‘প্রধানমন্ত্রী মাথা গোঁজার ঠাঁই দিয়েছেন, এখন আমরাও সমাজের অংশ’

জাফর আহমেদ, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৮ আগস্ট ২০২৩, ২৩:০৭ | প্রকাশিত : ০৮ আগস্ট ২০২৩, ২৩:০০

এক সময় সমাজ থেকে বিছিন্ন ছিলাম। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিয়েছেন বলেই এখন আমরা সমাজে পরিচয় দিতে পারি। আমরাও এখন সমাজের অংশ।

কথাগুলো বলছিলেন পাবনা জেলার হেমায়েতপুর উপজেলার হেমায়েতপুর ইউনিয়নে প্রধানমন্ত্রী আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় সেমিপাকা ঘর পাওয়া তৃতীয় লিঙ্গের প্রায় ১২জন।

গত বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১০টি সেমিপাকা ঘর পেয়েছেন তৃতীয় লিঙ্গের মিতুল, সুমি, ভাবনা, মিষ্টি, নদী, টুকটুকি, ঐশি, বেলা, মোকলেছুর রহমান, রিপ্তি। তারা ঢাকা টাইমসকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের স্বীকৃতির পর এখন স্থায়ী ঠিকানাও করে দিয়েছেন। আমরা আর সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন নয়, আমরা সমাজের একটা অংশ।

তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ হিসেবে স্বীকৃতির পর তাদের নিজেদের স্থায়ী ঠিকানাও করে দিচ্ছেন শেখ হাসিনা। মুজিববর্ষ উপলক্ষে পাবনা সদরের হেমায়েতপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর পেয়েছেন ১০ জন। এরমধ্যে মিতুল তাদের (তৃতীয় লিঙ্গের) গুরু মা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ১০ জনকে ঘর দেওয়া হলেও থাকেন ১২ জন। এক পাতিলে রান্না করে খান সবাই। হাস, মুরগি, ছাগল, গরু আছে। সবাই মিলে আঙিনায় চাষ করছেন নানা ধরনের সবজি।

এখানকার গুরু মা মিতুল ঢাকা টাইমসকে বলেন, আমরা তো পরিবার ছাড়া। সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন। আমাদের বাবা মা নেই, আত্মীয়-স্বজনের পরিচয় নেই। তারপরও শুধু স্বাভাবিক মানুষই নয়, প্রধানমন্ত্রী আশ্রয়ণের ব্যবস্থা করেছেন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের। এখন আমাদের পরিচয় হয়েছে স্থায়ী ঠিকানা হয়েছে। সমাজে বেঁচে থাকার জন্য ভরসা হয়েছে। আগে কেউ ঘর ভাড়া দিতে চাইতো না। আমাদের কেউ আসলে ওই বাসায় নেওয়া যেতো না। বেশি মানুষ আসলে উপরের ভাড়াটিয়ারা অভিযোগ দিতো। দুর্বিষহ জীবন ছিল। সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলাম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের সমাজে স্বীকৃতি দেওয়ার পরে স্থায়ী ঠিকানাও দিয়েছেন। এখন আমরা অনেক ভালো আছি। আমরা মন খুলে হাসতে পারি, কথা বলতে পারি। আমাদের কমিউনিটির মানুষের সাথে মিশতে পারি আমরাও সমাজের অংশ এটা বলতে পারি।

জেলা প্রশাসকের কাছে লেখা-পড়া শেখার আগ্রহের কথা জানিয়েছেন এই তৃতীয় লিঙ্গের মিতুল, ঐশিরা, সজনি, রবিন। তারা বলেন, আমাদের আঙিনায় নিজেরা নানা ধরনের সবজি চাষ করছি। হাঁস, মুরগি, গরু-ছাগল আছে, সবাই মিলে পালি। সাতটি সেলাই মেশিন দিয়েছে সরকার। কয়েজন সেই কাজও জানে।

আমরা চাই আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে হোক কিংবা অন্য যেভাবেই হোক, আমরা একটু বাংলা ও আরবি পড়াশোনা করবো। হেমায়েতপুর ইউনিয়ন তৃতীয় লিঙ্গের পাশের গ্রামেই প্রায় ৩৯টি পরিবার আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পেয়েছেন। এর মধ্যে একজন মহরম মিয়া।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রী যে ঘর দিয়েছেন তার সামনে ছোট একটা বাগানের মতো তৈরি করেছেন মরহম মিয়া। ঘরের তিন পাশেই লাগিয়েছেন নানা ধরনের গাছ।

এ বিষয়ে তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, আগে তো শখ থাকলেও এগুলো করতে পারতাম না। এখন নিজের জায়গা ও ঘর হয়েছে, তাই শখের এই কাজগুলো করতে পারছি। জমি ঘর সবই দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এই পাকাঘর ছিল স্বপ্ন এখন আমিও পাকা ঘরে থাকি। এখন অনেক ভালো আছি। মেয়ে স্কুলে পরে। ভবিষ্যত তাকে নিয়ে জীবনের নানা স্বপ্ন আছে।

হেমায়েতপুর আশ্রয়ন প্রকল্পের ডানদিকে ঢুকতেই চোখে পড়ে ৫৫ বছরের এক বয়স্ক মহিলা মর্জিনা খাতুন। তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, স্বামী মারা গেছে যুদ্ধের বছর। এরপর হাসপাতালে আয়ার চাকরি করতেন। এখন আর কিছুই করতে পারেন না। জায়গা জমি কিছুই ছিল না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পে বাড়ি পেয়েছেন তিনিও।

বঙ্গবন্ধু কন্যার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে মর্জিনা খাতুন বলেন, আমার থাকার কোনও জায়গা ছিল না, পায়ের নিচে মাটি ছিল না। কত জায়গায় ঘুরে ঘুরে বেড়িয়েছিল। এই ঘর পাওয়ার পরে পায়ের নিচে মাটি পেয়েছি।

শুধু মহরম শেখ বা মর্জিনা খাতুনই নয়, পাবনার হেমায়েতপুরের আশ্রয়ন প্রকল্পে ঘর পেয়েছেন এমন ৬৫ পরিবার। তাদের সবার জীবনের গল্প প্রায় একই। এই সব মানুষগুলোকে বেঁচে থাকার স্থায়ী ঠিকানা করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পেয়েছেন পাকা ঘর। তাই এখন তারা নতুন ঘরে নতুন স্বপ্ন বুনছেন। সবার মুখে উজ্জ্বল।

বুধবার প্রধানমন্ত্রী আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় আরও ভূমিহীন ও গৃহহীন ২২ হাজার ১০১টি পরিবারে মাঝে ভূমিসহ সেমিপাকা ঘর হস্তান্তর করার মধ্যে দিয়ে আরও ১২টি জেলা গৃহহীন ও ভূমিহীন মুক্ত ঘোষণা করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ নিয়ে মোট ২১ জেলা গৃহহীন ও ভূমিহীন মুক্ত ঘোষণা করা হবে।

বুধবার সকালে সাড়ে ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারগুলোর মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের হাতে জমির দলিল তুলে দেবেন। এদিন খুলনা জেলার তেরখাদা উপজেলার বারাসত সোনার বাংলা পল্লি আশ্রয়ণ প্রকল্প, পাবনার জেলার চাকলা আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প এবং নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের আমানউল্লাহপুর আশ্রয়ণ প্রকল্প উদ্ধোধন করার পরে সুবিধাগ্রহীতাদের সঙ্গে কথা বললেন প্রধানমন্ত্রী।

পাবনা জেলা প্রশাসক মো.আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য নির্মিত ৪র্থ পর্যায়ের ২য় ধাপে পাবনা জেলার পাঁচটি উপজেলায় ৬৪৬টি ঘর হস্তান্তর করা হবে।

পাবনার পাঁচটি উপজেলার মধ্যে চাটমোহরে ৭৮টি, ভাঙ্গুড়ায় ৪১টি, ফরিদপুরে ১১৩টি, সুজানগরে ৫৩টি, বেড়ায় ৩৬১টি ঘর হস্তান্তর করা হবে। ইতিমধ্যে উপকারভোগী বাছাই করে তাদের কবুলিয়াত ও নামজারি সম্পন্ন হয়েছে। সেইসাথে তাদের দখলও বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে পাবনার বেড়া উপজেলার চাকলা আশ্রয়ণ প্রকল্পের প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সরাসরি যুক্ত হয়ে উদ্বোধন করবেন। এরমধ্য দিয়ে পাবনা জেলাকে ‘ক’শ্রেণির ভূমিহীন-গৃহহীন মুক্ত ঘোষণা করা হবে।

(ঢাকাটাইমস/ ৮ আগস্ট/জেএ/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :