গাজার দক্ষিণাঞ্চলেও হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল
ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের সঙ্গে এক সপ্তাহ যুদ্ধবিরতির পর শুক্রবার থেকে গাজা উপত্যকায় আবার আক্রমণ শুরু করেছে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী। তার আগে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী মূলত গাজার উত্তরভাগেই অভিযান চালিয়েছিল। কিন্তু এখন দক্ষিণ গাজাতেও বিমান হামলা ও স্থল অভিযান শুরু করছে ইসরায়েল।
সোমবার কাতারভিত্তিক সংবাদমধ্যিম আলজাজিরা ও ব্রিটিশ বার্তাসঙস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে এ তথ্য পওয়া যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, রোববার রাতে ইসরায়েলের সামরিক মুখপাত্র হাগারি জানিয়েছেন, ইসরায়েলের সেনাবাহিনী এখন দক্ষিণ গাজায় অভিযান চালাচ্ছে। তিনি বলেন, হামাসের বিরুদ্ধে স্থল অভিযানের পরিধি বাড়িয়ে তারা এখন গাজা ভূখণ্ডের সর্বত্র ছড়িয়ে গেছে। তারা হামাসের মুখোমুখি হচ্ছে ও তাদের মারছে।
এর আগে উত্তর গাজায় অভিযানের সময় গাজাবাসীকে দক্ষিণে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল ইসরায়েল। সেসময় গাজার বেসামরিক মানুষের একটা বড় অংশ নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য দক্ষিণ গাজায় চলে গেছিলেন। এখন দক্ষিণ গাজায়ও ইসরায়েল হামলা জোরদার করেছে। চালানো হচ্ছে স্থল অভিযান। এর ফলে পুরো গাজা এখন কার্যত অনিরাপদ হয়ে পড়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ইসরায়েলের সেনা দক্ষিণ গাজায় খান ইউনিস শহরের পূর্বদিকে গেছে। আকাশপথে হামলার পাশাপাশি ট্যাংক নিয়ে সেখানে অভিযান চালানো হচ্ছে।
এদিকে ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, গত দুই মাসে গাজায় প্রায় ১০ হাজার বার বিমান হামলা করা হয়েছে। মূলত হামাসের কম্যান্ড সেন্টার, টানেল ও অস্ত্রাগারে আঘাত করা হয়েছে।
অন্যদিকে ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ১৫ হাজার ৫২৩ জনে দাড়িয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
রবিবার ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আশরাফ আল-কেদরা এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, যুদ্ধবিরতি শেষে শুক্রবার ভোর থেকে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ৫০৯ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১ হাজার ৩১৬ জন আহত হয়েছে। এতে ইসরায়েলি আগ্রাসনে শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা দাড়িয়েছে ১৫ হাজার ৫২৩ জনে। একই সময়ের মধ্যে আহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪১ হাজার ৩১৬ জনে।
নিহত স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের সংখ্যার বিষয়ে আল-কেদরা নিশ্চিত করেছেন, ইসরায়েলি হামলায় মোট ২৮১ জনের মৃত্যু হযেছে, আহত হয়েছে আরও শতাধিক স্বাস্থ্যকর্মী। এছাড়াও ৫৬টি অ্যাম্বুলেন্স এবং একই সংখ্যক হাসপাতাল সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেছে।
আল-কেদরা উল্লেখ করেছেন, পূর্বের সমঝোতা সত্ত্বেও শনিবার আহতদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য দক্ষিণের খান ইউনিস যাওয়ার সময় চারজন প্যারামেডিককে আটক করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। আটককৃতদের মধ্যে দক্ষিণ গাজার অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের পরিচালক আনিস আল-আস্তালও রয়েছেন।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট (আইসিসি) জানিয়েছে, গাজায় ইসরায়েলের সেনাবাহিনী কোনো যুদ্ধাপরাধ করেছে কি না, তা তদন্ত করে দেখতে চায়।
সম্প্রতি আইসিসি-র প্রসিকিউটার করিম খান ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনে গেছিলেন। তিনি জানিয়েছেন, ‘গত ৭ অক্টোবর যেভাবে নিরপরাধ বেসামরিক মানুষের উপর আক্রমণ হয়েছে, তা আন্তর্জাতিক আইনের বিরোধী। আইসিসি এই ধরনের অপরাধের মোকাবিলা করার জন্যই তৈরি হয়েছিল। আমরা এটা তদন্ত করে দেখতে চাই।’
(ঢাকাটাইমস/০৪ডিসেম্বর/এমআর)