হিজাব ইস্যুতে ঢাবি উপাচার্যের প্রতি ‘অনাস্থা’ জানিয়ে প্রতিবাদ শিক্ষার্থীদের

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ কর্তৃক পরীক্ষা, ভাইভা ও প্রেজেন্টেশনের সময় কানসহ মুখমণ্ডল খোলা রাখার নোটিশের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি রক্ষা না হওয়ায় উপাচার্যের প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীরা।
সোমবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে অনুষ্ঠিত এক প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে এ অনাস্থা জ্ঞাপন করা হয়। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের নারী শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।
সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, হিজাব পরিহিতাদের শিক্ষার পরিবেশকে বিঘ্নিত করার প্রয়াসে বাংলা ডিপার্টমেন্টের দেওয়া নোটিশের বিষয়ে উপাচার্য মহোদয়ের পদক্ষেপ গ্রহণে ব্যর্থতা আমাদেরকে হতাশ ও ক্ষুব্ধ করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ কর্তৃক পরীক্ষা, ভাইভা ও প্রেজেন্টেশনের সময় কানসহ মুখমণ্ডল খোলা রাখার নির্দেশ দিয়ে যে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছিলো। সেদিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করার লক্ষ্যে বিগত ২৬ ডিসেম্বর'২২ তারিখে আমরা ৫ দফা দাবি নিয়ে ভিসি স্যারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলাম। তিনি আমাদের দাবিগুলো শুনেছিলেন এবং এগুলোর যৌক্তিকতা উপলব্ধি করে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়ে আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছিলেন। আমাদের উপস্থিতিতেই বাংলা ডিপার্টমেন্টের কোনো একজন কর্মকর্তাকে কল করে বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধান করতে বলেছিলেন।
শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা ভেবেছিলাম শিক্ষার্থীদের বড় একটা অংশের উচ্চশিক্ষার পরিবেশকে নির্বিঘ্ন করতে তিনি সত্যিই অভিভাবকত্বের দায়িত্ববোধ প্রদর্শন করবেন। আমরা নিশ্চিন্ত হয়ে ক্লাসরুমেও ফিরে গিয়েছিলাম। কিন্তু পরীক্ষা ঘনিয়ে আসতেই আমরা দেখতে পেলাম আমাদের সেই বিশ্বাস ও ভরসা ভেঙ্গে খানখান হয়ে গিয়েছে। বাংলা বিভাগ তার পূর্বের সিদ্ধান্তেই অটল রয়েছে এবং আবারো বিরূপ পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে আমাদের বোনদের শিক্ষাজীবন হুমকির মুখে পড়েছে। আমরা স্পষ্টভাবে আমাদের হতাশা ও ক্ষোভের কথা জানাচ্ছি এবং অভিভাবকত্বের জায়গায় ভিসি স্যারের প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন করছি।
শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, যেখানে আমরা প্রতিনিয়ত নারী উন্নয়ন, নারীর উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করার বিষয়ে বড় বড় কথা বলছি, তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি প্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় পোশাকের কারণে শিক্ষার্থীদেরকে নানা ধরনের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে, এমনকি ক্যারিয়ার ধ্বংস হওয়ার মতো ঘটনাও কিভাবে ঘটে চলেছে, তা আমাদের বোধগম্য নয়। মেধার স্বাক্ষর রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর একজন হিজাব পরিহিতা শিক্ষার্থীকে ধর্মীয় অধিকার থেকে বঞ্চিত করার এবং এটাকে উপলক্ষ্য করে তার একাডেমিক লাইফকে দুর্বিষহ করে তোলার এই ঘটনাগুলো মানবাধিকার ও ধর্মীয় অধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন নয় কি? আমরা স্পষ্ট ভাষায় এটাকে মানবতাবিরোধী এবং দেশীয় আইন ও ইউনিভার্সিটি অর্ডারের লঙ্ঘন বলে অভিহিত করছি।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর দ্বারস্থ কথা উল্লেখ করে তারা বলেন, আমরা এখনো প্রত্যাশা করছি বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের প্রতি অব্যাহত এই অন্যায়ের ইতি টানতে উদ্যোগী হবে। আশা করছি বিশ্ববিদ্যালয় ধর্মীয় অধিকার ক্ষুণ্ণ করার মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনের এমন সুস্পষ্ট ঘটনাগুলোর তদন্ত পূর্বক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং হেনস্থার শিকার শিক্ষার্থীদের পড়শোনা চালিয়ে যাওয়ার নির্বিঘ্ন পরিবেশ তৈরিতে সচেষ্ট হবে। অন্যথায় আমরা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর দ্বারস্থ হতে বাধ্য হব।
(ঢাকাটাইমস/০৫জুন/এসকে/ইএস)

মন্তব্য করুন