টাঙ্গুয়ার হাওরে গ্রেপ্তার বুয়েটের ২৪ শিক্ষার্থীসহ ৩২ জনের জামিন

সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে গ্রেপ্তার বুয়েটের ২৪ জনসহ ৩২ শিক্ষার্থীকে জামিন দিয়েছেন আদালত।
বুধবার দুপুরে তাহিরপুর চিফ জুডিশিয়াল আদালতে তাদের হাজির করলে বিচারক ফারহান সাদিক জামিনের আদেশ দেন।
বুয়েটের ২৪ জনসহ ৩২ শিক্ষার্থীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবু হানিফ নোমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে গত রবিবার একটি পর্যটকবাহী নৌকা থেকে টাঙ্গুয়ার হাওর থেকে টেকেরঘাট যাওয়ার পথে ৩২ শিক্ষার্থীকে আটক করে তাহিরপুর থানা পুলিশ। পুলিশের দাবি, আটক সবাই ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মী।
আটকের ২৪ ঘণ্টা পর সোমবার বিকালে তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ঘটানো, জনসাধারণের জানমালের ক্ষতি সাধনের উদ্দেশ্যে গোপন ষড়যন্ত্র ও ধর্মীয় জিহাদ সৃষ্টির মাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার অভিযোগে তাহিরপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রাশেদুল কবির বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। ওইদিন সন্ধ্যায় তাদের আদালতে পাঠানো হলে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. ফারহান সাদিক তাদেরকে জেলহাজতে পাঠানোর আদেশ দেন। এর মধ্যে দুইজনের বয়স ১৮ বছরের কম হওয়ায় তাদেরকে শিশু সংশোধনাগারে পাঠানোর আদেশ দেন নারী ও শিশু আদালতের বিচারক মো. জাকির হোসেন।
কোর্ট পুলিশ পরিদর্শক বোরহান উদ্দিন জানান, শিশু তানিমুল ইসলাম( ১৫) ও রায়হান ইসলাম সাজিদকে (১৭) শিশু সংশোধনাগারে এবং অন্যদের জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
তাহিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈয়দ ইফতেখার হোসেন জানান, মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে পুলিশ তাদের আদালতে পাঠায়। রবিবার আটকের পর সোমবার বিকালে আদালতে তোলা হলে বিচারক তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
আদালত থেকে কারাগারে পাঠানোর সময় একাধিক শিক্ষার্থী দাবি করেন, তারা কোনো অপরাধ করেননি। তারা সবাই টাঙ্গুয়ার হাওর, শহীদ সিরাজ লেকে বেড়াতে এসেছিলেন। আর পুলিশ কী কারণ, তাদের অপরাধ কী কিছু না বলে ধরে নিয়ে আদালত পাঠায়। কী মামলা দায়ের করেছে তাও জানেন না তারা।
থানা পুলিশের ভাষ্য, তাহিরপুর উপজেলা বাজারের নৌকা ঘাট থেকে রবিবার সকাল ৭টায় একটি নৌকায় করে বুয়েটের ২৪ শিক্ষার্থী ও তাদের সঙ্গে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আরো ৮ জন শিক্ষার্থীসহ ৩২ জনের একটি টিম টাঙ্গুয়ার হাওরে ঘুরতে যান। হাওরে ঘোরার পর দুপুরের দিকে পাটলাই নদী দিয়ে জনসাধারণের জানমালের ক্ষতি সাধনের উদ্দেশ্যে গোপন ষড়যন্ত্র এবং ধর্মীয় জিহাদ সৃষ্টির মাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার একটি বৈঠক চলে। পরে পুলিশ গোপন সূত্রে খবর পেয়ে তাহিরপুরের নতুন বাজারের সামনে নৌকাটি এলে পুলিশের দুটি স্পিডবোট পর্যটকবাহী নৌকাটি থামিয়ে তাদের আটক করে থানায় নিয়ে যায়। পরে দীর্ঘ ২৪ ঘণ্টা জিজ্ঞেসাবাদ করে সোমবার বিকালে সন্ত্রাস বিরোধী আইন ২০০৯ (সংশোধনী ২০১৩) এর বিভিন্ন ধারায় তাহিরপুর থানার এসআই রাশেদুল কবীর বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন।
এদিকে টাঙ্গুয়ার হাওরে রবিবার বিকালে পুলিশের এই বিশেষ অভিযান নিয়ে এলাকায় নানা মহলে আলোচনা চলছে। স্থানীয় লোকজন বলছেন, হাওরে এই মৌসুমে অনেক পর্যটক আসেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক থাকেন শিক্ষার্থী। তারা দলবেঁধে আসেন। এই ঘটনায় হাওরে আসা পর্যটকদের মধ্যে প্রভাব পড়বে।
নৌকার চালকরা জানান, আটককৃতরা অন্যান্য পর্যটকের মতো স্বাভাবিকভাবে কথাবার্তা বলেন, চলাচল করেন। টাঙ্গুয়ার হাওরে গিয়ে গোসল করেন। দুপুরে খাওয়া দাওয়া করে টেকেরঘাটের দিকে পাটলাই নদী দিয়ে নতুন বাজারের কাছে গেলে নৌকাসহ শিক্ষার্থীদের নিয়ে আসে পুলিশ।
জেলা পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, মূলত ঢাকা থেকে পাওয়া গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এই অভিযান চালানো হয়। তাদের থানায় নিয়ে আসার পরে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ ও তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন আলামত জব্দ করার পরই তাদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
(ঢাকাটাইমস/০২আগস্ট/এফএ)

মন্তব্য করুন