বাণিজ্য মেলায় ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা আশাবাদী, হোটেল ব্যবসায়ীরা শঙ্কায়

রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২০:১২| আপডেট : ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২০:১৭
অ- অ+

জমে উঠেছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার ২৮ তম আসর। শেষে দিকে ভালো বেচাকেনায় আশাবাদী হয়ে উঠেছেন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা। তবে শঙ্কায় আছেন হোটেল ব্যবসায়ীরা। বেচা বিক্রি ভালো না হওয়ায় এবং মূল মেলার বাহিরে অসংখ্য খাবার হোটেল গড়ে ওঠায় এবং ওইসব হোটেলে কমমূল্যে নিম্নমানের খাবার পাওয়া যাওয়ায় মেলার ভেতরে তেমন বিক্রি হচ্ছে না বলে জানান তারা। ফলে বড় অঙ্কের লোকসানের শঙ্কায় পড়েছেন তারা।

সরেজমিন দেখা যায়, সরকারি ছুটির দিনকেই বেছে নিচ্ছেন দর্শনার্থীরা। শুক্রবার প্রচণ্ড ভিড় লক্ষ্য করা গেছে মেলায়।

মুল প্যাভিলিয়নের পশ্চিম পাশে জয়িতা ফাউন্ডেশনের বিশাল স্টল। এ স্টলের উদ্যোক্তা নাছিমা আক্তার বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর মেলার প্রথম দুই সপ্তাহে ৫০ শতাংশ বেশি পণ্য বিক্রি হয়েছে। পাশাপাশি জয়িতার স্টলে এবছর উদ্যোক্তার সংখ্যাও বেড়েছে।

এদিকে মেলায় জেডিপিসি স্টলটি যে কারও নজর কাড়ছে। বাঁশ, পাটখড়ি ও ছন দিয়ে সাজানো এ স্টলটিতে ২০ জন উদ্যোক্তা ২৮২ ধরনের বৈচিত্র্যময় পণ্য বিক্রি করছেন। মূলত পাটপণ্যের সঙ্গে প্রাকৃতিক অন্য অনেক উপকরণ যুক্ত করে এসব পণ্য বানিয়েছেন তারা।

মেলায় পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসে জেডিপিসির স্টল থেকে শোপিস কিনেছেন সোনারগাঁওয়ের কামরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের স্টলে ব্যতিক্রমী অনেক পণ্য রয়েছে। সাধারণত মেলায় ছাড়ে পণ্য বিক্রি করা হয়। তবে এখানে পণ্যের দাম তুলনামূলক বেশি মনে হয়েছে। আর স্টলের জায়গা অনেক সীমিত হওয়ায় দেখেশুনে পণ্য কেনার সুযোগও পাইনি।’

বাণিজ্য মেলায় বড় উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি নজর কাড়ছেন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারাও। গৃহস্থালি ও নিত্যব্যবহার্য হাজারো পণ্য নিয়ে মেলায় অংশ নিয়েছেন তারা।

উদ্যোক্তারা বলছেন, মেলার শুরুর দিন থেকেই তাদের স্টলে ক্রেতারা ভিড় করছেন। ছোট উদ্যোক্তাদের বেশির ভাগের পক্ষেই বাণিজ্য মেলায় আলাদা স্টল নেওয়া সম্ভব হয় না। এ কারণে উদ্যোক্তাদের নিয়ে কাজ করা কিছু প্রতিষ্ঠান ছোট উদ্যোক্তাদের পণ্য প্রদর্শন ও বিক্রির জায়গা করে দেন। চলতি বছর বাণিজ্য মেলায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা (এসএমই) ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক), জয়িতা ফাউন্ডেশন এবং জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টার (জেডিপিসি) পৃথক চারটি স্টল নিয়েছে। এসব স্টলে ৭৭ জন উদ্যোক্তা সরাসরি তাদের তৈরি পণ্য বিক্রির সুযোগ পেয়েছেন। এ ছাড়া আরও প্রায় অর্ধশত উদ্যোক্তার তৈরি পণ্যও বিক্রি হচ্ছে স্টলগুলোতে।

পূর্বাচলের বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্রে এ বছর এসএমই ফাউন্ডেশনের প্যাভিলিয়নে জায়গা পেয়েছেন ১১জন এসএমই উদ্যোক্তা। এসএমই ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তারা জানান, প্রধান কয়েকটি খাতের উদ্যোক্তাদের পণ্য প্রদর্শনের সুযোগ দেওয়ার চেষ্টা করেছে সংস্থাটি। তাদের মধ্যে রয়েছে চামড়ার জুতা, চামড়াজাত অন্যান্য পণ্য, পাটজাত পণ্য, শতরঞ্জি, আসবাব, শুকনা খাদ্যসামগ্রী ও রিসাইক্লিং পণ্যের প্রতিষ্ঠান।

এসব খাতের উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মেলায় পণ্য বিক্রিতে ভালোই সাড়া পাচ্ছেন তারা। বিক্রির পাশাপাশি এসব উদ্যোক্তার অনেকেই বড় ধরনের ক্রয়াদেশও পেয়েছেন।

এসএমই ফাউন্ডেশনের মহাব্যবস্থাপক নাজিম হাসান বলেন, ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তারা সারা বছরই পণ্য বিক্রি করেন। তবে মেলার মাধ্যমে বড় ক্রেতাদের সঙ্গে তাদের যোগসূত্র তৈরি হয়। দেশ বিদেশের ক্রেতাদের সঙ্গেও সংযোগ তৈরি হচ্ছে।

এ বছর মেলায় বিসিকের স্টলে দেশের বিভিন্ন জেলার ১৪জন উদ্যোক্তার পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। উদ্যোক্তাদের হয়ে স্টলে পণ্য বিক্রি করছেন বিসিকের কর্মকর্তারা। বিসিকের স্টলে শতরঞ্জি, চামড়া ও পাটজাত পণ্য, জামদানি, নকশিকাঁথা, নারীদের পোশাক ও মধুসহ শতাধিক পণ্য রয়েছে।

বিসিকের বিপণন বিভাগের মান নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা ফেরদৌসী সুলতানা জানান, দিন যত যাচ্ছে, বেচাকেনা তত বাড়ছে। মেলার প্রথম দুই সপ্তাহে দৈনিক গড়ে ৩০ হাজার টাকার বেশি পণ্য বিক্রি হয়। আর শুক্র-শনিবারে বিক্রি এক লাখ টাকার কাছাকাছি পৌঁছায়।

মেলায় জয়িতা ফাউন্ডেশন প্যাভেলিয়নের দুই পাশে সারি করে ৩২ জন উদ্যোক্তা পণ্য বিক্রি করছেন। তাদের মধ্যে ২১ জন জয়িতা বিপণন কেন্দ্রের ও ১১জন ই-জয়িতার উদ্যোক্তা। এ ছাড়া স্টলের একপাশে থাকা জয়িতা ক্র্যাফট কর্নারে আরও কিছু প্রান্তিক উদ্যোক্তার পণ্য বিক্রি হচ্ছে। উদ্যোক্তাদের হয়ে এসব পণ্য বিক্রি করছেন জয়িতার কর্মীরা। পণ্যগুলোর মধ্যে নারী ও বাচ্চাদের পোশাকই বেশি। এ ছাড়া রয়েছে গৃহসজ্জার সামগ্রী, শতরঞ্জি, কুশিকাটার পণ্য, পাট ও চামড়াজাত পণ্য, বাঁশ-বেত দিয়ে তৈরি পণ্য, মৃৎপণ্য, বিভিন্ন ধাতব পাত্র, মিনিয়েচার ও শুকনা খাবার প্রভৃতি।

সব মিলিয়ে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় জমে উঠেছে বেচাকেনা। শুধু কেনাকাটা নয়, অনেকে ঘুরতেও আসছেন। মেলার বিশাল এলাকা ঘুরে ক্লান্ত দর্শনার্থীদের জন্য রাখা হয়েছে বিশ্রামের স্থানও। শিশুদের জন্য আছে আলাদা জোন। এ ছাড়া পণ্যের প্রচারের পাশাপাশি বিভিন্ন স্টলে রয়েছে ছবি তোলার বিশেষ আয়োজন। তবে মেলার ভেতরে থাকা খাবার হোটেলগুলোতে খাবারের দাম বেশি রাখায় সচেতন হয়ে উঠেছে দর্শনার্থীরা। খুব বেশি প্রয়োজন না হলে খাবার গ্রহণ করছেন না কেহই।

খিলক্ষেত এলাকার বাসিন্দা হাফিজুর রহমান বলেন, মেলায় খাবার যা দিচ্ছে তা দামের তুলনায় পরিমাণে কম। আবার মান নিম্ন থাকায় এখানকার খাবার খেতে আগ্রহ দেখাইনি।

তবে খাবার হোটেল ব্যবসায়ী আলম মিয়া বলেন, মেলায় স্টল পেতে খরচ বেশি হয়েছে। তাই এখানে খাবারের দাম নিয়ে অসন্তোষ থাকা দোষের কিছু নেই। তবে এবার সরকারি ছুটির দিন ছাড়া লোক কম হওয়ায় লোকসানের আশঙ্কা করছি।

(ঢাকা টাইমস/০৯ফেব্রুয়ারি/প্রতিনিধি/পিএস)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
বগুড়ায় আ.লীগ, জাতীয় পার্টি ও জাসদ অফিস গুঁড়িয়ে দিয়েছে জনতা
রাজশাহীর সাবেক মেয়র লিটনের বাড়ি গুঁড়িয়ে দিল জনতা
হরিণাকুণ্ডুতে গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো মুজিবের ভাস্কর্য
টেকনাফে অপহৃত ৫ কাঠুরিয়া মুক্তিপণে ফেরত
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা