জন্মের পর থেকে আজও ভাত খায় না তারা

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ৩০ জুলাই ২০২৩, ২৩:৪০

বাঙালি জাতি ডাল ভাতে অভ্যস্ত হলেও ব্যতিক্রম ঘটনা দেখা গেছে কুড়িগ্রামে। জেলায় হুমাইরা (১৩) ও সাকিব (১৮) জন্মের পর থেকে কখনো ভাত খায়নি। শুধু ভাত খাওয়াই নয় ভাতের গন্ধ পেলেও বমি আসে তাদের। ভাত খাওয়াতে গেলে তাদের দুজনের অজ্ঞান হওয়ার ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন পরিবারের লোকজন। তবে ভাতের পরিবর্তে রুটি, পরাটা, ডিম ডাল খেয়ে সমবয়সী অন্যদের মতো সুস্থ আছেন তারা। সন্তানদের অজানা এ সমস্যার সমাধানে চিকিৎসার পেছনে টাকা পয়সা খরচ করে কোনো লাভ হয়নি তাদের। শেষে সন্তানদের ভাত খাওয়ানোর চেষ্টা বাদ দিয়েছে দুই পরিবার।

হুমাইরা পারভীনের বাড়ি কুড়িগ্রাম পৌর সভার হাসপাতাল পাড়া এলাকার। সে আশরাফিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির ছাত্রী। তার বাবা মো. হাসান আলী পেশা একজন এনজিও কর্মচারী। মা বিথী আক্তার। পেশায় গৃহিণী। দুই বোনের মধ্যে হুমাইরা বড়।

অন্যদিকে হাসিবুর রহমান রাহি কুড়িগ্রাম পৌর শহরের পুরাতন স্টেশন পাড়ার মুদির দোকানদার মো. আনোয়ারুল ইসলাম আকাশ ও হাবিবা পারভীন দম্পত্তির বড় ছেলে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,হুমাইরা ও হাসিব দু'জনেই জেদি প্রকৃতির।তবে হুমাইরার পড়াশোনা, চলাফেরা অনান্যদের মতো স্বাভাবিক হলেও হাসিবের ক্ষেত্রে কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। শত চেষ্টা করেও ছেলেকে পড়াশোনা করাতে পারেন নাই তার বাবা মা।কেননা হাসিবের বয়স ১৮ বছর হলেও তার চলাফেরা এখনো তিন/চার বছর বয়সী শিশুদের মতো। সমবয়সীদের সঙ্গে ঘুরতে যাওয়া ও খেলাধুলা করা অপছন্দ করে সে। তবে সব সময় শিশুদের খেলনা নিয়ে সময় কাটাতে ভালো লাগে হাসিবের। কোনো আত্মীয়-স্বজনের বাসায় দাওয়াতে গেলে সন্তানের জন্য বাসা থেকে রুটি, পরোটা সঙ্গে নিয়ে যায় বলে জানান হুমাইরা ও হাসিবের পরিবার।

জন্মের পর থেকে ওই দুজনের ভাত না খাওয়ার খবরে এলাকায় অনেকেই অবাক হলেও সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছে পরিবার দুটি। চাল সিদ্ধ ভাত না খেলেও চালের গুঁড়া, চালের পিঠা পুলি পরোটা খেতে পারেন তারা। এছাড়া মাছ, মাংস দুধ ডিম কলাসহ অনান্য খাবারে আপত্তি নেই তাদের। শুধু সিদ্ধ চালের ভাত ছাড়া সব খেতে পারেন বলে জানিয়েছেন হুমাইরা নিজেই।

হুমাইয়ার প্রতিবেশি মো. এমদাদুল হক বলেন, ‘সুমাইয়া দীর্ঘ তেরো বছর ধরে ভাত খান না এমন খবর শুনেছি। প্রথমে বিশ্বাস করতে না পারলেও ওর বাড়িতে গিয়ে দেখেছি পরিবারের সবাই ভাত খাচ্ছে আর ও খাচ্ছে ডিম রুটি কলা। ভাত না খেলেও এলাকার অনান্য বাচ্চাদের মতো সুস্থ চলাফেরা করতে পারে সে।’

হাসিবের দাদা মো. সুলতান আলী বলেন, ‘আমার মেজো ছেলের ঘরে নাতি হাসিব। ছোট বেলা থেকে অনেক চেষ্টা করেছি হাসিবের মুখে ভাত তুলে দিতে পারি নাই। অনেক টাকা পয়সা খরচ করেছে কোন লাভ হয় নাই। জানি না আল্লাহ পাক কখন নাতিটার মুখে দিকে তাকাবেন। নাতিটা ভাত খেতে পারলে খুব খুশি হতাম।’

হাসিবের বাবা মো. আনোয়ারুল ইসলাম আকাশ বলেন, ‘আমি গরিব। তারপরও আল্লাহ পাকের কাছে আশা করছি কোথাও কোন ডাক্তার যদি সঠিক চিকিৎসা দিতে পারতো তাহলে ঋণ করে হলেও ছেলের চিকিৎসা করাতাম। ছেলের চিকিৎসার পেছনে এখন পর্যন্ত ৩/৪ লাখ টাকা খরচ করেও কোনো লাভ হয় নাই।’

সুমাইয়ার বাবা মো. হাসান আলী বলেন,আমার মেয়ের জন্মের দেড় বছর পর হতে ওর মুখে ভাত তুলে দেয়ার চেষ্টা করে আসছি। কিন্ত কোনোক্রমেই তাকে ভাত খাওয়ানো সম্ভব হয় নাই। অনেক ডাক্তারের কাছে গিয়েছি চিকিৎসা করাতে অনেক খরচ করেছি।কোন ডাক্তারই ওর আসল সমস্যার কথা বলতে পারে নাই। সব চিকিৎসক একটি কথা বলেছেন সুমাইয়ার ইচ্ছের বিরুদ্ধে জোর জবরদস্তি করা যাবে না। পরিণত বয়স হলে আশপাশের সামজিকতা ও মানুষের জীবন যাত্রা সম্পর্কে ধারণা পেলে হয়তো কোনো একদিন ভাত খেতে পারেন বলে জানান তিনি।

তিনি আরো বলেন, মেয়েটা যদি বর্তমান বাজারে সবচেয়ে দামি চালের ভাতও খেতো।গায়ের রক্ত বেঁচে হলেও সারাজীবন ওই চালের ভাত খাওয়াতাম। খুবই কষ্ট লাগে আমরা পরিবারের সবাই ভাত খাই, মেয়েটা ভাত না খেয়ে থাকে। কেউ যদি আমার মেয়েকে ভাত খাওয়াতে পারতো আমি একটি খাসি জবাই করে খাওয়াতাম।

হাসিব বলেন, আমি ভাত খাই না, ভাত খেতে ইচ্ছে করে না। কেক রুটি খাই তবে হুমাইরা বলে, আমি সব খাবার কম বেশি খেতে পারি। কিন্তু সিদ্ধ চালের ভাত দেখলেই আমার দম বন্ধ হয়ে আসে। ভাতের গন্ধ পেলে বমি চলে আসে। কিন্তু ভাত না খেয়ে থাকলেও আমার কোনো সমস্যা মনে হয় না। বাবাকে বলেছি বাবা আমাকে জোর করো না। রুটি, কলা, ডিম, মাছ মাংস সব তো খেতে পারি।

কুড়িগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন মো. মঞ্জুরই মোর্শেদ বলেন, এ বিষয় পরিবারের লোকজন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অথবা শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে পারেন। তবে ভাতের পরিপূরক অন্য খাবার খেয়ে শরীরে পুষ্টির চাহিদা মেটাতে পারলে কোনো সমস্যা হয় না।

(ঢাকাটাইমস/৩০জুলাই/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :