সুতার সূত্র ধরে অভিনেত্রী শিমু হত্যার রহস্য উদঘাটন, কতদূর এগিয়েছে বিচার?

অভিনেত্রী রাইমা ইসলাম শিমু হত্যাকাণ্ড ২০২২ সালের শুরুতেই টক অব দ্য কান্ট্রিতে পরিণত হয়। পুলিশ একটি প্লাস্টিকের সুতার সূত্র ধরে উদঘাটন করে এই অভিনেত্রীকে হত্যার রহস্য। গ্রেপ্তার করা হয় শিমুর স্বামী সাখাওয়াত আলী নোবেল ও তার বন্ধু এস.এম ফরহাদকে।
আলোচিত এই হত্যা মামলার বিচার চলছে ঢাকা অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত-৪ এ। ইতোমধ্যে মামলায় ১০ জনের স্বাক্ষ্য গ্রহণ শেষ করেছে রাষ্ট্রপক্ষ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শিমুর লাশ গুম করতে বস্তা দুটি যে প্লাস্টিকের দড়ি দিয়ে সেলাই করা হয়েছিল, সেই দড়ির হুবহু এক বান্ডিল শিমুর স্বামী নোবেলের গাড়িতে পাওয়া যায়। দুর্গন্ধ দূর করতে ব্লিচিং পাউডার ছিটিয়ে গাড়িটি ধোয়া হয়।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পারিবারিক কলহের জেরে শিমুকে হত্যা করেছেন তার স্বামী। ১৬ জানুয়ারি সকাল ৭টা থেকে ৮টার দিকে তাকে গলা টিপে হত্যা করা হয়। এরপর বন্ধুকে মুঠোফোনে কল করে ডেকে আনেন শিমুর স্বামী।
লাশ গুমের বিষয়ে পুলিশের ওয়েবসাইটে বলা হয়, পরিকল্পনা করে বাইরে থেকে বস্তা এনে শিমুর লাশ লম্বালম্বিভাবে দুটি পাটের বস্তায় ভরে প্লাস্টিকের সুতা দিয়ে সেলাই করেন স্বামী ও তার বন্ধু। বাড়ির দারোয়ানকে নাশতা আনতে বাইরে পাঠিয়ে দেন তারা। এরপর নিজের ব্যক্তিগত গাড়ির পেছনের আসনে অভিনেত্রীর লাশ নিয়ে বেরিয়ে যান।
প্রথমে মিরপুরের দিকে গিয়েছিলেন দুই আসামি। কিন্তু সেখানে লাশ গুমের উপযুক্ত পরিবেশ না পেয়ে বাসায় ফেরেন তারা। ১৬ জানুয়ারি সন্ধ্যায় আবার লাশ নিয়ে রাজধানীর মোহাম্মদপুর, বছিলা ব্রিজ হয়ে কেরানীগঞ্জ মডেল থানার কদমতলী এলাকার আলীপুর ব্রিজ যান। সেখানে ৩০০ গজ দূরে সড়কের পাশে ঝোপে লাশটি ফেলে চলে যান শিমুর স্বামী ও তার বন্ধু। তখন বাজে রাত সাড়ে ৯টা।
২০২২ সালের ১৮ জানুয়ারি শিমুর স্বামী নোবেল ও তার বন্ধু ফরহাদকে আসামি করে নিহতের বড় ভাই শহীদুল ইসলাম খোকন বাদী হয়ে কেরাণীগঞ্জ মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া নোবেল ও ফরহাদকে আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে। পরে আদালত তাদের দুজনের তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
চলতি বছরের ১৫ মে চিত্রনায়িকা রাইমা ইসলাম শিমু হত্যার ঘটনায় কেরানীগঞ্জ মডেল থানার মামলায় শিমুর স্বামী সাখাওয়াত আলী নোবেল ও তার বাল্যবন্ধু এস এম ফরহাদের বিরুদ্ধে ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ শফিকুল ইসলামের আদালতে সাক্ষ্য দেন ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এম সাইফুল ইসলাম। সাইফুল ইসলাম শিমুর স্বামী নোবেলের জবানবন্দি রেকর্ড করেছিলেন।
এর আগে ২০২২ সালের ২৯ নভেম্বর দুই আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরু হয়। একই বছরের ১৭ জানুয়ারি ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে অজ্ঞাত হিসেবে চিত্রনায়িকা রাইমা ইসলাম শিমুর বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরদিন ১৮ জানুয়ারি কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় নোবেল ও তার বাল্যবন্ধুর বিরুদ্ধে মামলা করেন শিমুর ভাই হারুনুর রশীদ।
তদন্ত শেষে একই বছরের ২৯ আগস্ট মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কেরানীগঞ্জ মডেল থানার পরিদর্শক শহিদুল ইসলাম আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
এ ব্যাপারে ঢাকার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ৪ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর মো. আনোয়ার সরদার ঢাকাটাইমসকে বলেন, এই মামলায় ইতোমধ্যে ১০ জনের স্বাক্ষ্য নেওয়া শেষ হয়েছে।
(ঢাকাটাইমস/০৭ অক্টোবর/এএ/কেএম)

মন্তব্য করুন