হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় রসালো ঔষধি ফল স্ট্রবেরি

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৯:১২ | প্রকাশিত : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৯:০৮

ফলের নাম স্ট্রবেরি। বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে মূল্যবান ও পুষ্টিকর ফলগুলোর মধ্যে স্ট্রবেরি একটি। কেননা এর মধ্যে আছে নানা ঔষধি গুণও। স্ট্রবেরি সম্পর্কে কৃষিবিদ ও পুষ্টিবিদদের মন্তব্য এমনই। স্ট্রবেরি ফল বিদেশি ফল হলেও এখন আমাদের দেশে বেশ সহজলভ্য হয়ে উঠছে স্ট্রবেরি। রঙিন ও আকর্ষণীয় দেখতে এই ফল খেতেও দারুণ সুস্বাদু।

স্ট্রবেরি একটি গুল্ম জাতীয় লতানো উদ্ভিদ যার বৈজ্ঞানিক নাম ফ্রাগেরিয়া অ্যানানাসা। মৃদু শীত প্রধান দেশে এটি স্বল্প মেয়াদী ফল হিসেবে চাষ হয়। গন্ধ, বর্ণ ও স্বাদে আকর্ষণীয় এই ফল, ফলের রস, জ্যাম, আইস ক্রীম, মিল্ক শেক এবং আরও অনেক খাদ্য তৈরিতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। শিল্পায়িত খাদ্য তৈরিতে স্ট্রবেরির সুগন্ধ ব্যবহৃত হয়।

প্রাচীন রোমান সাহিত্যে স্ট্রবেরি ঔষধি ব্যবহারের প্রসঙ্গে উল্লেখ রয়েছে। আঠারো শতকের শেষের দিকে ফ্রান্সের ব্রিটানি অঞ্চলে সর্বপ্রথম স্ট্রবেরির চাষ করা হয়। এটি পরবর্তীতে চিলি, আর্জেন্টিনা এবং কালক্রমে অন্যান্য স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। স্ট্রবেরি রঙ ও স্বাদের তারতম্যের কারণে বিভিন্ন জাতের মধ্যে ভার্জিনিয়া, স্ট্যাসবেরি, ডাল্টনিয়ান, কস্তুরী, পাইনবেরি, স্ট্রবেরি নামে পাওয়া যায়। বর্তমানে বাংলাদেশের যেসব এলাকায় শীত বেশি পড়ে ও বেশি দিন থাকে সেসব এলাকায় বারি স্ট্রবেরি-১ নামে একটি উচ্চফলনশীল জাতের স্ট্রবেরি চাষ করা হচ্ছে।

স্ট্রবেরির পাকা ফল টকটকে লাল রঙের হয়। এ ফলটি সুগন্ধীযুক্ত, টক মিষ্টি স্বাদের। জমির পাশাপাশি টব, বাড়ির ছাদ বা বারান্দায় এ ফল চাষ করা সম্ভব। বর্তমানে আমাদের দেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, যশোর, শ্রীমঙ্গল, ময়মনসিংহ, সিরাজগঞ্জ প্রভৃতি জায়গায় ব্যবসায়িক ভিত্তিতে স্ট্রবেরি চাষ ও বাজারজাত করা হচ্ছে। একজন বেকার নারী বা পুরুষ নিজের কর্মসংস্থান ব্যবস্থার জন্য নিজের জমিতে অথবা বর্গা নেওয়া জমিতে স্ট্রবেরি চাষ করে ব্যবসা শুরু করতে পারেন।

স্ট্রবেরি অত্যন্ত পুষ্টিসমৃদ্ধ একটি ফল। আছে ভিটামিন এ, সি, ই, ফলিক এসিড, সেলেনিয়াম, ক্যালসিয়াম, পলিফেনল, এলাজিক এসিড, ফেরালিক এসিড, কুমারিক এসিড, কুয়েরসিটিন, জ্যান্থোমাইসিন ও ফাইটোস্টেরল। স্টবেরী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় , হার্টের অসুখের ঝুঁকি কমায় , ডায়াবেটিস ও কোস্টকাঠিন্য দূর করে , ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়, ওজন কমাতে সহায়ক, দেহের হাড় ও ত্বক সুরক্ষা করে, চুল পড়া রোধ করে, স্মৃতিশক্তি এবং রূপচর্চায় উপযোগী।

তবে এখানেই শেষ নয়, স্ট্রবেরি খাওয়ার রয়েছে অসংখ্য উপকারিতাও। টক-মিষ্টি স্বাদের এই ফল খেলে একসঙ্গে অনেকগুলো উপকার পাবেন। তাই স্ট্রবেরির মৌসুমে এটি পাতে রাখতে ভুলবেন না। আপনার প্রতিদিনের সালাদে যোগ করতে পারেন এই ফল। এছাড়া এর জুস, জ্যাম, জেলিও বেশ সুস্বাদু।

চলুন, জেনে নেওয়া যাক স্ট্রবেরি খেলে শরীরে কী ঘটে-

হার্ট ভালো রাখে

হার্ট ভালো রাখার জন্য বেছে নিতে হবে সহায়ক খাবার। তেমনই একটি ফল হলো স্ট্রবেরি। এটি আপনাকে হার্ট সুস্থ রাখার ক্ষেত্রে সাহায্য করবে। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকায় স্ট্রবেরি কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। ফলে নিয়মিত স্ট্রবেরি খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কার্ডিওভ্যাসকুলার ডিজিজ দূরে রাখতে স্ট্রবেরির গুরুত্ব অপরিসীম। খাবারের তালিকায় স্ট্রবেরি রাখলে তা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। যে কারণে হার্ট ভালো রাখা সহজ হয়।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর বিকল্প নেই। কারণ এতে সব ধরনের ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়ার সঙ্গে লড়াই করাটা সহজ হয়। আপনি যদি নিয়মিত স্ট্রবেরি খান তাহলে তা আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে দারুণভাবে কাজ করবে। এই ফলে ভিটামিন এবং পানি দুটিই বেশি থাকে। যে কারণে গরমের সময়ে এটি বেশ উপকারী।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে

অনেক কম বয়সীর মধ্যেও উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এর পেছনে কারণ হিসেবে থাকতে পারে খাদ্যাভ্যাসও। তাই সঠিক খাদ্যাভ্যাস বেছে নিতে হবে। সেই তালিকায় রাখতে পারনে স্ট্রবেরির নাম। কারণ উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে স্ট্রবেরির ভূমিকা রয়েছে। এই ফল নিয়মিত খেলে তা শরীরে পটাশিয়াম পৌঁছে দেয়। যে কারণে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আসে।

মস্তিষ্কের জন্য উপকারী

গবেষণায় দেখা গেছে, স্ট্রবেরি মস্তিষ্কের কার্যকারিতার জন্য উপকারী। বেশ কয়েক বছর ধরে স্ট্রবেরি ও ব্লুবেরি খাওয়া বেশ কয়েকজনের উপর সমীক্ষা করে দেখা গেছে, তাদের বয়সের তুলনায় মস্তিষ্ক বেশি ভালো কাজ করে। স্ট্রবেরিতে থাকে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, যা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়াতে কাজ করে।

পেট ভালো রাখে

পেটের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য হলেও আপনার পাতে রাখুন স্ট্রবেরি নামক ফলটি। কারণ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি পেট ভালো রাখতে এবং ক্যান্সার থেকে বাঁচতে আপনাকে সাহায্য করবে। প্রিবায়োটিক হিসাবে স্ট্রবেরির গুরুত্ব রয়েছে। এটি যে কারও কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করতে কাজ করে। সেইসঙ্গে কমায় ক্যান্সারের ঝুঁকিও।

ডায়াবেটিসে উপকারী

স্ট্রবেরিতে পলিফেলন রয়েছে যার ইনসুলিন সেনসেটিভিটি রয়েছে। স্ট্রবেরিতে শর্করার মাত্রা কম রয়েছে। অন্য ধরনের শর্করা মেটাবলাইজ করতেও সাহায্য করে।

ত্বকের বন্ধু

স্ট্রবেরিতে প্রদাহরোধী একাধিক উপাদান রয়েছে। সাধারণত ত্বকের উপর ব্যবহার করলে ত্বকের ক্ষতি এড়ানো যায়। অতিবেগুনি রশ্মি থেকে বাঁচানোর জন্য কাজ করে স্ট্রবেরি।

ব্যথাতেও উপকারী

গাঁটের ব্যথা উপশমেও কাজে দেয় স্ট্রবেরি। ফোলাভাব ও ব্যথা কমাতে স্ট্রবেরির পোষকগুণ কাজে লাগে। শুধু স্ট্রবেরি নয়, বাকি বেরিজাতীয় ফল থেকেও মেলে এমন সুরাহা।

(ঢাকাটাইমস/২৭ ফেব্রুয়ারি/আরজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :