সাংবাদিক বোনের প্রশ্নে যা বললেন জাকের আলী অনিক

ক্রীড়া ডেস্ক, ঢাকা টাইমস
 | প্রকাশিত : ০৫ মার্চ ২০২৪, ১২:০১

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে তখন একের পর এক ছক্কা মারছেন জাকের আলী। পুরো স্টেডিয়াম মাতোয়ারা ঘরের ছেলের আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে। স্টেডিয়ামের প্রেস বক্সে বসা সংবাদকর্মীরাও মুগ্ধ নয়নে উপভোগ করছেন জাকেরের খেলা। তবে এদের মধ্যেই খেলা কাভার করতে আসা এক নারী সাংবাদিকের উদযাপনটা বাকিদের চেয়ে একটু বেশিই। জাকেরের প্রতিটি চার-ছয়ে তার চেহারায় আনন্দের সঙ্গে গর্বও ঠিকরে বের হচ্ছিল।

মাত্র ৩ রানের হার কী আর ম্লান করে দিতে পারে জাকেরের বীরত্ব। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ অল্পের জন্য হেরে গেলেও দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের জন্য ঠিকই প্রশংসিত হচ্ছেন এই ২৬ বছর বয়সী। তার ৩৪ বলে ৪ চার ও ৬ ছক্কায় খেলা ৬৮ রানের ইনিংসকে অনেকেই টি-টোয়েন্টিতে কোনো বাংলাদেশির খেলা অন্যতম সেরা ইনিংসের তকমা দিচ্ছেন।

ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে জাকের আলীর দিকে প্রশ্ন ছুটে গেল, ''আপনি তো এই সিলেটের ছেলে। ঘরের মাঠে পারফর্ম করলেন, মানুষ আপনার পক্ষে ছিল। কতটা উপভোগ করেছেন?' - প্রশ্নটা প্রেস বক্সে উচ্ছ্বাসে ভেসে যাওয়া সেই নারী সাংবাদিকের। সেই প্রশ্ন শুনে হাসির রেখা জাকেরের মুখেও।

‘আপু…।’ - মুখ ফুটে এই কথাই প্রথমে বের হলো জাকেরের মুখ থেকে। এতক্ষণে পরিষ্কার হলো সবকিছু। প্রশ্ন করা মানুষটি হচ্ছেন জাকের আলীর আপন বোন শাকিলা ববি। তিনি একটি জাতীয় দৈনিকে সিলেট জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করে থাকেন। ম্যাচ কাভার করতে এসে পেশাদারিত্ব বজায় রেখেই প্রশ্নটি করেন জাতীয় দলের তরুণ তুর্কিকে।

জাকেরও বজায় রাখলেন পেশাদারীত্ব। সেই প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘আমি সব সময় সিলেটের মাঠে খেলতে পছন্দ করি। আমার প্রথম শ্রেণির অভিষেকও এখানে। উইকেট খুব ভালো ছিল। সবকিছুই ঠিক ছিল, যদি ম্যাচটা জিততে পারতাম আরও ভালো লাগত।’

বোনের প্রশ্নে উত্তর দিলেন ভাই। এই ঘটনায় কতটুকু গর্বিত জাকের? -আরেক সাংবাদিকের কাছ থেকে এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হলেন জাকের। এবার তার চটপটে জবাব, ‘এটা গর্বের বিষয়। সবই আল্লাহর মেহেরবানি।’

বিপিএলে দারুণ পারফরম্যান্স দেখিয়েই জাতীয় দলে ডাক পেয়েছেন জাকের। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এমন দুর্দান্ত ইনিংসের পর বিপিএলের প্রসঙ্গও সামনে এলো। নিজের ইনিংস প্রসঙ্গে জাকের বলেন, ‘বিপিএলের আত্মবিশ্বাসটা কাজে দিয়েছে। বিপিএল দুই দিন আগেই শেষ হয়েছে। আর যেহেতু আমার ঘরের মাঠ, আমি মাঠ সম্পর্কে জানি, ভালো ধারণা রাখি, সেটা কাজে দিয়েছে।’ আর নিজের আউট নিয়ে তিনি বলেন, ‘বিশ্বাস ছিল পারব। কিন্তু কানেক্ট (ব্যাটে ঠিকমতো বল লাগেনি) হয়নি।’

তবে বিপিএলের পর যে সুযোগ সহজেই এসেছে তাও নয়। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ঘোষিত স্কোয়াডে প্রথমে ডাক পাননি জাকের, যা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন তার দল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিনও। অবশেষে আলিস আল ইসলামের ইনজুরি জাতীয় দলের দুয়ার খুলে দেয় তার সামনে। তবে জাকেরের বিশ্বাস ছিল জাতীয় দলে ঠিকই ডাক পাবেন তিনি।

জাকের বলেন, ‘আসলে দেখুন…আমি এই জিনিসটা সবাইকে বলি, আমার যখন সময় আসবে, তখনই আমি সুযোগটা পাব। মানসিকভাবে আমি সেভাবেই নিজেকে প্রস্তুত রেখেছি। আলিস যখন চোটে পড়ে, তখন শান্ত আমাকে বলেছিল, “তোর কিন্তু যাওয়ার সুযোগ আছে।” তখন থেকেই আমি মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলাম।’

উল্লেখ্য, ২০৭ রানের পাহাড় তাড়ায় শুরুতেই চিরচেনা সেই দৃশ্য। টপঅর্ডারের ব্যর্থতার পর আবারও জয়ের আশা জাগাতে পারে বাংলাদেশ, এমন বাজি ধরার লোক খুঁজে পাওয়াটা কঠিন। তবে আশা দেখালেন অভিজ্ঞ সেনানী মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ আর তরুণ তুর্কি জাকের আলি। তরুণ এই উইকেটরক্ষক ব্যাটার স্কোয়াডেই ছিলেন না শুরুতে। নানা বিতর্ক আর আরেকজন দল থেকে ছিটকে যাওয়ায় শেষ পর্যন্ত সুযোগ পেয়েই ৩৪ বলে রেকর্ড ছয় ছক্কার মারে করলেন ৬৮ রান।

অবশ্য এমন ইনিংসের পরও সফরকারী শ্রীলঙ্কার কাছে সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ৩ রানে হেরে গেছে বাংলাদেশ। হারের ম্যাচেও বড় প্রাপ্তি জাকের আলির পাওয়ার হিটিং। বীরোচিত ব্যাটিংয়ে প্রতিপক্ষের রানের পাহাড় টপকে স্মরণীয় এক জয়ের সম্ভাবনা দেখিয়েছেন। গেল বছর আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন যদিও, তবে সেগুলো ছিল এশিয়ান গেমসে। এবারই প্রথম মূল দলের একাদশে ডাক পেয়েছিলেন। সে অর্থে বলতে গেলে অভিষেক। নিজের প্রথম ম্যাচেই সামর্থ্যের জানান দিলেন সিলেটের এই ঘরের ছেলে।

(ঢাকাটাইমস/০৫মার্চ/এনবিডব্লিউ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

খেলাধুলা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :