অপরাধ ও দুর্নীতি এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :