দিনাজপুরে গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষে ভাগ্য বদল আইনুলের
গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষে ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন কৃষক আইনুল ইসলাম। শখের বসে তরমুজ চাষ করে তিনি আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন।
এখন প্রচণ্ড গরমে এই পানি জাতীয় ফলটির বাজারে বেশ চাহিদাও রয়েছে। পাইকারেরা তার ক্ষেত থেকেই তরমুজ ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছেন। কম খরচ ও পরিশ্রমে ভাল দাম পেয়ে খুশি কৃষক আইনুল। তার তরমুজের ক্ষেত দেখতে এবং পরামর্শ নিতে ছুটে আসছেন আশপাশের চাষিরা।
কৃষি বিভাগের পাশাপাশি এই তরমুজ চাষে কৃষকদের উদ্বৃদ্ধ ও সহযোগিতা করছে মহিলা বহুমূখী শিক্ষা কেন্দ্র-এমবিএসকে এবং পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন নামে দুটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান।
উত্তরের শষ্যভান্ডার খ্যাত দিনাজপুরে যখন জমিতে ধান আর বাগানে লিচু দোল খাচ্ছে, তখন পাশেই মাচায় সবুজ পাতা আর মাচার নিচে ঝুঁলে আছে কালো ও হলুদ রঙের তরমুজ। পোকা-মাকড় আর বালাই নাশকে ব্যবহার করা হচ্ছে, ইয়োলো স্টিকি পেপার ও সেক্স ফেরোমন ফাঁদ। এমন দৃশ্য দিনাজপুর সদর উপজেলার দিঘন পশ্চিম পাড়া এলাকার।
এ বছর কৃষক আইনুল ইসলাম শখের বসে চাষ করেছেন তরমুজ। দুই বিঘা জমিতে ব্লাক বেবী, মধুমালা ও সুগার কিং জাতের গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষ করেছেন। কম খরচ ও পরিশ্রমে তরমুজ চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন তিনি।
কৃষক আইনুল ইসলাম বলেন, এ জমিতে আগে বোরো ধান, আলু ও পটলের আবাদ করা হতো। এই দুই বিঘা জমিতে এবার শখের বসে ব্লাক বেবী, মধুমালা ও সুগার কিং জাতের গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষ করেছি। কম খরচ ও কম পরিশ্রমে তরমুজ চাষ করে ভালোই লাভ পাওয়া যাচ্ছে। আমার ক্ণেতের প্রতিটি তরমুজের ওজন প্রায় দেড় থেকে ৪ কেজি। ইতোমধ্যে দেড় লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করেছি। আরো দেড় থেকে দুই লাখ টাকার তরমুজ পাবো আশা করছি।
গাছ থেকে যাতে ছিঁড়ে না পড়ে সেজন্য প্রতিটি তরমুজে দেওয়া আছে জালি। তরমুজের উপরের রঙ হলুদ আর কালো হলেও ভেতরে টকটকে লাল। এই তরমুজের ক্ষেত দেখতে এবং পরামর্শ নিতে ছুটে আসছেন আশপাশের চাষিরা। দেখাদেখি এখন অনেকেই তরমুজ চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
তরমুজ ক্ষেত দেখতে আসা কৃষক রায়হান জানান, এই সিজনে এতো তরমুজ দেখে আমরা অভিভূত। দেখলাম, এই গরমে তরমুজের চাহিদা থাকায় পাইকাররাও ক্ষেত থেকে কিনে নিয়ে যাচ্ছে। ফসল বিক্রি করতে যে ঝামেলা তা তরমুজের ক্ষেত্রে নেই। তাই আগামী এই লাভ জনক ফসল আমিও আবাদ করতে চাই।
মহিলা বহুমুখী শিক্ষা কেন্দ্র-এমবিএসকের কুষিবিদ হোসেন মো.আবু সুফিয়ান জানান, আমরা এ জাতের গ্রীম্মকালীন তরমুজ চাষে কৃষকদের উদ্বৃদ্ধ ও সহযোগিতা করে আসছি। এ ফসল চাষ করে কৃষক প্রচুর লাভ হচ্ছেন। প্রচণ্ড গরমে এই পানি জাতীয় ফলটির বাজারে বেশ চাহিদাও থাকায় ক্ষেত থেকে তরমুজ ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছেন পাইকাররা। প্রতি কেজি তরমুজ ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন কৃষক।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিকিদ মো. নুরুজ্জামান জানান, এ জাতের তরমুজ চাষে গাছ লাগানোর ৭০-৭৫ দিনের মধ্যে ফল উঠানো শুরু হয়। আড়াই মাসের ব্যবধানে এ তরমুজ আবাদে খরচ বাদে বিঘা প্রতি কৃষকের লাভ থাকে প্রায় এক থেকে দেড় লাখ টাকা। স্বল্প সময়ে এবং কম পরিশ্রমে এ জাতের তরমুজ আবাদ করে ভাল ফলনের পাশাপশি বাজারে দামও ভাল পাচ্ছেন কৃষক। আমরা এ জাতের তরমুজ চাষে কৃষকদের সহায়তা দিয়ে আসছি। শুধু কৃষক আইনুল নয়, দিনাজপুরে প্রায় অর্ধশত কৃষক এখন এ জাতের তরমুজ আবাদ করছে। জেলার চাহিদা মিটিয়ে এ তরমুজ চলে যাচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে। জেলার প্রায় ৫৮ একর জমিতে চাষ হয়েছে এ জাতের তরমুজ।
(ঢাকাটাইমস/০৯জুন/এসএ)