বাঙালির সাংস্কৃতিক অধিকারের স্বাধীনতা প্রয়োজন

স্বাধীন সার্বভৌম প্রতিটি রাষ্ট্রের যেমন একটি জাতীয় পতাকা রয়েছে তেমনি প্রত্যেকের আছে নিজস্ব সংস্কৃতি থেকে উৎসারিত জাতীয় সংগীত। বিশ্ব দরবারের যে কোনো বৃহত্তর কনফারেন্স কিংবা খেলাধুলার মত বড় আসরে যে দুটি বিষয় সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রের পরিচয় কে বহন করে তার একটি জাতীয় পতাকা আর অন্যটি হলো জাতীয় সংগীত। দুটো বিষয় যতটা না ধর্মের সাথে প্রাসঙ্গিক তার চেয়ে অনেক বেশি প্রাসঙ্গিকতা সংস্কৃতির সাথে। কারন একটি দেশের জাতিসত্তার সাথে তার সংস্কৃতি যত বেশি সম্পৃক্ত পৃথকভাবে ধর্মীয় অনুভূতির সম্পৃক্ততা এত বেশি পরিলক্ষিত হয় না কোন দেশের জাতীয় সংগীত পর্যালোচনা করলে। অন্তর্নিহিত বড় একটি কারণও রয়েছে তা হল একটি দেশের সংস্কৃতি একাধিক ধর্মকে আশ্রয় দিতে পারে ফলে সকল ধর্মই সংস্কৃতিতে আশ্রিত হয়ে ধর্মনিরপেক্ষতা রূপ লাভ করে অসাম্প্রদায়িক চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। ফলে একটি দেশে একাধিক ধর্মের মানুষ একই রকম অধিকার নিয়ে সুযোগ-সুবিধা নিয়ে নাগরিকত্ব নিয়ে স্বাচ্ছন্দে বাস করতে পারে। বিশ্বে এমন রাষ্ট্র অস্তিত্ব কল্পনা করা সত্যিই কঠিন যেখানে শুধুমাত্র একটি ধর্মের মানুষ বাস করে। একটি দেশে অধিক সংখ্যক নাগরিক একটি বিশেষ ধর্মের অনুসারী হতে পারে কিন্তু তার সামগ্রিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার ক্ষেত্রে নিরবিচ্ছিন্ন একশভাগ মানুষ একই ধর্মের বাস করে এমন অস্তিত্ব বিশ্বে আছে বলে আমার জানা নেই। সংস্কৃতির এত বড় ক্যানভাসের মত অন্তর্নিহিত মূল্যে ধর্মের ক্যানভাস এত বড় থাকলেও দৃশ্যমান বাস্তবতায় একটি ধর্ম তার নিজস্ব অস্তিত্বের আমিত্ব প্রকাশ করতে গিয়েই অন্য ধর্মকে আশ্রয় দেওয়ার সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও সেটি নিজের পরিপূরক হিসাবে কখনো দিতে সক্ষম হয় না। এটি বড় মাপের একটি সীমাবদ্ধতা। রাষ্ট্রীয় আচার অনুষ্ঠানে জাতীয় সংগীত এর গুরুত্ব এতটা ব্যাপৃত হলেও একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, আসমানী কিংবা সনাতন ধর্মে রাষ্ট্র পরিচালনায় জাতীয় সংগীতের বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট দিক-নির্দেশনা আছে বলে আমার জানা নেই। একই ধর্মের মানুষ বিশ্বের নানা রাষ্ট্রে বসবাস করে থাকে। কাজেই ধর্মে যদি জাতীয় সংগীতের বিষয়টি উল্লেখ থাকতো তাহলে ধর্ম মতের সেই মানুষগুলো বিশ্বের যেখানে বাস করুক না কেন তারা সেটি পাঠ করতে পারত। আবার এই বিষয়কে কেন্দ্র করে নানারকম দ্বন্দ্ব বিশৃঙ্খলাও দেখা দিতো নিঃসন্দেহে। কাজেই ধরেই নেয়া যায় জাতীয় সংগীত বিষয়টি মূলত ধর্মীয় সংস্কৃতির অংশ নয়। একটি দেশের জাতীয় মূল্যবোধ তথা জাতিসত্তা এবং সে দেশের অভ্যন্তরে বিদ্যমান সামগ্রিক সংস্কৃতির চেতনা থেকে উৎসারিত হয় সে দেশের জাতীয় সংগীত। দেশপ্রেমের নিবিড় সম্পর্ক থাকায় একটি দেশে একাধিক জাতিসত্তার অস্তিত্ব পরিলক্ষিত হলেও সকলে মিলে জাতীয় সংগীত কে সমভাবে সম্মান করতে শেখে। সংস্কৃতির ধর্মীয় অংশে দেশপ্রেমের প্রতি সকল ধর্মই অত্যধিক গুরুত্ব প্রদান করেছেন। যেমন ইসলাম ধর্ম মতে দেশপ্রেমের মধ্যে ঈমানকে অংগীভূত করা হয়েছে। আর ঈমান হল এই ধর্ম মতের মানুষের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি আবশ্যকতা। যা না থাকলে এ ধর্মমতের মানুষ হিসাবে সে পরিপূর্ণ নয়। জাতীয় সংগীত কে কটাক্ষ করা বিদ্রুপ করা কিংবা সমালোচনার ক্ষেত্রে বস্তুনিষ্ঠ অনুভূতির স্খলন হলে স্ব-স্ব ধর্মের আদর্শ থেকে বিচ্যুতি ঘটতে পারে এ বিষয়টি ভেবে দেখবার যুক্তিসংগত গুরুত্ব রয়েছে তাতে কোন সন্দেহ নেই।
বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের উপজীব্য উপকরণগুলো বিশ্লেষণ করলে রবি ঠাকুরের কল্পচিত্রে নিখাদ দেশপ্রেম মা মাটি মানুষ ঋতু বৈচিত্র প্রকৃতির আকাশ বাতাস থেকে শুরু করে নানারকম সুন্দরের সমাবেশ সন্নিবেশিত হয়ে বাংলার অপরূপ সৌন্দর্যের মহিমা প্রকাশ পেয়েছে। যার সৃষ্টিকাল 1905 সালে। শব্দচয়ন ও ভাষাশৈলীর কোথাও বিন্দুমাত্র সাম্প্রদায়িকতার কোনো লেস গন্ধ নেই। প্রকৃতির এমন শোভা ও সৌন্দর্য প্রকাশ এবং বাংলা সংস্কৃতির অনন্য উপস্থাপনে আর কোন বাংলা গান খুব একটা পাওয়া যায় না। কাছাকাছি অনুভূতিকে নাড়া দিয়ে যায় আরেকটি গান যেমন রয়েছে তাহলো দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ধনধান্যে পুষ্পে ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা। আমরা অনেকেই জানিনা আমাদের জাতির পিতার অন্তরে এ দুটি গান কত বেশি সমাদৃত ছিল। তিনি নিজে যেমন গুন গুন করে গাইতেন তেমনি সুযোগ পেলেই চেতনা নির্মাণের মন্ত্র হিসেবে শিল্পীদের কে এই গানটি পরিবেশনে অনুপ্রাণিত করতেন। তার এই চেতনার প্রকাশ মেলে বাংলাদেশ জন্মেরও বহু পূর্বে। মূলত তাঁর চিন্তা চেতনা ও দর্শনের সাথে একাকার হয়ে যে সময়কাল বা দিনক্ষণটিতে আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি এই গানটি মিশে একাত্ম হয়ে গিয়েছে ঠিক সেই দিনক্ষণ টিতেই আমাদের জাতীয় সংগীতের উন্মেষ ঘটেছে। যদিও তা বাংলাদেশ উত্তর আনুষ্ঠানিক জাতীয় সংগীত ঘোষণার অনেক পূর্বের ঘটনা।
স্মরণ রাখা দরকার আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময়কালীন বাস্তবতায় এই গানটি নতুন ব্যঞ্জনা নিয়ে প্রতিভাত হয়েছিল সকল যোদ্ধাদের প্রাণে প্রাণে। সাহসী ও অনুপ্রাণিত করেছিল যুদ্ধের ময়দানে অংশগ্রহণকারী, আত্মদানকারী সকল মুক্তিযোদ্ধাকে। শক্তি চেতনা ও অনুপ্রেরনার ক্ষেত্রে লোকজ বাউল সুরের এই গানটি বাঙালি জীবনের সকল বর্তমানে সমসাময়িক হয়ে একই রকম আবেদন নিয়ে প্রাণ সঞ্চার করেছে যেমন ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের অতীত প্রেক্ষাপটে তেমনি করে ভবিষ্যতের যে কোন বর্তমানের প্রয়োজনে অসীম শক্তিমত্তা প্রদর্শন করবে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সংস্কৃতি বাঁচিয়ে রাখার যুদ্ধে। আমাদের জাতীয় সংগীতের মূল বিশেষত্ব ঠিক এখানেই। বাঙালির প্রাণের কবি হিসাবে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই বিশেষত্বে সফল ও সার্থক কবি। এখানেই তাঁর বাংলা জয়।
আমাদের দেশের এক শ্রেণীর মানুষ এ দেশের জন্ম লগ্নের পূর্ব থেকেই রবীন্দ্র বিদ্বেষী মনোভাব পোষণ ও প্রদর্শন করে আসছেন। যার ধারাবাহিকতায় এখনো সেই শ্রেণীর মানুষকে বলতে শুনি কেন রবীন্দ্র সংগীত এ দেশের জাতীয় সংগীত হবে? জাতীয় সংগীত নিয়ে নানারকম বিদ্রুপাত্মক কথাবার্তা, অসংলগ্ন সাম্প্রদায়িক বক্তব্য, বিজাতীয় কবির রচনা, অপ্রাসঙ্গিক কিছু নির্বোধ উচ্চারণ করতে শোনা যায় এক শ্রেণীর মানুষের মুখে। গভীর পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় এই শ্রেনীর মানুষের এমন মনস্তত্ত্ব সেটিও পাকিস্তানী মনস্তত্ত্ব থেকে উৎসারিত ও উচ্চারিত হয়েছে। শুধু জাতীয় সংগীত নয় তাদের মনস্তত্ত্বে বাংলার যেকোনো সংগীত তথা বাঙালির চেতনা উৎসারিত মূল সংস্কৃতির সবটুকুই অপছন্দের। বলে রাখা দরকার বাংলা সংস্কৃতি এতটাই ঋদ্ধ যে কারো অপছন্দতে এ সংস্কৃতির কিছু যায় আসে না।
উৎসমূলে আলোচনায় গেলে বাঙালি এবং বাংলা ভাষার শক্তিমত্তার যে রক্তঝরা ইতিহাস 1952 সালে পাকিস্তানিরা প্রত্যক্ষ করেছিল সেখানটাতে উচিত শিক্ষা পেয়ে চলমান কৌশলের সাথে বুদ্ধিদীপ্ত কুটকৌশল সংযোজন করার প্রয়াস চালিয়েছিল অত্যন্ত সুকৌশলে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদীয়মান তেজোদীপ্ত রাজনীতিকে তথা বাংলাদেশের জন্মস্বপ্নকে ধুলিস্যাৎ করার সুদূর প্রসারী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে রবীন্দ্রনাথ ও রবীন্দ্র সাহিত্যকে ব্যান্ড করার বিষয়কে কুটকৌশল হিসেবে গ্রহণ করে। তারা অনুধাবন করতে সক্ষম হয়েছিলেন শুধুমাত্র জেলে পুরে বঙ্গবন্ধুকে দাবিয়ে রাখা সম্ভব নয়। জেল জুলুমের সাথে চেতনার মৃত্যু ঘটানো সম্ভব হলে শেখ মুজিবকে রুখে দেয়া সম্ভব হবে। কেবল তখনই বাংলাদেশ জন্মের স্বপ্নভঙ্গ সম্ভব অর্থাৎ রবীন্দ্রসাহিত্য কে, সংগীতকে বঙ্গবন্ধু থেকে আলাদা করতে হবে।যার বাস্তব উদাহরণ আমরা দেখতে পাই পাকিস্তানি কারাগারে বঙ্গবন্ধুকে রবীন্দ্রনাথের সঞ্চিতা বইটি সঙ্গি হিসেবে অনুমোদন না দিয়ে তা রেখে দেয়া হয়।
বাংলা ভাষার জাদুকরী শক্তি এবং মার্গীয় উচ্চতা বিশ্বব্যাপী সে দিনই টের পেয়েছিল কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 1913 সালে ভাষা সাহিত্যে যখন নোবেল পেলেন। সম্ভবত পাকিস্তানি বুদ্ধিজীবীরা এবং পাকিস্তানী শাসক শ্রেণী তখন থেকেই বাংলা ভাষার গলা টিপে ধরার সংকল্প শুরু করে যার চূড়ান্ত রুপ প্রদর্শিত করলেন 1952 সালের ভাষা আন্দোলনে। তদানীন্তন অবিভক্ত পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন একটি অনুষ্ঠানে তৎকালীন পাকিস্তানি ইয়াহিয়া খান আচম্কা এমন একটি ঘোষণা করলে বাংলার ছাত্র-জনতা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে এবং সেখানেই তার প্রতিবাদ জানানো হয়। ভাষা রক্ষার আন্দোলন বেগবান হতে থাকলে পাকিস্তানি শাসকরা বুলেট ব্যবহারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। 1952 সালে ফেব্রুয়ারি মাসে আমাদের বাঙালি ছাত্র জনতার প্রাণের দাবি বাংলা ভাষা আন্দোলনে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে ইতিহাসের জঘন্যতম একটি অধ্যায়ের জন্ম দিয়েছে পাকিস্তান। সালাম রফিক জব্বার সহ বেশ কয়েকজন ভাষা সৈনিককে প্রাণ দিতে হয়েছে প্রাণের দাবী বাংলা ভাষা রক্ষার জন্য। তাদের এই আত্নত্যাগ যেমন বাংলা ভাষাকে রক্ষা করেছে তেমনি বাংলাদেশ জন্মের স্বপ্নকে বাস্তবসম্মত করেছে। ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটেও বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব ছিল চোখে পড়ার মতো।
বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে জেল-জুলুম অত্যাচার অব্যাহত রেখে বঙ্গবন্ধুর অপ্রতিরোধ্য গতিতে আটকে দেওয়ার লক্ষ্যে নতুন কুটকৌশলের অংশ হিসাবে রবীন্দ্রনাথ তথা রবীন্দ্র সাহিত্য কে নিষিদ্ধ করার অপপ্রয়াস চালান। বাংলাদেশের এক শ্রেণীর মানুষ পাকিস্তানী শাসক শ্রেণীর মানসিকতার সাথে একমত পোষণ করে বাংলাদেশ জন্মের বিরোধিতা করেছেন এবং এই শ্রেণীর মানুষের বেশিরভাগই ছিল তথাকথিত ধর্মাশ্রয়ী মানুষ। তাদেরকে আরও বেশি সোচ্চার করবার লক্ষ্যে হিন্দু কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাহিত্য অনুশীলনকে তাদের ধর্মীয় রীতির বিপরীতে দাঁড় করিয়ে বাংলাদেশের এই শ্রেণীর মানুষের মগজ ধোলাই করে দিলেন বেশ শক্ত করেই। যদিও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিখাদ হিন্দু বলার সুযোগ নাই কেননা তিনি সনাতনী মতের একাংশ ঈশ্বরে বিশ্বাস করতেন না। ব্রাক্ষ্ম ধর্মের বিশ্বাস মতে তিনিও এক ঈশ্বরে বিশ্বাস ও ভক্তি করতেন। পাকিস্তানি মস্তিষ্কজাত ঠিক সেই মানসিকতার পরম্পরা বাংলাদেশের একটি বিশেষ শ্রেণী গোষ্ঠীর মানুষের মধ্যে এখনও বিদ্যমান রয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে আমরা দেখতে পাই আমাদের জাতীয় সংগীত নিয়ে তাদের নানারকম কটাক্ষ, বিদ্রুপাত্মক ব্যবহার এবং উদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ। মূলত বাংলা সংস্কৃতিকেই তারা বিজাতীয় সংস্কৃতি বলে ধর্মপ্রাণ সাধারণ মানুষের মধ্যে অনুপ্রবেশ অবাধে ঘটিয়ে যাচ্ছেন যার বিস্তৃতি প্রসারিত হয়েছে মসজিদ মাদ্রাসা এমনকি ধর্মীয় ওয়াজ মাহফিলে পর্যন্ত। সেই সাথে রয়েছে তাদের বেশ কয়েকটি সাংগঠনিক অস্তিত্ব। ধর্মনিরপেক্ষতার মন্ত্রে দীক্ষিত অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে বিনষ্ট করে, সাধারণ মানুষকে সার্বক্ষণিক সাম্প্রদায়িক চিন্তা চেতনা দ্বারা পরিচালিত করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে যারা বিশ্বাস করে না ঐসকল পাকিস্তানি ভাবধারার মানুষগুলো নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের মনে রাখা দরকার ধর্মকে কেন্দ্র করে যুদ্ধ লেগে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়নি বরং নানা রকম জেল জুলুম অত্যাচার শোষণ-বঞ্চনা গঞ্জনার মতো অধর্ম থেকে মুক্তি পাবার লক্ষ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর হাত ধরে অনিবার্য কারণে বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে। এটি মোটেও ধর্মের বিরুদ্ধে ধর্মের যুদ্ধ ছিল না। বাঙালি সংস্কৃতিকে গলাটিপে ধ্বংস করে বাংলা ভাষাভাষী মানুষের মধ্যে পাকিস্তানের সংস্কৃতিকে পরিপূর্ণরূপে চালু করবার যে অপচেষ্টা যুগ যুগ ধরে তারা চালিয়েছিল তা রুখে দিয়ে বাংলা ভাষা, বাঙালি সংস্কৃতিকে বাঙালির একান্ত সম্পদ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে গিয়েই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের জন্ম দেন। ক্ষুধা দারিদ্র্য জেলজুলুম অত্যাচার শোষণ বঞ্চনার বিরুদ্ধে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ যতটা অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মুক্তির লক্ষ্য অন্তর্নিহীত ছিল, সাংস্কৃতিক মুক্তির চেতনাও ছিল সমানভাবে প্রযোজ্য।
লেখক: পুলিশ সুপার ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব

মন্তব্য করুন