সারা বছরের রোজার সওয়াব পেতে করণীয়
রমজানে পূর্ণ মাস ফরজ রোজা পালনের পর তার পরের মাস, অর্থাৎ শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা রাখা সুন্নত। রমজান মাসের রোজা তাকওয়া অর্জনের হাতিয়ার। সেই হাতিয়ারকে শাণিত করে শাওয়াল মাসের আমল।
হযরত আবু আইয়ুব আনসারি রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, যে ব্যক্তি রমজান মাসের ফরজ রোজা রাখল অতঃপর শাওয়াল মাসে আরও ছয়টি রোজা রাখল, সে যেন সারাবছর ধরেই রোজা রাখল।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১১৬৪)
হজরত উবাইদুল্লাহ রা. বলেন, ‘‘একদিন রাসূলকে সা. জিজ্ঞেস করলাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ আমি কি সারা বছর রোজা রাখতে পারব? তখন রাসূলুল্লাহ সা. বললেন, তোমার ওপর তোমার পরিবারের হক রয়েছে। কাজেই তুমি সারা বছর রোজা না রেখে রমজানের রোজা রাখো এবং রমজানের পরবর্তী মাস শাওয়ালের ছয় রোজা রাখ, তাহলেই তুমি সারা বছর রোজা রাখার সওয়াব পাবে।’’ (তিরমিজি: ১/১৫৩৪)।
এ বিষয়ে ইমাম নববি বলেন, রমজান মাস ২৯ বা ৩০ দিনের হয়ে থাকে। রমজানের ৩০টি রোজা ও শাওয়ালের ৬টি রোজা মিলে মোট ৩৬টি রোজা হয়। আল্লাহ তাআলার কোরআনে বলেছেন,
مَنۡ جَآءَ بِالۡحَسَنَۃِ فَلَهٗ عَشۡرُ اَمۡثَالِهَاঅর্থ: যে সৎকাজ নিয়ে এসেছে, তার জন্য হবে তার দশ গুণ। (সূরা আনআম: ১৬০) সেই হিসাবে ৩৬টি রোজায় ১০গুণ সওয়াব পেলে ৩৬০ দিন বা পুরো বছর রোজা রাখার সওয়াব পাওয়া যায়।
আল্লাহ তাআলা কোরআন মাজিদে বলেন, ‘যখন তুমি (ফরজ দায়িত্ব পালন থেকে) অবসর হবে, তখন (নফল ইবাদতের মাধ্যমে) তোমার রবের প্রতি মনোনিবেশ করো (সূরা-৯৪ ইনশিরাহ, আয়াত: ৮)।’ শাওয়াল হলো আরবি চান্দ্রবর্ষের দশম মাস। এটি হজের তিন মাসের (শাওয়াল, জিলকদ ও জিলহজ) প্রথম মাস। তাই এ মাস আমল ও ইবাদতের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। শাওয়াল মাসের ইবাদত আত্মনিয়ন্ত্রণের শক্তি অর্জনে সাহায্য করে; পরিপক্বতা ও স্থিতিশীলতা লাভে সহায়ক হয়।
খেয়াল রাখতে হবে:
তবে খেয়াল রাখতে হবে যেহেতু শাওয়াল মাসের প্রথম দিন পবিত্র ঈদুলে ফিতর রোজা রাখা হারাম। তাই ঈদুল ফিতরের পরের দিন থেকে মাসের যেকোনো ছয়দিনে রোজা রাখা যাবে। পাশাপাশি ছয় রোজার আগে বা পরে রমজানের কাজা রোজা রাখা যাবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘(রমজান মাসে) তোমাদের মধ্যে যে (যত দিন) অসুস্থ থাকবে কিংবা সফরে থাকবে, সে (রমজানের পরে) অন্য দিনগুলোতে (তত দিন) রোজা পালন করবে (সূরা বাকারা, আয়াত: ১৮৪)।’
এছাড়া আইয়ামে বিজের রোজা রাখা বিশেষ ফজিলতের। আরবি মাসের ১৩, ১৪, ও ১৫ তারিখ; এই তিনদিনকে আইয়ামে বিজ বলা হয়। রাসূল সা. জীবনে কখনোই এই রোজা বাদ দেননি। এক্ষেত্রে নফল যেকোনো রোজা রাখতে গিয়ে কাজা রোজার গুরুত্ব যেন হ্রাস না পায়। রমজানে কাজা হওয়া রোজা অবশ্যই পালন করতে হবে।
(ঢাকাটাইমস/১৯এপ্রিল/এসআইএস)