মাগুরায় ৫ সাংবাদিক ও প্রবাসীসহ ১৯৯ জনের নামে নাশকতা মামলা, ঘটনার সময় ‘ঘুমাচ্ছিলেন’ সাক্ষীরা

মাগুরা মহম্মদপুর থানায় ককটেল বিস্ফোরণ, প্রতিবন্ধকতা, অগ্নিসংযোগ ও নাশকতার অভিযোগে বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীসহ ১৯৯ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেছে পুলিশ। এ মামলায় অজ্ঞাত আরও ১০০ থেকে ১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এদের মধ্যে রয়েছে ৫ সংবাদকর্মী ও এক প্রবাসী।
গত ২ নভেম্বর উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মুস্তাফিজুর রহমান বাদী হয়ে মহম্মদপুর থানায় এ মামলা দায়ের করেন।
এর মধ্যে যেসব সাংবাদিককে আসামি করা হয়েছে তারা হলেন, মো. মেহেদী হাসান ওরফে পলাশ সহসভাপতি, প্রেসক্লাব মহম্মদপুর, মাগুরা ও উপজেলা প্রতিনিধি, দৈনিক ইত্তেফাক, মহম্মদপুর,মাগুরা.মো. ওহাব বিশ্বাস, প্রতিষ্ঠাকালীন সাধারণ সম্পাদক, প্রেসক্লাব মহম্মদপুর,মাগুরা ও উপজেলা প্রতিনিধি, দৈনিক খবরের আলো পত্রিকা, মো. তরিকুল ইসলাম তারা, লোকসমাজ ও দৈনিক জনতা, উপজেলা প্রতিনিধি, মহম্মদপুর, মাগুরা, মো. রফিকুল ইসলাম ওরফে রফিক মাস্টার, দৈনিক নিউ নেশন পত্রিকা, উপজেলা প্রতিনিধি, মহম্মদপুর,মাগুরা, মো. রাসেল মিয়া ওরফে রাসেল মোল্যা, প্রচার সম্পাদক, প্রেসক্লাব মহম্মদপুর, মাগুরা ও মহম্মদপুর উপজেলা প্রতিনিধি দৈনিক, ভোরের দর্পণ, মো. খাইরুল মুসল্লী, মহম্মদপুর উপজেলা প্রতিনিধি, দৈনিক আজকের দর্পণ।
এর মধ্যে মো. রফিকুল ইসলাম ও মো. তরিকুল ইসলাম সাংবাদিকতার পাশাপাশি শিক্ষকতা করেন।
প্রবাসী আসামি হলেন, মহম্মদপুরের বাদশা শিকদারের ছেলে রাজিব শিকদার।
মো. রফিকুল ইসলাম দাবি করেন, তিনি কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত নন। ঘটনার দিন এক আত্মীয়কে ডাক্তার দেখাতে ফরিদপুরে অবস্থান করছিলেন।
এছাড়া মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, ঘটনার দিন রাতে তিনি যশোরে ছিলেন।
মো. ওহাব বিশ্বাস বলেন, ‘আমার বয়স এখন ৭৬ বছর। ১৯৭৪ সাল থেকে সাংবাদিকতা করি। একসময় রাজনীতি করতাম। সেটা প্রায় ৩০/৪০ বছর আগে। এখন শুধুই সাংবাদিকতা করি। বয়স হয়েছে, নামাজ কালাম পড়ি আর লেখালেখি নিয়ে ব্যস্ত থাকি। আসামির তালিকায় নিজের নাম দেখে বিস্মিত হয়েছি। তাও আবার ককটেল বিস্ফোরণ, প্রতিবন্ধকতা, অগ্নিসংযোগ ও নাশকতার মামলা।
মো. রাসেল মিয়া ওরফে রাসেল মোল্যা, প্রচার সম্পাদক, প্রেসক্লাব মহম্মদপুর, মাগুরা ও মহম্মদপুর উপজেলা প্রতিনিধি দৈনিক, ভোরের দর্পণ বলেন, তিনি কোনো রাজনৈতিক দল করেন না। সাংবাদিকতা করেন। রাত আড়াইটার সময় প্রথমে মহম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কার্মকর্তা ফোন করেন। পরে প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফোন করে সংবাদ সংগ্রহের কথা বলেন। কিন্তু তিনি অসুস্থ থাকায় এত রাতে সংবাদ সংগ্রহ করতে যেতে পারেননি। কী কারণে তিনি আসামি হয়েছেন তিনি জানেন না।
অভিযোগে বলা হয়েছে, বাদী ১ নভেম্বর রাতে মহম্মদপুর বাজারে টহল দিচ্ছিলেন। রাত পৌনে ১২টার দিকে খবর পান অবরোধ কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলের কর্মীরা নাশকতা কর্মকাণ্ড ঘটানোর উদ্দেশ্যে মাগুরা-মহম্মদপুর সড়কে ধোয়াইল আদর্শ নুরানী হাফেজি মাদ্রাসা ও এতিমখানার সামনে জড়ো হয়েছেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালে বিএনপি ও সমমনা দলের কর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে যায়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ৭ জনকে আটক করে। জব্দ করা হয় বিস্ফোরিত ও অবিস্ফোরিত ককটেল বোমাসদৃশ কৌটা, জালের কাঠি, বাঁশের লাঠিসহ বিভিন্ন বস্তু।
মামলায় সাক্ষী করা হয়েছে ধোয়াইল গ্রামের মো. বাবুল শেখ ও তার ভাই মো. কাবুল শেখ ও গাড়ি চালক জয়নাল মোল্লাকে।
এই ৩ সাক্ষীসহ স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা হয়। তারা সবাই প্রায় একই ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন। তারা বলেছেন, ওই দিন রাতে তারা বাড়িতে ঘুমিয়ে ছিলেন। এমন কোনো ঘটনা সম্পর্কে জানেন না।
এজহারে উল্লেখিত প্রত্যক্ষ সাক্ষী জয়নাল মোল্লা মুঠোফোনে বলেন, তিনি ওই রাতে রাস্তায় বালির গাড়ি চালাচ্ছিলেন। সালাম শেখের বালির গাড়ি আমার গাড়ির আগে ছিল।
শুনেছেন সালাম শেখের গাড়িতে ককটেল মারা হয়েছে। তবে তিনি সালাম শেখের গাড়ি দেখেননি।
মো. বাবুল শেখ বলেন, রাত আনুমানিক দুইটার দিকে পরপর তিনটি শব্দ শুনতে পাই। সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশের গাড়ির হুইসেল শুনতে পাই। তিনি আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। রান্দায় দাঁড়িয়েছিলেন।কিছুক্ষণ পর পুলিশ এসে তাদেরকে রাস্তায় ডেকে নিয়ে যায়। তার কাছে জিজ্ঞাসা করে বিএনপির লোকজন এসে বোমা ফুটিয়েছে, দেখেছেন কি না। আমি ঘরে শুয়েছিলাম, এসব কিছুই দেখিনি। এর বেশি কিছু জানি না।
স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঘটনার দিন গভীর রাতে মহম্মদপুর থানার পুলিশ কয়েকজন সাংবাদিককে ফোন করে নাশকতা ও বোমা হামলার সংবাদ সংগ্রহ করার জন্য যেতে বলেছিল। যদিও তারা রাতে কেউ সেখানে যাননি।
প্রেসক্লাব মহম্মদপুরের সভাপতি বিপ্লব রেজা
বিকো বলেন, রাত ২টার সময় এক এসআই আমাকে ফোন করে ধোয়াইল আদর্শ নুরানী হাফেজি মাদ্রাসা ও এতিমখানার সামনে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা জানায় এবং সংবাদ সংগ্রহের অনুরোধ জানায়। পরে জানতে পারি ৫ জন সাংবাদিকের নামে মামলা হয়েছে। যাদের নামে মামলা হয়েছে তারা আসলেই সাংবাদিকতা করেন। এ বিষয়ে আমরা প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে থানা-পুলিশের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি বলেছেন, ঘটনার সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া না গেলে তাদের নাম এজহার থেকে বাদ দেয়া হবে।
প্রেসক্লাব মহম্মদপুরের সাধারণ সম্পাদক মাহামুদুন নবী ডাবলু বলেন, এজাহারে ঘটনার সময় বলা হয়েছে রাত পৌনে ১২টা থেকে সাড়ে ১২টা। কিন্তু রাত দুইটার সময় আমাদের সভাপতির কাছে ফোন এসেছে ঘটনাস্থলে যাওয়ার জন্য। বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আবার এই মামলায় পেশাদার সাংবাদিকদের কীভাবে আসামি করা হলো, এটাও বোধগম্য নয়। আমি এর তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাই। একই সঙ্গে সাংবাদিকদের নাম মামলার এজাহার থেকে কর্তন দাবি জানায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মহম্মদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বোরহানউল ইসলাম বলেন, ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তারকৃতদের স্বীকারোক্তি অনুসারে তাদের নাম দেওয়া হয়েছে। হয়তো তাদের সঙ্গে কারো শত্রুতা থাকতে পারে। তদন্তে ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া না গেলে তাদের নাম বাদ দেওয়া হবে। আর প্রবাসী রাজিব শিকদারের বিষয়ে বলেন, সজিব শিকদার লিখতে রাজিব শিকদার হয়ে গেছে। রাজিব শিকদার হলো সজিব শিকদারের ভাই।
(ঢাকাটাইমস/১৩নভেম্বর/এআর)

মন্তব্য করুন