কুয়াকাটায় সৈকত সুরক্ষা বাঁধে বাড়ছে ঝুঁকি, জিও ব্যাগের ফাঁদে ঘটছে দুর্ঘটনা

আব্দুল কাইয়ুম, কুয়াকাটা (পটুয়াখালী)
  প্রকাশিত : ২৪ জুলাই ২০২৩, ১৬:২৪| আপডেট : ২৪ জুলাই ২০২৩, ১৬:৩৮
অ- অ+

পটুয়াখালীর কুয়াকাটা জিরো পয়েন্টের প্রায় এক কিলোমিটার জুড়ে জিও টিউব এবং জিও ব্যাগ পর্যটকদের মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন অব্যবস্থাপনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা।

পর্যটকরা বলছেন, বর্তমান সমুদ্র সৈকতের এমন অবিভাবকহীন অবস্থায় অনেকেই কুয়াকাটা ভ্রমণের মুখ ফিরিয়ে নেবেন। যদি দ্রুত এই অন্যতম পর্যটন নগরীর সৌন্দর্য বর্ধনে উদ্যেগ না নেওয়া হয়। এমন অব্যবস্থাপনার স্থায়ী সমাধান করতে না পারলে দক্ষিণ জনপদে পর্যটন শিল্প পড়বে হুমকির মুখে।

তবে কুয়াকাটার পৌর প্রশাসন এসব বিপজ্জনক গর্ত চিহ্নিত করার আশ্বাস দিলেও দীর্ঘ সময় অতিক্রমের পরও কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ এখনো নেওয়া হয়নি।

দেশের সর্ব দক্ষিণের উপকূল অঞ্চল সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটা প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য ও সবুজের সমারোহে ঘেড়া। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্র সৈকতের ভিন্ন বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেখানে একই স্থানে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত অবলোকন করা যায় বলে এখানে দেশি পর্যটক ছাড়াও বিদেশি পর্যটকের সমাগম থাকে সারা বছর। একটি অন্যতম পর্যটন নগরী হিসেবে লাখো মানুষের পদচারণায় মুখরিত থাকে এই সমুদ্র সৈকত।

কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে সরেজমিনে দেখা গেছে, পাউবোর উদ্যোগে সৈকত রক্ষায় জিও টিউব এবং জিও ব্যাগ বসানোয় বিপজ্জনক ছোটো-বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। এই গর্ত এখন আগত পর্যটকদের ভোগান্তির চরম কেন্দ্রস্থল এবং মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। সমুদ্রে জোয়ারের পানিতে গোসলে নেমে জিও ব্যাগের শ্যাওলায় পা পিছলে প্রতি মুহূর্তে ভোগান্তি পোহাতে হয় নানা বয়সী মানুষের। ভাটার সময় থাকে ছিন্নভিন্ন বিশৃঙ্খলা পরিবেশ ও সৃষ্ট গর্তে হাঁটু থেকে কোমর সমান পানি জমে থাকে। ভাটা নাগাদ এমন উঁচুনিচু খাদে মানুষের স্বাভাবিক চলাফেরায়ও বেগ পেতে হয়। জিও ব্যাগের সৃষ্ট বিপজ্জনক গর্তের মধ্যে দেখা গেছে কংক্রিটের বড় বড় টুকরার সঙ্গে রডের অংশসহ কাচ ভাঙা ও অপচনশীল প্লাস্টিকের বর্জ্য আটকে আছে। এর দ্বারা পর্যটকরা হাত-পা কেটে মারাত্মক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে ভ্রমণের ইতি টেনে চলে যাচ্ছেন এক তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে। আবার সাঁতার না জানা পর্যটকদের কাছে ওই গর্তগুলো হয়ে ওঠে মরণফাঁদ।

জিও ব্যাগ ও জিও টিউবের ফাঁকে পা আটকে যাওয়ায় যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনার শঙ্কা নিয়ে সৈকতে নামেন পর্যটকরা। আবার পর্যটকরা অনেকেই জোয়ারে সময় প্রথমবার সৈকতে এসে কোনো ধারণা ছাড়াই গোসলে নেমে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনার শিকার হয়। এসব সমস্যা তুলে ধরার জন্য সমুদ্র সৈকতে নেই কোনো সচেতনতা ব্যবস্থামূলক সাইনবোর্ড কিংবা জরুরি নির্দেশিত কোনো চিহ্ন।

কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের তীর রক্ষায় স্থায়ী কোনো পদক্ষেপ আজও নেয়নি কর্তৃপক্ষ। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বালু ক্ষয়ের কবলে প্রতি বছর সৈকতের প্রস্থ কমে এখন বেড়িবাঁধে ঠেকেছে। যুগ যুগ অতিক্রমের পর দফায় দফায় মাত্র দের কিলোমিটারের মধ্যে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে সৈকতের তীর রক্ষায় উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেয় পাউবো। অথচ দীর্ঘ কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে সৈকতের তীর রক্ষা ও বনাঞ্চল সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা।

কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের জিরো পয়েন্টে প্রধান কেন্দ্রস্থলের দক্ষিণ-পূর্ব ও পশ্চিম দিকে পাচ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো বনাঞ্চল নেই। মাত্র দেড় কিলোমিটার সৈকতের তীর রক্ষাকল্পে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ এবং জিও টিউব বসাচ্ছে (পাউবো) কর্তৃপক্ষ। সৈকত রক্ষায় জরুরি ভিত্তিতে এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল ২০১৮ সালের শেষের দিকে। তবে এর কোনোই সুফল মিলছে না। উল্টো সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে বড় বড় গর্ত হয়ে দিন দিন শ্রীহীন সৈকতে পরিণত হয়েছে এবং পর্যটকরা বিভিন্নভাবে মারাত্মক দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) দায় সারা এমন সৈকত রক্ষায় জিও ব্যাগ স্থাপনের বিষয় স্থানীয় বাসিন্দাসহ পর্যটকরা নেতিবাচক প্রশ্ন তুলছেন। এর আগে গত বছর একমাসের ব্যবধানে তিন জন পর্যটকের মৃত্যুর জন্য দায়ী করছেন জিও ব্যাগের বড় গর্তে পা আটকে যাওয়ায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মৃত্যু সংঘটিত; এমন অভিযোগ রয়েছে ভুক্তভোগীর স্বজনদের। তবুও এমন জটিল বিষয়ে কোনো প্রতিকার এখনো দৃশ্যমান নেই। টনক নড়েনি কোনো মহলেরই।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, ইতোমধ্যে সরকারের কোটি কোটি টাকার বরাদ্দকৃত অর্থ কয়েক ধাপে ব্যয় করেও কোনো লাভ হয়নি। বরং পর্যটন এলাকায় আগত পর্যটকরা বহু বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। জোয়ারের সময় সৈকত এলাকায় দেখা যায় এর বিভৎস চিত্র! ভরা জোয়ারে সৈকতের বেলাভূমিতে এখন আর ওয়াকিং জোনের কোনো সুযোগ থাকেনা। এতে চরম বিপাকে ভ্রমণ পিপাসুরা।

দফায় দফায় পাউবোর অর্থায়নে জিও ব্যাগ দিয়ে সৈকত সুরক্ষা বাঁধ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠে আসছে কাজের শুরু থেকেই। দেখা গেছে অধিকাংশ জিও টিউবের বালু বের হয়ে ছিন্নভিন্নভাবে সৈকত এলাকায় বালুতে মিশে গেছে। নিম্নমানের জিওটিউব, মোটা বালুর পরিবর্তে সৈকতের সাধারন বালু ব্যবহার করার জন্য এমনটি হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ওইদিকে রাতের আঁধারে সমুদ্রের বালু দিয়ে সৈকত সুরক্ষা বাঁধের কাজ করার দৃশ্যমান চিত্র উঠে আসলেও পাউবো কর্মকর্তাদের ভূমিকা ছিল না কোনো। সৈকতের জিরো পয়েন্ট এলাকার পিকনিক স্পট থেকে শুরু করে কুয়াকাটা দাখিল মাদ্রাসা পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার জিও ব্যাগে এ মেরিন ড্রাইভ রাস্তা তৈরির কার্যক্রম রয়েছে। পূর্বের ন্যায়ে এ বছরও চলছে একই প্রক্রিয়ায় মেরিন ড্রাইভ রাস্তা তৈরির কাজ। বরাবরের মতো রয়েছে নানা অনিয়মের অভিযোগ।

কুয়াকাটা বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য সচিব (ইউএনও) মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, সৈকত রক্ষায় জিও টিউব ও ব্যাগ ব্যবহার নদী রক্ষার ডিজাইনে করা হচ্ছে। এগুলো দরকার সমুদ্র রক্ষার ডিজাইনে করা।

পাউবোর কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী খালিদ বিন ওয়ালিদ জানান, সৈকত রক্ষায় অস্থায়ীভাবে এ পরিকল্পনায় কিছুটা বালুক্ষয় রোধ হচ্ছে। তবে সৈকতের জিরো পয়েন্টে পর্যটকের ভোগান্তির বিষয়ে তিনি ওয়াকিবহাল। বর্তমানে ৭৫০ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এটি অনুমোদন পেলে সৈকত রক্ষা করা সম্ভব হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

কুয়াকাটা বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য ও কুয়াকাটা পৌর মেয়র আনোয়ার হাওলাদার বলেন, কুয়াকাটা পৌরভার মাধ্যমে তদন্ত করে পর্যকটদের সুবিধার জন্য সৈকতে জিও ব্যাগে সৃষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ যেসব গর্ত রয়েছে সেখানে লাল নিশান টাঙ্গিয়ে দেয়া হবে। তবে কুয়াকাটা উন্নয়নে স্থায়ী মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা না গেলে অচিরেই কুয়াকাটা সৈকতের তীর সমুদ্র গর্ভে চলে যাবে। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে মহা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে দাবি জানান এই পৌর মেয়র।

(ঢাকাটাইমস/২৪জুলাই/এআর)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
কুয়াকাটা সৈকতে গোসলে নেমে পর্যটকের মৃত্যু
পূজার ছুটিতে কুয়াকাটা সৈকতে পর্যটকের ঢল  
কুয়াকাটা সৈকত থেকে হাত-পা বাঁধা যুবক উদ্ধার
কুয়াকাটা সৈকতে অব্যবস্থাপনায় পর্যটক ভোগান্তি, কমিটির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা