পল্লী চিকিৎসকের বাড়িতে মিনি হাসপাতাল! কামাচ্ছেন লাখ লাখ টাকা

পলাশ হোসাইন, পাবনা
  প্রকাশিত : ২৩ অক্টোবর ২০২৩, ১৩:৫৪| আপডেট : ২৩ অক্টোবর ২০২৩, ১৪:২৩
অ- অ+
ইনসেটে পল্লী চিকিৎসক সুদেব বিশ্বাস। ছবি: ঢাকা টাইমস

পাবনা বেড়ায় এল.এম.এ.এফ.পি ডিগ্রি নিয়ে নিজ বাড়িতে চেম্বার খুলে সর্বরোগের চিকিৎসা দিচ্ছেন ডা. সুদেব বিশ্বাস। শুধু চিকিৎসাই দেন না, রোগী ভর্তিও রাখেন তিনি। নিজ চেম্বারকে বানিয়েছেন মিনি হাসপাতাল। নিয়মবহির্ভূতভাবে ডাক্তার পরিচয় দিয়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে চমক দেখিয়ে গ্রামীণ গরিব রোগীদের চিকিৎসার নামে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার পুরান ভারেঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের পাশে নগরবাড়ি ১০ শয্যা বিশিষ্টি বাসন্তি বসু স্মৃতি হাসপাতালের সামনে ডা. সুদেব বিশ্বাস নিজ বাড়িতে ‘জনসেবা চিকিৎসালয়’ নামের একটি চেম্বার খুলে দীর্ঘদিন যাবৎ রোগী দেখে আসছেন। তবে তাকে সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করে আসছেন বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির রিপ্রেজেন্টেটিভরা।

নিজেকে ডা. পরিচয় দিয়ে চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন এতে সঠিক চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন প্রত্যন্ত চরাঞ্চলের সাধারণ মানুষ। তবে জ্বর নিয়ে কোনো রোগী চেম্বারে এলেেই ডেঙ্গু রোগী বলে ভর্তি রাখেন তার হাসপাতালে। তার চেম্বারের ভেতরে রয়েছে প্রচুর ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম। রোগীদের ভর্তি রাখার জন্য পাঁচ-ছয়টি বেড রয়েছে। রোগীপ্রতি ভিজিট নেন ৩০০ টাকা। নিজেই ওষুধ লিখে নিজ চেম্বার থেকে বিক্রি করেন। আবার সুবিধা অনুযায়ী রোগীকে ভর্তি রাখেন নিজের চেম্বারের বেডে।

ডা. সুদেব বিশ্বাসের চেম্বারে চিকিৎসা নিতে আসা ময়সার আলী বলেন, ‘আমি লোকমুখে শুনে চরকল্যাণপুর থেকে জ্বর নিয়ে এখানে ডাক্তার দেখাতে আইছি। ডা. সাহেব নানা রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আমাকে বলেছেন আমার ডেঙ্গু হয়েছে। তাই আমাকে ভর্তি করে স্যালাইন দিছে। আমার তো মনে হয় না আমার ডেঙ্গু হইছে, এহানে আইসাইতো ফাইসা গেলাম ‘

নগরবাড়ি বাসুন্তিপুরের বাসিন্দা আজগর আলী জানান, পাশের সরকারি হাসপাতালে ডাক্তার পাওয়া যায় না। এ জন্য বাধ্য হয়ে মানুষ এই পল্লী চিকিৎসকের চিকিৎসা নেন। এখানে যে কোনো রোগী আসলেই এই ডা. তাকে কোনো রকম পরীক্ষা ছাড়াই স্যালাইন দিয়ে বেডে শুইয়ে রাখে। তবে ডা. সুদেব বিশ্বাসের এই চেম্বারে প্রচুর রোগী আসেন বলে তিনি জানান।

পল্লী চিকিৎসক ডা. সুদেব বিশ্বাস বলেন, আমি বিধি মোতাবেক রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিচ্ছি। পল্লী চিকিৎসক হয়েও ডাক্তার পরিচয় দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আমি মানুষকে ভালো সেবা দেই, তাই আমাকে সবাই ডা. বলে ডাকে। আমার মতো অনেক পল্লী চিকিৎসক ডাক্তার পরিচয় দেয়, আমি দিলে সমস্যা কী। পল্লী চিকিৎসক হিসেবে তার বৈধ কাগজপত্র সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি অপরাগতা প্রকাশ করে সাংবাদিককে অকথ্যভাষায় গালাগালি করেন। গালাগালির এক পর্যায়ে তিনি সংবাদিককে দেখে নেবেন বলে হুমকি দেন।

স্থানীয়রা জানান, প্রশাসনের নজরদারির অভাবে এই ভুয়া পল্লী চিকিৎসকরা বিভিন্নভাবে সাধারণ রোগীকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। সঠিক চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে এবং প্রতারণা বন্ধ করার জন্য নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনার ওপর জোর দাবি জানান তারা। স্থানীয়রা আরও জানান, প্রশাসনের নাকের ডগায় বসে অনুমোদন ছাড়াই নিজ চেম্বারকে হাসপাতাল বানিয়ে নিয়েছেন তিনি।

উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে পল্লী চিকিৎসকরা এমন অনিয়ম করলেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ নীরব ভূমিকা পালন করছে বলে সচেতন মহলের দাবি।

এই বিষয়ে একাধিক ওষুধ কোম্পানির রিপ্রেজেন্টেটিভ নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, পল্লী চিকিৎসকদের জন্য টাকাসহ বিভিন্ন ধরনের গিফট দেয়া হয়। এজন্যই তারা আমাদের কোম্পানির এন্টিবায়োটিক ওষুধও লিখে দেন রোগীদের। আর এই গিফট দিয়ে ওষুধ লেখার জন্য এক ধরনের প্রতিযোগিতা নিয়ে মার্কেটে কাজ করতে হয় আমাদের।

এ বিষয়ে বেড়া উপজেলা ইউ.এই অ্যান্ড এফপিও ডা. ফাতেমা তুয জান্নাত বলেন, এল.এম.এ.এফ.পি এটা কোন ডিগ্রিই মধ্যেই পড়ে না। এমবিবিএস ডাক্তার ছাড়া কেউ নামের আগে ডাক্তার লিখতে পারে না। ওই পল্লী চিকিৎসকের বিষয়ে আমি শুনেছি। আমি ইউএনও মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলে তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেব।

বেড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মোরশেদ ইসলাম বলেন, এ উপজেলায় আমি নতুন যোগদান করেছি। আমি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।

(ঢাকাটাইমস/২৩অক্টোবর/এআর)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
ঈদুল আজহার আগে বাজারে আসছে নতুন ডিজাইনের টাকা
ঢাকাসহ দেশের ১০ অঞ্চলে দুপুরে মধ্যে ৬০ কিমি বেগে ঝড় হতে পারে, নদীবন্দরে সতর্কতা
আম খেলে হার্ট থাকবে সুস্থ, দ্রুত কমবে ওজন
ঈদুল আজহায় বিউটি ও টয় প্রডাক্টে ৫০ শতাংশ ছাড় দিচ্ছে সুন্দরা
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা