সারা বিশ্বের কাছে সম্মান এবং মর্যাদার আসনে বাংলাদেশ

মো. খসরু চৌধুরী সিআইপি
| আপডেট : ১৪ জুলাই ২০২৩, ১২:৩০ | প্রকাশিত : ১৪ জুলাই ২০২৩, ১২:২৯

বিশ্ব মন্দার মধ্যেও সেপ্টেম্বরে বিশ্ববাসী দেখবে এগিয়ে যাওয়া এক বাংলাদেশকে। পদ্মা সেতু, ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রোরেল লাইন-৬ ইতোমধ্যে বাংলাদেশকে নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু টানেল যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে সেপ্টেম্বরে। এটিই হবে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম টানেল।

ঢাকা-কক্সবাজার সরাসরি রেলসংযোগও চালু হতে যাচ্ছে সেপ্টেম্বরে। এর মাধ্যমে পর্যটকসহ সাধারণ যাত্রীদের যাতায়াত ব্যবস্থা আরেক ধাপ এগিয়ে যাবে। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের একাংশও খুলবে সেপ্টেম্বরে। অক্টোবরে চালু হবে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের একাংশ। এ টার্মিনাল নির্মাণ করা হচ্ছে বিশ্ববিখ্যাত লন্ডনের হিথ্রো, নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি, সিঙ্গাপুরের চেঙ্গি, আরব আমিরাতের দুবাই বিমানবন্দরের আদলে। ডিসেম্বরের মধ্যে চালু হবে পদ্মা সেতুতে রেলসংযোগ প্রকল্প। যার মাধ্যমে জাতির আরেকটি স্বপ্নের বাস্তবায়ন ঘটবে।

সংবিধান অনুযায়ী জাতীয় সংসদের দ্বাদশ নির্বাচন চলতি বছরের ডিসেম্বর বা আগামী বছরের জানুয়ারির শুরুতে। তার আগে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরেই আরও অন্তত চারটি মেগা প্রকল্পের দ্বার খুলে দেয়ার ফলে শেখ হাসিনার সরকারের বিস্ময় সাফল্য জনগণের সামনে ধরা দিবে।

২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর দেশের যাতায়াত ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন এবং অবকাঠামোর উন্নয়নে অগ্রাধিকার দিয়ে পদ্মা সেতুসহ আটটি মেগা প্রকল্প হাতে নেয় বর্তমান সরকার। পরে অবশ্য মেগা প্রকল্পের সংখ্যা আরও বাড়ানো হয়। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ ছিল বিশ্বের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া দেশ। তলাবিহীন ঝুড়ি বলে বাংলাদেশকে ব্যঙ্গ করত বিশ্বমোড়লদের কেউ কেউ। সে অবস্থা থেকে অর্ধশতাব্দীর ব্যবধানে উন্নয়নের সোপানে ওঠা এক বিশাল অর্জন।

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের পর ৭ জানুয়ারি নতুন মন্ত্রীসভা গঠিত হয়েছিল। এই সময়ে আওয়ামী লীগের অনেকগুলো সাফল্য রয়েছে, তার মধ্যে সেরা পাঁচটি সাফল্য এরকম-

স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে স্বীকৃতি: ২০২১ সালে বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে জাতিসংঘ কর্তৃক স্বীকৃত হয়। ২০১৮ সালে বাংলাদেশকে প্রথম স্বল্পোন্নত দেশের সাময়িক মর্যাদা দেয়া হয়েছিল। আর এটি চূড়ান্ত রূপ ধারণ করে গত বছর। স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে স্বীকৃতি বাংলাদেশের একটি বিরাট অর্জন এবং এমন সময় বাংলাদেশ এই মাইলফলক অর্জন করলো যখন বাংলাদেশে তার বিজয়ের ৫০ বছর পূর্তি করল। ৫০ বছরে বাংলাদেশের অগ্রগতি, উন্নয়ন বিস্ময়কর। অগ্রগতির সবচেয়ে বড় সময়টা পার করেছি গত ১৩ বছরে। বাংলাদেশে গত ১৪ বছরে যে উন্নয়ন, অগ্রযাত্রা হয়েছে তা অতীতে কখনও হয়নি। এই সময়ে বাংলাদেশের গড় আয়ু বেড়েছে, আর্থ-সামাজিক সব ধরনের সূচকে বাংলাদেশ ভারত এবং পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে দিয়েছে।

করোনা নিয়ন্ত্রণে রাখা: ২০২০ সাল থেকে সারা বিশ্ব করোনায় লণ্ডভণ্ড। বিশেষ করে বর্তমান সরকারের চার বছরের দুই বছর কেটেছে করোনা মোকাবেলায়। করোনা মোকাবেলায় নানারকম অনিয়ম-বিশৃঙ্খলা শর্তেও বাংলাদেশ শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণতা, দূরদৃষ্টি সম্পন্ন নেতৃত্ব এবং তড়িৎ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের কারণে করোনার নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে। ইউরোপ-আমেরিকার মতো দেশগুলো যখন করোনায় বিপর্যস্ত হয়েছে তখন বাংলাদেশ করোনার প্রকোপ সহনীয় মাত্রায় রাখতে পেরেছে। বিশেষ করে বাংলাদেশে কখনোই করোনায় মৃত্যুর হার ভয়াবহ আকার ধারণ করেনি। যদিও করোনা নিয়ন্ত্রণে নানা রকম ব্যর্থতা ছিল কিন্তু সেই ব্যর্থতাগুলো ঢেকে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই।

দৃশ্যমান মেগা প্রকল্প: চার বছরে সরকারের বড় সাফল্যের একটি হল বড় বড় প্রকল্পগুলো দৃশ্যমান হয়েছে এবং এটি বদলে যাওয়া বাংলাদেশের স্মারকচিহ্ন হিসেবে উপস্থাপিত হয়েছে। পদ্মা সেতু, মেট্রো রেলসহ, কর্ণফুলী টানেল, রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প সহ বড় বড় প্রকল্পগুলোকে এখন আর কোন শব্দ নয় বাস্তবতা এবং এই দৃশ্যমান প্রকল্পগুলো বাংলাদেশকে এক নতুন মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছে। বিশেষ করে নিজের টাকায় পদ্মা সেতু বিনির্মাণের মাধ্যমে বাংলাদেশ সারা বিশ্বের কাছে সম্মান এবং মর্যাদার এক জায়গা করে নিয়েছে।

অর্থনীতিকে এগিয়ে নেওয়া: চার বছরে সরকারের বড় সাফল্য হল অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। রেমিটেন্স প্রবাহ বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সম্পদ হিসেবে উপস্থাপিত হয়েছে। এছাড়াও রপ্তানি আয় বৃদ্ধি পেয়েছে, গার্মেন্টস রপ্তানিতে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম সেরা দেশ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। আর এর ফলে অর্থনীতিতে একটি সচল এবং গতিশীল অবস্থা দেখা গেছে। বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিকাশ বাংলাদেশের অর্থনীতিকে একটি শক্ত ভিত্তি দিয়েছে। অভ্যন্তরীণ ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধি এবং বাজার সৃষ্টির মাধ্যমে অর্থনীতিতে বাংলাদেশ বিশ্বে একটি শক্তিশালী দেশ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।

গৃহহীনদের জন্য ঘর: তৃতীয় মেয়াদে সরকারের সবচেয়ে বড় সাফল্য ছিল ‘থাকবে না কেউ গৃহহীন’ প্রকল্প। মুজিব বর্ষ হিসেবে কোন মানুষ যেন গৃহহীন না থাকে সেজন্য উদ্যোগ নিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর এই উদ্যোগ এখন সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে। যদিও এ প্রকল্পে কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতির অভিযোগ এসেছে কিন্তু তারপরও প্রতিটি গৃহহীন মানুষকে ঘর দেওয়া একটি বৈপ্লবিক কর্মসূচি যা দেশে-বিদেশে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে।

লেখক: পরিচালক, বিজিএমইএ; শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ; চেয়ারম্যান, নিপা গ্রুপ ও কেসি ফাউন্ডেশন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

মতামত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :