বর্ডার হাটে খুলবে শেরপুরের হাজারো মানুষের কর্মসংস্থানের নতুন পথ

সুজন সেন, শেরপুর
| আপডেট : ১৮ মে ২০২৩, ১৭:৫৬ | প্রকাশিত : ১৮ মে ২০২৩, ১৭:৩৭

শেরপুরের সীমান্তবর্তী নালিতাবাড়ীতে বর্ডার হাট নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত স্বপ্ন দেখছেন ওই এলাকার মানুষ। স্থানীয়রা বলছেন, উপজেলার কোচ আদিবাসী অধ্যুষিত খলচান্দা গ্রামে প্রস্তাবিত বর্ডার হাট স্থাপন হলে এই গ্রামসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের হাজারো মানুষের নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। অন্যদিকে জেলা প্রশাসন বলছে, বর্ডার হাট স্থাপনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে। এ কারণে ডিএম পর্যায়ে দুই দেশের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে আলোচনা হয়েছে। এ সময় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারও ছিলেন। আলোচনায় এ বিষয়ে ভারতীয় প্রতিনিধি দলের যথেষ্ট আগ্রহ লক্ষ্য করা গেছে। এখন দুই দেশের মন্ত্রণালয় পরবর্তী করণীয় ঠিক করবেন।

সরেজমিনে গেলে স্থানীয় এনজিও কর্মী রাবেতা ম্রং, ভারত-বাংলাদেশের ব্যবসা বাণিজ্য প্রসার ও স্থানীয় অধিবাসীদের সম্পর্ক উন্নয়নের লক্ষে নালিতাবাড়ীর পোড়াগাঁও ইউনিয়নের খলচান্দা গ্রামে দুই দেশের জেলা পর্যায়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণে সম্প্রতি প্রস্তাবিত বর্ডার হাটের স্থানটি পরিদর্শন করা হয়েছে। এরপর থেকেই ওই গ্রামের হাজারো কোচ আদিবাসী স্বপ্ন বুনছেন নতুন কর্মসংস্থানের।

এনজিও কর্মী রাবেতা ম্রং আরও বলেন, পাহাড়ঘেরা হওয়ায় এই গ্রামটি অনেকটা জনবিচ্ছিন্ন। এ গ্রামের অধিকাংশ মানুষের নেই কোন স্থায়ী কর্মসংস্থান। এক সময় তারা নিজেদের সামান্য আবাদী জমি চাষাবাদ করে, পাহাড় থেকে লাকড়ি সংগ্রহ করে, বাঁশ দিয়ে চাটাই ও ডোল তৈরি করে বাজারে বিক্রি করে সংসার চালাতো। প্রায় দুই যুগ থেকে গারো পাহাড়ে বন্যহাতির তান্ডব শুরু হলে এলাকার বেশির ভাগ জমি অনাবাদি হয়ে পড়ে। কিছু কিছু জমি আবাদ করা হলেও ফসল ঘরে তোলার আগেই চলে যায় বন্য হাতির পেটে। বর্ডার হাটটি স্থাপন করা হলে খলচান্দায় বসবাসরত ৫৫টি পরিবারসহ আশপাশের পোড়াগাঁও, নয়াবিলসহ আরও বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের বহু মানুষ উপকৃত হবে।

স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক দুলাল কোচ বলেন, গারো পাহাড়ে বন বিভাগের সামাজিক বনায়ন সৃজন হওয়ার পর এখন আর বনে লাকড়ি নেই। তাই স্থানীয়রা জীবিকার সন্ধানে ছুটেন দিগবিদিক। কেউ কেউ দিনমজুরি করে অতিকষ্টে সংসার চালান। কেউবা আবার বাড়িতে বেকার বসে থাকেন। সম্প্রতি সরকারি উদ্যোগে ভারত-বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের যৌথ অংশগ্রহণের বর্ডার হাট স্থাপনের খবরে স্থানীয়রা নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন।

ওই গ্রামের বাসিন্দা কৃষক রমেশ কোচ বলেন, আমাদের গ্রামটি একদম ভারত সীমান্তঘেঁষা। এখানে কোনো কর্মসংস্থান নেই। বছরে আমন ও বোরো আবাদের সময় কিছু মানুষ শ্রমিকের কাজ করে সংসার চালায়। আর বাকি সময় তাদের বেকার বসে থাকতে হয়। এখানে বর্ডার হাট হলে আমাদের স্থায়ী কর্মসংস্থান তৈরি হবে। একই সঙ্গে রাস্তাঘাটেরও উন্নয়ন হবে। এতে ছেলে মেয়েরা নিরাপদে স্কুলে যেতে পারবে।

ওই গ্রামের গৃহিণী সীতা রাণী কোচনী বলেন, খলচান্দা গ্রামে বর্ডার হাট বসলে কোচ আদিবাসীদের ঐতিহ্যবাহী তাঁত দিয়ে তৈরিকৃত পোষাক রাঙ্গাপাতি (রাঙ্গা লেফেন) ও কোচদের তৈরি বিভিন্ন জিনিসপত্র বিক্রি করে আমরা চলতে পারতাম।

অপর বাসিন্দা কৃষক পরিমল কোচ বলেন, গারো পাহাড়ে বন্যহাতির তান্ডব থাকলেও হাতি আর মানুষের মাঝে কোনো দ্ব›দ্ব নেই। এখানে বন্যহাতিরা ওদের রাস্তা দিয়ে প্রায় ২৪ বছর ধরে চলাচল করছে। এ পর্যন্ত চলাচলে কোনো সমস্যা হয়নি। তাই এখানে বর্ডার হাট করা হলে বন্যহাতির চলাচলে কোনো সমস্যা হবে না। সীমান্তের নোম্যান্সল্যন্ড এলাকায় অনেক পতিত জমি পড়ে থাকে সেখান দিয়ে বন্যহাতি চলাচল করে। এছাড়া দেশের অন্যতম নাকুগাঁও স্থলবন্দরের পাশ দিয়ে বন্যহাতি চলাচল করে সেখানেও বন্য হাতির চলাচলে কোনো সমস্যা হয় না।

ওই এলাকার বারমারী বাজারের মনোহারী ব্যবসায়ী আকরাম হোসেন বলেন, খলচান্দা গ্রামে বর্ডার হাট স্থাপন করা হলে সেখানে কেনাকাটা ও ব্যবসা বাণিজ্য ছাড়াও দূর-দূরান্ত থেকে প্রস্তাবিত বর্ডার হাটের পাশের গারো পাহাড়ের সৌর্ন্দর্য দেখতে পর্যটকরা ছুটে আসবেন। এতে এলাকার আশপাশের বাজারগুলোতেও বেচাকেনা বাড়বে। এছাড়া বর্ডার হাটে দুই দেশের ক্রেতা সাধারণ ছাড়াও তাদের আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে এই বর্ডার হাটে মিলিত হবেন। মোটকথা খলচান্দা গ্রামে বর্ডার হাট স্থাপন করা হলে এলাকার মানুষের সার্বিক উন্নয়ন হবে। তাই আমরা এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে সরকারে কাছে দ্রুত বর্ডার হাট স্থাপনের জন্য জোর দাবি জানাই।

আরেক ব্যবসায়ী উৎপল সাংমা বলেন, আমরা জানতে পেরেছি বর্ডার হাটে চাহিদা সম্পন্ন পণ্যগুলো বেচাকেনা হবে। এতে বন্ধ হবে চোরাচালান। সীমান্ত এলাকার লোকেরা সহজেই কেনাকাটা করতে পারবেন।

নালিতাবাড়ীর ইউএনও খৃষ্টফার হিমেল রিছিল বলেন, খলচান্দা গ্রামের প্রস্তাবিত বর্ডার হাটের স্থানটি ভারত ও বাংলাদেশের জেলা প্রশাসন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের যৌথ অংশগ্রহণে পরিদর্শনের পর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। একই সঙ্গে ভারতীয় কর্মকর্তারাও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন। দুই দেশের মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন পেলেই বর্ডার হাট স্থাপনের কাজ শুরু করা হবে।

জেলা প্রশাসক সাহেলা আক্তার, বর্ডার হাট স্থাপনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে। এ কারণে ডিএম পর্যায়ে দুই দেশের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে আলোচনা হয়েছে। এ সময় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারও ছিলেন। আলোচনায় এ বিষয়ে ভারতীয় প্রতিনিধি দলের যথেষ্ট আগ্রহ লক্ষ্য করা গেছে। এখন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা পেলে পরবর্তী কাজ এগিয়ে নেয়া হবে।

জেলা প্রশাসক সাহেলা আক্তার আরও বলেন, বর্ডার হাট স্থাপনের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো চোরাচালান রোধ করা। তিনি মনে করেন এই হাট চালু হলে চোরাচালানের প্রবণতা কমবে।

(ঢাকাটাইমস/১৮মে/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :