দৃষ্টিজয়ীরাও পড়ছেন কাগুজে বই

শেখ শাকিল হোসেন, ঢাবি প্রতিনিধি
  প্রকাশিত : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২০:৩৫
অ- অ+

অমর একুশে বইমেলায় দৃষ্টিজয়ীরাও কাগুজে বই পড়ার সুযোগ পাচ্ছেন। বইয়ের পাতা উল্টেপাল্টে পড়ছেন কবিতা কিংবা গল্পের বই। মেলার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণের স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনার স্টলে দেখা যাচ্ছে এমন চিত্র।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ‘ব্রেইল’ পদ্ধতিতে লেখা এসব বই আঙ্গুলের স্পর্শে পড়া যায়। অন্ধ কিংবা ক্ষীণ দৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য এ লিখন বা মুদ্রণ পদ্ধতিতে অক্ষরের পরিবর্তে ডট বা বিন্দু থাকে, এবং বিন্দুগুলো কাগজের পৃষ্ঠ থেকে কিছুটা উচুঁ করা থাকে। এই বিন্দুগুলো দিয়েই অক্ষর তৈরি হয়। কাগজের ওপর উচুঁ হয়ে থাকা বিন্দুর উপর হাতের আঙ্গুল দিয়ে বুঝতে হয় বর্ণমালার কোন অক্ষরটি লেখা হয়েছে।

স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনার স্টলে দেখা যায়, দৃষ্টিজয়ী দুই শিক্ষার্থী ব্রেইল বই পড়ছেন। এদেরই একজন বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী মোহিনী আক্তার। তিনি বলেন, ‘আমি বইমেলায় প্রতি বছরই আসি। আমার ভালো লাগে। স্পর্শ আমাদের জন্য এই সুযোগটা করে দিয়েছে, তাদেরকে ধন্যবাদ। স্পর্শ যদি আমাদের জন্য ব্রেইল বই প্রকাশ না করতো তাহলে আমরা সাহিত্যের স্বাদ গ্রহণ করতে পারতাম না। শুধুমাত্র পাঠ্যবইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে হতো। সে জন্য স্পর্শের কাছে অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা।

মিরপুর আইডিয়াল গার্লস স্কুলের দৃষ্টিজয়ী শিক্ষার্থী সাদিয়া ইসলাম বিথী এসেছেন মায়ের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আগে আমি শুধু পাঠ্যবই পড়তাম। গল্প, কবিতা, উপন্যাস পড়তে পারতাম না। স্পর্শ বইমেলায় আমাদের জন্য বই পড়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। না হয় আমরা বইমেলার আনন্দটা থেকে বঞ্চিত হতাম। আমি প্রতিদিন মেলায় আসি, নতুন নতুন বই পড়ি। আমার কাছে খুবই ভালো লাগে। বইমেলায় অংশ নেয়া প্রতিটি প্রকাশনায় যেন আমাদের জন্য প্রতিবছর একটি করে হলেও ব্রেইল বই রাখে সে প্রত্যাশা করছি।’

সাদিয়ার মা তাসলিমা আক্তার লিপি বলেন, ‘আমার দুইটা মেয়েই দৃষ্টিজয়ী। সবাই বইমেলায় এসে বই পড়তে পারলেও তারা পড়তে পারতো না। পরে জানলাম যে স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনা এই সুযোগটা রেখেছে। এখন মেয়েদের আমি মেলায় নিয়ে আসি, তারা বই পড়ে। এটি দেখতেও আমার ভালো লাগে। স্পর্শকে অনেক ধন্যবাদ।

এ বিষয়ে স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনার প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি নাজিয়া জাবীন বলেন, ‘শিশুদের নিয়ে লেখা আমার একটি বই প্রকাশিত হয়েছিল বইমেলায়। তখন বইটি দৃষ্টিজয়ী শিশুরা হাতে নিয়ে পড়তে পারেনি। এ ব্যাপারটি আমার কাছে অনেক খারাপ লেগেছিল। অন্যান্য বাচ্চারা পড়তে পারবে কিন্তু এই বাচ্চারা পড়তে পারবে না, বইয়ের মধ্যে এরকম পার্থক্য কেন থাকবে? এজন্য ২০০৯ সালে আমার লেখা একটি ব্রেইল বই প্রকাশ করি। ২০১০ সালে আবার আরেকটি ব্রেইল বই প্রকাশ করা হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘২০১১ সালে এসে আমার মনে হল যে, ওরা শুধু আমার বই কেন পড়বে? ওরা সারা পৃথিবীর বই পড়বে। ওদের জন্য সারা পৃথিবীর বইয়ের দুয়ার খুলে দিতে হবে। ওরা পড়তে চায়। ওদের জানার আগ্রহ আছে। ওরা আপনার আমার মতো করে গরগর করে বই পড়তে পারে। বই পড়া ও জ্ঞান অর্জনের অধিকার তো সকলেরই সমান। সেই হিসেবে তাহলে ওদের কেন অধিকার আমরা দিব না? এ চিন্তাকে মাথায় রেখেই আমরা বাংলা একাডেমিতে যুক্ত হলাম। যাতে মানুষ এ ব্যাপারে জানে। ২০১১ সাল থেকে শুরু করে আমরা প্রতি বছরই মেলায় অংশগ্রহণ করি।

এ বছর বইমেলায় স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনীর ১৯টি নতুন বই এসেছে। এ দিয়ে তাদের সর্বমোট ব্রেইল বইয়ের সংখ্যা ১৩১টি।

রবিবার মেলার ১১তম দিনে নতুন বই এসেছে ৯২টি। বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় জন্মশতবার্ষিক শ্রদ্ধাঞ্জলি কলিম শরাফী শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সরওয়ার মুর্শেদ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন মাহমুদ সেলিম এবং গোলাম কুদ্দুছ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রূপা চক্রবর্তী।

(ঢাকাটাইমস/১১ফেব্রুয়ারি/কেএ/এসআইএস)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
মুন্সীগঞ্জে গভীর রাতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড: দলিল লেখকপট্টিতে পুড়ে ছাই ২০ দোকান
আজ রাত আড়াইটায় নারী ফুটবল দলকে সংবর্ধনা দেবে বাফুফে
ঢাকা বিভাগের ৫৬টি আসনে খেলাফত মজলিসের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা
ইলন মাস্ক 'আমেরিকা পার্টি' গঠনের ঘোষণা দিলেন, ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্কের ভাঙন
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা