ভুয়া নিয়োগপত্রে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা টাইমস
 | প্রকাশিত : ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৫:৩৭

একাধিক মন্ত্রণালয়, কারা অধিদপ্তর, বিআরটিসি, বিএডিসি, সচিবালয়, ব্যাংক, মেট্রোরেল, বিমানবন্দরসহ সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চাকরির বিজ্ঞাপন দিচ্ছিল একটি সিন্ডিকেট। একপর্যায়ে ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে তারা। জনপ্রতি ১০ থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত নিলেও এখন পর্যন্ত কাউকে চাকরি দিতে পারেনি। গত কয়েক বছর ধরে চলছিল তাদের এই প্রতারণা।

সংঘবদ্ধ এই প্রতারক চক্রের মূলহোতাসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগ। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন- ফরিদুল ইসলাম, নাসির চৌধুরী, নাসিম মাহমুদ জুয়েল রানা। তাদের কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত চারটি মোবাইল ফোন বেশকিছু ভুয়া নিয়োগপত্র, চেক স্ট্যাম্প জব্দ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। তিনি বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে ভুয়া নিয়োগপত্র প্রদানের মাধ্যমে সাধারণ চাকরি প্রত্যাশীদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় অভিযুক্তরা। অনুসন্ধানে এই চক্রের বিভিন্ন ধাপে প্রতারণা সম্পন্ন করার প্রমাণ পাওয়া গেছে।

যেভাবে চাকরিপ্রত্যাশীদের সঙ্গে প্রতারণা:

কোনো চাকরির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হলেই এই চক্রের মাঠকর্মী হিসেবে চাকরি প্রত্যাশীদের কাছে গিয়ে বিভিন্ন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখিয়ে যেকোনো চাকরি পাইয়ে দেওয়ার মতো তাদের হাতে লোক রয়েছে বলে আশ্বস্ত করত। চাকরিপ্রার্থী তাদের প্রস্তাবে রাজি হলে তাদের কাছ থেকে ব্ল্যাংক ব্যাংক চেক, ব্ল্যাংক স্ট্যাম্প সিভি সংগ্রহ করার পাশাপাশি মাঠকর্মী তাদের কাছ থেকে চুক্তির অগ্রিম টাকা হিসেবে ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা গ্রহণ করে।

ডিবি প্রধান বলেন, মাঠকর্মী তার কমিশনের নির্দিষ্ট টাকা রেখে বাকি টাকা সিভি ফিল্ড পর্যায়ের সাব এজেন্টের কাছে পাঠায়। এরপর সাব এজেন্ট এই টাকা সিভি গ্রহণ করে সব চাকরি প্রার্থীকে নির্দিষ্ট একটা দিনে মৌখিক পরীক্ষার (ভাইবা) কথা বলে ঢাকার এজেন্টের কাছে পাঠায়।

পরবর্তীতে ঢাকার এজেন্ট আবাসিক হোটেলের রুমে বা সংশ্লিষ্ট দপ্তরের আশপাশের কোনো একটি চায়ের দোকানে চাকরি প্রার্থীদের ভাইভা পরীক্ষা গ্রহণ করে। ভাইভাতে উত্তীর্ণ হয়েছে বলে প্রার্থীর কাছ থেকে এইদিন চুক্তির ৫০ শতাংশ টাকা গ্রহণ করে।

এরপর চক্রের আরেক সদস্য চুক্তির বাকি টাকা গ্রহণ করে প্রার্থীকে নির্দিষ্ট একটা দিনে যোগদানের কথা উল্লেখ করে একটি ভুয়া নিয়োগপত্র এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরের একটি ভুয়া আইডি কার্ড প্রদান করে পুরো টাকা আত্মসাৎ করে লাপাত্তা হয়ে যায়।

চাকরিতে যোগদান করতে গেলে জানতে পারে নিয়োগপত্র ভুয়া:

চাকরি প্রার্থীরা পরবর্তী সময়ে নিয়োগপত্রে উল্লেখিত তারিখে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগদান করতে গেলে প্রার্থীরা জানতে পারে, প্রতারক চক্রের দেওয়া নিয়োগপত্র আর আইডি কার্ডটি ভুয়া। ততদিনে প্রত্যেক চাকরি প্রত্যাশীর কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হয় ১০ থেকে ২০ লাখ টাকা। পরে চক্রটি নিজেদের মধ্যে চুক্তির টাকা ভাগাভাগি করে নেয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্তরা জানায়, চক্রটি দুই/তিন বছর ধরে এভাবে চাকরি প্রত্যাশীদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিল। তাদের ব্যবহৃত হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জারে পর্যালোচনা করে দেখা যায়, তারা বিভিন্ন চাকরি প্রত্যাশীকে রেলপথ মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়, কারা অধিদপ্তর, পররাষ্ট্র অধিদপ্তর, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, বিআরটিসি, বিএডিসি, এলজিইডি, সচিবালয়, বিভিন্ন ব্যাংক, প্রাথমিকের পিয়ন, মেট্রোরেল, এয়ারপোর্ট, তিতাস গ্যাস ওয়াসার আউটসোর্সিং এবং সেনাবাহিনীর সিভিল পদে নিয়োগ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে টাকা হাতিয়ে নিতেন।

কার কী দায়িত্ব ছিল:

গ্রেপ্তার এই চক্রে জুয়েল রানা মাঠকর্মী হিসেবে, নাসিম মাহমুদ মাঠ পর্যায়ের সাব এজেন্ট হিসেবে নাসির চৌধুরী ঢাকার সাব এজেন্ট হিসেবে এবং চক্রের মাস্টারমাইন্ড হিসেবে ফরিদুল ইসলামের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়।

তদন্তের শুরু যেভাবে

একজন ভুক্তভোগীর কাছে ১২ লাখ টাকা হাতিয়েছে চক্রটি। এরপর মামলা করেন তিনি। মামলার বাদীকে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের এমএলএসএস পদের চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নাম করে ১২ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে একটি নিয়োগপত্র দেয়। এ নিয়োগপত্র নিয়ে তিন মাস পরে রেলপথ মন্ত্রণালয়ে যোগদানের জন্য গেলে জানতে পারেন যে নিয়োগপত্রটি ভুয়া। পরে আসামিদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তাদের ব্যবহৃত সব যোগাযোগ নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। মামলার বাদী প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে চকবাজার থানায় মামলা করেন।

ডিবি-সাইবারের অর্গানাইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের টিম লিডার অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. নাজমুল হক জানান, চক্রটি গত কয়েক বছরে চাকরিপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে ১০ থেকে ২০ লাখ টাকা করে নিলেও কারো চাকরি দিতে পারেনি। পত্রিকায় চাকরির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হলে শুধু সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগাযোগ করতে হবে। চাকরির ক্ষেত্রে কারো সঙ্গে কোনো লেনদেন করা যাবে না।

নাজমুল হক বলেন, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। চক্রের অন্য সদস্যদের ধরতে আমরা কাজ করছি। আসামিদের ১০ দিনের পুলিশ রিমান্ডের আবেদনসহ আদালতে পাঠানো হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/২৮মার্চ/এসএস/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

অপরাধ ও দুর্নীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

অপরাধ ও দুর্নীতি এর সর্বশেষ

সোনালী লাইফের বহিষ্কৃত সিইও মীর রাশেদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

কোস্ট গার্ডের অভিযানে ৪৫ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার

চাকরির পরীক্ষার আগেই মিলত উত্তর, চুক্তি ১২-১৪ লাখ টাকায়: ডিবি

আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সক্রিয় সদস্য গ্রেপ্তার

আন্তর্জাতিক শিশু পর্নোগ্রাফি চক্রের মূলহোতা গ্রেপ্তার, বিপুল কনটেন্ট জব্দ

এফডিসিতে সাংবাদিকদের উপর হামলা: ১১ সদস্যের তদন্ত কমিটি

স্ত্রীসহ নিজেকে নির্দোষ দাবি করে ডিবিতে যা বলেছেন কারিগরি বোর্ডের চেয়ারম্যান

শেরপুরের ধর্ষণ ও পর্নোগ্রাফি মামলার আসামি ঢাকায় গ্রেপ্তার

খেলনার প্যাকেটে আমেরিকা থেকে এসেছে কোটি টাকার গাঁজার চকলেট-কেক

সাবেক আইজিপি বেনজীরের বিরুদ্ধে অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদক

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :