কনকনে শীতে রাতভর স্টেশনে অপেক্ষা, তবুও মিলছে না কম্বল

শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর
  প্রকাশিত : ১৫ জানুয়ারি ২০২৪, ১৩:২৮| আপডেট : ১৫ জানুয়ারি ২০২৪, ১৩:৩২
অ- অ+

" একখান কম্বলের ব্যবস্থা করি দেইস বা। হাত-পালা ককড়া লাগি আইসেছে। বরফ হই গেইছে গাওটা। একখান কম্বলের জন্যই অপেক্ষায় আছো বা। কম্বল পাইলেই বাড়ি চলি যাম।" দিনাজপুর রেলওয়ে স্টেশন চত্বরে একটি কম্বলের জন্য এভাবেই আকুতি করছিলেন কোহিনুর বেগম নামে এক নারী। ষাটোর্ধ্ব কোহিনুরের বাড়ি দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার আমবাড়ী এলাকায়। গত দুইদিন থেকে একটি কম্বলের আশায় অবস্থান করছেন রেলস্টেশন এলাকায়। শুনেছেন রেলস্টেশনে রাতে অনেকে কম্বল দেন। সেই কম্বলের আশায় ২১ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে এসেছেন। দুইরাত অপেক্ষা করেছেন কম্বলের জন্য। কিন্তু এখনো কোনো কম্বল পাননি।

কোহিনুর বেগমের মতো মোসলেমা, রমিছা, মাজেদা, সোহানা, বিলকিস, রোজিনা, আকলিমা, রাবেয়া, পারুল, ফাতেমা, মজিদ, মোকসেদ, রমজান, সতেন্দ্র, মকবুল, মমিনুল আবুল কালাম, ছিদ্দিক, ফজলা, কমলা কান্ত ও আসাদুল্লাহসহ অনেকেই রেলস্টেশনে অপেক্ষা করছেন একটি কম্বলের আশায়।

কথা বলতে গেলে তারা এ প্রতিবেদককে ঘিরে ধরেন। মনে করেছেন কম্বল দেওয়ার জন্য হয়তো তালিকা করতে এসেছি। বুঝে ওঠার আগেই এক নারী বলতে শুরু করলেন " বাবা রে হামাকেও একখান কম্বল দেন। তোমার পাও খান ধরো-হামাক একখানা কম্বল দেন। কতো কষ্ট করিয়া এই স্টেশন পরি আছো। ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ থাকি আইছু বাপ। একখান কম্বল কেহ দিলে না। জাড়োত কাপেছো। বুড়া মানুষ হায়ও। হানার ভিতি কেউ দেখেওনা। হামাক একখান কম্বল দাও বা।"

একটি কম্বলের জন্য তিনি গত ১৩ দিন থেকে দিনাজপুর রেল স্টেশনে অবস্থান করছেন বলে জানিয়েছেন। ষাটোর্ধ্ব এই নারীর নাম মোসলেমা বেওয়া। এ বছর একটিও ভালো কম্বল পাননি তিনি। গত বছর যেগুলো পেয়েছেন সেগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। এমনটাই জানিয়েছেন তিনি।

রাহেলা খাতুনও (৪৫) এসেছেন একটি কম্বলের জন্য। তিনি শহরের উপকণ্ঠ হঠাৎপাড়ায় ভাড়া থাকেন। তিনি জানান, স্টেশনে থেকে এ পর্যন্ত দুটো কম্বল পেয়েছেন। কিন্তু সেগুলো অনেক হালকা। ওই কম্বল দিয়ে শীত নিবারণ করা সম্ভব হচ্ছে না।

মজিবর রহমান (৬৫) নামে রংপুর পীরগাছা এলাকা থেকে আসা এক বৃদ্ধ বলেন, একটা কম্বলের আশায় আছেন। কম্বল পেলেই বাড়ি চলে যাবেন।

এভাবে অনেকেই রাতের আঁধারে রেল স্টেশনে এসে বসে থাকেন একটি ভালো কম্বলের আশায়। এরা অধিকাংশই বস্তি এলাকার বাসিন্দা।

উল্লেখ্য, হাঁড় কাপানো কনকনে শীত আর হীমেল হাওয়ায় জবুথবু অবস্থা বিরাজ করছে উত্তরের জনপদ দিনাজপুরে। দিন দিন শীতের প্রকোপ বেড়েই চলছে। সোমবার দিনাজপুরে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।

এ মৌসুমে একনাগাড়ে তিনদিন দিনাজপুরে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।

দিনাজপুরে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে জানিয়ে জেলার আঞ্চলিক আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, চলমান শীতের তীব্রতা কমার কোনো সম্ভাবনা নেই। হাড় কাঁপানো শীতের মধ্যে ১৮ ও ২৯ জানুয়ারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানান তিনি।

জানা যায়, গত পাঁচদিন ধরে তীব্র শীতে স্থবিরতা বিরাজ করছে জেলা জুড়ে। চরম বিপাকে পড়েছেন শ্রমজীবী মানুষ। প্রয়োজন থাকলেও ঘর থেকে বের হতে পারছেন না তারা। গত কয়েক দিন ঠিকমতো সূর্য দেখা না যাওয়ায় শীতের তীব্রতা বেড়েছে অনেকগুণ। খড়কুটো দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে উষ্ণতা পাওয়ার চেষ্টা করছেন অনেকে।

শীত আর ঘনকুয়াশায় ব্যাঘাত ঘটছে কৃষি কাজ ও যান চলাচলেও। দিনের বেলায় হেড লাইট জ্বালিয়ে সড়ক মহাসড়কে চলতে হচ্ছে গাড়িগুলোকে।

এদিকে চলমান শৈত্যপ্রবাহের মধ্যে বেড়েছে শীতজনিত রোগের প্রকোপ। দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জেনারেল হাসপাতাল ও অরবিন্দু শিশু হাসপাতালে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

দিনাজপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) দেবাশীষ চৌধুরী জানান, জেলার ১০৩টি ইউনিয়ন এবং ৯টি পৌরসভার মাধ্যমে ইতোমধ্যে ৬২ হাজার ৩৮০ পিস কম্বল শীতার্তদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। আরও ৫০ হাজার পিস কম্বল ও শিশুদের গরম কাপড় চেয়ে ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে জরুরি বার্তা পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।

(ঢাকাটাইমস/১৫জানুয়ারি/প্রতিনিধি/পিএস)।

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
ঈদযাত্রা: ট্রেনে ২৬ মার্চের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে আজ
বরিশালে শিশুকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে যুবককে পিটিয়ে হত্যা
খুলনায় দৃর্বৃত্তদের গুলিতে হত্যা মামলার আসামি নিহত
আলোচিত আবরার হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের রায় আজ
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা