রমজানে অস্থির ফলের বাজার, সুযোগ বুঝে দাম বাড়ানো হয়েছে দেশি ফলেরও

আহম্মেদ মুন্নী, ঢাকা টাইমস
| আপডেট : ১৯ মার্চ ২০২৪, ১১:৫৫ | প্রকাশিত : ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৮:৫৬

ইফতারিতে রোজাদারদের অন্যতম পছন্দের খাদ্য ফল। ডলার সংকট ও আমদানি শুল্কের পরিমাণ বাড়তি হওয়ায় তার চাপ পড়েছে ফলের বাজারে। এর ওপর রোজার বাড়তি চাহিদা তো আছেই। সব মিলিয়ে ফল এখন সাধারণ জনগণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। এমনটাই বলছেন ফলের আড়তদার ও আমদানিকারকরা।

তবে এবার রোজার আগে থেকেই ঊর্ধ্বমুখী হয়ে ওঠে দেশের ফলের বাজার। ডলার সংকটের কারনে বিপাকে আমদানিকারকরা। আর দেশীয় ফলের বাজারে সুযোগ বুঝে কারসাজিতে লিপ্ত আড়ৎদার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা। এতে অস্বস্তিতে পড়েছেন রোজাদার ও সাধারণ মানুষ।

দেশি-বিদেশি ফলের বাজার দর ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার কারণ জানতে সরেজমিনে মাঠে নামে ঢাকা টাইমস প্রতিবেদক।

রাজধানীর প্রধান ফলের আড়ত বাদামতলী ও ওয়াইজঘাট ঘুরে দেখা যায়, আমদানি করা আঙ্গুর, আপেল, কমলা (চায়না, তিউনিশিয়া, ভারত, ভুটানসহ কয়েকটি দেশের) ম্যানডারলিন, পেয়ারস বা বাবুগোশা, আনার, নাশপাতি, রম্বুটান, রকমেলন, অ্যাবোকাডোসহ নানারকম ফলের নাম লেখা সাইনবোর্ড থাকলেও সরবরাহ তেমন নেই। আর দেশি ফলের মধ্যে রয়েছে কলা (সবরী, করবী, চম্পা, সাগর কলা, গেরা সুন্দরী, আনাচ), পেঁপে, পেয়ারা (কাজিগোল্ডেন, থাই, বারি পেয়ারা-১, ও হাইব্রিড পেয়ারা), মাল্টা, ডালিম, আমলকী, আনারস (কুইন, জায়েন্ট কিউ, জলঢুপি) ইত্যাদি রয়েছে।

তবে বাজারে চাহিদা থাকা সত্ত্বেও সরবরাহ বা আমদানি না থাকার কারণ জানতে চাইলে আমদানিকারক মদিনা ফ্রুটস লিমিটেডের ডিজিএম সেলিম রেজা জানান, খাদ্যপণ্য হওয়া সত্ত্বেও বিদেশি ফলকে ২০১২ সালে বিলাসী-পণ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। ট্যারিফ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী আপেল, কমলা ও নাশপাতিকে বিলাসী-পণ্যের তালিকায় রাখা হয়। এর প্রভাবে আগে যেখানে বিদেশি ফলের ওপর নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্কহার ছিল ৩ শতাংশ, সেটি গত ৯ মাস ধরে বেড়ে দাঁড়ায় ২৩ শতাংশে। তার সঙ্গে আমদানিতে ২৫ শতাংশ কাস্টমস ডিউটি, ১৫ শতাংশ ভ্যাট, ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর এবং ৪ শতাংশ অ্যাডভান্স ট্রেড ভ্যাট তো আছেই।

আবার ফল আমদানির জন্য এলসি খোলা যাচ্ছে না, তাতে ফলের দাম দিনদিন বেড়ে যাচ্ছে। এ নিয়ে আমরা আছি বিপাকে। এমন অবস্থায় ভোক্তাদের ফলের চাহিদা পূরণে আপাতত দেশীয় ফলমূলের দিকেই নজর দেওয়া উচিত।

ফ্রেশ ফ্রুটস ইমপোর্টার এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নুরুদ্দিন ঢাকা টাইমসকে বলেন, টোটাল দাম বেড়ে যাওয়ার মূলে ভ্যাট এবং ট্যাক্স। গত বছর যে ট্যাক্স ফি দিয়েছি ১০০০ টাকা এখন তা দিতে হয় ১৮০০ টাকা। কারণ আগে ডলার রেট ছিল ৮৭ টাকা এখন আবডাউনে ১২৪ টাকা পর্যন্ত। ফলে আমরা মার্কেট কন্ট্রোল করতে পারি না। এখন মার্কেটে যে প্রাইজ চলছে এতেও আমাদের লস যাচ্ছে। রোজা উপলক্ষে আমাদের এখন আপেলের আমদানি রয়েছে। এছাড়া মাল্টা বা অরেঞ্জ, নাশপাতি আর মার্কেটে চায়না তরমুজ বা থাই তরমুজ বলে যা বিক্রি হয় সেটা আসলে এ দেশেই চাষ হয়। বেশি মুনাফা লাভের আশায় মিথ্যাটা বলে। এদিকে আমরা চায়না থেকে আপেল ইমপোর্ট করে এনে বিক্রি করি ১২০ থেকে ১৮০ টাকা। অথচ দেশে পাওয়া যায় এমন সিজনাল যেসব ফল রয়েছে তার দাম কেন বেশি সেটা বুঝে উঠতে পারছি না। পেয়ারার দাম কেন ১২০-১৫০ টাকা হবে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এই আমদানিকারক। দেশি ফলের বর্ধিত দাম নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি।

বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুট ইমপোর্টার এসোসিয়েশনের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘সরকার আমদানিকৃত ফলে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপ করেছে বিলাসী-পণ্য হিসেবে। কিন্তু ফল তো বিলাসী-পণ্য নয়। এটা মোটেও যৌক্তিক না। ধরেন, আপনি হাসপাতালে রোগী দেখতে যাবেন; আপনাকে রোগীর জন্য ফল নিয়ে যেতে হবে। কারণ রোগীর পথ্য হলো ফল। আমাদের দেশে চাহিদা অনুপাতে যে ফল উৎপাদন হয় তা গড়ে ৩৫ শতাংশ আর বাকি ৬৫ শতাংশ আমদানি করতে হয়। ফলকে বিলাসী-পণ্য হিসেবে বাজেট করা যুক্তিসংগত নয়।’

তবে বিদেশি ফলের দাম যাই হোক না কেন, ফলের দাম কেন বেশি সেটি নিয়ে আমদানিকারকদের শীর্ষ সংগঠনের এই নেতাও প্রশ্ন তোলেন। দেশে উৎপাদিত ফলের মূল্য কেন এত বেশি সে বিষয়ে কোনো বাজার তদারকি নেই।

এ বিষয়ে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান বলেন, বিদেশি ফল আমদানি করা হয়। ভ্যাট-ট্যাক্স দিতে হয়। অতিরিক্ত শুল্ক ও ডলারের দামের কারণে বিদেশি ফলের দাম বাড়লেও দেশি ফলের দামটা বেশি কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সবকিছু তো ভোক্তা অধিকার দেখতে পারবে না। এসব বিষয় দেখতে সিটি করপোরেশন ছাড়াও অন্যান্য সংস্থা আছে, তাদেরও দেখতে হবে।

তিনি বলেন, অলরেডি ভোক্তা অধিকার থেকে মাঠ পর্যায়ে ভ্রাম্যমাণ অভিযান চালাচ্ছেন তারা। ঢাকাসহ সারা দেশে শুক্রবারেও ৫০টি টিম কাজ করছে বলে জানান ভোক্তার ডিজি।

সফিকুজ্জামান জানান, ‘গরুর মাংস, ডিম, বেগুন, শসাসহ রমজানের অন্যান্য পণ্যের দাম নিয়ে কাজ করছেন তারা। তবে ফলের দাম বেঁধে দেওয়া হয়নি। তবুও যৌক্তিক মূল্য নির্ণয় করে এ বিষয়েও মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করা হবে।’

(ঢাকাটাইমস/১৯মার্চ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :