ধারাবাহিক তাফসির, পর্ব-৩০

আল্লাহ তায়ালার অসীম কুদরত ও কেয়ামতের বিভিন্ন অবস্থা

মুফতি আরিফ মাহমুদ হাবিবী
| আপডেট : ০৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৮:৪৮ | প্রকাশিত : ০৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৮:০৪

প্রিয় পাঠক,

রামজানের বিশেষ আয়োজনে ঢাকা টাইমসে প্রকাশিত কোরআনুল কারীমের ধারাবাহিক তাফসির আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের অশেষ রহমতে আজ আমরা শেষ করতে যাচ্ছি। এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত কঠিন ছিল। সর্বপ্রথম মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে শুকরিয়া আদায় করছি যে, মহান রাব্বুল আলামীন আমার মতো নাখান্দা গোলামকে দিয়ে এ মহান খেদমত নিয়েছেন আলহামদুলিল্লাহ। দ্বিতীয়ত, শুকরিয়া জানাচ্ছি ঢাকা টাইমসের প্রতি, কর্তৃপক্ষ আমাকে উৎসাহ দিয়ে এ মহান কাজটি করিয়েছেন। বিশেষভাবে ঢাকা টাইমস পরিবারের সদস্য, প্রিয়ভাই সাংবাদিক শাহনূর শাহীনকে অসংখ্য মোবারক বাদ। জাযাকুমুল্লাহ। প্রকাশক, সম্পাদকসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা। আল্লাহ সকলকে উত্তম বিনিময় দান করুন।

আগের পর্ব: আঙুলের ছাপ আল্লাহ তায়ালার অসীম কুদরতের সাক্ষী

আজকের তাফসিরের শুরুতেই সূরা নাবার আলোচনা।

সূরা নাবা

এটি মক্কি সূরা। আয়াতসংখ্যা: ৪০। রুকুসংখ্যা: ২

এ সূরায় পুনরুত্থান সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। মুশরিকরা অস্বীকার ও অবজ্ঞাবশত কেয়ামতের ব্যাপারে যে আপত্তি উত্থাপন করত তা উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, তারা পরস্পর কোন বিষয়ে জিজ্ঞাসা করছে? এক মহাবিষয়ে, যে বিষয়ে তারা মতানৈক্য করে থাকে। (১-৩) কেউ তা স্বীকার করে আবার কেউ অস্বীকার করে। কেউ দোদুল্যমানতার শিকার আবার কেউ তা সাব্যস্ত করে। হজরত মুজাহিদ রহ. نَبَا الْعَظِيمِ — বড় সংবাদ দ্বারা কোরআন উদ্দেশ্য নিয়েছেন। এতে সন্দেহের কী আছে যে, সবচেয়ে বড় সংবাদ এবং সবচেয়ে বড় কালাম হচ্ছে কোরআন। তবে সূরার সাধারণ বাচনভঙ্গি দেখে نَبَا الْعَظِيمِ কেয়ামত উদ্দেশ্য নেওয়াই অধিক সঠিক মনে হয়।

সামনের আয়াতে আল্লাহ তায়ালার অসীম কুদরত, কেয়ামতের বিভিন্ন অবস্থা- চিত্র এবং জান্নাত-জাহান্নামের আলোচনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘যে মহান সত্তা জমিনকে বিছিয়ে দিয়েছেন, পাহাড়কে পুঁতে দিয়েছেন, মানুষকে জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছেন, ঘুমকে প্রশান্তির মাধ্যম, রাতকে পোশাক, দিনকে জীবিকা উপার্জনের সময়, আকাশে গোটা দুনিয়া আলোকিতকারী বাতি স্থাপন করেছেন (৬-১৬) তিনি পুনরায় মানুষকে জীবন দিতে সক্ষম। তিনি এমন বিচার-ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে পারেন, যাতে পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সবাইকে একত্র করা হবে। তাদের মাঝে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করা হবে।’ (১৭)

ইনসাফপূর্ণ বিচারের পরে কারো ঠিকানা হবে জান্নাত আর কারো ঠিকানা হবে জাহান্নাম। (২১-৩৭)

সূরার শেষে বলা হয়েছে, কেয়ামতের দিন সত্য। তা সংঘটিত হওয়ার ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। আল্লাহ তায়ালা অতিশয় মেহেরবান ও দয়ালু হওয়া সত্ত্বেও কেউ আল্লাহর সামনে কথা বলতে পারবে না। সেদিন প্রত্যেকের সামনে তার আমলনামা পেশ করা হবে। সে ব্যাপারে সুনিশ্চিত সিদ্ধান্ত শুনিয়ে দেওয়া হবে। ফয়সালা শুনে কাফেররা আশা করবে- হায়! যদি আমি মাটি হয়ে যেতাম! (৩৯-৪০)

মাটি হয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে, যদি আমার সৃষ্টি না হতো। দ্বিতীয় উদ্দেশ্য হচ্ছে, যদি আমি অহংকার না করতাম। মাটির মতো মিসকিনি জীবনযাপন করতাম। যদি আমি মানুষ না হয়ে প্রাণী হতাম। যদি আমাকে প্রাণীদের মতো দ্বিতীয়বার জীবিত করার পর মাটি বানিয়ে দেওয়া হতো! তা হলে আমি জাহান্নামের আজাব থেকে বেঁচে যেতাম! তারা যখন দেখবে মানুষের মতো প্রাণীদেরও পুনরায় জীবিত করা হয়েছে; কিন্তু জীবিত করার পর তাদের পরস্পর হিসাব-নিকাশ চুকিয়ে তাদেরকে মাটি বানিয়ে দেওয়া হয়েছে তখন তারা এরূপ আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করবে।

সূরা নাযিয়াত

এটি মক্কি সূরা। আয়াত সংখ্যা: ৪৬। রুকু সংখ্যা: ২

কেয়ামতের বিভিন্ন অবস্থা উল্লেখ করা হয়েছে। শুরুতে আল্লাহ তায়ালা পাঁচটি আয়াতে বিভিন্ন দায়িত্বে নিয়োজিত পাঁচ শ্রেণির ফেরেশতার শপথ করেছেন। তবে শপথের উত্তর তিনি উল্লেখ করেননি। পরবর্তী আলোচনা দেখে উত্তরটি বুঝে আসে। তা হচ্ছে তোমাদেরকে অবশ্যই কেয়ামতের দিন পুনরায় জীবিত করা হবে।

সূরা নাযিয়াত বলছে, ‘কেয়ামতের দিন মিথ্যাপ্রতিপন্নকারীদের অন্তর ভীত- বিহ্বল হবে। লাঞ্ছনা-অপদস্থতার কারণে তাদের চেহারা অধোমুখী থাকবে। (৭-৯) কিন্তু আজ তারা দুনিয়াতে ফেরাউন বনে বসে আছে। আল্লাহর নবীর কথা তারা মানতে প্রস্তুত নয়। সম্ভবত তারা ফেরাউনের পরিণতির কথা জানে না।’ (১৫-২৬)

নির্বোধ আহাম্মকরা এটা ভাবে না যে, যে আল্লাহ মজবুত আকাশ বানাতে পারেন, দিনরাতের ব্যবস্থা করতে পারেন, জমিনকে বিছানা বানাতে পারেন, পাহাড়কে (কীলক) পেরেকস্বরূপ বানাতে পারেন তিনি কি তাদেরকে দ্বিতীয়বার জীবিত করতে পারবেন না! (২৭-৩৩)

সূরার শেষে মুশরিকদের প্রশ্ন উল্লেখ করা হয়েছে, কেয়ামতকে অসম্ভব মনে করে যে প্রশ্ন তারা করত। তারা এজন্য এ প্রশ্নটি করত যে, তারা দুনিয়ার জীবন নিয়ে ধোঁকায় পড়ে ছিল। তাদের ধারণা ছিল দুনিয়ার জীবনই একমাত্র জীবন। এটাই প্রকৃত জীবন। কিন্তু 'যেদিন তারা একে দেখবে, সেদিন মনে হবে যেন তারা দুনিয়াতে মাত্র এক সন্ধ্যা অথবা এক সকাল অবস্থান করেছে।' (৪৬)

সূরা আবাসা

এটি মক্কি সূরা। আয়াত সংখ্যা: ৪৬।

উল্লেখ্য এ সূরা থেকে নিয়ে কোরআনুল কারিমের শেষ পর্যন্ত প্রতিটি সূরা এক রুকুবিশিষ্ট। তাই প্রতি সুরাতে রুকুসংখ্যা: উল্লেখ করার প্রয়োজন হবে না।

সূরার শুরুতে অন্ধ সাহাবি হযরত আবদুল্লাহ বিন উম্মে মাকতুম রাদিয়াল্লাহু আনহুর ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে, যিনি জ্ঞান অর্জনের জন্য এমন অবস্থায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আসেন যখন নবীজি কিছু কুরাইশ সরদারকে ইসলামের দাওয়াত দিচ্ছিলেন। এমন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে আসায় বাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছুটা বিরক্ত হন। তিনি তার কথার উত্তর দেওয়া থেকে বিরত থাকেন। এই পরিপ্রেক্ষিতে সুরাটি অবতীর্ণ হয়, যাতে আল্লাহ তায়ালা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সতর্ক করেন।

এরপর যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত ইবনে উম্মে মাকতুমকে দেখতেন তখন তাকে অভিবাদন জানিয়ে বলতেন, এই সেই ব্যক্তি, যার কারণে আল্লাহ আমাকে সতর্ক করেছেন। তাকে জিজ্ঞেস করতেন, কোনো কাজ থাকলে বলো। তিনি অন্ধ হওয়া সত্ত্বেও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিভিন্ন যুদ্ধে তাকে মদিনার গভর্নর বানিয়ে যেতেন।

এই ঘটনার মতো অন্যান্য যেসব ঘটনায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সতর্ক করা হয়েছে, সেগুলো কোরআনে উল্লেখ হওয়াটা কোরআনেরই সত্যতার দলিল। নাউজুবিল্লাহ, কোরআন যদি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রচিত কিছু হতো তা হলে তিনি এ ধরনের কোনো আয়াত কখনো এতে স্থান দিতেন না, যাতে খোদ তাকেই সতর্ক করা হয়েছে। হযরত ইবনে উম্মে মাকতুম রাদিয়াল্লাহু আনহুর এই ঘটনা উল্লেখ করার পর এ সূরায় মানুষের অকৃতজ্ঞ হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে, যারা নিজেদের মূল ভুলে

গিয়ে আল্লাহর অবাধ্যতায় লিপ্ত হয়েছে। (১৭-২০) পরবর্তী আয়াতে আল্লাহ তায়ালার অসীম কুদরত এবং তার একত্বের উপর তাকবিনি দলিল দেওয়া হয়েছে। (২৪-৩২)

সূরার শেষে কেয়ামতের ভয়ংকর দৃশ্যের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যখন মানুষ ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে নিকটাত্মীয়দের কথা ভুলে যাবে। সকলেই ইয়া নফসি ইয়া নফসি করতে থাকবে। অন্য কারো কথা চিন্তা করবে না। সকলেই নিজের ব্যাপারে দুশ্চিন্তায় পড়ে যাবে। বহু চেহারা সফলতার কারণে উজ্জ্বল হবে আর অসংখ্য মানুষের চেহারা ব্যর্থতায় কালো হয়ে যাবে। (৩৩-৪২)

সূরা তাকবির

এটি মক্কি সূরা। আয়াত সংখ্যা: ২৯।

এই সূরার দুটি অংশ রয়েছে। প্রথম অংশ ১৪ আয়াতবিশিষ্ট। এতে শিঙ্গায় ফুৎকারের কারণে গোটা বিশ্বে যে পরিবর্তন সূচিত হবে, তার আলোচনা করা হয়েছে। যার ফলে বিশ্বের কোনোকিছুই নিরাপদ থাকবে না। সবকিছু পরিবর্তিত হয়ে যাবে। এই সূর্য- নক্ষত্র, পাহাড়-পর্বত সমুদ্র সব ধ্বংস হয়ে যাবে। সেদিন সকলেই বুঝতে পারবে যে, সে কী পরিমাণ পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছে। আর আঁচলে করে সে কী নিয়ে এসেছে। গুনাহ নাকি নেকি? নাকি গুনাহই গুনাহ? আল্লাহর পানাহ।

দ্বিতীয় অংশ ১৫ আয়াতবিশিষ্ট। এতে আল্লাহ তায়ালা তিনটি শপথ করে কোরআনের সত্যতা এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সত্যতার কথা আলোচনা করেছেন। সেসব পাগলকে তিনি অত্যন্ত মহব্বতের সাথে বুঝিয়েছেন, যারা আল্লাহর নবীকে পাগল বলে আখ্যা দিয়েছে। বলা হয়েছে, তোমাদের সঙ্গী পাগল নন। তিনি বান্দাদের নিকট আল্লাহর বাণী পৌঁছে দেন। তিনি সত্যনবী।

সূরা আ’রাফ, ১৮৪ ও সূরা সাবা, ৪৬নং আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তোমরা চিন্তাভাবনা করলে দেখতে পারবে যে, তোমাদের মনের সিদ্ধান্ত এটাই যে, তোমাদের সামনে দিবারাত্রি যাপনকারী এই মহান ব্যক্তি পাগল নন; বরং তিনি পাগলদের সফলতার রাস্তা দেখানোর জন্য এসেছেন। কোরআনের ব্যাপারে বলা হয়েছে, এটা তো বিতাড়িত শয়তানের কালাম নয়। এটা পৃথিবীবাসীর জন্য নসিহত; তবে তার জন্য, যে সোজা পথে চলতে চায়। বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছার বাইরে কিছু করতে পারো না।

সূরা ইনফিতার

এটি মক্কি সূরা। আয়াত সংখ্যা: ১৯।

কেয়ামত সংঘটিত হওয়ার সময় বিশ্বজগতের ব্যবস্থাপনায় যেসব পরিবর্তন সংঘটিত হবে, এ সূরায় সেই পরিবর্তন সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। (১-৫) এরপর ভালোবাসামিশ্রিত শৈলীতে মানুষের ব্যাপারে অভিযোগ করা হয়েছে, হে মানুষ, কোন জিনিস তোমাকে তোমার প্রতিপালকের ব্যাপারে ধোঁকায় ফেলে রেখেছে যে, তুমি তার অনুগ্রহ ভুলে তার অবাধ্যতায় লিপ্ত হয়েছো? প্রকৃত বিষয় হচ্ছে পরকালের ব্যাপারে তুমি কোনো বিশ্বাস রাখো না। অথচ তা তো অবশ্যই আসবে। কিরামান কাতিবিন (ফেরেশতাগণ) তোমার জীবনের খুঁটিনাটি সকল আমল তোমার সামনে পেশ করবে। এরপর তোমাদেরকে আবরার (সৎকর্মশীল) ও ফুজ্জার (দুষ্কর্মী) দুই দলে ভাগ করা হবে। আবরারগণ নেয়ামতের স্থান জান্নাতে যাবে আর ফুজ্জাররা (দুষ্কর্মীরা) জাহান্নামে যাবে। (২-২৬)

সূরা মুতাফফিফিন

এটি মক্কি সূরা। আয়াত সংখ্যা: ৩৬।

সূরায় ইসলামের মৌলিক আকিদার ব্যাপারে আলোচনা করা হয়েছে। বিশেষত কেয়ামত দিবসের ভয়ঙ্কর অবস্থা এতে আলোচনা করা হয়েছে। কিন্তু এর শুরু আয়াতে সেসব লোকের নিন্দা করা হয়েছে, যারা 'তাতফিফ'-এর মতো অনৈতিক কাজে জড়িত। (১-৬)

‘তাতফিফ’ অর্থ ওজনে কম দেওয়া। ইরশাদ হচ্ছে, যারা মাপে কম করে, তাদের জন্য দুর্ভোগ। যারা লোকের কাছ থেকে যখন মেপে নেয়, তখন পূর্ণমাত্রায় নেয়; কিন্তু যখন লোকদের মেপে দেয় কিংবা ওজন করে দেয় তখন কম করে দেয়।

কেউ কেউ তাতফিফকে ব্যাপক অর্থে নিয়েছেন। ইমাম কুশাইরি রহ. বলেন, বাটখারা এবং পাত্র উভয় ধরনের ওজনেই তাতফিফ হতে পারে। দোষত্রুটি প্রকাশ করা ও লুকানো, ইনসাফ নেওয়া এবং দেওয়া সর্বক্ষেত্রে তাতফিফ হতে পারে। অর্থাৎ নিজের বেলায় পূর্ণ ইনসাফ চাওয়া হবে। কিন্তু অন্যের বেলায় তাকে ইনসাফ প্রদান করা হবে না। সেও আল্লাহ তায়ালার দৃষ্টিতে মুতাফফিফ বলে গণ্য হবে। তেমনিভাবে যে-ব্যক্তি মুসলমান ভাইয়ের জন্য যা পছন্দ করেছে, তা নিজের জন্য পছন্দ করে না, যে-ব্যক্তি অন্যের দোষত্রুটি দেখে; কিন্তু নিজের দোষত্রুটি দেখে না, যে-ব্যক্তি নিজের অধিকার চায়; কিন্তু অন্যের অধিকার আদায় করে না, তারা সকলেই আয়াতে উল্লিখিত মুতাফফিফীন-এর কঠোর হুঁশিয়ারির মধ্যে পড়বে। মুতাফফিফদের নিন্দা করার পর সেসব পাপাচারীর পরিণাম উল্লেখ করা হয়েছে, যারা আল্লাহ তায়ালার নুরকে নিভিয়ে দেওয়ার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করে থাকে। (৭-১৭) এরপর তাদের বিপরীতে সেসব নেককার ও আবরারের আলোচনা করা হয়েছে, আখেরাতে যাদেরকে চিরস্থায়ী নেয়ামত প্রদান করা হবে। (২২-২৮) সূরার শেষে বলা হয়েছে, এই পাপাচারীরা দুনিয়াতে আল্লাহর নেককার বান্দাদের নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করত। কিন্তু কেয়ামতের দিন পরিস্থিতি উলটো হয়ে যাবে। নেককাররা তাদের নিয়ে হাসাহাসি করবে। (২৯-৩৬)

সূরা ইনশিকাক

এটি মক্কি সূরা। আয়াতসংখ্যা: ২৫।

এই সূরাগুলোতে অর্থাৎ সূরা মুতাফফিফিন, ইনফিতার, ইনশিকাক ও তাকবিরে বিভিন্নভাবে কেয়ামতের অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে।

কেয়ামতের পূর্বে বিশ্বজগতে যেসব পরিবর্তন ঘটবে, সূরা ইনশিকাকে সে পরিবর্তন সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। (১-৫)

কেয়ামত সংঘটিত হওয়ার পর হিসাব-নিকাশ হবে। কিছু মানুষ দু-দলে বিভক্ত হয়ে যাবে। কিছুলোকের ডান হাতে আমলনামা দেওয়া হবে আর কিছুলোকের আমলনামা দেওয়া হবে বাম হাতে; তবে তা দেওয়া হবে পিঠের পেছন দিক থেকে। (৬-১৫)

সামনের আয়াতে তিনবার শপথ করে বলা হয়েছে, নিশ্চয়ই তোমরা এক অবস্থা থেকে আরেক অবস্থায় উপনীত হবে। অর্থাৎ মানুষের মৃত্যু, পুনরুত্থান, অতঃপর কেয়ামত। আর কেয়ামতের দিনেও তোমাদেরকে বিভিন্ন বিপদ ও কষ্টের ধাপ অতিক্রম করতে হবে। মৃত্যু থেকে নিয়ে এ ধাপগুলো প্রত্যেকটি তার পূর্বের চেয়ে মারাত্মক হবে। (১৬-১৯)

তবে যারা ঈমান এনেছে এবং নেক কাজ করেছে, তারা এসব বিপদ-মুসিবত থেকে নিরাপদ থাকবে। (২৫)

সূরা বুরুজ

এটি মক্কি সূরা। আয়াত সংখ্যা: ২১।

সূরার শুরুতে আল্লাহ তায়ালা তিনবার শপথ করে বলেন, গর্তবাসীরা ধ্বংস হয়ে গেছে। সহিহ মুসলিমে এসেছে, হিময়ার-এর সর্বশেষ বাদশাহ জু-নাওয়াস একজন ইহুদি ছিল। নাজরানের বিশ হাজার মানুষ মূর্তিপূজা ছেড়ে খ্রিষ্টান হয়ে গিয়েছিল। তাদেরকে সে গর্তে ফেলে জীবন্ত জ্বালিয়ে দেয়। তেমনিভাবে সহিহ মুসলিমে জাদুকর, সন্ন্যাসী ও গোলামের ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। এক তরুণের দীনের ওপর দৃঢ়তার ফলে হাজার হাজার মানুষ বাদশাহর অনেক হুমকি-ধমকি সত্ত্বেও ঈমান এনেছিল। বাদশাহ তাদের সবাইকে জ্বলন্ত আগুনে নিক্ষেপ করে। (১-৯)

ইতিহাস অধ্যয়ন করলে এমন বহু ঘটনা জানা যায় যে, ধর্ম ও আদর্শগত বিরোধের কারণে অনেক মানুষকে জীবন্ত আগুনে নিক্ষেপ করা হয়েছে।

উন্নত সভ্যতার দাবিদার পশ্চিমাবিশ্ব আজ মুসলমানদের উপর বিভিন্ন মারণাস্ত্র ব্যবহার করছে। যার ফলে নিমেষেই বহু জনপদ জ্বলেপুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে। আমাদের চোখের সামনেই আফগানিস্তান ও ইরাকে যে আগুন জ্বালানো হয়েছে, তা জুনাওয়াসের আগুনের চেয়ে কি কম? না, বরং তার চেয়েও এগুলো মারাত্মক ও ধ্বংসাত্মক। মুসলিম নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ সবাইকে আগুনে ভস্মীভূত করা হয়েছে।

ফিলিস্তিনে কী হচ্ছে? সেখানে তো দীর্ঘ পঞ্চাশ বছর ধরে মুসলমানদের ওপর আগুনই নিক্ষেপ করা হচ্ছে। কথাগুলো বলার উদ্দেশ্য হচ্ছে বর্তমানের মানুষরূপী হায়নাদের কাছে তো বিশ হাজার মানুষকে জ্বালিয়ে দেওয়া আশ্চর্যের কিছু নয়।

এমন লোকদের ব্যাপারে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে, ‘যারা মুমিন পুরুষ ও নারীকে নিপীড়ন করেছে, অতঃপর তাওবা করেনি, তাদের জন্য আছে জাহান্নামের শাস্তি, আর আছে দহন-যন্ত্রণা।’ (১০)

সূরার শেষে আল্লাহর বড়ত্ব এবং তার শাস্তির বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। তার পাকড়াও অত্যন্ত কঠিন। যখন তিনি কাউকে শাস্তিতে পাকড়াও করেন তখন তাকে কেউ ছাড়াতে পারে না। ফেরাউনের পরিণতি এর সুস্পষ্ট প্রমাণ। (১২-২২)

সূরা তারিক

এটি মক্কি সূরা। আয়াত সংখ্যা: ১৭।

সূরার শুরু আয়াতে আল্লাহ তায়ালা আকাশ এবং রাতে জ্বলজ্বলকারী উজ্জ্বল নক্ষত্রের শপথ করেছেন। বলেছেন, প্রত্যেক মানুষের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে রক্ষণাবেক্ষণকারী ফেরেশতা নির্ধারণ করা হয়েছে।

হাফিজ অর্থ পর্যবেক্ষণকারী ও রক্ষণাবেক্ষণকারী। এখানে উভয় অর্থই নেওয়া যেতে পারে। প্রত্যেক মানুষের সাথে এমন ফেরেশতা রয়েছে, যারা তার কাজকর্ম পর্যবেক্ষণ করে থাকে এবং আল্লাহ যতক্ষণ পর্যন্ত চান তারা তাকে রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকে। (১-৪)

সামনের আয়াতে বলা হয়েছে, কেয়ামতের দিন যখন মানুষ আল্লাহর কাঠগড়ায় দাঁড়াবে তখন তার সব গোপন ভেদ প্রকাশ করে দেওয়া হবে। (৯)

সূরার শেষে কোরআনের সত্যতা এবং তা চূড়ান্ত ফয়সালাকারী হওয়ার ব্যাপারে শপথ করা হয়েছে এবং কাফেরদেরকে সতর্কবাণী শোনানো হয়েছে। (১১-১৭)

সূরা আ’লা

এটি মক্কি সূরা। আয়াত সংখ্যা: ১৯।

সূরায় তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। শুরু আয়াতগুলোতে আল্লাহ তায়ালার সত্তা এবং তার গুণাবলির তাসবিহ ও পবিত্রতা বর্ণনা করার হুকুম দেওয়া হয়েছে। তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। তাকে সর্বোত্তম অবকাঠামো দান করেছেন এবং সফলতা ও ঈমানের পথ দেখিয়েছেন। (১-৩)

২. এ সূরায় কোরআনুল কারিম মুখস্থ করা সহজ হওয়ার সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, আপনি চারিত্রিক পবিত্রতা ও আত্মিক পরিশোধনের জন্য কোরআনের মাধ্যমে নসিহত প্রদান করুন। যার অন্তরে আল্লাহর ভয়ভীতি থাকবে সে অবশ্যই নসিহত কবুল করবে। (১-৬)

৩. সূরার শেষে বলা হয়েছে, যে-ব্যক্তি নিজেকে গুনাহ থেকে পবিত্র রাখবে সে ভালো আগ্রহ ও চিন্তাচেতনার অধিকারী হবে। তার অন্তরে আল্লাহ তায়ালার মহত্ত্ব সৃষ্টি হবে। সে দুনিয়াকে আখেরাতের উপর প্রাধান্য দেবে না। সে সফল হবে। সমস্ত সহিফা ও শরিয়তে এই মূলনীতিই উল্লেখ করা হয়েছে। (১৪-১৯)

সূরা গাশিয়া

এটি মক্কি সূরা। আয়াত সংখ্যা: ২৬

কেয়ামতের এক নাম হচ্ছে গাশিয়া তথা আচ্ছাদনকারী। কেয়ামতের ভীতি যেহেতু সবার উপর ছড়িয়ে পড়বে এজন্য তাকে গাশিয়া (আচ্ছাদনকারী) বলা হয়েছে।'

সূরায় বলা হয়েছে, কেয়ামতের দিন কিছু চেহারা লাঞ্ছিত-অপদস্থ হবে। তাদেরকে ক্লিষ্ট-ক্লান্ত দেখাবে। আলেমগণ বলেন, তারা সেসব লোক, যারা দুনিয়াতে অনেক ইবাদত করেছে; কিন্তু তাদের আকিদা-বিশ্বাস সহিহ না থাকায় তাদের এসব ইবাদত কোনো কাজে আসেনি। এসব চেহারা জ্বলন্ত আগুনের ইন্ধন হবে। আর কিছু চেহারা হবে উজ্জ্বল। যারা দুনিয়াতে সঠিকভাবে ইবাদত করেছে, যাদের আকিদা-বিশ্বাস সঠিক ছিল, সুউচ্চ জান্নাত তাদের ঠিকানা হবে।

এরপর এ সূরায় আল্লাহ তায়ালার একত্বের তাকবিনি (সৃষ্টিগত) দলিল উল্লেখ করা হয়েছে। মরুভূমির উট, যাকে মরুজাহাজ বলা হয়, বিশাল দেহের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও ছোট্ট বাচ্চাও তার নাকে রশি লাগিয়ে যেখানে খুশি নিয়ে যেতে পারে। তার ধৈর্য-ক্ষমতা এতই বেশি যে, দশদিন পর্যন্ত পিপাসা সহ্য করতে পারে। তার খাবারদাবার অতি সাধারণ। অন্যান্য চতুষ্পদ জন্তু, যা খায় সেও তা খায়।

আয়াতে দলিল হিসেবে সুউচ্চ আকাশের কথা বলা হয়েছে, যা কোনো স্তম্ভ ছাড়াই দাঁড়িয়ে আছে। জমিনকে এমনভাবে বিছানো হয়েছে যে, তাতে সহজেই চলাফেরা করা যায়। খেত-খামার করা যায়। জমিনে পাহাড় রয়েছে, যা তাকে কম্পন থেকে রক্ষা করে থাকে।

তাওহিদ অস্বীকারকারীদের এসব দলিলের প্রতি মনোনিবেশ করে আল্লাহ তায়ালা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নির্দেশ দিয়েছেন আপনার কাজ হচ্ছে শুধু উপদেশ দেওয়া। আপনি আপনার দায়িত্ব পালন করে যান। তাদের হিসাব আমার উপর ছেড়ে দিন।

সূরা ফজর

এটি মক্কি সূরা। আয়াত সংখ্যা: ৩০।

সূরার শুরুতে চারবার চারটি সৃষ্টির শপথ করে বলা হয়েছে, কাফেরদের উপর অবশ্যই আল্লাহ তায়ালার আজাব আপতিত হবে। এরপর সূরাটিতে বিশেষভাবে তিনটি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে।

১. আদ, সামুদ, ফেরাউন প্রভৃতি অহংকারী ও বিশৃঙ্খলাকারী জাতিগোষ্ঠীর ঘটনা সংক্ষিপ্তভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, যারা নিজেদের অবাধ্যতা ও অপরাধের কারণে আল্লাহ তায়ালার কঠোর আজাবে গ্রেপ্তার হয়েছে। (৬-১৪)

২. আল্লাহ তায়ালার রীতি হচ্ছে তিনি মানুষকে দুনিয়াতে কল্যাণ-অকল্যাণ, ধনাঢ্যতা-দরিদ্রতা ও সুস্থতা-রোগব্যাধি দিয়ে পরীক্ষায় নিপতিত করে থাকেন। আর মানুষের স্বভাব-তবিয়ত হচ্ছে সে আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া আদায় করে না। তার প্রদত্ত ধনসম্পদকে তার রাস্তায় খরচ করে না। ধনসম্পদের ব্যাপারে কখনো তার পেট ভরে না। (১৫-২০)

৩. কেয়ামতের দিন যে ভূ-কম্পন এবং ভয়ানক দৃশ্য হবে, তা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, মানুষদের দুইভাগ করা হবে। হতভাগা বদকার, যারা আল্লাহ তায়ালার ক্রোধ ও শাস্তির সম্মুখীন হবে। আর মুমিন নফস, যাকে নফসে মুতমাইন্না বলা হয়, তাকে তার প্রতিপালকের দিকে হৃষ্টচিত্তে ফিরে যেতে এবং জান্নাতে প্রবেশ করার জন্য বলা হবে। (২১-৩০)

সূরা বালাদ

এটি মক্কি সূরা। আয়াত সংখ্যা: ২০।

মানুষের সৌভাগা ও দুর্ভাগ্যবান হওয়ার বিষয়টি এ সূরায় উল্লেখ করা হয়েছে। সূরার শুরুতে আল্লাহ তায়ালা তিনবার শপথ করে বলেছেন যে, আমি মানুষকে কষ্টনির্ভর করে সৃষ্টি করেছি। অর্থাৎ দুঃখ-কষ্ট, বিপদ-মুসিবত মিলিয়েই জীবন। তাকে বিভিন্ন সময় রোগ-শোক, দুঃখ-দারিদ্র্য প্রভৃতির সম্মুখীন হতে হয়। এরপর বার্ধক্য, মৃত্যু, কবরের অন্ধকার জগতের প্রশ্ন, কেয়ামতের ভয়ঙ্কর অবস্থা- মোটকথা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মানুষকে শুধু কষ্ট আর কষ্টের সম্মুখীন হতে হয়। (১-৪) এরপর সেই কাফেরদের আলোচনা করা হয়েছে, যারা নিজেদের শক্তি-সামর্থ্য নিয়ে অনেক গর্ব করত। নিজেকে বিত্তবান জাহির করার উদ্দেশ্যে ধনসম্পদ ব্যয় করত। এসব লোককে আল্লাহ তায়ালা নেয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। বলেছেন, আমি কি তাকে দুটি চোখ দিইনি? জিহ্বা ও দুই ঠোঁট দিইনি? (৫-১০) এরপর কেয়ামতের ভয়ানক অবস্থার কথা আলোচনা করা হয়েছে। একমাত্র ঈমান ও নেক কাজ মানুষকে তা থেকে মুক্তি দিতে পারে।

সূরার শেষে মানুষদের উঁচু ঘাঁটিতে আরোহণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। উঁচু ঘাঁটি দ্বারা নফসের উপর যেসব আমল করা কঠিন, তা উদ্দেশ্য। অর্থাৎ গোলাম আজাদ করা, কয়েদি মুক্ত করা, এতিম-মিসকিনদের খাবার খাওয়ানো। তবে এর সাথে সাথে আরও কিছু গুণ থাকা আবশ্যক। অর্থাৎ আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখা, পরস্পর ধৈর্যধারণ ও অনুগ্রহের উপদেশ দেওয়া।

সূরা শামস

এটি মক্কি সূরা। আয়াত সংখ্যা: ১৫।

এর বিষয় হল ভালো কাজে উৎসাহ দেওয়া ও মন্দ কাজের ব্যাপারে সতর্ক করা। সুরার শুরুতে আল্লাহ তায়ালা এমন সাতটি জিনিসের শপথ করেছেন, যার প্রত্যেকটি আল্লাহ তায়ালার অসীম কুদরত এবং তার তাওহিদের নিদর্শন। অর্থাৎ চন্দ্র-সূর্য, দিনরাত, আসমান-জমিন, মানুষের নফস এসব জিনিসের শপথ করে তিনি বলেছেন যে, মানুষ যদি নিজ প্রতিপালককে ভয় করে এবং আত্মার পরিশুদ্ধি করে তা হলে সে সফল। আর যদি সে তা থেকে উদাসীনতা অবলম্বন করে, তাকে কলুষিত করে তা হলে সে ব্যর্থ। (১-১০)

আল্লাহ তায়ালা মানুষের মধ্যে ভালো-মন্দ উভয় কাজের যোগ্যতা দিয়েছেন। এখন এটা মানুষের দায়িত্ব যে, সে কোন যোগ্যতা কাজে লাগাবে। এরপর এ সূরায় উদাহরণস্বরূপ সামুদজাতির ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে, যারা নিজেদের আত্মা পরিশুদ্ধ করেনি, তাকে পাপাচারে অভ্যস্ত করে তুলেছে। ফলে তারা ধ্বংস হয়ে গেছে।

সূরা লাইল

এটি মক্কি সূরা। আয়াত সংখ্যা: ২১।

মানুষের বিভিন্ন ধরনের কাজকর্ম ও চেষ্টা-প্রচেষ্টার আলোচনা করা হয়েছে। যখন কাজকর্ম ও চেষ্টা-প্রচেষ্টার গতিপ্রকৃতি বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে তখন তার ফলও বিভিন্ন ধরনের হয়। তিনবার তিনটি জিনিসের শপথ করে বলা হয়েছে, মানুষ তোমাদের চেষ্টা-প্রচেষ্টা বিভিন্ন ধরনের। কেউ মুত্তাকি। কেউ হতভাগা। কেউ মুমিন। কেউ কাফের। কেউ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে। কেউ কার্পণ্য করে। কেউ আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করে। কেউ পর মুখাপেক্ষিতা বর্জন করে। কেউ ভালো কথা সত্যায়ন করে। কেউ মিথ্যা প্রতিপন্ন করে। মানুষ নিজের জন্য যে ধরনের পথ অবলম্বন করে, আমি তার জন্য সে পথে চলা সহজ করে দিই। (১-১০)

সূরার শেষে বলা হয়েছে, মুমিনদের আল্লাহ তায়ালা দোজখের আজাব থেকে রক্ষা করবেন। এজন্য সত্যিকার মুমিনের ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে, যে শুধু আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির জন্যই নিজের ধনসম্পদ ব্যয় করত। সমস্ত তাফসিরের কিতাবে আছে, এই আয়াত হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু আনহুর ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে। বিভিন্ন জিহাদের প্রস্তুতির সময়, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দাওয়াতি কাজে সাহায্য, ইসলাম গ্রহণ করে যেসব গোলাম-বাঁদি জুলুম-নির্যাতনের শিকার হচ্ছিল, তাদেরকে মুক্ত করা ইত্যাদি ক্ষেত্রে তার ধনসম্পদ ব্যয় হতো।'

সূরা দোহা

এটি মক্কি সূরা। আয়াত সংখ্যা: ১১।

এ সূরায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ব্যক্তিত্ব নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এতে চারটি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে।

১. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সম্বোধন করে আল্লাহ তায়ালা শপথ করেন যে, আল্লাহ তায়ালা আপনাকে পরিত্যাগ করেননি আর না আপনার প্রতি তিনি অসন্তুষ্ট হয়েছেন। (১-৩) আপনার বিরোধীরা বিদ্বেষ ও শত্রুতাবশত যদি এ ধরনের কোনো কথা বলে থাকে তা হলে তা নিতান্ত মিথ্যা।

২. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দুটি বড় সুসংবাদ শোনানো হয়। প্রথমত আপনার ভবিষ্যৎ বর্তমান থেকে অনেক উত্তম হবে বা আপনার পরকাল দুনিয়া থেকে উত্তম হবে। দ্বিতীয়ত আল্লাহ তায়ালা আপনাকে দুনিয়া ও আখেরাতে এই পরিমাণ নেয়ামত দান করবেন যে, আপনি এতে খুশি হয়ে যাবেন।

৩. এরপর আল্লাহ তায়ালা তিনটি অনুগ্রহের কথা স্মরণ করিয়ে দেন। আপনি এতিম ছিলেন, আমি আপনাকে আশ্রয় দিয়েছি। (নবুওয়াতপ্রাপ্তির পূর্বে) আপনি দীন-শরিয়ত থেকে বেখবর ছিলেন, আমি আপনাকে পথ দেখিয়েছি। আপনি দরিদ্র ছিলেন, আমি আপনাকে ধনী বানিয়েছি। (৬-৮)

৪. নেয়ামতের মোকাবেলায় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তিনটি উপদেশ দেওয়া হয়েছে। এতিমদের উপর কঠোরতা না করা। ভিক্ষুকদের তাড়িয়ে না দেওয়া এবং রবের নেয়ামতের কথা স্মরণ করা। (৯-১১)

সূরা ইনশিরাহ

এটি মক্কি সূরা। আয়াত সংখ্যা: ৮।

এ সূরাতেও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ব্যক্তিত্ব, তার মহত্ত্ব এবং মর্যাদার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এ সূরায় চারটি বিষয় উল্লেখ হয়েছে।

১. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর আল্লাহ তায়ালার তিনটি অনুগ্রহের কথা বলা হয়েছে।

(ক) বক্ষ বিদীর্ণকরণ অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা তার অন্তর হেকমত ও নুর দ্বারা পূর্ণ করে দিয়েছেন। তাকে সকল ধরনের গুনাহ ও অপবিত্রতা থেকে পাক করে দিয়েছেন।

(খ) তার থেকে বোঝা লাঘব করে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ নবুওয়াত, রিসালাত এবং তার দায়িত্ব ও জিম্মাদারি আদায়ের বোঝা। (কারণ নবুওয়াতপ্রাপ্তির প্রথম দিকে তার কাছে এটি কঠিন বোঝা মনে হচ্ছিল। এর জন্য তিনি অস্থির থাকতেন। অতঃপর আল্লাহ তায়ালা তাকে এমন হিম্মত দান করলেন যে, যত বড় কঠিন কাজই হোক না কেন, তার কাছে তা সহজ মনে হতে লাগল।) (গ) তার আলোচনাকে উচ্চকিত করা হয়েছে। তার পবিত্র নামের চর্চাকে উচ্চ মর্যাদা দান করা হয়েছে। অর্থাৎ যেখানে আল্লাহ তায়ালার নাম নেওয়া হয় সেখানে তার নামও নেওয়া হয়। যেমন আজান, ইকামত, তাশাহহুদ, খুতবা প্রভৃতি। (১-৪)

২. আল্লাহ তায়ালা (রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তার রেসালাতের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে) বিভিন্ন বিপদ-মুসিবত সহজ করা এবং পেরেশানি দূর করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। (৫-৬)

৩. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দাওয়াত ও তাবলিগের দায়িত্ব আদায় করার পর আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া আদায়ের জন্য তার ইবাদতে মগ্ন থাকার এবং তাতে পরিশ্রমের নির্দেশ দেওয়া হয়।

৪. যেকোনোকিছু করার ক্ষেত্রে আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল এবং তার প্রতি মনোনিবেশ করার নির্দেশ দেওয়া হয়।

সূরা তিন

এটি মক্কি সূরা। আয়াত সংখ্যা: ৮।

এ সূরাতে মানুষ এবং তার আকিদা সম্পর্কে তিনটি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে।

১. মানবজাতিকে সম্মানিত করা। তাকে সম্মানিত করার বিভিন্ন দিক রয়েছে। এখানে তার একটি দিক উল্লেখ করা হয়েছে। তা হচ্ছে মানুষকে শারীরিক, বাহ্যিক, আকল ও রুহ সর্বদিক থেকেই সর্বোত্তম অবয়বে সৃষ্টি করা হয়েছে।

২. মানুষ যখন মনুষ্যত্বের দাবি পূরণ না করে অকৃতজ্ঞতার পথ অবলম্বন করে, (ঈমান গ্রহণ না করে কুফুরির পথ বেছে নেয়) তখন তাকে বহু নীচু স্তরে নিক্ষেপ করা হয়। প্রবৃত্তিপূজাকে জীবনের লক্ষ্য বানিয়ে সে জানোয়ার থেকেও নিকৃষ্ট হয়ে যায়। তবে মুমিন এবং নেককাররা এই অধঃপতনের হাত থেকে রক্ষা পায় (তাদের জন্য রয়েছে অনিঃশেষ প্রতিদান)।

৩. যে মহান সত্তা এক ফোঁটা পানি থেকে এত সুন্দর মানুষ সৃষ্টি করতে পারেন, তিনি তাকে পুনরায় সৃষ্টি করতে সক্ষম। এ ছাড়াও এতে আল্লাহ তায়ালার ন্যায়বিচারক হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ হয়েছে।

সূরা আলাক

এটি মক্কি সূরা। আয়াত সংখ্যা: ১৯।

আলেমগণ বলেন, সূরা আলাক থেকে নিয়ে কোরআনুল কারিমের শেষ পর্যন্ত ছোট ছোট যেসব সুরা এসেছে, তাতে কোরআনের শিক্ষার সারনির্যাস উল্লেখ করা হয়েছে।

এ সূরায় তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে।

১. মানব-সৃষ্টিতে আল্লাহ তায়ালার হেকমত, তিনি লেখা ও পড়ার মাধ্যমে মানুষকে অন্যান্য সৃষ্টির উপর শ্রেষ্ঠত্ব দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ হয়েছে। (১-৫)

২. ধনসম্পদের কারণে মানুষ আল্লাহ তায়ালার বিধানের ক্ষেত্রে অবাধ্যতা করে। তার নেয়ামত অস্বীকার করে এবং উদাসীনতায় ডুবে যায়। (৬-৮) মানুষের অহংকার ও অবাধ্যতার বড় কারণ হচ্ছে ধনসম্পদ। যখন পেট ও ভাণ্ডার পূর্ণ থাকে তখন সে মানুষকে মানুষ মনে করে না। আর আল্লাহ তায়ালাকে মাবুদ এবং সিজদা দেওয়ার হকদার মনে করে না।

৩. এই উম্মতের ফেরাউন শাবু জাহেলের ঘটনা। সে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বিভিন্নভাবে আল্লাহ তায়ালার ইবাদত থেকে বাধা প্রদান করত (তার ব্যাপারে বলা হয়েছে, সে যদি বাধা প্রদানের জন্য তার লোকজন নিয়ে আসত, আমিও জাহান্নামের ফেরেশতাদের নিয়ে আসতাম)। (৯-১৯)

সূরা কদর

এটি মক্কি সূরা। আয়াত সংখ্যা: ৫।

শুরুতে মানুষের ওপর আল্লাহ তায়ালার ইহসান-কিতাবুম মুবিন কোরআন অবতীর্ণ হওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তেমনিভাবে এ সূরায় কদরের রাতের ফজিলত উল্লেখ করা হয়েছে। আর প্রথম ফজিলত হচ্ছে এ রাতের ইবাদত হাজার মাসের ইবাদতের চেয়ে উত্তম। দ্বিতীয় ফজিলত এ রাতে সূর্যাস্ত থেকে নিয়ে পরবর্তী দিনের সুবহে সাদিক পর্যন্ত ফেরেশতাগণ শান্তি, নিরাপত্তা, রহমত ও বরকতের পয়গাম নিয়ে অবতীর্ণ হতে থাকে।

উল্লেখ্য লাইলাতুল কদরে কোরআন অবতীর্ণ হওয়ার অর্থ হচ্ছে এ রাতে কোরআন অবতীর্ণ হওয়া শুরু হয়েছে।

সূরা বাইয়িনা

এটি মাদানি সূরা। আয়াতসংখ্যা : ৮।

এতে তিনটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

১. শেষ নবীর ব্যাপারে আহলে কিতাবদের অবস্থান উল্লেখ করা হয়েছে। তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগমনের জন্য অপেক্ষা করেছিল। তাদের ধারণা ছিল শেষ নবী বনি ইসরাইল থেকে হবেন। কিন্তু যখন তা হয়নি তখন তারা (জেদ ও ঈর্ষার বশবর্তী হয়ে) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়াতকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সুস্পষ্ট দলিল বলে উল্লেখ করা হয়। আর এতে সন্দেহের কী আছে যে, আমাদের রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবন অনেক বড় এক মুজিজা। হক ও সত্যতার এক সুস্পষ্ট দলিল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জীবনের চল্লিশ বছর কাটিয়েছেন ব্যভিচার, মদ্যপান, মূর্তিপূজা, ডাকাতি, রাহাজানি ও গুম-খুনের এক নোংরা পরিবেশে। কোনো নির্জন স্থানে জীবনযাপন করেননি। এ সমাজের অলিগলিতেই তার জীবন কেটেছে। কিন্তু তার এই জীবন চালনায় নাপাকের সামান্য ছাপ লাগেনি। কোনো নিকৃষ্ট দুশমনের পর্যন্ত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র চরিত্রের উপর আঙুল ওঠানোর দুঃসাহস হয়নি।

২. এ সূরায় দীন ও ঈমানের মৌলিক বিষয়-ইখলাস সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করা ২ হয়েছে। ঈমান কোনো আমল ছাড়া কবুল হতে পারে না আর ঈমান ইখলাস ছাড়া গ্রহণযোগ্য হয় না। সকল নবী এই মৌলিক বিষয়ের দাওয়াত দিয়েছেন।

৩. সূরায় সৌভাগ্যবান ও হতভাগা অর্থাৎ মুমিন ও কাফের উভয়ের পরিণাম উল্লেখ করা হয়েছে। (৬-৮)

সূরা যিলযাল

এটি মাদানি সূরা। আয়াত সংখ্যা : ৮।

সূরাটি মাদানি হলেও মক্কি সুরার বৈশিষ্ট্য এতে বিদ্যমান রয়েছে। সূরাটিতে দুটি বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

১. এতে কেয়ামতের পূর্বে ঘটিতব্য ভূ-কম্পনের সংবাদ দেওয়া হয়ছে। সকল মানুষ তখন কবর থেকে উঠে দাঁড়াবে। পৃথিবী মানুষের আমলের ব্যাপারে সাক্ষ্য দেবে।

২. মানুষকে হিসাবনিকাশের জন্য আল্লাহর সামনে পেশ করা হবে। এরপর আমল অনুযায়ী তাদেরকে দুই ভাগ করা হবে। কেউ হবে হতভাগা আর কেউ হবে সৌভাগ্যবান। প্রত্যেকেই নিজ নিজ ছোট-বড় আমলের প্রতিদান ও শাস্তি পাবে।

সূরা আদিয়াত

এটি মক্কি সূরা। আয়াত সংখ্যা: ১১।

এতে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

১. মুজাহিদদের ঘোড়ার ব্যাপারে শপথ করে বলা হয়েছে, মানুষ বড় অকৃতজ্ঞ। তার আমলই তার অকৃজ্ঞতার প্রমাণ। (১-৭) ঘোড়া নিজ মালিকের বিশ্বস্ত হয়ে থাকে। মালিককে সন্তুষ্ট করার জন্য সে তিরবৃষ্টি এবং উদ্যত তরবারির মধ্যে প্রবেশ করে থাকে। কিন্তু হায়রে মানুষ। আশরাফুল মাখলুকাত হওয়া সত্ত্বেও সে নিজের প্রকৃত মালিকের বিশ্বস্ত নয়।

২. মানুষের স্বভাব ও তবিয়তের ব্যাপারে বলা হয়েছে, সে সম্পদের প্রতি ভীষন লোভাতুর। তার নিকট এক পাহাড় স্বর্ণ হলে সে আরেক পাহাড়ের সন্ধান করতে থাকে। দুটি হলে তৃতীয়টির সন্ধানে থাকে। একমাত্র মাটিই তার মুখ ভরতে পারে।

৩. মানুষকে নেককাজের প্রতি উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে, যা তার হিসাব-নিকাশের সময় কাজে লাগবে, যখন মানুষের মনের গোপন ভেদ প্রকাশ করে দেওয়া হবে।

সূরা কারিয়া

এটি মক্কি সূরা। আয়াত সংখ্যা: ১১।

এ সূরায় কেয়ামতের ভয়ংকর অবস্থার ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। যখন কেয়ামত কায়েম হবে তখন বিশ্বব্যবস্থায় রদবদল ঘটে যাবে, যা মানুষকে হয়রান ও পেরেশান করে দেবে। (১-৫)

সূরার শেষে বলা হয়েছে, কেয়ামতের দিন মানুষের আমলের ওজন করা হবে। কারো নেকির পাল্লা ভারী হবে আর কারো গুনাহের পাল্লা ভারী হবে। সে অনুযায়ী তাদেরকে ফল দেওয়া হবে।

সূরা তাকাসুর

এটি মক্কি সূরা। আয়াত সংখ্যা : ৮।

এ সূরায় সেসব লোকের নিন্দা করা হয়েছে, যারা দুনিয়াকে নিজের জীবনের লক্ষ্য বানিয়ে নিয়েছে। দুনিয়ার উপায়-উপকরণ একত্র করতেই সে ব্যতিব্যস্ত রয়েছে। তাদের এ দুনিয়া-মগ্নতা দেখে মনে হয় সে দুনিয়াতে চিরকাল থাকবে। কিন্তু এরপর হঠাৎ মৃত্যু এসে যাবে। যার কারণে তার সকল পদ-পদবি শূন্য হয়ে পড়ে থাকবে। তাকে সুবিশাল অট্টালিকা থেকে মাটির কবরে নিয়ে যাওয়া হবে।

তাদেরকে সতর্ক করা হয়েছে যে, কেয়ামতের দিন সকল কর্মের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হবে। (৩-৪)

এরপর অবশ্যই তোমরা জাহান্নাম দেখতে পাবে। তোমাদেরকে আল্লাহর নেয়ামতের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হবে; সুস্থতা, নিরাপত্তা, খাবারদাবার, ঘরবাড়ি, জ্ঞান, ধনসম্পদ, সময়সহ সকল নেয়ামত কোথায় ব্যয় করেছিলে?

সূরা আসর

এটি মক্কি সূরা। আয়াত সংখ্যা: ৩।

এই ছোট্ট সূরায় ইসলামের মূলনীতি এবং মানুষের জীবনব্যবস্থা স্পষ্ট করা হয়েছে। এ সূরার ব্যাপারে ইমাম শাফেয়ি রহ. বলেন, যদি মানুষ এ সুরার ব্যাপারে গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করে তা হলে এটিই তার মুক্তির উপায় হতে পারে।

সূরার শুরুতে আল্লাহ সময়ের শপথ করে বলেছেন, সকল মানুষ লোকসানের মধ্যে রয়েছে। তার ধনসম্পদ এবং পার্থিব উপায়-উপকরণ কিছুই তাকে এ ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে পারবে না। তবে যার চারটি গুণ হবে সে-ই এ ক্ষতি থেকে বেঁচে যাবে। তা হচ্ছে, ঈমান, নেক আমল, পরস্পরকে সত্যানুসন্ধান ও সবরের নির্দেশ।

সূরা হুমাজা

এটি মক্কি সূরা। আয়াত সংখ্যা: ৯।

এ সূরায় মানুষের তিনটি ব্যাধির কথা বলা হয়েছে।

প্রথম ব্যাধি, পশ্চাতে কারো দোষ বর্ণনা করা। একে গিবত বলা হয়, যা এক জঘন্য গুনাহ (সূরা হুজরাতের ১২নং আয়াতে যাকে কঠিন পাপ বলা হয়েছে)।

দ্বিতীয় ব্যাধি, কাউকে চেহারা-আকৃতি, বংশ-প্রতিপত্তি ও ধর্মের দিক থেকে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা। এটা মুনাফিকদের অভ্যাস। তারা দরিদ্র মুসলমানদের নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করত। তেমনিভাবে ইহুদি-খ্রিষ্টানরা হক দীন নিয়ে ঠাট্টা করত।

তৃতীয় ব্যাধি, দুনিয়ার মোহ, যাতে মত্ত হয়ে মানুষ আল্লাহর হক ভুলে যায়। এমনকি বান্দার হকও ভুলে যায়। তার অন্তরে আল্লাহর ভালোবাসার কোনো স্থান থাকে না। যারা এব্যাধিতে আক্রান্ত ছিল, সুরার শেষে তাদের পরিণাম উল্লেখ করা হয়েছে। (৫-৮)

সূরা ফিল

এটি মক্কি সূরা। আয়াত সংখ্যা: ৫।

এই সূরায় হস্তীবাহিনীর প্রসিদ্ধ ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে। সানআর গভর্নর আবরাহা হস্তীবাহিনী নিয়ে কাবাঘরে আক্রমণ করতে উদ্যত হয়েছিল। তার সাথে তখন প্রায় ষাট হাজার যোদ্ধা ছিল। কুরাইশরা তাদের মোকাবেলা করতে অক্ষম ছিল। আল্লাহ তায়ালা তখন ছোট ছোট পাখিকে কংকর দিয়ে পাঠান। এসব কঙ্কর আধুনিক বোমার মতো তাদের ধ্বংস করে দিয়েছিল।

যে বছর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্ম হয় সে বছর এ ঘটনাটি সংঘটিত হয়েছিল। এই ঘটনা এই বিষয়ের ইঙ্গিত দিচ্ছিল যে, অচিরেই কাবা শরিফের প্রকৃত রক্ষক জন্ম নিচ্ছেন।

সূরা কুরাইশ

এটি মক্কি সূরা। আয়াত সংখ্যা: ৪।

আল্লাহ কুরাইশদের ওপর নিজের দুটি বড় অনুগ্রহের কথা উল্লেখ করেছেন।

প্রথম অনুগ্রহ, কুরাইশরা নির্ভয়ে গ্রীষ্মকালে শামে আর শীতকালে ইয়ামানে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারত। এ ব্যবসায়িক সফর তাদের জীবিকা উপার্জনের এক বড় মাধ্যম ছিল। দ্বিতীয় অনুগ্রহ, তারা বালাদুল হারামে শান্তি ও নিরাপত্তার সাথে বসবাস করতে পারত।

এই দুই নেয়ামত উল্লেখ করে তাদেরকে বোঝানো হয়েছে, আত্মপ্রবঞ্চনা, স্বার্থপরতা, গোত্রপ্রীতি থেকে বিরত থাকো। বাইতুল্লাহর প্রতিপালকের ইবাদত করো, যিনি তোমাদেরকে আপন নেয়ামত দিয়েছেন।

সূরা মাউন

এটি মক্কি সূরা। আয়াত সংখ্যা: ৭।

এতে সংক্ষেপে মানুষদের দুটি দলের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

১. কাফের। যারা কেয়ামত দিবসের উপর বিশ্বাস রাখে না। এতিমের সম্পদ আত্মসাৎ করে। তাদের সাথে কঠোর আচরণ করে। গরিব-মিসকিনদেরকে নিজেরা খাওয়ায় না, অন্যদেরও খাওয়ানোর প্রতি উৎসাহিত করে না। অর্থাৎ আল্লাহ ও বান্দা কারও সাথেই তাদের আচরণ সঠিক নয়।

২. দ্বিতীয় দল হচ্ছে মুনাফিক। এখানে তাদের তিনটি নিকৃষ্ট দোষের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রথমত তারা নামাজের ব্যাপারে উদাসীন। তাদের উদাসীনতা দু-ভাবে হতে পারে। হয়তো তারা নামাজই আদায় করে না বা নামাজ পড়ে কিন্তু সময় ও খুশু-খুযু কোনোকিছুর প্রতি লক্ষ রাখে না।

দ্বিতীয় দোষ, তারা লোক-দেখানোর জন্য আমল করে থাকে।

তৃতীয় দোষ, তারা এতটাই কৃপণ যে, নিত্যনৈমিত্তিক প্রয়োজনীয় ছোটখাটো মামুলি কিছু দিতেও তারা অস্বীকার করে।

সূরা কাউসার

এটি মক্কি সূরা। আয়াতসংখ্যা: ৩।

এই সূরায় তিনটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

১. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর আল্লাহ তায়ালার অনুগ্রহ হচ্ছে, তিনি তাকে কাউসার প্রদান করেছেন। কাউসার জান্নাতের একটি নহর। কেয়ামতের দিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপন উম্মতকে তা থেকে পান করাবেন। আবার কাউসার অর্থ যেহেতু অনেক কল্যাণ, এজন্য নবুওয়াত, কোরআন, হেকমত, ইলম, শাফাআত, মাকামে মাহমুদ, মুজিজাকেও কাউসার বলা হয়।

২. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নির্দেশ দেওয়া হয় যে, ‘কাউসার’- এর মতো মহান নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করার জন্য আপনি নামাজের প্রতি যত্নবান হোন এবং আল্লাহর জন্য কোরবান করুন।

৩. তাকে এ সুসংবাদ শোনানো হয় যে, আপনার শত্রুরা অপদস্থ হবে। তাদের নাম-নিশানা মিটে যাবে। আর এমনই হয়েছিল।

সূরা কাফিরুন

এটি মকি সূরা। আয়াত সংখ্যা: ৬।

মুশরিকরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলে, চলুন ‘দেওয়া-নেওয়া’ এই ভিত্তিতে আমরা এক সন্ধি করি। এক বছর আপনি আমাদের উপাস্যদের ইবাদত করবেন এবং পরের বছর আমরা আপনার উপাস্যের ইবাদত করব। তাদের এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সূরাটি অবতীর্ণ হয়।

এই সূরা ঈমান ও কুফর, একত্ববাদী ও মুশরিকদের মাঝে পার্থক্যরেখা টেনে দিয়েছে। বলে দিয়েছে, একত্ব ও কুফর দুটি বিপরীতমুখী ব্যবস্থা। দুটিতে সন্ধির কোনো সুযোগ নেই। এ সূরাটি কাফেরদের সমস্ত আশা বালুর সাথে মিশিয়ে দেয়। চিরদিনের জন্য স্পষ্ট করে দেয় যে, ঈমানের সাথে কখনো কুফুরির সংমিশ্রণ ঘটতে পারে না।

সূরা নাসর

এটি মাদানি সূরা। আয়াত সংখ্যা: ৩।

সূরায় মক্কাবিজয়ের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। সুরাটি দশম হিজরিতে অবতীর্ণ হয়েছে। এটি অবতীর্ণ হওয়ার পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমার মৃত্যুর সংবাদ দেওয়া হয়েছে।

কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রেরণের উদ্দেশ্য পূরণ হয়েছে। যখন তিনি দাওয়াতের কাজ শুরু করেছিলেন তখন মাত্র একজন-দুজন তা কবুল করত। কিন্তু এখন দলে-দলে, গোত্রে-গোত্রে ইসলামে প্রবেশ করছে। এজন্য রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, এসব বিষয়ের উপর আল্লাহ তায়ালার কৃতজ্ঞতা, তাসবিহ এবং বড়ত্ব বর্ণনা করুন।

সূরা লাহাব

এটি মক্কি সূরা। আয়াত সংখ্যা: ৫।

এতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চাচা, তবে ঘোরতর শত্রু আবু লাহাব এবং তার স্ত্রী উম্মে জামিলের পরিণাম উল্লেখ করা হয়েছে। আবু লাহাব ধনসম্পদ ও সন্তানসন্ততি নিয়ে অনেক গর্ব করত। কিন্তু তার ধনসম্পদ ও সন্তানসন্ততি তাকে আল্লাহর আজাব থেকে রক্ষা করতে পারেনি। তারা স্বামী-স্ত্রী উভয়েই লাঞ্ছনাকর পরিণতি বরণ করে।

সূরা ইখলাস

এটি মক্কি সূরা। আয়াত সংখ্যা: ৪।

এ সূরায় ইসলামের মৌলিক আকিদা তাওহিদ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। উল্লেখ্য তাওহিদ তিন প্রকার।

১. তাওহিদে রুবুবিয়্যাত তথা সকল জিনিসের স্রষ্টা, সকল ক্ষমতার মালিক ও রিজিকদাতা আল্লাহ। কাফেররাও এর প্রায় সবকটি স্বীকার করে থাকে।

২. তাওহিদুল উলুহিয়্যাহ তথা বান্দা যেসব ইবাদত করে-দোয়া, মানত, কোরবানি যাই হোক না কেন, সব আল্লাহর জন্য। মুশরিকরা গাইরুল্লাহ তথা আল্লাহ ছাড়া অন্যের ইবাদত করত, যদিও এতে তাদের উদ্দেশ্য ছিল আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা। কিন্তু বাহ্য দৃষ্টিকোণ থেকে এটা ছিল শিরক।

৩. তাওহিদুষ যাত ওয়াল আসমা ওয়াস সিফাত। এ প্রকার তাওহিদের ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময়ই মানুষ হোঁচট খেয়ে থাকে। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ তায়ালার জন্য যে জ্ঞান, কুদরত, ক্ষমতা, দৃষ্টি ও শ্রবণশক্তি, মানুষ (ভুল করে) তা অন্যদের ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করে থাকে। চিন্তা করলে দেখা যাবে, সুরা ইখলাসে এই তৃতীয় প্রকার তাওহিদের উপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

সূরা ফালাক

এটি মাদানি সূরা। আয়াত সংখ্যা: ৫।

আল্লাহ তায়ালা নিজের একটি গুণ বর্ণনা করে চার জিনিসের অনিষ্ট থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করার নির্দেশ দিয়েছেন।

১. সৃষ্টিজীবের অনিষ্ট থেকে।

২. অন্ধকার রাত্রির অনিষ্ট থেকে (সাধারণত শয়তান, জিন, কীট-পতঙ্গ এবং জাদুকর-রাতের আঁধারে ভেলকি দেখিয়ে থাকে। তারা এর অন্তর্ভুক্ত)।

৩. গ্রন্থিতে ফুঁকদানকারিণী মহিলাদের থেকে। জাদু-টোনার জন্য তারা এমন করে থাকে। যদিও পুরুষরাও এটা করে; কিন্তু যেহেতু মহিলাদের এক্ষেত্রে এগিয়ে থাকতে দেখা যায় তাই কোরআনে তাদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

৪. হিংসুকের অনিষ্ট থেকে।

সূরা নাস

এটি মাদানি সূরা। আয়াত সংখ্যা: ৬।

ফজিলত

এটি মুআওয়াযাতাইনের দ্বিতীয় সূরা। এ সূরার ব্যাপারে বহু হাদিস বর্ণিত হয়েছে। সহিহ মুসলিমে হজরত উকবা বিন আমের থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ সূরা দুটি সম্পর্কে বলেছেন, তোমাদের কি জানা নেই যে, আজ এমন দুটি সূরা অবতীর্ণ হয়েছে, যার কোনো দৃষ্টান্ত নেই।' অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালার নিকট আশ্রয়প্রার্থনার ক্ষেত্রে এ সুরাদুটি নজিরবিহীন।

ইমাম ইবনুল কাইয়িম রহ. বলেন, কেউ-ই এই সুরাদুটি থেকে অমুখাপেক্ষী নয়। শরীর ও দেহের বিপদ দূর করার ক্ষেত্রে তা অত্যন্ত কার্যকর।

কোরআনের শেষ ও শুরুর মধ্যে গভীর মিল

কোরআনের শেষে এ সূরা দুটি রাখার এবং সূরা ফাতেহা দিয়ে কোরআন শুরু করার মধ্যে এক গভীর মিল রয়েছে। সূরা ফাতেহায়ও আল্লাহ তায়ালার সাহায্য চাওয়া হয়েছে আর এ সূরা দুটিতেও এ সাহায্যের বিষয়টি রয়েছে। এর মাধ্যমে যেন এদিকে ইঙ্গিত করা হল যে, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বান্দাকে আল্লাহর প্রতি মনোনিবেশ করা উচিত। তারই নিকট সাহায্য চাওয়া উচিত।

সূরা নাসে আল্লাহ তায়ালার তিনটি গুণের কথা উল্লেখ হয়েছে।

১. রুবুবিয়াত: তিনি সবকিছুর প্রতিপালক।

২. মুলুকিয়াত: তিনি সবকিছুর মালিক।

৩. উলুহিয়াত: তিনি সবকিছুর ইবাদতের উপযুক্ত।

তিনটি গুণ উল্লেখ করে একটি জিনিসের অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তা হচ্ছে কুমন্ত্রণা ও ওয়াসওয়াসা প্রদানকারীর অনিষ্ট। এর মাধ্যমে বোঝা যায়, ওয়াসওয়াসা কতটা মারাত্মক ও ধ্বংসাত্মক! এই ওয়াসওয়াসা শয়তানও দিয়ে থাকে আবার মানুষও দিয়ে থাকে।

বর্তমানে গোটা পশ্চিমা মিডিয়া মুসলমানদের অন্তরে ঈমানের ব্যাপারে ওয়াসওয়াসা ঢেলে যাচ্ছে। এই ওয়াসওয়াসা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। তাই সুরাদুটিকে জবানের অজিফা বানিয়ে নেওয়া আবশ্যক।

এখানে এই বিষয়টি বোঝা উচিত যে, সূরা ফালাকে একটিমাত্র সিফাত উল্লেখ করে চারটি বিপদের অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর কারণ হচ্ছে, পূর্বের সুরায় নফস ও শরীরের নিরাপত্তা কামনা করা হয়েছে আর এই সুরায় দীন ও ধর্মকে ক্ষতি থেকে বাঁচানোর এবং তার নিরাপত্তা কামনা করা হয়েছে। নিঃসন্দেহে দীনের ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর ক্ষতি দুনিয়ার বৃহৎ থেকে বৃহত্তর ক্ষতি থেকেও মারাত্মক। এ কারণেই এই শৈলী অবলম্বন করা হয়েছে।

যদি আমরা কোরআনের সাথে প্রকৃত সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারি, তা তেলাওয়াত করতে পারি, বুঝে তার উপর আমল করতে পারি এবং তার সকল হক আদায়ের চেষ্টা করতে থাকি তা হলে ইনশাআল্লাহ আমাদের এবং আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের দীন ও ঈমান নিরাপদ থাকবে। আল্লাহ আমাদের সহায় হওন। আমীন। ছুম্মা আমীন।।

(ঢাকাটাইমস/০৯এপ্রিল/এসআইএস)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ইসলাম বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :