এবারের বাজেট গরিব-ধনী সবার জন্য: অর্থমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
 | প্রকাশিত : ০২ জুন ২০২৩, ১৯:৪৯

গরিব-ধনী সব শ্রেণির মানুষের জন্য বাজেট উপহার দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, দেশের মানুষের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা রয়েছে। অন্যান্যা বছরের ন্যায় এবারও আমরা ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়নে ব্যর্থ হব না। সরকারের বাজেট বাস্তবায়নের সক্ষমতা রয়েছে।

একইসঙ্গে তিনি স্পষ্ট করে জানান, প্রস্তাবিত বাজেট আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শ মেনে করা হয়নি।

তিনি বলেন, আমাদের নিজেদের প্রয়োজন মোতাবেক করা হয়েছে, তবে সংস্থাটির যেসব পরামর্শ আমাদের জন্য ভালো কিংবা গ্রহণযোগ্য সেগুলো নেওয়া হয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশও সেটা করে থাকে।

শুক্রবার বিকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাজেট-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এসে মন্ত্রী একথা বলেন।

ছয়জন মন্ত্রী এবং সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে আসেন অর্থমন্ত্রী। প্রস্তাবিত বাজেটের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সেখানে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে কৃষিষমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, শিক্ষামন্ত্রী দিপু মনি, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার, মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব শরিফা খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। তারা বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়ে অর্থমন্ত্রীকে সহায়তা করেন।

মুস্তফা কামাল বলেন, আগামী অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আহরণ করা সম্ভব। তিনি বলেন, গত ৫ বছর ধরে যেসব পদক্ষেপ বা প্রাক্কলন গ্রহণ করা হয়েছে, সেগুলো আমরা বাস্তবায়ন করতে পেরেছি। যেটা বাদ আছে সেটা আগামীতে করা হবে।

তিনি জানান, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আছে তখন রাজস্ব আয়ের পরিমাণ ছিল ৫৯ হাজার ৪০০ কোটি টাকা, এখন সেটা বেঁড়ে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৯৫ হাজার কোটি টাকা। তাহলে আমরা যেখানে এখনও পৌঁছাতে পারেনি, সেখানে পৌঁছাতে পারবো।

এক প্রশ্নের উত্তরে জানান অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা ধীরে ধীরে কর্মসংস্থান তৈরি করছি। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারিখাতেও উল্লেখ করার মতো কর্মসংস্থান হয়েছে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শে আগামী অর্থবছরের বাজেট করা হয়েছে— বিএনপিসহ বাজেট নিয়ে সমালোচনাকারীদের এমন বক্তব্য প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা তাদের (আইএমএফ) প্রেসক্রিপশনে বাজেট করিনি। যতটুকু পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত বলে মনে করেছি ততটুকু করেছি। তাদের পরামর্শের যেটুকু গ্রহণ করা যায় সেটুকু করবো। সেখানে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।’

আইএমএফ নিয়ে মন্ত্রী আরও বলেন, ‘আইএমএফ আমাদেরকে কখনও কখনও এসে দেখে। শুধু আমরা না, আইএমএফের সাথে যারা সম্পৃক্ত, সবাইকেই দেখে। ব্যালেন্স শিট ঠিক আছে কি না, রেভিনিউ অ্যাকাউন্ট ঠিক আছে কি না, ইনকাম-এক্সপেনডিচার ঠিক আছে কি না..এগুলোতে দেখে। এই দেখাটা ভালো। আইএমএফের সাথে যারা কাজ করে, আমি মনে করি যে, এটা একটা ভালো দিক। ভালো দিক এই জন্য বলব যে, তারা শুধুমাত্র অর্থ দিয়ে…অর্থ দেয়া মানে লোন দেয়া; লোন দিয়েই সাহায্য করে না, পাশাপাশি কিছু প্রজেক্টও সাজেস্ট করে।

‘আইএফএমের শর্ত আছে সবার থেকে কর নিতে হবে। মধ্য আয়ের মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি। কিন্তু তারা কেউই কর দেয় না। তারা কর দিলে চাপ কমত।’

৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার যে বাজেট পেশ করা হয়েছে তা বাস্তবায়নে সরকার ব্যর্থ হবে না মন্তব্য করেন অর্থমন্ত্রী। বলেন, বর্তমান সরকার বিগত বাজেটে দেওয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করেছে। ২ কোটি ৪৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান করেছে। এবারও লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় সম্ভব। এবারও বাজেট বাস্তবায়নে সফল হবে সরকার।

বাজেটে এবার রাজস্ব খাতে আয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে কর হিসেবে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা আদায় করা যাবে বলে আশা করছেন মন্ত্রী।

রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মুস্তফা কামাল বলেন, ‘সরকার যখন প্রথম দায়িত্ব গ্রহণ করে তখন এনবিআর রাজস্ব ছিল ৫৯ হাজার কোটি টাকা। এখন সেটা ২ লাখ ৯৫ হাজার কোটি টাকায় উত্তীর্ণ হয়েছে। যদি ৫৯ হাজার কোটি টাকা থেকে এখন যদি তিন লাখ কোটি টাকাতে যায়, যেটুকুন বাড়তি বলছেন, এটা আমরা অর্জন করতে পারব ইনশাআল্লাহ। আমাদের প্রজেকশন যেগুলো আছে, আমরা ফুলফিল করতে পারব।’

স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম জানান, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে তখন দেশে মোট কর্মসংস্থানের পরিমাণ ছিল ৪ কোটি ৭৩ লাখ। এখন সেটা বেড়ে হয়েছে ৭ কোটি ১১ লাখ।এ সময়ে প্রায় ৩ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করা গেছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

অপর এক প্রশ্নের উত্তরে এনবিআরের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে করযোগ্য নয় এমন ব্যক্তিদের রিটার্ন দাখিলের ক্ষেত্রে ২০০০ টাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তবে টিআইএন সবার জন্য বাধ্যতামূলক নয়। যেমন আমদানি-রপ্তানিকারক কিংবা বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে যারা জড়িত রয়েছেন। গরিব মানুষের জন্য কিন্তু টিআইএন বাধ্যতামূলক নয়।

প্রস্তাবিত বাজেটে করপোরেট করহার না কমানোর বিষয়ে তিনি জানান, গত কয়েকবছর ধরে ক্রমান্বয়ে করপোরেট করহার কমানো হচ্ছে। গত তিন বছর ২.৫ শতাংশ হারে কমাতে কমাতে করপোরেট করহার বর্তমানে ২৭ শতাংশে চলে এসেছে। আরও কমালে রাজস্ব আহরণের জায়গা সংকুচিত হয়ে যায়। দেশের স্বার্থে সেটি করা ঠিক উচিত হবে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার পুঁজিবাজারের বিষয়ে বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে পুঁজিবাজারের বিষয়ে সুস্পষ্ট করে কোনো পদক্ষেপের কথা উল্লেখ না থাকলেও বাজার গতিশীল রাখতে প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। কেন্দ্রিয় ব্যাংক ও সরকার সেটি নিয়মিত করে যাচ্ছে।

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী। প্রস্তাবিত বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। এ ছাড়া মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের মধ্যে রাখার লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/০২জুন/ইএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

অর্থনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

অর্থনীতি এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :