দুদকে সময় আবেদন করলেন জাহাঙ্গীর আলম, বললেন তাকে ‘হয়রানি’ করা হচ্ছে

বিনা কারণে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তাকে হয়রানি করছে বলে দাবি করেছেন গাজীপুর সিটির সাবেক মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলম। দুদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সময় তিনি আবেদন করেছেন।
রবিবার ঢাকার সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি একথা বলেন। এসময় নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন গাজীপুরের আলোচিত সাবেক এ মেয়র।
জাহাঙ্গীর সাংবাদিকদের বলেন, ‘সরকার আমাকে গাজীপুরে সিটিতে মাত্র দুটি প্রকল্পে মাত্র ৬০০-৭০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল। কিন্তু আমার বিরুদ্ধে সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়েছে। এটা কী করে সম্ভব? এটা কাল্পনিক, বানোয়াট ও মিথ্যা।’
জনপ্রতিনিধি হিসেবে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে হয়রানি করা হচ্ছে অভিযোগ করে জাহাঙ্গীর বলেন, ‘অথচ যারা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ দিয়ে হয়রানি করছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে আমাকে হয়রানি করা হচ্ছে।’
এর আগে ভুয়া ব্যাংক হিসাবে অবৈধ লেনদেন, বিভিন্ন প্রকল্পে অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে জাহাঙ্গীর আলমকে ২১ ও ২২ মে তলব করা হয়।
দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হতে জাহাঙ্গীর আলমকে ওই নোটিশ দেয় দুর্নীতি বিরোধী সংস্থাটির উপ-পরিচালক আলী আকবরের নেতৃত্বে দুটি আলাদা অনুসন্ধান টিম।
ওই নোটিশে বলা হয়ে, নির্ধারিত সময়ে হাজির হয়ে বক্তব্য দিতে ব্যর্থ হলে অভিযোগ বিষয়ে জাহাঙ্গীরের কোনো বক্তব্য নেই বলে গণ্য করা হবে।
জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়ম করে ৭ হাজার ৪০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। ২০২২ সালের ৪ সেপ্টেম্বর দুদক জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ পাওয়ার কথা জানায়।
একই দিন অভিযোগের বিষয়ে দুদক গঠিত অনুসন্ধান টিম গাজীপুরের নগর ভবন, ব্যাংক ও পোশাক কারখানাসহ সংশ্লিষ্ট অফিসে অনুসন্ধান শুরু করে।
সেদিন দুদকের সহকারী পরিচালক আশিকুর রহমান আশিক অভিযোগ পাওয়ার কথা জানিয়ে বলেছিলেন, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সব ধরনের অনিয়ম নিয়ে তদন্ত করা হবে। তদন্তকালে যেসব অভিযোগ প্রমাণিত হবে, সেসব বিষয়ে মামলা হবে।
দুদক সূত্র জানায়, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কয়টি ব্যাংকে কয়টি হিসাব, কার নামে কীভাবে পরিচালিত হয়েছে সেসব তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। তাছাড়া গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে একটি বেসরকারি ব্যাংকে সিটি করপোরেশনের নামে জাহাঙ্গীর আলমের একক স্বাক্ষরে অ্যাকাউন্ট খুলে আড়াই কোটি টাকা দুর্নীতির তথ্যও পেয়েছে দুদক।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে ২০২১ সালের ২৫ নভেম্বর সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। সেদিনই তার অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তের জন্য ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।
এর আগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্কিত বক্তব্যের জেরে সাময়িক বহিষ্কার হন জাহাঙ্গীর আলম। নিজের ভুল স্বীকার করে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে ক্ষমার আবেদন করলে শর্ত সাপেক্ষে গত জানুয়ারিতে তাকে ক্ষমা করা হয়।
তবে এর চার মাস না যেতেই দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন আগের দফায় নির্বাচিত এ মেয়র। পরে সেই মনোনয়নপত্র ঋণখেলাপি হওয়ার অভিযোগে বাতিল করেন রিটার্নিং অফিসার। নির্বাচন কমিশনে আপিল এবং হাইকোর্টে রিট করেও টেকাতে পারেননি প্রার্থিতা। আপিল বিভাগও তার আবেদন খারিজ করে দেন।
এদিকে দল থেকে সাধারণ ক্ষমা পাওয়ার মাত্র চার মাসে এসে গত ১৫ মে জাহাঙ্গীর আলমকে আওয়ামী লীগ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়।
(ঢাকাটাইমস/২১মে/ডিএম)

মন্তব্য করুন