প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে দেশের অর্থনীতির গেম চেঞ্জার এখন কক্সবাজার

ছৈয়দ আলম, কক্সবাজার
 | প্রকাশিত : ০৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৪:৪৬

কক্সবাজারে আধুনিক প্রযুক্তি সুবিধা সম্পন্ন দৃষ্টিনন্দন আকর্ষণীয় আইকনিক রেলস্টেশন উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বহুল প্রত্যাশিত উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানে এসে প্রধানমন্ত্রী কক্সবাজার নিয়ে তার কৈশোরের একটি গল্প বলেছেন।

তিনি খুবই আবেগঘনভাবে বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধু জেলের বাইরে থাকলে পরিবার নিয়ে কক্সবাজার আসার চেষ্টা করতেন কিন্তু সেটা হয়তো সবসময় সম্ভবপর হতো না।’

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘১৯৬১ সালে তার পিতার সঙ্গে তিনি প্রথমবার এই কক্সবাজার আসেন। একটিমোটেল’- তখন থেকেছেন, মোটেলের সাথে একটা কিচেন ছিল, সেখানে নিজেরা রান্নাবান্না করে খেয়েছেন।

৬১-এর পর বঙ্গবন্ধুর জেলজীবন মুক্ত জীবনের ফাঁকে তার পিতার সঙ্গে আরও কয়েকবার এসেছেন বলেও তিনি জানিয়েছেন। আসলে এটা মোটেও বাড়িয়ে বলা নয় যে, প্রধানমন্ত্রীর স্মৃতিতে অত্যন্ত গুরুত্ব নিয়ে সমুদ্র শহর কক্সবাজার একটা বিশাল জায়গা দখল করে আছে।

এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আবেগ ভালোবাসা এবং কক্সবাজারের অমিত সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে দেশকে আন্তর্জাতিক মান স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরের জন্য তার অদম্য আগ্রহ।

এটা অতিকথন নয়-কক্সবাজার বদলে গেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরেই। কক্সবাজারে মেরিন ড্রাইভ দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের এক-একটি বাস্তবায়ন শুরু হয়। সত্তর-আশির দশকে খোলা জিপ চাঁদের গাড়িতে করে শুটিং পার্টি এবং অ্যাডভ্যাঞ্চারাস পর্যটকরা হিমছড়ি, ইনানীর দিকে যেতেন।

৯০-এর দশক থেকে মেরিন ড্রাইভ প্রকল্প শুরু হলেও বারবার অগ্রগতি থমকে গেছে। ২০০৯ সাল থেকে ২০১৬ সালের সময়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় ইচ্ছায় মেরিন ড্রাইভের কাজ শেষ হয়েছে।

কক্সবাজার সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘পৃথিবীতে ৮০ মাইলের বালুকাময় সৈকত আর নেই। সৈকতের পুরো দৈর্ঘ্যই উপভোগ্য, এমন সৈকত পৃথিবীতে বিরল। স্পেন, পর্তুগালে বালুকাময় সৈকত আছে কিন্তু এত দৈর্ঘ্য নয়।

প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে বিমানবন্দর সম্প্রসারিত হয়ে আন্তর্জাতিক মানের হচ্ছে। সাগর ছুঁয়ে আন্তর্জাতিক বিমান নামার সে স্বপ্ন দ্রুতই বাস্তবায়িত হবে এখন। সাগরের একটি অংশ পুনরুদ্ধার করে রানওয়ে নির্মাণের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে।

চীনের দু: যেমন হোয়াংহো, তেমনই একটা সময়ে কক্সবাজারের দু: ছিল চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কপথ। কিন্তু সে দু: আর এখন নেই। উন্নত হয়েছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের সড়ক ব্যবস্থা আর নতুনভাবে শুরু হলো রেলওয়ে ব্যবস্থা। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে কিন্তু কক্সবাজারের যোগাযোগ ব্যবস্থা তেমন একটা এগোচ্ছে না-এই দু: কক্সবাজারবাসীর দীর্ঘদিনের ছিল।

এখন সেসব হতাশা, দু: আহাজারি দূর হয়ে গেছে। কক্সবাজার এখন সারাদেশের সঙ্গে অভূতপুর্ব যোগাযোগ ব্যবস্থায় সংযুক্ত হয়েছে।

জানা যায়, ব্রিটিশ সরকার ১৮৯০ সালেই কক্সবাজারের সাথে রেললাইন নির্মাণের পরিকল্পনা করেছিল। পাকিস্তান আমলেও আরেকবার পরিকল্পনা হয়েছিল কিন্তু কাজ আর এগোয়নি। বিগত ১৩৩ বছরের ব্যর্থতাকে জয় করে প্রধানমন্ত্রী শক্ত হাতে হাল ধরে এবার কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ উন্মুক্ত করে দিলেন। যেকোনো পর্যটক রাতে ঢাকা থেকে উঠে সকালে আইকনিক রেল স্টেশনে নেমে দেখছেন, একটি ঝিনুক তার জন্য আধফোঁটা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। শুধু কক্সবাজার নয় বিগত ১৫ বছরে রেলপথ সম্প্রসারিত হয়েছে প্রায় সারা দেশে। শুধু বরিশাল যাওয়া বাকি আছে মাত্র। সেটাও অচিরেই বাস্তবায়ন হয়ে যাবে এমন প্রত্যাশা আর অমূলক নয় মোটেও।

কক্সবাজার শহরটা পূর্ব-পশ্চিম লম্বালম্বি এক সড়কের শহর ছিল। দক্ষিণে পাহাড়, উত্তরে বাঁকখালী নদী। শহরটা দিনে দিনে বড়ো হয়েছে। জনসংখ্যা অনেকগুণ বেড়েছে। বাইপাস সড়ক হয়েছে। বসতি ঘন থেকে আরও ঘন হয়েছে।

কিন্তু শহরটি সম্প্রসারিত হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর একান্ত ব্যক্তিগত আগ্রহে, বাঁকখালী নদীর ওপর খুবই দৃষ্টিনন্দন ৫৬৫ মিটার দীর্ঘ একটি সেতু নির্মাণ করেছে এলজিইডি। এর ডিজাইনও প্রধানমন্ত্রী নিজে দেখে অনুমোদন করেছিলেন। সাগরের মোহনার কাছাকাছি এই ব্রিজ নির্মাণে অনেক চ্যালেঞ্জিং অধ্যায় গেছে। প্রধানমন্ত্রীর অনুপ্রেরণায় এলজিইডি এই অধ্যায়গুলো অতিক্রম করেছে।

জাপান সরকারের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সম্পর্কের কারণে জাইকা এখন মাতারবাড়ি মহেশখালীকেও বদলে দিচ্ছে। বহু বহু উন্নত প্রকল্প এখন এসব জায়গায় বাস্তবায়িত হচ্ছে। আর কক্সবাজার হয়ে যাচ্ছে দেশের গোটা অর্থনীতির গেম চেঞ্জার।

কক্সবাজার পৌরসভায়ও জাইকা সিটি গভর্ন্যান্স প্রকল্প শুরু হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন করছে এলজিইডি এবং পৌরসভা। কক্সবাজারের বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ শহরটা বদলে যাবে এখন। ছাড়া সাবরাং এক্সক্লোসিভ ট্যুরিস্ট জোন, জ্বালিয়ার দ্বীপ থেকে নেটংপাহাড় চূড়া পর্যন্ত পর্যটন বান্ধব মেগা প্রকল্প চলমান রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের তত্ত্বাবধানে কক্সবাজারের উন্নয়ন চিত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, উন্নয়নের ধারায় বদলে যাওয়া কক্সবাজারকে দেখাতেই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ২০০৬-২০০৭ অর্থবছর থেকে শুরু করে বর্তমান ২০২২-২০২৩ অর্থবছর সময় পর্যন্ত কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে উন্নতি হয়েছে সে সম্পর্কে জানান জেলা প্রশাসন। বর্তমান সরকারের আমলে কক্সবাজারে শতাধিক প্রকল্প নেয়া হয়েছে বলে জানানো হয়।

এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক কক্সবাজার, সামুদ্রিক মৎস্য প্রযুক্তি কেন্দ্র, মেরিন অ্যাকুরিয়াম স্থাপন, ইনস্টলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপ লাইন, মাতারবাড়ি বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প, দোহাজারি থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমারের নিকটে ঘুমঘুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ, মাতারবাড়ি ২৬০০ মেগাওয়াট আল্ট্রাসুপারক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার্ড পাওয়ার প্রজেক্ট, কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্প, খুরুশকুল বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্প।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, পুরো দেশের অর্থনীতির একটা বড় অংশ হচ্ছে কক্সবাজার। সরকারের বহুমুখী পরিকল্পনা উন্নয়ন বাস্তবায়নে অনেক দূর এগিয়ে যাবে। ইতিমধ্যে অনেক প্রকল্প শেষ হয়েছে আরও বড় বড় প্রকল্পের উন্নয়ন চলছে।

(ঢাকাটাইমস/০৮ডিসেম্বর/জেডএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

সুন্দরবনের আগুন নেভেনি, আরও ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা

বগুড়ায় বসতবাড়ি‌তে বি‌স্ফোরণে আহত বুশরা মারা গে‌ছেন

অনলাইন ডেলিভারি ম্যান সেজে গাজা পাচার, আটক ১

চাটখিলে এমডির বিরুদ্ধে হাসপাতাল দখলের অভিযোগ

গাজীপুরে রেল দুর্ঘটনা: ৩১ ঘণ্টা পর ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক

বরিশালে তুচ্ছ ঘটনায় পরিবহন শ্রমিকদের সংঘর্ষ, যান চলাচল বন্ধ

সৈয়দপুরে যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে তালাকের অভিযোগ কোস্টগার্ড সদস্যের বিরুদ্ধে

খাবারে নেশাদ্রব্য মিশিয়ে শিক্ষকের বাসায় চুরি, ৩ জন অসুস্থ

তাপদাহ: দিনাজপুরে নাবি টমেটোর বাম্পার ফলনেও কৃষকের মাথায় হাত

এক পাগলা কুকুরের কামড়ে শিশুসহ ২২ জন আহত, হাসপাতালে নেই ভ্যাকসিন

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :