‘কাটআউট’ পদ্ধতিতে হয় ডাকাতি, টাকা ভাগ করে বাড়িভাড়া প্রদান ও স্ত্রীর গহনা ক্রয়

রাজধানীর খিলক্ষেতের কাওলা এলাকায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে র্যাব পরিচয়ে গাড়ি থামিয়ে ৪৮ লাখ টাকা ডাকাতির ঘটনা ঘটে, যা ছিল সম্পূর্ণ কাটআউট পদ্ধতিতে। এ ঘটনায় দেশের সাত জেলায় অভিযান চালিয়ে ডাকাত চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) গুলশান বিভাগ এই অভিযান চালায়।
গত ১০ অক্টোবর এই ডাকাতির ঘটনা ঘটে।ডিবি বলছে, ডাকাত দলটি দীর্ঘদিন ধরে কাটআউট পদ্ধতিতে ডাকাতি করে আসছিল। এমন কী ডাকাতি শেষে গাড়ির নম্বর প্লেট পরিবর্তন ও ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ভেঙে ফেলতেন তারা।
অভিযুক্তরা হলেন- সবুজ মিয়া ওরফে শ্যামল, সাহারুল ইসলাম ওরফে সাগর, আবু ইউসুফ, দিদার মুন্সী, ফেরদৌস ওয়াহিদ, আলামিন দুয়ারী দিপু ও দাউদ হোসেন মোল্যা। তাদের কাছ থেকে ডাকাতিতে ব্যবহৃত প্রাইভেট কার, র্যাবের জ্যাকেট, হ্যান্ডকাফ, খেলনা পিস্তল, ওয়ারলেস সেট, মোবাইল ফোন ও ডাকাতির টাকায় কেনা স্বর্ণালংকার এবং ছিনিয়ে নেওয়া ২৩ লাখ ৮৫ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।
রবিবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ও ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ।
ডিবিপ্রধান বলেন, ১০ অক্টোবর বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে সোহেল আহম্মেদ সুলতান নামের এক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানটির হিসাব কর্মকর্তা অনিমেশ চন্দ্র সাহাকে সঙ্গে নিয়ে উত্তরার আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক থেকে দুটি চেকের মাধ্যমে সাড়ে ৮৩ লাখ টাকা উঠান। তাদের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের ডিএম শাহজাহানও ছিলেন। ব্যাংক থেকে ভুক্তভোগীর ব্যবসায়িক পার্টনার জাফর ইকবালের পক্ষের রাজনকে ব্যাংকে বসেই সাড়ে ৩৫ লাখ টাকা বুঝিয়ে দেয়া হয়। বাকি ৪৮ লাখ টাকা নিয়ে নিজেদের একটি গাড়িতে করে বনানীতে যাত্রা করেন তারা।
গাড়িটি কাওলা থেকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে টোল দিয়ে খিলক্ষেত ডেন্টাল কলেজের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ওপর উঠলে বিকাল চারটার দিকে মেরুন রঙের একটি প্রাইভেট কার এসে কোম্পানির গাড়িটিকে ওভারটেক করে সামনে গিয়ে গতিরোধ করে। গাড়ি থেকে কালো রঙের র্যাবের জ্যাকেট পরিহিত ৫ থেকে ৬ জন ব্যক্তি র্যাবের পরিচয় দিয়ে গাড়ি থামান।
হারুন বলেন, ‘র্যাব পরিচয় দেওয়া ব্যক্তিরা গাড়িতে থাকা অনিমেশ চন্দ্র সাহা ও শাহজাহানকে বলে, গাড়িতে অস্ত্র আছে। এসময় হাতকাড়া লাগিয়ে চোখ বেঁধে ফেলে। এরপর ব্যাংক থেকে তোলা টাকা, কোম্পানির একটি ব্লাঙ্ক চেক ও তিনটি মোবাইল ফোন নিয়ে নেয়। চোখ বাঁধা অবস্থায় অনিমেশ, শাহজাহান ও কোম্পানির গাড়ি চালক আবুল বাশারকে বিভিন্ন স্থানে ঘুরিয়ে ৩শ ফিট এলাকায় ফেলে চলে যায়। এই ঘটনায় সোহেল আহম্মেদ সুলতান বাদী হয়ে খিলক্ষেত থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
হারুন অর রশীদ জানিয়েছেন, মামলার প্রেক্ষিতে গুলশান বিভাগের ক্যান্টনমেন্ট জোনাল টিম তদন্ত শুরু করে। মামলার বাদীর বক্তব্য, সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় র্যাব পরিচয়ে অপহরণ ও ডাকাতিতে জড়িত দলটিকে শনাক্ত করা হয়।
ডাকাতির পর নম্বর প্লেট পরিবর্তন:
ডিবি বলছে, তদন্তে দেখা যায় সবুজের নেতৃত্বে ডাকাতি করা দলটি কাটআউট পদ্ধতিতে ডাকাতি করে। এর কৌশল হিসেবে ডাকাতিতে ব্যবহৃত গাড়ির একাধিক নম্বর প্লেট ব্যবহার করেন। কাজ শেষে নিজেদের মোবাইল ফোন ভেঙে পানিতে ফেলে দেন। এরপর নিজেদের মধ্যে টাকা ভাগাভাগি করে ভিন্ন ভিন্ন জেলায় গিয়ে আত্মগোপন করেন।
গ্রেপ্তার ডাকাত দলের সদস্যদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদ বলেন, ‘এই চক্রটি ৪৮ লাখ টাকা ডাকাতির পরে নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে। এরমধ্যে তারা আইনজীবীদের জন্য আলাদা খরচ রেখে দেয়। ভাগে পাওয়া টাকা দিয়ে কেউ বাড়ি ভাড়া দিয়েছে, স্ত্রীর গহনা কিনেছে, জুয়া খেলেছে। ৪৮ লাখ টাকার মধ্যে সাড়ে ২৩ লাখ উদ্ধার উদ্ধার করা হয়। বাকি টাকা উদ্ধারের জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে।’
ডাকাতিতে আইনজীবীর সহকারী: ডাকাত দলটিতে বাহিনীর কোনো সদস্য জড়িত কি না জানতে চাইলে হারুন অর রশীদ বলেন, ‘আমরা আগে বিভিন্ন ডাকাত দলের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাবেক সদস্যদের জড়িত থাকার প্রমাণ পেলেও এই দলে এমন কেউ নেই। তবে দলটিতে একজন মুহুরি পাওয়া গেছে। সাগর নামের একজন অনার্স-মাস্টার্স পাস করে আইনজীবীর সঙ্গে কাজ করতেন। তিনি ডাকাত দলের একজনকে জামিন করাতে গিয়ে ডাকাত দলের সঙ্গে জড়িয়ে যান। এরপর মুহুরি পেশা ছেড়ে ডাকাত দলের হয়ে কাজ করতেন। তার দায়িত্ব হলে বিভিন্ন ব্যাংকে রেকি করে বড় অংকের টাকা উত্তোলনকারী গ্রাহকের তথ্য সরবরাহ করা। তারা পেশাগত ডাকাত।’
এই চক্রের প্রত্যেক সদস্যের নামে ডিএমপিসহ দেশের ১৩ জেলায় ১০ থেকে ১৫টি করে ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজি এবং মাদক মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিবি প্রধান।
(ঢাকাটাইমস/২২অক্টোবর/এসএস/এফএ)

মন্তব্য করুন