থাইল্যান্ডে চিকিৎসাধীন জুলাইযোদ্ধা মোহাম্মদ হাসানের মৃত্যু, মরদেহ দেশে ফিরবে শনিবার

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ২৩ মে ২০২৫, ১৮:১০
অ- অ+

ফ্যাসিবাদ বিরোধী জুলাই আন্দোলনে চট্টগ্রাম নগরীর টাইগারপাস এলাকায় মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত মোহাম্মদ হাসান থাইল্যান্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

পরিবারের উদ্বৃতি দিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় মুখপাত্র উমামা ফাতেমা বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে তার ভেরিফাইড ফেসবুকে একথা জানিয়েছেন।

উমামা ফাতেমা ফেসবুকে লিখেছেন ‘জুলাই অভ্যুত্থানে আহত হাসান ভাই একটু আগে শহীদ হয়েছেন। হাসান ভাই আহত হওয়ার পর থেকে 'এম্পাওয়ারিং আউয়ার ফাইটার্স’র মাধ্যমে তার সঙ্গে কলি আপু সার্বক্ষণিক যুক্ত ছিলেন। কিছুদিন আগে কলি কায়েয আপু বলছিলেন হাসানের অবস্থা বেশি ভালো না। আমি ভাবছিলাম দেশে আসলে দেখতে যাব। কি বলব! ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। আহত, শহীদদের পরিবারের জীবন থমকে গেছে। আমরা ঠিকই যাপন করে যাচ্ছি। কিন্তু যাপন করি কই! জুলাই তো কাঁধে বয়ে বেড়াতে হয়। শহীদদের লাশের ভার কি আমাদের কাঁধকেই ভারী করে তুলে! বাকিসব তো দেখি দিব্যি কেটে যাচ্ছে।’

এ ছাড়া, রাত ১১টা ২১ মিনিটে ‘এম্পাওয়ারিং আওয়ার ফাইটারস’ নামে একটি ফেসবুক পেজে হাসানের বোনের বরাতে বলা হয়, জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম আহত যোদ্ধা আমাদের ভাই হাসান থাইল্যান্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একটু আগে শহীদ হয়েছেন। সবাই দোয়া করবেন। ফোনে খবরটি নিশ্চিত করেছেন হাসানের ছোট বোন সুমাইয়া।

ওই স্ট্যাটাসে উল্লেখ করা হয়, ‘গত সাত মাস ধরে উন্নত চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ডে ছিলেন মোহাম্মদ হাসান। গত ১০ এপ্রিল হাসানকে লাইফসাপোর্ট থেকে সরিয়ে সাধারণ বেডে আনা হয়। ২৫ এপ্রিল তার অবস্থার অবনতি ঘটায় তাকে পুনরায় লাইফসাপোর্টে নেওয়া হয়।’

স্ট্যাটাসে বলা হয় ‘গত ৫ আগস্ট টাইগারপাসে আন্দোলনের সময় মাথার ডান পাশে গুলিবিদ্ধ হয়- যা সম্ভাব্য ব্রেন ড্যামেজের কারণ হয়। চট্টগ্রাম মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার খাদ্যনালী ও কণ্ঠনালী এক করে লাইফসাপোর্ট দেওয়া হয়। এ সময় ইনফেকশন ছড়িয়ে পড়ে তার মস্তিষ্কে এবং শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হলে দ্রুত তাকে ঢাকা সিএমএইচে নিয়ে যাওয়া হয়।’

শুক্রবার পৃথক স্ট্যাটাসে এম্পাওয়ারিং আউয়ার ফাইটার্স জানিয়েছে, শহীদ মোহাম্মদ হাসানের মরদেহ আগামীকাল আনুমানিক সন্ধ্যা ৭টায় বাংলাদেশে পৌঁছাবে। ঢাকা সিএমএইচ-এ সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে তাঁর প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে। এরপর শেষ জানাজা অনুষ্ঠিত হবে নোয়াখালীর জামেয়া ইসলামিয়া ফারুকিয়া মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে— যেখানে তিনি প্রাথমিকভাবে পড়াশোনা করেছিলেন। এরপর নিজ জেলা নোয়াখালীর সোনাপুর গ্রামে তাঁকে দাফন করা হবে।

হাসান চট্টগ্রামের হালিশহর গরিবে নেওয়াজ উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। করোনাকালীন সময় পড়াশোনা থেকে ছিটকে পড়লেও পরিবারকে সহায়তা করতে একটি ওয়ার্কশপে কাজ শুরু করেন। মাত্র ১৯ বছর বয়সেই তিনি দুই বোনের একমাত্র ভাই হিসেবে পরিবারের ভরসাস্থল ছিলেন। মায়ের দুঃখ ঘোচাতে নিজ হাতে জীবনের হাল ধরতে চেয়েছিলেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেশের বৃহত্তর স্বার্থে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন।

২০২৪ সালের ২ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা সিএমএইচ-এ স্থানান্তর করা হয়। এরপর ২৫ নভেম্বর তাকে থাইল্যান্ডের পাতায়া হাসপাতালে নেওয়া হয়। এপ্রিলের ১০ তারিখ শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলে তাকে লাইফ সাপোর্ট থেকে সাধারণ বেডে স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু ২৫ এপ্রিল তার শারীরিক অবস্থার পুনরায় অবনতি হলে তাকে আবারও লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। অবশেষে, ২২ মে রাত ১১টা ১০ মিনিটে শহীদ মোহাম্মদ হাসান শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।

(ঢাকাটাইমস/২৩মে/এমআর)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
অন্যের বাগানের আম চুরি করল ইউনাইটেড গ্রুপের মালিকরা, থানায় মামলা, গ্রেপ্তার ১
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে জামায়াতের বৈঠক শনিবার
বিএনপি শুধু নির্বাচন নিয়ে কথা বললে বাংলাদেশ আশাহত হয়: সারজিস আলম
দেশের প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠান আজ অস্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে: আমিনুল হক
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা