পাহাড়ে জুমিয়াদের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ

পলাশ চাকমা, রাঙ্গামাটি
| আপডেট : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১১:৫৯ | প্রকাশিত : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১১:২০
হতাশা নিয়ে জুমের ফসল ঘরে তুলছেন রাঙ্গামাটি জুমিয়ারা।

পাহাড়ি জেলা রাঙ্গামাটিতে ভরা বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় এ বছর জুমিয়াদের স্বপ্ন ভঙ্গ। পাহাড়ের ঢালু চূড়ায় জুমের সোনালি ধান রোপণের পর পানির অভাবে জুম ধানের ফলন ভালো হয়নি। ফলে দেখা দিতে পারে খাদ্য সংকটও। স্বপ্ন যখন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়, তখনি জুমিয়াদের কপালে পড়েছে দুশ্চিন্তার ভাঁজ। এ অবস্থায় চলতি বছর জুমচাষে ক্ষতির আশঙ্কা করছেন চাষিরা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটির সদর উপজেলার বড়াদম এলাকার গলাছড়ি পাড়ায় জুম চাষ করা হয়েছে। সেখানে ধানের ফাঁকে ফাঁকে রোপণ করা হয়েছে কলাগাছ, মরিচ, হলুদ, আদা, কচু, মিষ্টি কুমড়া ও বরবটিসহ নানান জাতের শাক-সবজি। তবে গত বছরের তুলনায় এ বছর বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় জুমচাষে ভালো ফলন হয়নি। এতেই দুশ্চিন্তায় আর চাপা কান্নায় বুক ভাসাচ্ছেন জুম চাষিরা।

চাষিরা জানান, এমন দিনে জুমচাষিদের ঘরে ঘরে চলতো নবান্ন উৎসব। কিন্তু এ বছর আবহাওয়া প্রতিকূলে থাকায় এবং সঠিক সময়ে পর্যাপ্ত পরিমাণ বৃষ্টি না হওয়ায় জুমচাষে ভালো ফলন হয়নি। ভালো ফলন না হওয়ায় জুমের ধান ঘরে তুলে হতাশায় ভুগছেন জুমচাষিরা। তারা আরও জানান, জুমে উৎপাদিত ধান ও কৃষি শাক-সবজি ৭ থেকে ৮ মাস পর্যন্ত তাদের খাবারের জোগান দেয়। এছাড়াও তারা অতিরিক্ত শাক-সবজি বিক্রি করেও জীবিকা নির্বাহ করেন। তবে এবার যা ফলন হয়েছে তা ২ মাসও যাবে না। সেই কারণে জুমিয়াদের পড়তে হবে খাদ্য সংকটে।

রাঙ্গামাটি সদর উপজেলার বড়াদম এলাকার গলাছড়ির জুমচাষি মিনু চাকমা জানান, এ বছর সঠিক সময়ে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় এবং পানির সেচের অভাবে জুমের ফসল ভালো হয়নি। অধিকাংশ ফসল পানির অভাবে নষ্ট হয়ে গেছে। যা উৎপাদিত হয়েছে তা দিয়ে কোনো রকম সংসার চললেও পরে অভাব-অনটনে দিন কাটাতে হবে।

একই এলাকার জুমচাষি শীলব্রত চাকমা জানান, এ বছর তিনি ৮০ শতক জায়গায় জুম চাষ করেন। সঠিক সময়ে বৃষ্টি না হওয়ায় ফলন ভালো হয়নি। যা ফলন হয়েছে তা দিয়ে দুই মাস চলতে পারবেন। তিনি আরো জানান, যখন জুমের ফসল শেষ হয়ে যায়, তখন তিনি কাপ্তাই হ্রদে জাল পেলে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন। তবে এ বছর তাদের প্রচণ্ড খাদ্য ঘাটতিতে পড়তে হবে।

রাঙ্গামাটি সদর বড়াদম ব্লক-এর কৃষি কর্মকর্তা রতন কুমার চাকমা জানান, জুম ধান রোপণের সঠিক সময়ে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় ফলন ভালো হয়নি। তবে জুম ধানের পাশাপাশি শাক-সবজি ফলন ভালো হয়েছে। এগুলো বিক্রি করে তারা কোনো রকম তাদের সংসার চালায়। তিনি আরো জানান, প্রতি বছর এপ্রিল মাসের শেষের দিকে শুরু হয় জুমে ধান লাগানোর প্রক্রিয়া। প্রায় ৩-৪ মাস পরিচর্যার পর সেপ্টেম্বর মাসের শেষদিক থেকে পাহাড়ে জুমের ধান কাটা শুরু করে আর শেষ হয় অক্টোবর মাসে।

রাঙ্গামাটি সদর উপজেলা উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা উত্তম কুমার বিশ্বাস জানান, সমতল এবং জুম মিলে এ বছর আউশের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩১০ হেক্টর। অর্জন হলো ২৭০ হেক্টর। পানির অভাবে ফলন ভালো হয়নি। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে যে ফলন হয়েছে প্রতি হেক্টরে ৮০০ থেকে ৮৫০ কেজি ধান আশা করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে রাঙ্গামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান জানান, জুমচাষ সাধারণত বৃষ্টিপাতের ওপর নির্ভরশীল। এ বছর বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় চাষ এবং ফলন কম হয়েছে। তিনি আরও জানান, এ বছর জুমচাষের আউশ ধানের লক্ষ্যমাত্রা ছিলে ৫ হাজার হেক্টর, আদা ৩ হাজার ১০০ হেক্টর এবং হলুদ ৩ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করা হয়েছে। তবে পানির অভাবে এবং অনাবৃষ্টির কারণে জুম চাষ ফলন ভালো হয়নি।

(ঢাকাটাইমস/৩০সেপ্টেম্বর/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :