শেরপুরে সরবরাহ করা হচ্ছে রপ্তানিযোগ্য মাছের আঁশ

শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ০৬ আগস্ট ২০২৩, ১২:৫১| আপডেট : ০৬ আগস্ট ২০২৩, ১৩:০৩
অ- অ+

বগুড়ার শেরপুরের বাজারগুলোতে অনেক মাছ বিক্রেতাই মাছের আঁশ সংগ্রহ করে বাড়তি আয় করছেন। এতে তাদের পরিবার যেমন বাড়তি অর্থনৈতিক সহযোগিতা পাচ্ছে তেমনি দেশের অর্থনীতিতেও ভূমিকা রাখছে।

সরেজমিনে শেরপুরের রেজিস্ট্রি অফিস বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সার্বক্ষণিক মাছ কেটে জীবিকা নির্বাহকারীদের মধ্যে আল আমিন, নিয়ত আলী, আনিস, বকুল এবং আসাদ। তাদের বগুড়ার শেরপুরের রেজিস্ট্রি অফিস কাঁচাবাজারে মাছ কেটে বিক্রি করে চলত সংসার। আর একটু স্বচ্ছলভাবে চলতে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারেন যেন তারা। এতে আরেকটি বাড়তি আয়ের দরকার। সংগ্রহ করতে শুরু করেন মাছের আঁশ। এ জন্য তাদের আলাদা শ্রম ছাড়া বাড়তি অর্থ বিনিয়োগ করতে হয়নি।

তারা জানান, মাছ কাটার পর শুধু মাছের উচ্ছিষ্ট বা বর্জ্য হিসেবে পরিচিত আঁশকে সংগ্রহ করে রাখেন। প্রতিদিন গড়ে ১-৩ কেজি পর্যন্ত আঁশ সংগ্রহ করতে পারেন। এতে মাস শেষে ২৫ থেকে ৩০ মণ আঁশ সংগ্রহ হয়। প্রতি মণ বর্তমানে বিক্রয় করা হচ্ছে ৩ হাজার টাকা। এতেই তাদের বাড়তি আয় যোগ হয় ৬ থেকে ৮ হাজার টাকা। তারা আরও জানান, প্রথমে আমরা ৫ হাজার টাকা মণ বিক্রয় করতাম। এখন দাম কমে গেছে তাই ৩ হাজার টাকা মণ বিক্রি করি।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এখন শেরপুর উপজেলায় প্রায় ১৫ জন মাছের আঁশ সংগ্রহ করেন। মাছ কাটায় নিয়োজিতরাই শুধু এই আঁশ সংগ্রহ করছেন। বাড়তি আয়ের আশায় বাজারের মাছ বিক্রেতা এ আঁশ সংগ্রহ করেন। তারা নিজের মাছ ক্রেতার কাছে বিক্রির পর তা কেটে দিয়ে মাছের আঁশ জোগাড় করছেন। এতে সংশ্লিষ্টদের পরিবারেও বাড়তি খরচের চাপ সামলাতে সহজ হচ্ছে। মাছের আঁশ হচ্ছে স্থানীয়ভাবে সংগৃহীত এক ধরনের বর্জ্য পণ্য।

যেভাবে সংগ্রহ করা হয়

স্থানীয়ভাবে মাছ কাটার কাজে নিয়োজিত ব্যক্তি কর্তৃক মাছের আঁশ সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা হয়। পরে প্রক্রিয়াজাতকরণের অংশ হিসেবে এসব আঁশ শুকানো হয়। চুন বা ক্যালসিয়াম জাতীয় পদার্থও অপসারণ করা হয়। সংগ্রহের পর এসব আঁশ সংরক্ষণকারীর কাছে করে বিক্রয় করা হয়। সংরক্ষণকারী হাত বদল করে বাজারজাতকারী ব্যবসায়ী বা রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের মনোনীত এজেন্টের কাছে। এই এজেন্ট বা ব্যবসায়ীই মূলত রপ্তানিকারকের গুদামে মাছের আঁশ সরাসরি সরবরাহ করে।

কী হয় মাছের আঁশে

বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে দেখেছেন, মাছের আঁশে আছে কোলাজেন ফাইবার, অ্যামাইনো এসিড, গুয়ানিনি ও বায়ো অ্যাভসরবেন্স ক্যাপাসিটি ও-এর মতো কয়েকটি বিশেষ গুণ। ফলে এই আঁশ ও আঁশ দিয়ে তৈরি পাউডার ওষুধ শিল্প, প্রসাধনী শিল্প ও খাদ্যশিল্পসহ পরিবেশ সুরক্ষার রক্ষাকবচ পণ্য হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। প্রশাসন শিল্পের অন্যতম কাঁচামাল হচ্ছে মাছের আঁশ। এর গুয়ানিনি উপাদানের কারণে লিপস্টিক ও নেইল পলিশের উজ্জ্বল্যভাব ধরে রাখা এবং মেকআপ ও ব্রাশ তৈরিতেও এটি কাজে লাগে। এ ছাড়া মাছের আঁশে ‘ও বায়ো অ্যাভসরবেন্স ক্যাপাসিটি ও’-এর উপস্থিতির কারণে আঁশ দ্বারা তৈরি পাউডার কপার ও সিসার মতো হ্যাভি মেটাল জাতীয় পদার্থের দূষণ রোধে খুবই কার্যকরী। কোলাজেন ফাইবার উপাদান শক্তি উৎপন্ন করে। রিচার্জেবল ব্যাটারিতে বৈদ্যুতিক শক্তি উৎপন্নে চীন ও জাপান এ আঁশ ব্যবহার করে। মাছের আঁশে কোলাজেন থাকায় কৃত্রিম কর্ণিয়া ও কৃত্রিম হাড় তৈরিতেও ব্যবহৃত হয়। অ্যামাইনো অ্যাসিডের উপস্থিতির কারণে মাছের আঁশের পাউডার বিভিন্ন দেশে স্যুপের সঙ্গে পুষ্টি উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

এ প্রসঙ্গে সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শারমিন আকতার বলেন, সরকারিভাবে এই শিল্পটিকে আরেকটু এগিয়ে নিতে পারলে অনেকটা বেকার সমস্যার সমাধান হওয়ার পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিও লাভবান হবে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার সানজিদা সুলতানা বলেন, মৎস্য কর্মকর্তার মাধ্যমে এই আঁশকে সম্পূর্ণরূপে রপ্তানি উপযোগী করাতে সহযোগিতা করব। এবং এই উপজেলা থেকে যেন সরাসরি রপ্তানিকারকের গুদামে মাছের আঁশ সরাসরি সরবরাহ করতে পারে সেই সহযোগিতা করব। এতে করে তারা দামও বেশি পাবে।

(ঢাকাটাইমস/৬আগস্ট/এআর)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
যশোরে বাসের ধাক্কায় মোটরসাইকেলচালক নিহত 
মির্জাপুরে জুলাই অভ্যুত্থানে দুচোখ হারানো হিমেল পেল সাড়ে ৩ লাখ টাকা
মানিকগঞ্জে ৬ দফা দাবিতে স্বাস্থ্য সহকারীদের অবস্থান কর্মসূচি
অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রম অত্যন্ত ধীর গতিতে চলছে: লায়ন ফারুক 
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা