দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ঝালকাঠি-১ আসন

সম্পদ কমেছে ওমরের, কয়েকগুণ বেড়েছে স্ত্রীর, সম্পত্তি ও মামলার তথ্য নেই হলফনামায়

ঝালকাঠি প্রতিনিধি, ঢাকা টাইমস
 | প্রকাশিত : ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ২০:২৬

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঠালিয়া) আসনে আলোচিত নৌকার প্রার্থী ব্যারিস্টার এম শাহজাহান ওমর বীরউত্তমের সম্পদ কমেছে। তবে তার স্ত্রীর সম্পদ বেড়েছে কয়েকগুণ। গত পাঁচ বছরে শাহ্জাহান ওমরের নগদ অর্থ কমলেও তার স্ত্রীর নগদ অর্থ বেড়েছে ৩৪ লাখ ৪৩ হাজার ৫৭৩ টাকা। তবে তার স্ত্রীর এই টাকা বৃদ্ধির উৎস হলফনামায় নেই।

২০১৮ সালের হলফনামার তথ্য অনুযায়ী ওমর ও তার স্ত্রীর সম্পদ এবং নগদ টাকার পরিমান ছিল সাত কোটি ১৫ লাখ ৩৯ হাজার ৯৯৬। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনী হলফনামা সুত্রে শাহজাহান ওমর ও তার স্ত্রী অর্থ সম্পদে মোট ৫ কোটি ৬৩ লাখ ২৪ হাজার ৪১৭ টাকার মালিক বলে উল্লেখ করেছেন।

এই হিসাবে গতবারের তুলনায় এবার ওমর ও তার স্ত্রীর সম্পদ ও নগদ অর্থ কম দেখানো হয়েছে এক কোটি ৫২ লাখ ১৫ হাজার ৫৭৯ টাকা। তবে হলফনামায় তার ও তার পরিবারের নামে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি এবং তার বিরুদ্ধে বিচারাধীন ও তদন্তনাধীন মামলার কোনো বিবরণ উল্লেখ নেই।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা, অগ্নিসংযোগ এবং ভাঙচুর মামলায় ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর এজাহার নামীয় ১১ নম্বর আসামি। তিনি নিউমার্কেট এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে অগ্নিসংযোগ মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার হয়ে জেল হাজতে যান। এ মামলায় ২৯ নভেম্বর জামিন পেয়ে পরের দিন মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ৩০ নভেম্বর গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে অনলাইনে মনোনয়ন ফরম তুলে জমা দেন। কিন্তু প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা এবং অগ্নিসংযোগের দুটি মামলায় জামিন নেননি। তার নামে চলমান এ দুটি মামলা এবং দুর্নীতির মামলার কোনো বিবরণই হলফনামায় নেই।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হলফনামা সূত্রে জানা যায়, কৃষি জমি, বাড়ি, দোকান ও অন্যান্য উৎস্য থেকে বার্ষিক আয় ৩০ লাখ ৫৯ হাজার ১৭০ টাকা। নিজের নামে নগদ অর্থ আছে ছয় লাখ ৬৪ হাজার ৫২৭ টাকা। স্ত্রীর নামে আছে ৩৫ লাখ ১৪ হাজার ৪৫০ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তার নামে জমা করা টাকার পরিমান সাত লাখ ৮৩ হাজার ৮৫৭ টাকা এবং স্ত্রীর নামে আছে তিন লাখ ৮৭ হাজার ৯১৩ টাকা।

এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্র, স্থায়ী আমানত বিনিয়োগ ও এফডিআরে নিজ নামে এক কোটি পাঁচ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং একই খাতে স্ত্রীর নামে আছে এক কোটি এক লাখ টাকা। তার গাড়ির মূল্য ৬০ লাখ ৭০ হাজার টাকা এবং স্ত্রীর গাড়ি মূল্য ১৭ লাখ চার হাজার টাকা। এ ছাড়াও উভয়ের আসবাবাপত্রসহ আরো ১৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকার সম্পদ আছে বলে হলফ নামায় উল্লেখ করা হয়।

অন্যদিকে ২০১৮ সালে নির্বাচনের হলফনামার তথ্য অনুযায়ী তার কৃষি, ব্যাংক আমানত ও পেশাগত আয় উল্লেখ করা হয়েছে ২৮ লাখ ৫৯ হাজার ৮৩২ টাকা। শাহজাহান ওমরের নগদ টাকার পরিমান ছিল সাত লাখ ৭১ হাজার ৩৪৪ টাকা এবং স্ত্রীর নামে নগদ টাকা ছিল ৭০ হাজার ৮৭৭ টাকা। তার নামে ব্যাংকে জমাকৃত টাকা ছিল পাঁচ লাখ ৪৯ হাজার ৯১৩ টাকা এবং স্ত্রীর নামে ছিল তিন লাখ ৪৭ হাজার ২১২ টাকা। স্থায়ী আমানত ছিল দুই কোটি ১২ লাখ ৪২ হাজার টাকা এবং স্ত্রীর ছিল এক কোটি ৮২ লাখ নয় হাজার ৮৮১ টাকা।

শাহজাহান ওমরের গাড়ির মূল্য ছিল ৬০ লাখ ৭০ হাজার টাকা এবং তার স্ত্রীর গাড়ির মূল্য ১৭ লাখ ৪ হাজার টাকা। তাদের উভয়ের ব্যবহৃত স্বর্ণের মূল্য ছিল ৮ লাখ ২৭ হাজার টাকা। এছাড়া উভয়ের ইলেকট্রিক ও আসবাবাপত্রের মূল্য ছিল ১৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। উভয়ের কৃষি ও অকৃষি জমির মূল্য ছিল ৪৫ লাখ ৮৭ হাজার ৭৬১ টাকা। বরিশাল ও রাজাপুরে মোট তিনটি বাড়ি ও পাকা ভবনের মূল্য ছিল এক কোটি ৭৮ লাখ ৪০ হাজার ৫০৮ টাকা। এ ছাড়াও ঢাকায় একটি খামার মূল্য দেখানো হায়েছে ৪৮ লাখ ২৪ হাজার ৫০৮ টাকা।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হলফনামা অনুযায়ী শাহজাহান ওমরের চেয়ে তার স্ত্রীর নগদ টাকার পরিমান প্রায় পাঁচ গুণ বেশি দেখানো হয়েছে। পাশাপাশি তিনি ও তার স্ত্রীর নামে স্থায়ী আমানত সমপরিমান বলে হলফনামায় উল্লেখ করেন। তবে শাহজাহান ওমরের নামে ১/১১ এর সময় দুদকের করা অবৈধ অর্থসম্পদ উপার্জনের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হওয়া এবং বর্তমান সরকারের গাড়ি পোড়ানো দুটি তদন্তনাধীন মামলার বিষেয়ে কোনো তথ্য হলফনামায় নেই। যদিও ২০১৮ সালের হলফনামায় রাজাপুর ও ঢাকার ২০০৭ সনের দুটি মামলার কথা উল্লেখ করা হয়। এর মধ্যে রাজপুর থানার করা মামলায় আদালতে খালাশ এবং ঢাকার গুলশান থানায় হওয়া অপর মামলায় খালাশের পর উচ্চ আদালতে আপিল বিচারাধীন। কিন্তু দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় শাহ্জাহান ওমরের সর্বশেষ মামলার কোনো তথ্য উল্লেখ করা হয়নি।

২০১৮ সনের সংসদ নির্বাচনের হলফ নামায় ওমরের নগদ অর্থের পরিমান উল্লেখ করা হয় সাত লাখ ৭১ হাজার ৩৪৪ টাকা এবং তার স্ত্রীর টাকার পরিমান ছিল ৭০ হাজার ৮৭৭। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হলফ নামায় শাহ্জাহান ওমরের নগদ অর্থের পরিমান দেখানো হয়েছে ছয় লাখ ৬৪ হাজার ৫২৭ টাকা এবং তার স্ত্রীর নামে নগদ অর্থে দেখানো হয়েছে ৩৫ লাখ ১৪ হাজার ৪৫০ টাকা। এ হিসাবে গত পাঁচ বছরে শাহ্জাহান ওমরের নগদ অর্থ কমলেও তার স্ত্রী নগদ অর্থ বেড়েছে ৩৪ লাখ ৪৩ হাজার ৫৭৩ টাকা। তবে তার স্ত্রীর এই টাকা বৃদ্ধির উৎস হলফনামায় নেই।

এছাড়াও বরিশালের ব্রাউন কম্পাউন্ড সড়কে বীর উত্তম ভবন এবং রুপাতলি বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন নির্মানাধীন বীর উত্তম হাসপাতালের কোনো তথ্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় উল্লেখ করা হয়নি। অথচ ২০১৮ সনের হলফ নামায় বরিশাল ও নিজ গ্রাম রাজাপুরে তার মোট তিনটি বাড়ির কথা উল্লেখ করা হয়েছেলি।

(ঢাকাটাইমস/০৬ডিসেম্বর/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :