চুয়াডাঙ্গায় এক পিঁয়াজুর ওজন ৪ কেজি!

সড়কের পাশে একটি নির্দিষ্ট টং দোকানে প্রতিদিনই সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি মানুষের উপচে পড়া ভিড় লেগেই থাকে। প্রথম দেখায় কেউ বুঝতে পারবে না সেখানে কি হচ্ছে, তবে কাছে গেলেই দেখা যাবে দোকানটিতে পেঁয়াজু ক্রয়ের জন্য এত মানুষের জমায়েত। এমন দৃশ্য চোখে পড়বে চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার নাটুদা ইউনিয়নের চন্দ্রবাস সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে।
চন্দ্রবাস গ্রামের মৃত আব্দুল সাত্তারের দুই ছেলে রশিদুল ইসলাম ও মফিজুল রাস্তার পাশে গড়ে তুলেছেন পিঁয়াজুর দোকান। এই দোকানে তৈরি হচ্ছে এক থেকে চার কেজি ওজনের পিঁয়াজু। স্বাধে ও গন্ধে অতুলনীয় এবং আকারে বড় হওয়ায় সহজেই ক্রেতাকে আকৃষ্ট করে তোলে দুই ভাইয়ের এই পেঁয়াজু। এমন পেঁয়াজুর প্রেমে মোহিত হয়ে চুয়াডাঙ্গাসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে মানুষ ছুটে আসে এই বাহারি এই পিঁয়াজুর স্বাদ গ্রহণ করার জন্য। কেউ কেউ আবার পরিবার পরিজন ও বন্ধুবান্ধব নিয়ে আসে এই পিঁয়াজু খেতে। অনেকেই ঘরে ফেরার সময় স্বজনের জন্য পিঁয়াজু কিনে নিয়ে যায়।
প্রতিদিন অন্তত ১০০ কেজি পেঁয়াজু বিক্রি হয় দোকানটিতে। আর সাপ্তাহিক হাটের দিন ১৫০ থেকে ২০০ কেজি পর্যন্ত বেচা-বিক্রি হয়। প্রতি কেজি পিঁয়াজুর দাম ৩০০ টাকা। গড়ে প্রতিদিন ৩০ হাজার টাকার পিঁয়াজু বিক্রি হয় দোকানটি থেকে। ভোজনরসিক ক্রেতার কেউ কেউ দোকানে বসেই খাচ্ছেন, আবার কেউ কেউ প্যাকেটে পুরে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন।
জানা গেছে, ১৯৮৮ সালে প্রথমে একই স্থানে পিঁয়াজু বিক্রি করা শুরু করেন রশিদুল ইসলামের বড় ভাই আশাদুল হক। পরে তিনি পেশা বদল করলে ছোট দুই ভাইকে শিখিয়ে দেন পিঁয়াজু তৈরির কলা কৌশল। এরপর থেকে রশিদুল-মফিদুলের পিঁয়াজুর ব্যবসা চলছে রমরমা।
রশিদুল ইসলামের বড় ভাই আশাদুল হক বলেন, আমি ১৯৮৮ সালে পিঁয়াজুর ব্যবসা শুরু করি। টানা ১৭-১৭ বছর আমি পিঁয়াজু বানায়। তারপর আমি অন্য পেশায় জড়িয়ে যায়। তারাগে আমি দুই ভাইকে পিঁয়াজু তৈরি করা শিখিয়ে দিয়। আল্লাহর রহমতে ওদের ব্যবসা খুব ভালো হচ্ছে।
পেঁয়াজু খেতে এক বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা রইসুল ইসলাম বলেন, এখানকার পিঁয়াজুটার স্বাদ অতুলনীয়। অনেক বেশি মুচমুচে। ছুটিতে বাড়ি আসলেই একবার চন্দ্রাবাস আসতেই হয় শুধু পিঁয়াজু খাওয়ার উদ্দেশ্যে। বন্ধুদের নিয়ে আসি খাই এবং পরিবারের অন্যদের জন্যও নিয়ে যায়। যখনি আসি তখনই দেখি অনেক ভিড়। মনে হয় যেন মানুষ রিলিফের মালামাল নিতে এসেছে।
দোকানের মালিক রশিদুল বলেন, আমার পেঁয়াজুর বিশেষত্ব হলো পেঁয়াজের সঙ্গে অল্প বেসন, কাঁচা মরিচ, ধনিয়া পাতা এবং বিশুদ্ধ সয়াবিন তেল ব্যবহার করি। স্বাদ বৃদ্ধি করার জন্য আমাদের নিজস্ব তৈরি কিছু মসলা ব্যবহার করে থাকি। পুরনো তেল দিয়ে কখনোই পেঁয়াজু ভাজি না। ফলে আমার এই পেঁয়াজু খেলে কোন গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হয় না। একটি মানুষ একবার খেলে দ্বিতীয় বার আবার আসে।
রশিদুলের চার কেজি ওজনের বিখাত এই পিঁয়াজুর ঘ্রাণ যেন ছড়িয়ে পড়েছে জেলা থেকে অন্য জেলায়। দুই ভাইয়ের এই পেঁয়াজু বদৌলতে চন্দ্রাবাস গ্রামের নাম মানুষের মুখেমুখে।
(ঢাকাটাইমস/০১সেপ্টেম্বর/এসএ)

মন্তব্য করুন