ফ্যাটি লিভার প্রতিরোধে যেসব খাবার খাবেন

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ০১ আগস্ট ২০২৩, ০৯:২৬
অ- অ+

ফ্যাটি লিভার রোগটি বিশ্বজনীন। যকৃতে চর্বি জমাকে ফ্যাটি লিভার বলে। মানুষ বুঝতেই পারেন না যে লিভারে ফ্যাট জমলে তা গুরুতর আকার নেয়। দেশে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি লোক ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত। বিশেষজ্ঞদের মতে, জীবনাচরণ পরিবর্তনের পাশাপাশি ৭ থেকে ১০ শতাংশ শরীরের ওজন হ্রাস করাই ফ্যাটি লিভার প্রতিরোধের মূলমন্ত্র। ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্তি পেতে ওজন কমানো সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি। যাদের ওজন বেশি, তারা যদি মাত্র ৭-১০% ওজন কমাতে পারেন তবে ফ্যাটি লিভার থেকে খুব দ্রুতই মুক্তি সম্ভব।

রক্তে অতিরিক্ত চর্বি, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, বিভিন্ন মেডিসিনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া, অতিরিক্ত ওজন বা খুব দ্রুত ওজন কমানো, পেটে অতিরিক্ত মেদ, বেশি পরিমাণ রিফাইন্ড শর্করা গ্রহণ, মদ্যপান বা জেনেটিক্স কারণে একজন মানুষ ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত হতে পারেন। মূলত, শর্করা এবং ফ্যাট বিপাক ক্রিয়ার নানা অসামঞ্জস্যতার ফলে এই রোগ হয়।

লিভার মানুষের শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এটি বিপাকের কাজ করে। এছাড়া হজমেও সাহায্য করে। ফ্যাটি লিভার মানে হলো যকৃতে চর্বি জমে যাওয়া এবং যকৃত একটু বড় হয়ে যাওয়া। শরীরে উৎপন্ন বিষাক্ত কিছু পদার্থকে পরিবর্তন ঘটিয়ে কম ক্ষতিকারক পদার্থে পরিণত করে বিভিন্ন উপায়ে শরীরের বাইরে নির্গমনের কাজ করে লিভার। লিভার কখনোই বিশুদ্ধ পদার্থগুলো নিজের মধ্যে জমা করে রাখে না। লিভারে চর্বি জমলে সেখানে প্রদাহের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তখনই সিরোসিস অব লিভারের ঝুঁকি বাড়ে।

মানুষের লিভারে সাধারণত ৩-৪ পাউন্ড চর্বি থাকে। লিভার সেলের চারপাশেও কিছু চর্বি থাকে। এ চর্বির পরিমাণ কোনোভাবে বেশি হলে অর্থাৎ ১০ শতাংশের বেশি হলে সেটিকে ফ্যাটি লিভার বলা হয়।

সময়মতো চিকিৎসা না নিলে রোগ জটিল হয়ে লিভার সিরোসিসের মতো জটিলতা হতে পারে। লিভারের মধ্যে সাধারণত ৫ শতাংশ চর্বি শোষণ হতে পারে। যদি ৫ শতাংশের ওপরে চর্বি জমা হয়ে থাকে, তখনই আমরা একে ফ্যাটি লিভার বলে থাকি।

ফ্যাটি লিভার দুই প্রকার, অ্যালকোহলযুক্ত ফ্যাটি লিভার এবং নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার। প্রথমটি অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে এবং দ্বিতীয়টি অ্যালকোহল ছাড়া অন্য অনেক কারণে হয়ে থাকে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। ফ্যাটি লিভারের অন্যান্য কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে চর্বি এবং কার্বোহাইড্রেট বেশি গ্রহণ, ডায়াবেটিস এবং শারীরিক কার্যকলাপের অভাব ইত্যাদি।

ফ্যাটি লিভার স্বাভাবিক থাকলে অর্থাৎ লিভার অ্যানজাইমগুলো যদি না বেরিয়ে থাকে, লিভারে কোনো প্রদাহ না থাকলে তাকে স্বাভাবিক ফ্যাটি লিভার বলা হয়। তবে ফ্যাটি লিভার থেকে লিভারে প্রদাহ হলে তাকে বলে স্ট্যাটো হেপাটাইটিস। অর্থাৎ ফ্যাটি লিভারের কারণে তার প্রদাহ হয়েছে।

এ ছাড়া থাইরয়েড হরমোনে কোনো সমস্যা থাকলে ফ্যাটি লিভার হতে পারে। ডায়াবেটিস ওজন আধিক্য, চর্বিযুক্ত খাবার গ্রহণ ফ্যাটি লিভারের ক্ষেত্রে সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

ফ্যাটি লিভারের সব থেকে বড় লক্ষণ স্বাভাবিকের থেকে বেশি কোমরের মাপ। মোদ্দা কথা ভুঁড়ি। লিভারে চর্বি জমলে স্বাভাবিক কাজ কিছুটা ব্যাহত হয়। খাওয়ার ইচ্ছা কমে যায়, খাবারে অরুচি হয়, দ্রুত ওজন কমা, বমি বমি ভাব, বমি হওয়া, খুব দুর্বল লাগা ও কোনো কাজ করতে ইচ্ছা না করা।

ফ্যাটি লিভার হলে মাথাব্যথা, মন খারাপ ও ডিপ্রেশন, আচমকা কাঁপুনিসহ নানা উপসর্গ দেখা দেয়। নখ বা চোখ হলদেটে লাগলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে লিভার ফাংশন টেস্ট করিয়ে নিতে হবে। হজমের সমস্যা ও অ্যাসিডিটির সমস্যা হতে পারে।

এখন অল্প বয়সেই ফ্যাটি লিভার রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে। এক বার এই রোগে আক্রান্ত হলে খাওয়াদাওয়ায় চলে আসে অনেক রকম বিধিনিষেধ। জেনে নিন, এই রোগে আক্রান্ত হলে কী খাওয়া যাবে আর কী একেবারেই খাওয়া যাবে না।

যেসব খাবার খাবেন

সবুজ শাকসব্জি: সবুজ শাকসব্জির মধ্যে যে পলিফেনল ও নাইট্রেট পাওয়া যায়, তা লিভারের চর্বি কমাতে সাহায্য করে। তবে রান্না ও সেদ্ধ করে ফেললে এর মধ্যেকার পলিফেনলের পরিমাণ ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের কার্যকারিতা অনেকটাই কমে যায়। তাই শসা, লেটুসের মতো কাঁচা শাকসব্জি স্যালাড হিসাবে বেশি করে খেতে পারেন।

ডাল ও বীজজাতীয় খাবার: ডাল, ছোলা, মটরশুঁটি ইত্যাদি খাবারে স্টার্চ ও ফাইবার ভরপুর মাত্রায় থাকে। এ সব খাবার পরিপাকতন্ত্রের জন্য স্বাস্থ্যকর, একই সঙ্গে এগুলি ট্রাইগ্লিসারাইড কমাতেও সাহায্য করে।

সামুদ্রিক মাছ: ইলিশ, পমফ্রেট ইত্যাদি মাছে থাকা ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড উপকারি এইচডিএল কোলেস্টেরল বাড়ায় এবং ক্ষতিকর ট্রাইগ্লিসারাইড কমিয়ে লিভারে চর্বি ও প্রদাহ কমায়।

লেবু, টক দই: শরীর থেকে যতটা টক্সিন বার করে দিতে পারবেন, লিভার ততটাই সুস্থ থাকবে। দিনে কয়েক বার গরম জলে পাতিলেবুর রস দিয়ে সেই পানি পান করুন। ডায়েটে রাখুন টক দইয়ের মতো প্রোবায়োটিক।

মশলাপাতি: কাঁচা হলুদের কারকিউমিন লিভারের জন্য ভাল। রাতে দুধের মধ্যে এই হলুদ গুলে খেতে পারেন। কাঁচা রসুনও যকৃতের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।

দুধ এবং কম চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাতীয় খাবার: দুধ থেকে তৈরি ছানা, মাঠা বা ঘোলে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন রয়েছে। এটি লিভারকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে পারে। ২০১১ সালে ইঁদুরের ওপর গবেষণা চালিয়ে এমন যুক্তির পক্ষে প্রমাণ পাওয়া যায়।

আখরোট: আখরোটে প্রচুর পরিমাণে থাকে ওমেগা থ্রি। গবেষণায় দেখা গেছে যে, ফ্যাটি লিভার রোগে আক্রান্ত যারা আখরোট খেয়েছেন তাদের লিভার ফাংশনের আরও উন্নতি হয়েছে।

তেঁতুল: তেঁতুল খেলে দূর হয় ফ্যাটি লিভার। শুধু ফ্যাটি লিভার নয়, যে কোন ধরনের লিভারের সমস্যা থাকলে তেঁতুল সব থেকে উপকারি। তেঁতুল আমাদের শরীর থেকে ক্ষতিকর পদার্থ বের করে দেয় এবং হজম প্রক্রিয়াকে সঠিক রাখে। এছাড়াও খারাপ কোলেস্টেরল ধ্বংস করে।

অ্যাভোকাডো: অ্যাভোকাডোতে স্বাস্থ্যকর চর্বি বেশি থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, অ্যাভোকাডোতে থাকা রাসায়নিক লিভারের ক্ষয় ধীর করে দিতে পারে। এটি ফাইবার সমৃদ্ধ, যা ওজন নিয়ন্ত্রণেও সহায়তা করে।

গ্রিন টি: গবেষণায় দেখা গেছে যে, গ্রিন টি শরীরের চর্বি কমাতে সাহায্য করতে পারে। যদিও গবেষণার ফলাফল এখনো চূড়ান্ত নয়। গবেষকরা দেখেছেন যে, গ্রিন টি লিভারে চর্বি সঞ্চয় কমাতে পারে এবং লিভারের কার্যকারিতা উন্নত করতে পারে। এছাড়াও গ্রিন টিতে আরও অনেক উপকারিতা রয়েছে।

কফি: গবেষণায় দেখা গেছে যে ফ্যাটি লিভার রোগে আক্রান্তদের মধ্যে যারা কফি পান করেন তাদের লিভারের ক্ষতি কম হয়েছে। আর যারা কফি পান করেন না তাদের ক্ষতি বেশি হয়েছে। কফিতে থাকে ক্যাফেইন। ক্যাফেইন অস্বাভাবিক লিভার এনজাইমের পরিমাণ কমিয়ে দেয়।

অলিভ অয়েল: স্বাস্থ্যকর অলিভ ওয়েলে ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড বেশি থাকে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে, অলিভ অয়েল লিভারের এনজাইমের মাত্রা কমাতে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে

বিশুদ্ধ পানি: যকৃত বা লিভার ভালো রাখার সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে পানি পান করা। লিভার ভালো রাখতে অবশ্যই সঠিক পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করা আবশ্যক। সুতরাং, অস্বাস্থ্যকর পানীয় যেমন কার্বোনেটেড বেভারেজ বা রাস্তার মোড়ে থাকা শরবত পানের অভ্যাস থাকলে আজ থেকে বাদ দিন এবং বিশুদ্ধ পানি পান করুন এবং আপনার যকৃতকে ভালো রাখুন।

যেসব খাবার খাবেন না

চিনি: ফ্যাটি লিভারের সবচেয়ে বড় শত্রু কিন্তু চিনি বা শর্করা। সরাসরি চিনি কিংবা চিনি রয়েছে, এমন যে কোনও খাবার, মিষ্টি, নরম পানীয় এড়িয়ে চলতে হবে। বাড়তি চিনিই ট্রাইগ্লিসারাইড হিসেবে যকৃতে জমা হয়।

ভাজাভুজি: উচ্চ তাপমাত্রায় ভাজা যে কোনও খাবার থেকে দূরে থাকুন। চিকেন পকোড়া, ফিশ ফ্রাই, ফুচকা— যে কোনও ধরনের বাইরের খাবার খাওয়ার আগে সতর্ক হোন।

লবণ: রান্নায় লবণে ব্যবহার কমিয়ে আনতে হবে। কাঁচা লবণ খাওয়া যাবে না। প্রক্রিয়াজাত খাবারে অনেক বেশি মাত্রায় লবণ থাকে । সুতরাং, সেই খাবারও এড়িয়ে চলুন।

শর্করা: সাদা ভাত, ময়দার তৈরি রুটি, পাউরুটি ও পরোটা, নান, নুডলস, পাস্তা ইত্যাদি খাবার লিভারে ফ্যাটের মাত্রা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। তাই এগুলি খাওয়ার মাত্রাও কমিয়ে আনুন।

রেড মিট: রেড মিট, যেমন গরু কিংবা খাসির মাংস খাওয়া কমিয়ে ফেলুন। মুরগির মাংস খেতে পারেন।

মদ: মদ্যপান একেবারে বন্ধ করতে হবে। এই অভ্যাস বাদ না লিলে কিন্তু লিভারের মারাত্মক ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।

ফ্যাটি লিভার কমাতে প্রতিদিন ব্যায়াম করা জরুরি। বাড়িতে প্রতিদিন সকালে ১৫ থেকে ২০ মিনিট নিয়ম করে ব্যায়াম করুন। এতে লিভারের সমস্যা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে থাকে। ফ্যাটি লিভারও সেরে যাবে কিছুদিনে।

(ঢাকাটাইমস/০১ আগস্ট/আরজেড)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
নিষিদ্ধ সংগঠন কর্মকাণ্ড চালালেই ব্যবস্থা: রেজাউল মল্লিক
শ্রীপুরে পিকআপের ধাক্কায় সিএনজিচালক নিহত
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের গেজেট প্রকাশের পরই নিবন্ধন নিয়ে সিদ্ধান্ত: সিইসি
ভারতের রাফাল ধ্বংসকারী চীনা যুদ্ধবিমান জে-১০সি কিনতে যাচ্ছে বাংলাদেশ
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা