পাখির অভয়ারণ্য ঝিনাইদহের আশুরহাট গ্রাম

ঝিনাইদহের শৈলকূপা উপজেলার নিত্যানন্দপুর ইউনিয়নের আশুরহাট গ্রাম এখন ‘পাখি গ্রাম’ হিসেবে পরিচিত। ২০১৩ সালের আগে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি এ গ্রামে আসা-যাওয়ার মধ্যে থাকলেও ২০১৩ সাল থেকে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে পাখিগুলো। ফলে ২০১৩ সালে পাখি সুরক্ষায় জেলা প্রশাসনের নির্দেশে উপজেলা প্রশাসন গ্রামটিকে পাখির অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করে। পাখিদের সুরক্ষায় স্থানীয়ভাবে পাহারাদারের ব্যবস্থাও করা হয়। এর পর থেকে ধীরে ধীরে আশুরহাট গ্রামটি ‘পাখি গ্রাম’ হিসেবে পরিচিতি পেতে থাকে।
শীত মৌসুম এলে স্থায়ীভাবে বসবাস করা পাখির সঙ্গে যোগ দেয় অতিথি পাখি। বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখি ঝাঁকে ঝাঁকে এসে যোগ দেয় এখানকার পাখিদের সঙ্গে।
এ সময় প্রায় ১০ একর এলাকাজুড়ে গড়ে ওঠে পাখির রাজ্য। গাছে গাছে বাসা বেঁধে অবস্থান করতে থাকে পাখিগুলো। পাখির সৌন্দর্যে গ্রামটির সৌন্দর্যও বৃদ্ধি পায় অনেকগুণ।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, গ্রামের মধ্যপাড়ার আব্দুর রাজ্জাক ও গোপাল চন্দ্র বিশ্বাসের পুকুর পাড়ের শিমুল, জাম ও মেহগনি গাছের ডালে বাসা বেঁধেছে হাজারো পাখি। উপযুক্ত আবহাওয়া ও পর্যাপ্ত খাবারের জোগান থাকায় পাখিগুলো এখানেই বাসা বেঁধেছে। শীত মৌসুম এলে এদের সঙ্গে যোগ দেয় অতিথি পাখি।
তবে শুরুর দিকে নানারকম হুমকির মুখে পড়তো অতিথি পাখি। শিকারির থাবায় অনিরাপদ ছিল পাখিগুলো। তখন চরম সংকটে পড়েছিল পাখিদের আশ্রয়স্থল। সেই পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠলেও বর্তমানে উদ্ভব হয়েছে নতুন এক সমস্যা। জমির মালিকরা কেটে ফেলছে অভয়ারণ্যের গাছ। ফলে হাজার হাজার পাখির কলতানে মুখরিত অভয়ারণ্যটি পাখি শূন্য হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
অভয়ারণ্যের মধ্যে থাকা গাছ কাটা ও পাখি শিকার বন্ধ করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
আশুরহাট পাখি সংরক্ষণ সমিতির সদস্য আরিফ জানান, কয়েক দিন আগে গ্রামের মোকাররম আলীর ছেলে নইমুদ্দিন ও বদরউদ্দিনের ছেলে শফি উদ্দিন অভয়ারণ্যের গাছ কেটেছে। অন্যরাও গাছ কাটার পাঁয়তারা করছে। এভাবে গাছ কেটে ফেললে পাখি শূন্য হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা সফর আলী জানান, জমির মালিকরা মাঝে মধ্যে গাছ কাটেন। এভাবে গাছ কাটার কারণে পাখিদের আবাসন সংকট দেখা দেবে। সেই সঙ্গে পাখি শূন্য হয়ে পড়বে এই অভয়ারণ্য।
আশুরহাট পাখি সংরক্ষণ সমিতির সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এভাবে গাছ কাটলে অতিথি পাখিরা এসে কোথায় থাকবে। আমি জেলা প্রশাসক ও ইউএনও বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছি। এই মুহূর্তে গাছ কাটা বন্ধ না করতে পারলে ভবিষ্যতে অতিথি পাখিসহ অন্যান্য পাখি এই এলাকায় আসবে না। পাখিশূন্য হয়ে পড়বে উপজেলার একমাত্র অভয়ারণ্য।
জেলা প্রশাসক এসএম রফিকুল ইসলাম বলেন, পাখির অভয়ারণ্যের গাছ কাটার খবর পেয়েছি। পাখিদের আবাসস্থল সুনিশ্চিত করতে এবং পাখি অভয়ারণ্য যাতে হুমকির মধ্যে না পড়ে সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য, প্রতিদিন ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নানান বয়সী মানুষ মুগ্ধ হয়ে উপভোগ করেন হাজার হাজার পাখির বিচরণে ভরা পাখি গ্রামের অপরূপ সৌন্দর্য।
(ঢাকাটাইমস/১৪জানুয়ারি/প্রতিনিধি/পিএস)।

মন্তব্য করুন