তরুণ সাংবাদিকদের নিয়ে পিআইবিতে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের আলোচনা

অনলাইন ডেস্ক
| আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৮:৫৩ | প্রকাশিত : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৮:৪৮

একটি জাতিসত্তা নিশ্চিহ্ন করতে হলে সেই জাতির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে ধ্বংস করতে হয়। নতুবা সেই জাতির পুর্নজন্ম হয়। আর জাতির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি ধারণ করে রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, শিক্ষক, সাহিত্যিক ও কবি।

তাই পাকিস্তানি সামরিক জান্তা একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে নিশ্চিত পরাজয় বুঝতে পেরে বাছাই করে ধারাবাহিকভাবে রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, শিক্ষক, সাহিত্যিক ও কবিদের হত্যা করে। যেন বাঙালি জাতি কখন নিজস্ব সত্ত্বায় দাঁড়াতে না পারে।

বৃহস্পতিবার ‘হৃদয়ে রবে প্রেরণায়’ স্লোগানকে ধারণ করে শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষ্যে প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের (পিআইবি) আয়োজনে পিআইবি’র সেমিনার কক্ষে আলোচকরা এসব কথা বলেন।

পিআইবি’র মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদ সেমিনারে মডারেটরের দায়িত্ব পালন করেন। আলোচনা করেন প্রতিতযশা শহিদ সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনের সন্তান জাহিদ রেজা নূর ও শহিদ সাংবাদিক শিবসাধন চক্রবর্তীর সহোদর বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিক তরুণ তপন চক্রবর্তী।

সেমিনারের মডারেটর পিআইবি-এর মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদ বলেন, ‘একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বাংলাদেশের গণমাধ্যম ছিল অবরুদ্ধ। তারপরও সাংবাদিকরা বিভিন্ন পন্থায় মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত তথ্য বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশ করে জনমনে আস্থার সঞ্চার করছেন।’

তবে মুক্তিযুদ্ধের সময় কিছু সাংবাদিকের গুপ্তচরবৃত্তির কথাও উল্লেখ করেন তিনি। এছাড়া যুদ্ধের সময় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ক্লাস ও পরীক্ষা নেওয়া শিক্ষক এবং অংশগ্রহণ করা শিক্ষার্থীদের কথা বলেন। নতুন প্রজন্মকে তিনি ইতিহাসের পাঠোদ্ধারের সহায়তায় জন্য সাংবাদিকদের ভূমিকা রাখার কথা বলেন। মুক্তিযুদ্ধকালে শিল্পী সমাজের ভূমিকা নিয়েও কথা বলেন মহাপরিচালক।

আলোচনায় শহিদ সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনের সন্তান জাহিদ রেজা নূর বলেন, বাঙালি জাতি অসাম্প্রদায়িক ও সামাজিক সাম্যের মাধ্যমে একটি সোনার বাংলা গড়তে চেয়েছিল। কিন্তু সেটা পঁচাত্তরের পনেরই আগস্টের পর সব এলোমেলো হয়ে যায়। একাত্তরে ঢাকার ম্যাসাকারের দায়িত্বে ছিল রাও ফরমান আলী ও ঢাকার বাহিরে খাদেম হোসেন রাজা। তৎকালীন সময়ে সাংবাদিক সায়মন ড্রিং ৩০ মার্চ ঢাকার প্রকৃত চিত্র দ্যা টেলিগ্রাফে তুলে ধরেন।

পকিস্তানিরা নিশ্চিত পরাজয় বুঝতে পেরে যখন এদেশের মেধাশূন্য করতে তৎপর তার একটি বিবরণ দিয়ে তিনি বলেন, একাত্তরের ১০ ডিসেম্বর রাও ফরমান গর্ভণরের সঙ্গে দেখা করতে যান। এরপর ১০ ডিসেম্বর হতে ১৩ ডিসেম্বর তারা পর্যায়ক্রমে সাংবাদিক হত্যা করে, ১৪ ডিসেম্বর শিক্ষক, ১৫ ডিসেম্বর চিকিৎসক এভাবে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত হত্যা করতে থাকে। যদি ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন না হতো তাহলে তারা আরো কতটা ভয়ংকর হতো সেটা অনুমানযোগ্য।

শহিদ সাংবাদিক শিব সাধন চক্রবর্তীর সহোদর বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিক তরুণ তপন চক্রবর্তী মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধ উত্তর ও পরবর্তী বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ ছিল এদেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সশস্ত্র সংগ্রাম। যা আমরা নয় মাস যুদ্ধ করে ছিনিয়ে এনেছি। তিনি পাকিস্তানে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশি সৈনিক বিরুদ্ধে গঠিত ট্রায়ালের কথাও উল্লেখ করেন।

মুক্ত আলোচনায় সাংবাদিক আহমেদ তেপান্তর বলেন, ইতিহাসের বস্তুনিষ্ঠুতা অনেক জায়গায় বিচ্যুতি ঘটেছে। এটা চলমান। তা না হলে ইতিহাস বিচ্যুতির দায়ে ‘দামাল’ সিনেমা দোষী হতো। এরমানে যারা সেন্সরবোর্ডে আছেন তারা বিজ্ঞ হলেও অনেকেই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস চর্চার ধারেকাছেও নেই। অনেকেই আমরা জানিনা মুক্তিযুদ্ধের সময় কলকাতায় আমাদের লোকজনরাই মুক্তিযুদ্ধে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টায় বাধা দিয়েছিলো। যাদের উত্তরসূরীরা এখন বহাল তবিয়তে।

তার সঙ্গে একমত প্রকাশ করে সাংবাদিক এম এস রানা পিআইবির মহাপরিচালকের কাছে মুক্তিযুদ্ধে সাংস্কৃতিক কর্মীদের ভূমিকা শীর্ষক আলাদা সেমিনারে বিস্তারিত তুলে ধরার আহ্বান জানান।

সভায় তরুন সাংবাদিকদের কাছে আলোচ্য বিষয় নিয়ে বিস্তর গবেষণা এবং পাঠক সমাজের কাছে তুলে ধরার আহ্বান জানানো হয়।

পিআইবি’র পরিচালক (প্রশাসন) মো. জাকির হোসেন বলেন, একটি জাতিকে মেধাশূন্য করতে হলে যা করার দরকার পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী তার সবকিছুই করেছিল একাত্তরে। তারা বাছাই করে এদেশের রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, শিক্ষক, চিকিৎসকসহ বুদ্ধিজীবী শ্রেণীপেশার লোককে হত্যা করে বাঙালি জাতিসত্ত্বা চিরতরে নিস্তব্ধ করে দিতে চেয়েছিল। আর একাজ করতে সক্ষম হয়েছিল এদেশীয় তাদের দোসর রাজাকার আল-বদর, আল-শামসের সহায়তায়।

সেমিনারটি প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি) এর প্রশিক্ষণ বিভাগের প্রশিক্ষক চলতি দায়িত্ব মোহাম্মদ শাহ আলমের সমন্বয়ে মোট ২৮ জন সাংবাদিক, কবি, সাহিত্যিক ও গবেষক অংশগ্রহণ করেন।

সেমিনারে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি) এর পরিচালক (প্রশাসন)চলতি দায়িত্ব মো. জাকির হোসেন, প্রকাশনা ও ফিচার বিভাগের সহযোগী সম্পাদক আবুল কালাম মোহাম্মদ শামসুদ্দিন, অধ্যয়ন ও প্রশিক্ষণ বিভাগের পরিচালক চলতি দায়িত্ব শেখ মজলিশ ফুয়াদ এবং গবেষণা ও তথ্য সংরক্ষণ বিভাগের পরিচালক অতিরিক্ত দায়িত্ব ড. কামরুল হক।

(ঢাকাটাইমস/১৪ডিসেম্বর/এলএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

গণমাধ্যম বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

গণমাধ্যম এর সর্বশেষ

সাংবাদিক নির্যাতন বন্ধ ও সাংবাদিক সুরক্ষা আইন প্রণয়নের দাবি

ঢাকা সাব-এডিটরস কাউন্সিলের নতুন সভাপতি মুক্তাদির, সম্পাদক জাওহার

আরআরএফের সভাপতি মিজান, সম্পাদক নিশাত ও দপ্তর সম্পাদক মেহেদী

সাংবাদিক নেতা রমিজ খানের ইন্তেকাল, বিএফইউজের শোক

ঈদের ছুটি না পাওয়া গণমাধ্যমকর্মীদের যথাযথ সুযোগ-সুবিধা প্রদানের দাবি বিএফইউজের

প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ ও প্রতিবেদকের বক্তব্য

নড়াইল জেলা সাংবাদিক ইউনিটি-ঢাকার নতুন কমিটি গঠন

সাংবাদিক মিনার মাহমুদের ১২তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

সাংবাদিক সাব্বিরের ওপর নৃশংস হামলায় ঢাকাস্থ গাজীপুর সাংবাদিক ফোরামের নিন্দা

বাংলানিউজকর্মী মিথুনের ক্যানসার চিকিৎসায় এগিয়ে এলো বসুন্ধরা ফাউন্ডেশন

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :