আশ্রয়ণ প্রকল্পে বদলে গেছে তাড়াশের ৩৫৬ পরিবার

শায়লা পারভীন, তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ)
 | প্রকাশিত : ২৯ আগস্ট ২০২৩, ১২:২৩

বাড়ির সামনের ছোট্ট উঠানটি যেন এক টুকরা সবজি ও ফলের বাগান। দূর থেকে দেখলে নয়ন জুড়াবে যে-কারও। ঘরের চাল আর মাচায় ঝুলছে লাউ, কুমড়া, উঠানে লালশাক, পালংশাক, বেগুনসহ নানা রকম সবজি। বাড়ির আঙিনা ঘেষে কলাগাছসহ বিভিন্ন ফলফলাদি গাছের সমাহার। এর মধ্যে হাঁস-মুরগির ডাকে মুখরিত ঘরগুলো। কেউ কেউ পালন করছেন গরু-ছাগল। আর বিষ মুক্ত সবজি চাষ করে পারিবারিক পুষ্টি নিশ্চিতের পাশাপাশি বাজারজাত করে স্বচ্ছলতার মুখ দেখছে আশ্রয়ণ প্রকল্পে পুণর্বাসিত প্রান্তিক অসহায় পরিবারগুলো। পুরুষরা ছুটছেন দৈনন্দিন কাজে। নারীদের কেউ কেউ ব্যস্ত হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল ও বসতবাড়ির নিজ আঙিনায় গড়ে তোলা সবজি বাগানের পরিচর্যা নিয়ে। বর্তমানে এমন জীবন পেয়ে দারুণ খুশি এক সময়ের ছিন্নমূল এসব মানুষেরা। জমি ও ঘর পেয়ে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার ৩৫৬টি পরিবারের সদস্যদের মুখে ফুটেছে হাসির ঝিলিক।

তাড়াশ উপজেলার তালম ইউনিয়নের গুল্টাবাজার ও দেশীগ্রাম ইউনিয়নের মাঝদক্ষিনা আশ্রয়ণ প্রকল্প ঘুরে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের দুই শতক জমিতে গড়ে তোলা ঘরের পাশে অল্প একটু অংশ খালি রাখছেন না কেউই। মূলত মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের বাড়ি পেয়ে বদলে গেছে উপজেলার আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের জীবনযাত্রার মান। যেখানে জমি কেনা দুঃস্বপ্ন ছিল, সেখানে বিনামূল্যে ২ শতক জমিসহ বসত বাড়ি পেয়েছেন ভূমিহীনরা। এসব ঘর ও জমি পেয়ে বদলে গেছে সুবিধাভোগীদের জীবনমান। তাদের অনেকেরই জীবন পরিবর্তনের অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করছে এ অসামান্য উপহার। মাথা গোঁজার নিজস্ব ঠিকানা পেয়ে অনেকেই আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি বদলে ফেলছেন জীবনের গল্প। আশ্রয়ণের ঘরের পাশে অল্প ফাঁকা জমি কোন না কোন ভাবে কাজে লাগাচ্ছেন তারা।

আশ্রয়ণের জমি ও ঘর পাওয়া আনোয়ার হোসেন বলেন, আমি ঘরের সামনে সবজি বাগান করেছি। এতে করে আমার সবজি কেনা লাগে না। শুধু চাল ডাল কিনলেই হয়। তিনি কাজের ফাঁকে এই সবজি চাষ করেন ও তার স্ত্রী কাঁথা সেলাইয়ের কাজ করেন। সেই টাকা দিয়ে চলে সংসার।

মোছা. লাকি খাতুন বলেন, মানুষ অনেক স্বপ্ন দেখে কিন্তু সব স্বপ্ন তো পূরণ হয় না। তবে আমার একটি স্বপ্ন পূরণ হয়েছে, তা হল ঘর। আমার স্বপ্ন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পূরণ করেছেন।

উপজেলার গুল্টা বাজার আশ্রয়ণ প্রকল্পে গিয়ে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী এক ইঞ্চি জমিও খালি রাখছেন না কেউই। আশ্রয়ণের ঘরের পাশে অল্প ফাঁকা জমি কোন না কোন ভাবে কাজে লাগাচ্ছেন তারা। এখন তাদের চাষকৃত শাকসবজি নিজেদের পারিবারিক পুষ্টি নিশ্চিতের পাশাপাশি সবজির কিছু অংশ বাজারে বিক্রি করছেন, আর যারা হাঁস-মুরগী পালন করছেন তারা হাঁস-মুরগি ও হাঁস-মুরগির ডিম বিক্রি করে সংসার খরচ ও সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ জোগাচ্ছেন বলে জানান তারা।

জানা যায়, উপজেলা প্রশাসনের সহযোগীতায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের অনেকে ক্ষুদ্রঋণ গ্রহণ করে গৃহপালিত পশু-পাখি পালন করছেন। আবার কৃষিবিভাগের সহযোগিতায় বিনামূল্যে সবজির বীজ পেয়ে বাড়ির চারপাশে বিভিন্ন সবজির চাষ করে এখানকার পুনর্বাসিত পরিবারগুলো এখন নিজেদের পারিবারিক পুষ্টি নিশ্চিতের পাশাপাশি বাজারজাত করে স্বচ্ছলতার মুখ দেখছেন তারা।

তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মেজবাউল করিম বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের সামাজিক, নিরাপত্তার নানা কর্মসূচিসহ সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হয়। পুরুষের পাশাপাশি সেখানকার নারীদেরকেও আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তুলতে নানা ধরনের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

(ঢাকাটাইমস/২৯আগস্ট/এসএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :