কোমল পানীয়ের দাম নাগালে রাখতে ন্যূনতম কর ১ শতাংশ করার দাবি

নতুন অর্থ বছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট এবং আয়কর আইন (আইটিএ) ২০২০-এর খসড়া নিয়ে কিছু উদ্বেগ জানিয়েছে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সংগঠন ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ফিকি)।

সংগঠনটি বলছে, দেশে এতদিন কার্বোনেটেড পানীয় শিল্পের (বেভারেজ ইন্ডাস্ট্রি) নূন্যতম কর ০.৬ শতাংশ ছিল। নতুন অর্থ বছরে যা বাড়িয়ে মোট প্রাপ্তির ৫ শতাংশ (৮ গুণ বেশি) করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। ফলে কোমল পানীয়ের দাম বাড়বে ৩০ শতাংশেরও বেশি। এই খাতে ইতিমধ্যে ৫ থেকে ১০ শতাংশ শুল্কের পাশাপাশি ৪৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ পরোক্ষ কর দিতে হয়, যা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ। তাই কার্বনেটেড বেভারেজে কর ৫ শতাংশ না বসিয়ে নূন্যতম ১ শতাংশ বসানোর দাবি জানিয়েছে ফিকি।

বুধবার হোটেল শেরাটনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা এ দাবি জানান।

বক্তারা বলেন, খসড়া আয়কর আইন (আইটিএ) ২০২৩-এর বিধানগুলোর গভীর ও বিস্তৃত পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। কারণ এই আইনের কিছু বিধান আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪-এর বিবেচনায় অযৌক্তিক। আমরা আশা করেছিলাম নতুন আইনে ন্যূনতম কর বিধানগুলো ধীরে ধীরে প্রত্যাহার করা হবে। তার পরিবর্তে সেগুলো উল্লেখযোগ্যহারে বৃদ্ধি করা হয়েছে।

আরেকটি উদ্বেগের বিষয় হলো ধার্য করের বিধান থেকে একটি অনুবিধি বাদ দেওয়া। এই অনুবিধির অনুপস্থিতিতে অনিশ্চয়তা তৈরি হতে পারে এবং বিধানটি তার কার্যকারিতা হারাতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪-এর মতো একই বিধান প্রস্তাবিত আইনে বা বিধিতে অব্যাহত না থাকলে আধুনিক বাণিজ্যে ডিস্ট্রিবিউটরদের সরবরাহের উপর করের বোঝা, আমদানিকৃত পণ্যের সরবরাহ, ইত্যাদি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে।

প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী, প্রণোদনা বোনাস অতিরিক্ত লভ্যাংশ হিসেবে বিবেচিত হবে।এটি কোম্পানির উপর আরও করের বোঝা চাপিয়ে দেবে এবং পরবর্তীতে কর্মচারীদের উপার্জনের উপরও প্রভাব ফেলতে পারে। ব্যবসায়িক ক্ষতির বিপরীতে অন্য আয় সচল রাখার অনুমতি না দেওয়া করের চেতনার বিরুদ্ধে যায়। পাশাপাশি বিদেশী ঋণের সুদের উপর করের বিধান এবং তৃতীয় পক্ষের বিক্রেতার দ্বারা আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার প্রমাণ প্রদানে ব্যর্থতার জন্য তার সম্পূর্ণ পারিশ্রমিক দিতে অনুনমোদন দেওয়ার বিধানটি বাদ দেওয়া উচিত।

বক্তারা আরো বলেন, বাজেটে করপোরেট এবং সংস্থাগুলোর জন্য নগদ লেনদেন সীমিত করা দেশের উন্নয়নকে সীমাবদ্ধ করবে। কারণ বাংলাদেশ এখনও পুরোপুরি নগদহীন লেনদেন করার ক্ষমতা অর্জন করতে পারেনি। সরকারের উচিত কোম্পানিগুলোর নগদ লেনদেনের জন্য একটি নির্দিষ্ট সংখ্যা নির্ধারণ না করে তার খরচের ন্যূনতম শতাংশ ব্যয় করার অনুমতি দেওয়া। যেন পরবর্তী ৫ বছরে ধীরে ধীরে তারা শতভাগ নগদহীন লেনদেনের লক্ষ্য অর্জন করতে পারে।

এছাড়া সম্পত্তির উপর বর্ধিত কর জনগণকে সরকারি দলিলে প্রকৃত সম্পত্তির মূল্য উল্লেখ না করে মৌজা রেট উল্লেখ করতে প্রণোদিত করবে। এটি সরকারকে করের বিশাল একটি উৎস থেকে বঞ্চিত করতে পারে। যে কারণে সম্পত্তি কর লেনদেনের খরচ বৃদ্ধি করার পরিবর্তে তা যথেষ্ট পরিমাণে কমিয়ে আনা উচিত এবং বাজার মূল্য প্রতিফলিত করার জন্য মৌজা মূল্যকে পর্যায়ক্রমে আপডেট করার আহবান জানায় সংগঠনটি।

খসড়া আয়কর আইন (আইটিএ) ২০২৩ অনুযায়ী, বিনিয়োগকারীগণ এখন থেকে ডব্লিওপিপিএফ, মিউচুয়াল ফান্ড এবং ডিভিডেন্ড থেকে আয়ের উপর আর কোনো ছাড় পাবেন না। লিভ ফেয়ার অ্যাসিস্ট্যান্স (এলএফএ) এখন থেকে করের আওতায় অন্তর্ভুক্ত হবে। এছাড়া সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করা কি আদৌ বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য হবে কি না এবং সেটা থেকে করে কর ছাড় পাওয়া যাবে কি না সে বিষয়টি পরিষ্কার করে বলা নেই। মিউচুয়াল ফান্ড/ইউনিট তহবিল এবং সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগের সীমা ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বেঁধে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়। বেসরকারি স্বীকৃত ভবিষ্যত তহবিলে কর আরোপ করা কর্মীদের আয় হ্রাস করবে এবং সরকারি ভবিষ্যত তহবিলকে করমুক্ত হিসাবে রাখার বিষয়টি বৈষম্য সৃষ্টি করবে।

বক্তব্যে ফিকি সভাপতি নাসের এজাজ বিজয় বলেন, আমাদের সরকার যে প্রগতিশীল পরিবর্তনগুলো বাস্তবায়নের দিকে নজর দিচ্ছে তা প্রশংসনীয়। তবে কিছু বিধান বাস্তবায়ন হলে ব্যবসা এবং ব্যক্তির প্রবৃদ্ধির হার কমে যেতে পারে। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত মোবাইল ফোনের ওপর আরোপিত ভ্যাট এবং লোকসানে থাকা কোম্পানিগুলোর ওপর করের বোঝা বাড়ার কারণে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। সম্ভাব্য প্রতিকূল পরিস্থিতি এড়াতে পারে এমন সমাধানের বিষয়ে আমাদের কিছু সুপারিশ রয়েছে। আমরা আশা করি যে সুপারিশগুলো বিবেচনায় নেওয়া হবে এবং চেম্বারকে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি অব্যাহত সমর্থন রেখে কর-বান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলার মাধ্যমে দেশের উন্নয়নে একসাথে কাজ করার সুযোগ করে দেওয়া হবে।

ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ফিকি) হলো বাংলাদেশের ২১টিরও বেশি সেক্টরে বিশ্বের ৩৫টি দেশের ২০০টিরও বেশি বহুজাতিক কোম্পানি এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শীর্ষ চেম্বার।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ফিকি’র সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট দীপাল আবেইউক্রেমা, পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আব্দুর রশীদ, ট্যারিফ-ট্যাক্সেশন ও রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স কমিটির কো-অর্ডিনেটর সাজ্জাদ রহিম চৌধুরী, ট্যারিফ-ট্যাক্সেশন ও রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স কমিটির সদস্য দেবব্রত রায় চৌধুরী, নির্বাহী পরিচালক টিআইএম নুরুল কবির এবং কনসালট্যান্ট স্নেহাশীষ বড়ুয়া।

(ঢাকাটাইমস/১৪জুন/পিআর/ইএস)