মনোনয়নের ক্ষেত্রে তিন বিষয়ে গুরুত্ব আওয়ামী লীগের

আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে তিনটি বিষয়কে গুরুত্ব দিচ্ছে দলটি। এ কারণে বাদ পড়ছেন বর্তমান অনেক এমপি। স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে দক্ষ, এলাকায় জনপ্রিয় এবং শিক্ষিত ও করোনাকালে দলের পক্ষ হয়ে কাজ করছেন এমন ব্যক্তিদের গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
একই পরিবারের দুই বা তার বেশি সংখ্যক সদস্যের মনোনয়নপত্র সংগ্রহের মূলেও রয়েছে তিন ক্যাটাগরিতে বাদ পড়ার শঙ্কা। এমন আসনের সংখ্যা রয়েছে প্রায় ১৫টি।
তিন ক্যাটাগরিতে মনোনয়নের ক্ষেত্রে এগিয়ে আছেন ঢাকা-১৭ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য মোহাম্মদ আলী আরাফাতও (মোহাম্মদ এ আরাফাত)। তিনি বর্তমানে এই আসনের সংসদ সদস্য। রাজনৈতিক ক্যারিয়ার না থাকলেও উল্লিখিত তিন ক্যাটাগরির পাশাপাশি ক্রীড়াঙ্গণে ব্যাপক জনপ্রিয় বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। তিনি ঢাকা-১০ আসন থেকে নৌকার মনোনয়ন পাচ্ছেন বলে জানা গেছে দলীয় সূত্রে। বর্তমানে ঢাকা-১০ আসনে সংসদ সদস্য ব্যবসায়ী শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন।
সাকিব আল হাসান নির্বাচনে প্রার্থী হতে ঢাকা-১০, মাগুরা-১ ও মাগুরা-২ আসন থেকে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে জমা দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে দেখা করে বেশ কিছু সময় কথা বলেছেন সাকিব।
ঢাকা-১৪ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী কাজী ফরিদুল হক হ্যাপি উল্লিখিত তিন ক্যাটাগরিতে এগিয়ে রয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি আওয়ামী লীগের হয়ে কাজ করেছেন। হ্যাপি করোনাকালে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সাহায্য সহযোগিতা করে সুনাম কুড়িয়েছেন। মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য’ এই বার্তা নিয়ে লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় মানুষদের জন্য চালু করেছিলেন ‘মানবতার ডাকঘর’।
কাজী ফরিদুল হক হ্যাপি ঢাকা টাইমসকে বলেন, করোনাকালে অসহায় কোনো মানুষ তাদের সমস্যার কথা জানালেই তার ঘরে প্রয়োজনীয় খাবার, ওষুধ ও অন্যান্য অনুষঙ্গ জিনিস পৌছে দিয়েছি। তিনি বলেন, ‘আমি শিক্ষাগত যোগ্যতায় এমবিএ পাস। দারুস সালাম থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। ১৮ বছর ধরে আমি এফবিসিসিআইয়ের সাধারণ পরিষদ সদস্য। শেখ হাসিনা আমাকে মনোনয়ন দেবেন বলে আশাবাদী।’
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কাজী ফরিদুল হক সরকারি বাংলা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি। তিনি এবার বেশ সরব ঢাকা-১৪ আসনে। বর্তমানে তিনি মিরপুর থানা আওয়ামী যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া পঁচাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতির দায়িত্বও পালন করে আসা কাজী ফরিদুল হক হ্যাপি ঢাকা-১৪ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী।
ঢাকা-১৭ আসনের বর্তমান সাংসদ মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আমাকে এই আসনে দলীয় মনোনয়ন দেবেন বলে আশাবাদী।
একই পরিবার থেকে একাধিক মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে জমা দেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- চাঁদপুর -২ (মতলব দক্ষিণ-মতলব উত্তর) আসন থেকে আওয়ামী লীগের নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী (মায়া) ও তার বড় ছেলে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য সাজেদুল হোসেন চৌধুরী (দিপু)। একই পরিবারের সবচেয়ে বেশি সদস্যের মনোনয়নপত্র সংগ্রহের ঘটনা ঘটেছে ঠাকুরগাঁও-২ (বালিয়াডাঙ্গী-হরিপুর) ও পাবনা-৪ (ঈশ্বরদী-আটঘরিয়া) আসনে। ঠাকুরগাঁয়ে দলীয় মনোনয়নের জন্য জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দবিরুল ইসলাম, তার ছেলে, মেজো ভাই, ভাতিজাসহ চারজন আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।
দবিরুলের বড় ছেলে ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ মাজহারুল ইসলাম সুজন, এ নেতার মেজো ভাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী এবং ভাতিজা বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আলী আসলাম জুয়েলও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
পাবনা-৪ আসনে দলীয় মনোনয়নের জন্য প্রয়াত সাবেক সংসদ সদস্য শামসুর রহমান শরীফ ডিলুর দুই ছেলে ও মেয়ে, জামাতাসহ চারজন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী। পরিবারের বড় মেয়ে মাহজেবিন শিরিন পিয়া, দুই ছেলে গালিবুর রহমান শরীফ, সাকিবুর রহমান শরীফ, জামাতা আবুল কালাম আজাদ মিন্টু আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে জমা দেন।
কক্সবাজার-৩ (সদর, রামু ও ঈদগাঁও) আসনে সংসদ সদস্য প্রার্থী হতে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তিন সহোদর। তারা হলেন আসনটির বর্তমান সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, তার বড় ভাই ও রামু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সোহেল সরওয়ার কাজল এবং তাদের ছোট বোন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নাজনীন সরওয়ার কাবেরী।
কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) আসন থেকে নৌকার প্রার্থী হতে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নপত্র কেনে প্রয়াত সংসদ সদস্য (এমপি) আফাজ উদ্দীন আহমেদের তিন ছেলে। নৌকার প্রার্থী হতে চাওয়া তিন ভাই হলেন আফাজ উদ্দীন আহমেদের বড় ছেলে নাজমুল হুদা পটল বিশ্বাস, মেজো ছেলে আরিফ আহমেদ বিশ্বাস ও ছোট ছেলে দৌলতপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এজাজ আহমেদ মামুন বিশ্বাস।
যশোর-২ (ঝিকরগাছা ও চৌগাছা) আসন থেকে নৌকার প্রার্থী হতে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নপত্র কেনেন বাবা ও ছেলে। বাবা-ছেলে হলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী রফিকুল ইসলাম ও তার ছেলে যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মোস্তফা আশিষ ইসলাম। একই ঘটনা ঘটেছে কুমিল্লা-১ (দাউদকান্দি-তিতাস) আসনের বেলায়ও। এখান থেকে নৌকার মনোনয়নপ্রত্যাশী সংসদ সদস্য সুবিদ আলী ভূঁইয়া ও তার ছেলে দাউদকান্দি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মেজর মোহাম্মদ আলী সুমন।
জাসদের এক সময়ের আধ্যাত্মিক নেতা প্রয়াত কর্নেল তাহেরের এক ছোট ভাইয়ের আসনে এবার মনোনয়ন চেয়েছেন আরেক ছোট ভাই। নেত্রকোণা-৫ আসনের (পূর্বধলা উপজেলা) জন্য মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন। এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য তার ছোট ভাই ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল। আবার এমন ঘটনাও আছে যে, নিজের আসনে ছেলে মনোননয়ন পাইয়ে দিতে বাবা নিজেই দলীয় কার্যালয়ে ছেলের সঙ্গে গিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। মঙ্গলবার ছেলে মোহাম্মদ সোলায়মান সেলিমের মনোনয়নপত্র জমা দিতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যান ঢাকা-৭ আসনের এমপি হাজি সেলিম।
গত শনিবার থেকে শুরু হয়ে মঙ্গলবার বিকাল ৪টা পর্যন্ত দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি ও জমা নেওয়া হয়। আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেতে তিন হাজার ৩৬২ জন দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে জমা দিয়েছেন। দলীয় প্রার্থী ঠিক করতে এর মধ্যে চারটি বিভাগের মনোনয়ন বোর্ড সভা শেষ করে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে আওয়ামী লীগ।
(ঢাকাটাইমস/২৪নভেম্বর/জেএ/কেএম)

মন্তব্য করুন