১৭ দিন পর ভারতে টানেল থেকে উদ্ধার ৪১ শ্রমিক
ভারতের উত্তরাখণ্ড রাজ্যের উত্তরকাশীর একটি টানেলে ১৭ দিন আটকে থাকার পর অবশেষে মুক্তি পেলেন ৪১ জন শ্রমিক। সিল্কিয়ারা নামক সেই টানেলে ধস নামায় তারা আটকে পড়েছিলেন। মঙ্গলবার রাতে একে একে তাদের সেখান থেকে বের করে আনা হয়েছে।
টাইমস অব ইন্ডিয়া জানায়, রাত পৌনে নয়টার দিকে শেষ হয় উদ্ধার কাজ। ঘণ্টাব্যাপী এই উদ্ধার অভিযানে সবাইকে নিরাপদে বের করে আনা হয়। এতে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন স্বজনরা।
ভারতের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ-এনডিএমএ’র সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল সৈয়দ আতা হাসনাইন (অব.) বলেন, শ্রমিকদের সবাইকে নিরাপদে বের করা হয়েছে। তাদের কেউ আহত হননি। অসুস্থদের হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে।
তিনি জানান, পর্যাপ্ত অ্যাম্বুল্যান্স, ওষুধপত্র আগে থেকেই শ্রমিকদের জন্য ঘটনাস্থলে মজুত করা হয়েছিল। প্রস্তুত ছিল অস্থায়ী হাসপাতালও। প্রয়োজন অনুযায়ী তা ব্যবহার করা হবে। দরকার হলে অ্যাম্বুল্যান্সে করে তাঁদের হৃষীকেশ এমসে নিয়ে যাওয়া হতে পারে। ৪১ জনের অবস্থা আপাতত স্থিতিশীল।
ভারতীয় গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, সুড়ঙ্গ থেকে প্রথমে বেরিয়ে আসেন ঝাড়খণ্ডের বিজয় হোরো। ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিংহ ধামী।
গত ১২ নভেম্বর ভোরে উত্তরকাশীর সিল্কিয়ারা টানেলে ধস নামে। এতে ভেতরে আটকে পড়েন ৪১ জন শ্রমিক। এত দিন ধরে তাদের বের করার জন্য নানাভাবে চেষ্টা করা হচ্ছিল। কিন্তু ধ্বংসস্তূপ খুঁড়ে শ্রমিকদের কাছে পৌঁছনো সম্ভব হচ্ছিল না কিছুতেই। খোঁড়ার সময়ে গত শুক্রবার লোহার কাঠামোয় ধাক্কা খেয়ে ভেঙে যায় আমেরিকান খননযন্ত্র। এতে থমকে যায় উদ্ধারকাজ।
উদ্ধার করার আগে পর্যন্ত টানেলের শ্রমিকদের সঙ্গে প্রশাসনের তরফে অনবরত যোগাযোগ রাখা হয়েছিল। পাইপের মাধ্যমে তাঁদের সঙ্গে কথা চলছিল। পৌঁছে দেওয়া হচ্ছিল খাবার, পানি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র।
সুড়ঙ্গে থাকাকালীন উত্তরকাশীর শ্রমিকদের প্রথম ভিডিও প্রকাশ্যে আসে গত মঙ্গলবার। পাইপের মাধ্যমে ক্যামেরা পাঠান উদ্ধারকারীরা। সেখানেই দেখা যায় সুড়ঙ্গের ভেতর কী ভাবে, কী অবস্থায় তারা রয়েছেন।
খননযন্ত্র ভেঙে যাওয়ায় দু’ভাবে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ নতুন করে শুরু হয়েছিল। খননযন্ত্রের সব টুকরোগুলি টানেল থেকে বের করে আনার পর খনি শ্রমিকরা সেখানে ঢুকে যন্ত্র ছাড়াই খোঁড়া শুরু করেন। ১০-১২ মিটার পথ সেভাবেই খুঁড়ে ফেলার পরিকল্পনা ছিল। এই প্রক্রিয়াকে বলে র্যাট-হোল মাইনিং বা ‘ইঁদুর-গর্ত’ প্রক্রিয়া। ইঁদুরের কায়দায় গর্ত খুঁড়ে টানেল থেকে শ্রমিকদের বের করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল।
এ ছাড়া, সুড়ঙ্গের ওপরের দিক থেকে উল্লম্বভাবে খোঁড়ার কাজও শুরু হয়েছিল। ৮৬ মিটারের মধ্যে মঙ্গলবার সকালের মধ্যেই খোঁড়া হয়ে গিয়েছিল ৪২ মিটার। তবে র্যাট-হোল মাইনিং প্রক্রিয়াতেই এলো সাফল্য। যদিও ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইবুনাল ২০১৪ সালে ‘র্যাট-হোল মাইনিং’ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে, এতে শিশু শ্রমিক ব্যবহারের প্রবণতা ও অনেক মানুষের মৃত্যুর কারণে।
(ঢাকাটাইমস/২৮নভেম্বর/ইএস)