কয়লার অভাবে বন্ধ হচ্ছে পায়রার বিদ্যুৎ উৎপাদন, লোডশেডিং আরও তীব্র হওয়ার আশঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৯ মে ২০২৩, ১০:৪৮ | প্রকাশিত : ২৯ মে ২০২৩, ০৮:২৩

ডলার সংকটের কারণে পর্যাপ্ত কয়লা আমদানি করা যাচ্ছে না। আর কয়লার অভাবে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন। দেশের সর্ববৃহৎ বিদ্যুৎকেন্দ্র পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রেও কয়লা সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে।

পর্যাপ্ত কয়লার মজুত না থাকায় আগামী সপ্তাহে পায়রার ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হতে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

গত ২৫ মে একই কারণে বন্ধ হয়ে যায় ৬৬০ মেগাওয়াটের একটি ইউনিট। ফলে দেশব্যাপী চলমান লোডশেডিং আরও তীব্র হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

এর আগে বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ বিনিয়োগে নির্মিত রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র গত বছরের ডিসেম্বরে উৎপাদনে এসে কয়লা সংকটে বন্ধ হয়ে যায় বেশ কয়েকবার। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর গত ১৫ মে পুরনায় উৎপাদনে আসলেও কয়লার অভাবে পূর্ণ সক্ষমতায় চালানো যাচ্ছে না।

আরও পড়ুন>>লাগামহীন খেলাপি ঋণ

এ অবস্থায় কয়লা সংকট কবে কাটবে তা বলতে পারছেন না বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘আমি বাংলাদেশ ব্যাংককে বলেছি ডলার লাগবে। কিন্তু তারা (বাংলাদেশ ব্যাংক) ডলার নিয়ে কী করছে বুঝতে পারছি না। দেখা যাক।’

প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংক অল্প অল্প করে ডলার দিচ্ছে। কিন্তু আমাদের কয়লা আমদানির জন্য ঋণপত্র খুলতে যে পরিমাণ ডলার লাগে সে পরিমাণ দিতে হবে। ডলার নিয়ে আমরা সমস্যায় পড়ে যাচ্ছি।’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কয়লা সরবরাহ নিশ্চিত করতে না পারলে সামনের দিনগুলোতে বিদ্যুতের চাহিদা মেটানো অসম্ভব হয় পড়বে। সাধারণ মানুষ যেমন লোডশেডিংয়ের ভোগান্তিতে পড়বে এর পাশাপাশি ইন্ডাস্ট্রিয়াল কাজগুলোতেও এর ব্যাপক প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কয়লা আমদানি যদি না করা যায় তাহলে গত বছরের মতো পরিস্থিতি তৈরি হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ইজাজ হোসেন। তিনি বলেন, এ বছর বিদ্যুতের চাহিদা গত বছরের তুলনায় বেশি। কয়লা সংকটে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হলে এ বছর বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের এখন কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের পরিকল্পনাই ছিল এই বছরটায় কয়লার উপর নির্ভরশীল হবো। অর্থাৎ বিদ্যুৎ উৎপাদন বেশি করবো কয়লা দিয়ে।’

পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, উৎপাদনে আসার পর এই প্রথম কয়লাসংকটের কারণে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ হচ্ছে। নতুন কয়লা আমদানি না করা পর্যন্ত এই বিদ্যুৎকেন্দ্র কমপক্ষে ২৫ থেকে ৩০ দিন বন্ধ থাকতে পারে। আর এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ হওয়ায় দেশব্যাপী চলমান লোডশেডিংয়ের তীব্রতা আরও বাড়ার আশঙ্কা করছেন তারা।

বাংলাদেশ চায়না পাওয়ার প্ল্যান্ট কোম্পানি লিমিটেডের (বিসিপিসিএল) বা পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এম খোরশেদুল আলম বলেন, ‘এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুটি ইউনিটের একটি ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। আগামী মাসের ৩-৪ তারিখের মধ্যে দ্বিতীয় ইউনিট বন্ধ হয়ে যাবে। আমরা যদি আজকেই কয়লা আনার জন্য ঋণপত্র খুলি, তাও কয়লা আসতে কমপক্ষে ২০-২৫ দিন সময় লাগবে। সেই হিসাবে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি কমপক্ষে চার সপ্তাহ বন্ধ থাকতে পারে।’

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, কয়লা সরবরাহকারীদের ডলারের সংকটে বকেয়া পরিশোধ করতে না পারার কারণে সরবরাহকারী কয়লা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেছে। এর ফলে কয়লার পর্যাপ্ত জোগান না থাকায় পায়রা বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ দুটি ইউনিটের একটি বন্ধ রাখে।

পিডিবি সূত্র জানিয়েছে, কয়লা সরবরাহকারীদের বকেয়া দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি। পাওনা টাকা দিব-দিচ্ছি করে দিতে না পারায় কয়লা সরবরাহ বন্ধ করে দেয় চীনা প্রতিষ্ঠান। বকেয়া টাকা পরিশোধের জন্য ইতিমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ও পিডিবিকে অনুরোধ করা হয়েছে। পিডিবি গত বৃহস্পতিবার ৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার দিলেও সেটা পর্যাপ্ত নয়। পিডিবির কাছ থেকে আমরা এই মাসের মধ্যে আরও ১০ কোটি ডলার পাব বলে আশা করি।’

পিডিবির পরিচালক (জনসংযোগ) সামিমুল হাসান বলেন, দুইটা ইউনিটের মধ্যে ৬৬০ মেগাওয়াটের একটা ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। আরেকটা এখন খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। দ্বিতীয় ইউনিটটি একেবারে বন্ধ করে না দিয়ে এখন ১০০ থেকে ১৫০ মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। বিদ্যুৎকেন্দ্র একবার বন্ধ করে দিলে চার-পাঁচ দিন লাগে পুনরায় চালু করতে। কয়লার সরবরাহ আবার শুরু হলে সঙ্গে সঙ্গে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র পুনরায় চালু করা যায়, সে জন্য দ্বিতীয় ইউনিট থেকে অল্প অল্প করে বিদ্যুৎ উৎপাদন অব্যাহত রাখা হয়েছে। পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানোর মতো এখন পর্যাপ্ত কয়লার মজুত নাই। যে কয়লার মজুত আছে, তা দিয়ে সর্বোচ্চ দুই দিন পূর্ণ সক্ষমতায় চালানো যাবে।

বাংলাদেশ ও চীনের অর্থায়নে নির্মিত এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের চীনা প্রতিষ্ঠান চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট কোম্পানির ৫০ শতাংশ শেয়ার আছে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রে। বিসিপিসিএল গত ২৭ এপ্রিল বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড এবং বাংলাদেশ ব্যাংককে জানায়, চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট কোম্পানি বকেয়া পরিশোধ না করা পর্যন্ত আর কয়লা সরবরাহ করবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/২৯মে/আরআর/আরকেএইচ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :