বিএনপির লাগাতার অবরোধের আগে যেমন ছিল রাজধানীর সোমবার সন্ধ্যা-রাত
সোমবার সন্ধ্যা ৬টা। শাহবাগ মোড়ে লাঠিভর দিয়ে প্রধান সড়কের এপাশ থেকে ওপাশ ছুটে চলেছেন শ্যামলী এলাকায় বসবাসকারী শিক্ষার্থী জাহিদ। প্রায় দুঘণ্টা পার হলেও বাড়ি ফেরার জন্য বাসে উঠতে পারছিলেন না তিনি। যাত্রীদের বাড়তি চাপ ও তাড়াহুড়ার জন্য বাসে ওঠা যেন তার অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।
ঢাকা টাইমসকে জাহিদ জানান, রাত পোহালে বিএনপির অবরোধ, তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতে চান। বাসে যাত্রীদের ভিড় ঠেলে দুই ঘণ্টার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে বাধ্য হচ্ছেন দিগুণ ভাড়ায় সিএনজিতে করে শ্যামলী যেতে।
বিএনপির ডাকা হরতালের পরদিন সকাল থেকেই কর্মব্যস্ত মানুষের মাঝে বেশ তাড়াহুড়া দেখা গেছে। অনেকেই বলছেন, বিএনপির অবরোধে পরিবহন সংকট থাকতে পারে তাই প্রয়োজনীয় কাজ এই একদিনের মধ্যেই গুছিয়ে রাখতে চলছে ছোটাছুটি।
শনির আখড়া এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী মনির হোসেন ঢাকা টাইমসে জানান, হরতালের কারণে তিনি লক্ষ্মীপুর থেকে ঢাকায় আসতে পারছিলেন না। তাই সোমবার সকালেই লক্ষ্মীপুর থেকে বাসে করে ঢাকায় আসেন। তবে কোথাও তাকে কোনো বিপত্তিতে পড়তে হয়নি।
সকাল থেকেই কারওয়ান বাজার আড়তে ছিল উপচে পড়া ভিড়। মালিবাগের বাসিন্দা রুবেল মিয়া ঢাকা টাইমসকে বলেন, আগামীকাল (মঙ্গলবার) অবরোধে বাজার করা নিয়ে এক সংশয় কাজ করছিল। তাই আজকে এক সপ্তাহের বাজার একসঙ্গে করেছেন তিনি।
দুপুরের দিকেও রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে যানজট লক্ষ্য করা গেছে। হরতালের একদিন পরেই মালিবাগ, কাকরাইল, বাড্ডা, পান্থপথের সড়কগুলোতে যানজটের চিত্র দেখা গেছে।
অনাবিল পরিবহনের চালক সুমন ঢাকা টাইমসে বলেন, হরতালের দিন বাস নিয়ে বের হতে পারি নাই। আইজকা ভালই যাত্রী পাইছি, তয় রাস্তায় গাড়ি বেশি থাকায় যানজট আছে কিছুটা। আগামী কালকেও বাস নিয়ে রাস্তায় থাকুম।
বিকাল ৫টার পর থেকে রাজধানীর প্রতিটি পয়েন্টেই সড়কে ছিল যাত্রীদের বাড়তি চাপ। কর্মব্যস্ত মানুষ দিন শেষে বাড়ি ফিরতে ছোটাছুটি করছিলেন। তবে সকলেরই চোখেমুখে তাড়াহুড়া ও উৎকণ্ঠার ছাপ। গণপরিবহনে উঠতে পাড়া নিয়ে ছিল ব্যাপক প্রতিযোগিতা।
সন্ধ্যা থেকেই মগবাজার থেকে মহাখালীর দিকে সড়কে দেখা গেছে ঘণ্টাব্যাপী যানজট। সড়কপথ থেকে শুরু করে ফ্লাইওভারগুলোতেও তীব্র যানজট লক্ষ্য করা গেছে।
এদিকে কারওয়ান বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, সড়কের ওপর শত শত মানুষ গাড়িতে উঠতে ছোটাছুটি করছে, অনেকে আবার ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে রয়েছেন বাসের জন্য। বাসে ওঠার প্রতিযোগিতায় ব্যর্থ হয়ে অনেকেই আবার পায়ে হেঁটেও পাড়ি দিচ্ছেন গন্তব্যস্থলে।
হরতালের একদিন পরই বিএনপির ডাকা অবরোধ নিয়েও অনেকের মাঝে নানা প্রশ্ন বিরাজ করছে। অবরোধে যান চলাচল স্বাভাবিক থাকবে কি না তা নিয়েও সন্দিহান আলোচনা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ ঢাকা টাইমসকে জানান, বিএনপির ডাকা ৩ দিনের অবরোধে কোনো প্রকার পরিবহন বন্ধ থাকবে না। এ বিষয়ে তারা শ্রমিক-মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ জন্য মালিক সমিতি পুলিশের সহযোগিতাও চেয়েছে।
(ঢাকাটাইমস/৩১অক্টোবর/ডিএম)