নকল ইনজেকশন প্রয়োগ করায় কলেজছাত্রীর মৃত্যু

পাবনার সুজানগরে নকল ইনজেকশন প্রয়োগ করায় রিপা খাতুন (২৩) নামে এক কলেজছাত্রীর মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের মাস্টার্স প্রথম বর্ষের এই শিক্ষার্থী উপজেলার দুলাই গ্রামের আব্দুর রহমানের মেয়ে।
এ ঘটনায় নকল ইনজেকশন বিক্রির অপরাধে কাশিনাথপুর কাওসার ফার্মেসির মালিককে ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন সাঁথিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মর্কতা রিজু তামান্না। মেধাবী এ শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় তার সহপাঠী ও স্থানীয় এলাকার মানুষের মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে। তারা রিপার মৃত্যুর ঘটনা সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানায়।
জানা যায়, কয়েক দিন আগে রিপার শরীরে টাইফয়েড জ্বর ধরা পড়ে। পরে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক ইলিয়াস হোসেন তাকে স্কয়ার কোম্পানির সেফট্রোন ইঞ্জেকশন ২ গ্রাম আইভি শরীরে পুশ করার পরামর্শ দেন।
চিকিৎসকের পরামর্শ মতে ওই কলেজছাত্রী সুজানগরের দুলাই বাজারের মেডিসিন পয়েন্ট থেকে ইনজেকশন কিনে (যার ব্যাচ নং ছিল ৭ ডিজিটের) পুশ করা হয়। বুধবার পুনরায় একই ইনজেকশন তার শরীরে পুশ করলে সে কিছুক্ষনের মধ্যে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।
পরে ইনজেকশনটি আগেরটার সাথে মিল করলে তার ব্যাচ নং (৮ ডিজিটের) এর গরমিল পাওয়া যায়। যেখানে স্কয়ারের ওষুধ হয় ৭ ডিজিটে, সেখানে পুশ করা ইনজেকশনটির রয়েছে ৮ ডিজিটের ব্যাচ নং। ওই ইনজেকশনটি মেডিসিন পয়েন্ট স্কয়ার কোম্পানির এসআর হাবিবুর রহমান সরকারের কাছ থেকে গ্রহণ করেন। যা হাবিবুর রহমান কাশিনাথপুরের কাওসার ফার্মাসি থেকে এনে দেন বলে মেডিসিন পয়েন্টের বিক্রয় প্রতিনিধি মৃদুল জানান।
এদিকে কলেজ ছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনা স্কয়ার কোম্পানিকে জানালে গতকাল (২২ মে) কোম্পানির পক্ষ থেকে পাবনা ড্রাগ সুপারকে বিষয়টি জানানো হয়। ড্রাগ সুপার রোকনুজ্জামান ওই দিনই বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানালে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উপজেলা নির্বাহী কর্মর্কতা রিজু তামান্না ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে কাওসার ফার্মেসীর মালিক মোস্তফাকে ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।
স্থানীয়রা জানান, বেশি টাকা লাভের আশায় ফার্মেসীর মালিকেরা নকল ওষুধ বিক্রি করে মানুষের জীবন নিয়ে ব্যবসা করছে। নকল ওষুধ বিক্রি বন্ধে প্রশাসনের কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তারা।
বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক ইলিয়াস হোসেন বলেন, ‘স্কয়ার কোম্পানীর এসআর-এর কাছ থেকে ওই নকল ইনজেকশনটি সংগ্রহ করা হয় বলে জানতে পেরেছি। পরে আমরা কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করলে তারা জানান, ইনজেকশনটি স্কয়ারের নয়। এটি নকল করা হয়েছে।’
এ ব্যাপারে স্কয়ারের কর্মকর্তা রেজাউল করিমের সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘পুশ করা ইনজেকশনটি স্কয়ারের নয়। আমাদের কোম্পানীর নাম ব্যবহার করে ওষুধটি নকল করা হয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, নকল বন্ধে স্কয়ার প্রতিনিয়ত মোড়ক ও ডিজাইন পরিবর্তন করে থাকে।
পাবনা ড্রাগ সুপার রোকনুজ্জামান বলেন, ‘ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ফার্মেসীর মালিককে জরিমানা করা হয়েছে। আমরা স্কয়ার কোম্পানীর এসআর হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছি কোম্পানীর নিকট। তা ছাড়াও কলেজ ছাত্রীর পরিবার চাইলে তারা আইনের আশ্রয় নিতে পারেন।’
কলেজশিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানান তার চাচা ইমরান খান।
(ঢাকাটাইমস/২৩মে/মোআ)

মন্তব্য করুন