তিন বছর পর আবারো চালু হচ্ছে ফেনীর বর্ডার হাট
দুই দেশের নো-ম্যাস ল্যান্ডে আবার বসবে মিলনমেলা। দীর্ঘদিন বেকার থাকার পর আবার কাজে ফেরার অপেক্ষায় আছেন হাটটির দোকান মালিক ও কর্মচারীরা। সীমান্ত হাটকে ঘিরে আবারও নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের কথা ভাবছেন স্থানীয়রাও। এ হাটকে ঘিরে শুধু বিকি-কিনি নয় বসত দুই দেশের মিলনমেলা। তৈরি হতো হাসি-আনন্দের দৃশ্যপট। দুই দেশে অবস্থানরত আত্মীয়-স্বজনদের দেখা করতে লাগত না পাসপোর্ট ভিসা। সেই মেলবন্ধন আবার তৈরি হওয়ার কথা ভেবে হাটের পাশের দুদেশের স্থানীয়দের মধ্যেও বিরাজ করছে উচ্ছ্বাস।
দীর্ঘ তিন বছর বন্ধ থাকার পর ৯ মে চালু হচ্ছে ফেনীর ছাগলনাইয়া-শ্রীনগর (ভারত) সীমান্ত হাট। বাংলাদেশ-ভারতের সংশ্লিষ্ট জেলার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটসহ ব্যবস্থাপনা কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। এটি চালু হলে ক্ষতি পুষিয়ে ওঠার আশা করছেন ব্যবসায়ীরা। বাংলাদেশ অংশে প্রতি সপ্তাহের সোমবার অর্থাৎ হাটের আগের দিন ছাগলনাইয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে টিকিট বিক্রি করা হবে।
দুই দেশের সীমান্তবাসীদের মধ্যে সম্প্রীতি বাড়ানো ও বাণিজ্য প্রসারে বাংলাদেশের ফেনী জেলার ছাগলনাইয়ার মধুগ্রাম ও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের শ্রীনগর সীমান্তে ২০১৫ সালের ১৩ জানুয়ারি চালু হয় দেশের তৃতীয় সীমান্ত হাট। দুই দেশের আশপাশের পাঁচ কিলোমিটারে বসবাসরত গ্রামবাসীদের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সপ্তাহের একদিন বেচাকেনা হতো এ হাটে। এ হাটটিতে ভারত-বাংলাদেশিদের জন্য আলাদা আলাদা শেডে ২৭টি করে দোকান আছে।
পাঁচ বছর বেশ ভালোই চলছিল হাটের কার্যক্রম। পৃথিবীব্যাপী করোনা মহামারি ছড়িয়ে পড়ার পর ২০২০ সালে ৩ মার্চ বন্ধ হয়ে যায় হাটটি। তিন বছর পর আবার চালু হওয়ার অপেক্ষা এখন।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, হাট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা বেকার হয়ে পড়েছিলেন। আবার যদি চালু হয়, তাহলে তারা কর্মসংস্থানে ফিরবেন। হাটটি চালু হলে সুদিন ফেরার আশা করছেন স্থানীয়রাও।
হাট ব্যবস্থাপনা কমিটি সূত্র জানায়, মহামারি করোনার কারণে ২০২০ সালের মার্চে হাটটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেয় দুদেশের ব্যবস্থাপনা কমিটি। এ হাটটি ব্যবসার জন্য যেমন চাঙা ছিল, তেমনি পণ্য বেচাকেনার পাশাপাশি দুই বাংলার মিলনমেলা বসত। হাটকে কেন্দ্র করে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকার দরিদ্র মানুষ গড়ে তুলছিলেন জীবন-জীবিকা। তিন বছর বন্ধ থাকায় তাদের মানবেতর জীবন কাটছিল। অবশেষে হাটটি চালুর খবরে খুশি ব্যবসায়ীরা।
হাটের দোকান মালিক ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি নুরুল আফসার বলেন, আমরা বেশ কয়েক বছর ভালোভাবেই হাটে ব্যবসা করেছি। এখানে ব্যবসা করে অনেকের ভাগ্য ফিরেছে। দীর্ঘদিন হাট বন্ধ থাকায় ব্যবসায়ী ও কর্মচারীরা বেকার হয়ে কষ্টে আছেন। হাটটি আবার চালু হলে ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবেন।
ভবানী দাস নামে নারী দোকানি বলেন, অনেক কষ্টে ঋণ করে হাটে একটি দোকান দিয়েছিলাম। ভালোই চলছিল। হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পথে বসতে হয়েছে। ঠিকমতো চলতেও পারছি না। লোনের জন্য মানবেতর জীবনযাপন করছি। হাট চালু হলে অবস্থার পরিবর্তন হবে।
ফেনী জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) অভিষেক দাশ বলেন, নিয়ম-কানুন অনুযায়ী প্রত্যেক সপ্তাহের মঙ্গলবার বর্ডার হাট খোলার সিদ্ধান্ত হয়। নিরাপত্তা নিশ্চিত, চোরাচালান প্রতিরোধ ও আগত ক্রেতা বিক্রেতাদের হয়রানি বন্ধে কঠোর নজরদারি অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
(ঢাকাটাইমস/৩০এপ্রিল/এলএ)